৯০.সূরা বালাদ سورة البلد Surah Balad এর তাফসির ও শানে নুযুল

সূরা বালাদ,سورة البلد, সূরা আল বালাদ, সূরা বালাদ এর শানে নুযুল, সূরা বালাদ এর তাফসির, সূরা বালাদ এর অনুবাদ, সূরা বালাদ বাংলা উচ্চারণ সহ, সূরা বালাদ এর শিক্ষা, সূরা বালাদ এর বাংলা তর্জমা, surah balad, surah balad bangla, surah balad ayat 4, surah balad transliteration, surah balad pdf, surah balad with bangla translation, surah balad in english, surah balad benefits, surah balad meaning, সূরা আল বালাদ এর অর্থ, বালাদ এর অর্থ কি,سوره البلد, تفسير سورة البلد للاطفال, سورة البلد مكرر,
সূরা বালাদ এর তাফসির

সূরার পরিচয় :

সূরার নাম : সূরা আল বালাদ।সূরার অর্থ : নগরী।
সূরা নং : ৯০রুকু সংখ্যা : ১
আয়াত সংখ্যা : ২০সিজদা সংখ্যা : ০
শব্দ সংখ্যা : ৮২পারার সংখ্যা : ৩০
অক্ষর সংখ্যা : ৩৩৫শ্রেণী : মাক্কী।

সূরা বালাদ سورة البلد Surah Balad এর তাফসির ও শানে নুযুল


بسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহ তা’আলার নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

(١) لَآ أُقْسِمُ بِهَٰذَا ٱلْبَلَدِ
(১) (কাফেররা বলছে পরকালের শাস্তি নেই) না, (আছে) আমি এই (মক্কা) নগরীর শপথ করছি

(٢) وَأَنتَ حِلٌّۢ بِهَٰذَا ٱلْبَلَدِ
(২) আর আপনি এই নগরীর অধিবাসী/আর আপনি এই নগরীতে হালাল।

(٣) وَوَالِدٍ وَمَا وَلَدَ
(৩) শপথ জন্মদাতার (আদমের) এবং যা সে জন্য দিয়েছে (সেই আদম সন্তানদের)

(٤) لَقَدْ خَلَقْنَا ٱلْإِنسَٰنَ فِى كَبَدٍ
(৪) নিশ্চয়ই আমি মানুষকে কষ্ট ও ক্লেশের মধ্যে সৃষ্টি করেছি।

(٥) أَيَحْسَبُ أَن لَّن يَقْدِرَ عَلَيْهِ أَحَدٌ
(৫) সে কি মনে করে যে, তার ওপর কেউ কখনো ক্ষমতাবান হবে না?

(٦) يَقُولُ أَهْلَكْتُ مَالًا لُّبَدًا
(৬) সে বলে আমি প্রচুর ধন-সম্পদ নিঃশেষ করেছি।

(٧) أَيَحْسَبُ أَن لَّمْ يَرَهُۥٓ أَحَدٌ

(৭) সে কি মনে করে যে; তাকে কেউ দেখেনি?

(٨) أَلَمْ نَجْعَل لَّهُۥ عَيْنَيْنِ
(৮) আমি কি তার জন্য দুটি চোখ সৃষ্টি করিনি?

(٩) وَلِسَانًا وَشَفَتَيْنِ
(৯) এবং একটি জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট?

(١٠) وَهَدَيْنَٰهُ ٱلنَّجْدَيْنِ
(১০) আমি তাকে (হক ও বাতিলের) দুটি পথ দেখিয়েছি।

(١١) فَلَا ٱقْتَحَمَ ٱلْعَقَبَةَ
(১১) অতঃপর সে কষ্ট করে দুর্গম গিরিপথে (নেক আমলসমূহে) ঢোকেনি।

(١٢) وَمَآ أَدْرَىٰكَ مَا ٱلْعَقَبَةُ
(১২) আপনি কি জানেন দুর্গম গিরিপথে ঢোকা কী?

(١٣) فَكُّ رَقَبَةٍ
(১৩) তা হচ্ছে দাসমুক্তি

(١٤) أَوْ إِطْعَٰمٌ فِى يَوْمٍ ذِى مَسْغَبَةٍ
(১৪) অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে খাদ্য দান করা।

(١٥) يَتِيمًا ذَا مَقْرَبَةٍ
(১৫) এতিম আত্মীয়কে

(١٦) أَوْ مِسْكِينًا ذَا مَتْرَبَةٍ
(১৬) অথবা ধূলি-ধূসরিত মিসকীনকে
ثُمَّ كَانَ مِنَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَتَوَاصَوْا۟ بِٱلصَّبْرِ وَتَوَاصَوْا۟ بِٱلْمَرْحَمَةِ (١٧)

(১৭) তদপুরি তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া, যারা ঈমান আনে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় ধৈর্যধারণের ও উপদেশ দেয় দয়া করার।

(١٨) أُو۟لَٰٓئِكَ أَصْحَٰبُ ٱلْمَيْمَنَةِ
(১৮) তারাই সৌভাগ্যবান।

(١٩) وَٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا هُمْ أَصْحَٰبُ ٱلْمَشْـَٔمَةِ
(১৯) আর যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তারাই হতভাগা।

(٢٠) عَلَيْهِمْ نَارٌ مُّؤْصَدَةٌۢ
(২০) তাদের ওপর থাকবে আবদ্ধ আগুন।

সূরার আলোচ্য বিষয়

১. মানুষ সৃষ্টিগতভাবে আজীবন শ্রম ও কষ্টের মধ্যে থাকে। কখনো রোগে আক্রান্ত হয়। আবার কখনো আক্রান্ত হয় দুঃখ ও দুশ্চিন্তায়।
২. যে ব্যক্তি রাসূল স.-এর প্রতি শত্রুতা রাখে, ইসলামের বিরোধিতা ও পাপ কাজ করে তাকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। আর ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। যেমন—দুর্ভিক্ষের দিন এতিম আত্মীয় ও অতি দরিদ্রকে খাদ্য দান করা।
৩. যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারা পরকালে সৌভাগ্যশালী হবে।
৪. আর যারা আল্লাহর আয়াতগুলোকে অবিশ্বাস করে তারা পরকালে হতভাগ্য হবে।

সূরা বালাদ এর শানে নুযুল

কালবী রহ. বলেছেন যে, আবুল আশাদ্দ নামে বনী জাহমে এক ব্যক্তি ছিল। সে ছিল অনেক শক্তিশালী। তার পায়ের নিচে চামড়া রেখে বলত, যে আমাকে এর থেকে সরাতে পারবে, তাকে অমুক পুরস্কার দেওয়া হবে। অতঃপর দশজন লোক মিলে চামড়া টেনে টুকরা টুকরা করে ফেললেও তার পা আপন জায়গা থেকে সরাতে পারত না। সে রাসূল স.-এর চরম শত্রু ছিল। তার সম্বন্ধে এই সূরার ৫, ৬, ৭ নং আয়াত নাযিল হয়েছে। যে কাফের ও পাপিষ্ঠের মধ্যে আয়াত সমূহে বর্ণিত নিকৃষ্ট গুণগুলো থাকবে, সেও আবুল আশাদ্দের সাথে এই আয়াত সমূহে শামিল হবে।

সূরা বালাদ এর তাফসির

আয়াত-১.
لَآ أُقْسِمُ بِهَٰذَا ٱلْبَلَدِ এখানে لَآ অব্যয়টি অতিরিক্ত এবং আরবী ভাষায় এর অতিরিক্ত ব্যবহার সুবিদিত । প্রতিপক্ষের ভ্রান্ত ধারণা খণ্ডন করার জন্য এই لَآ শপথ বাক্যের শুরুতে ব্যবহৃত হয়। উদ্দেশ্য হলো পরকাল সম্পর্কে তারা যা বলছে এসব তাদের শুধু ধারণা। আল্লাহ তা’আলা বালাদ বা মক্কা নগরীর শপথ করে যা বলছেন তা-ই বাস্তব। বাক্যটির অর্থ: আমি মক্কা নগরীর শপথ করছি। মক্কা নগরীর শপথ করার কারণ হলো এই যে, বায়তুল্লাহ সেখানে অবস্থিত। যা সকল মুসলমানের নামাযের কেবলা ও হজের কেন্দ্র। এটি নিরাপদ নগরী। সেখানে যুদ্ধ-বিগ্রহ করা ও কাউকে হত্যা করা হারাম। এমনকি পিতার হত্যাকারীকে পুত্র সেখানে পাওয়ার পরেও প্রতিশোধ নিতে পারবে না। এ ছাড়া আরো অনেক মর্যাদা ও সম্মান মক্কা নগরীর রয়েছে। তাই এই নগরীর শপথ করা হয়েছে।

আয়াত-২.
আর আপনি এই নগরীর অধিবাসী । অথবা আপনি এই নগরীতে হালাল। حِلٌّۢ – শব্দের দুটি অর্থ: এক. বসবাসকারী। আয়াতের মর্মার্থ এই যে, মক্কা নগরী নিজেও সম্মানিত ও পবিত্র বিশেষত, আপনিও এই নগরীতে বসবাস করেন। বসবাসকারীর শ্রেষ্ঠত্বের কারণেও বাসস্থানের শ্রেষ্ঠত্ব বেড়ে যায়। কাজেই আপনার বসবাসের কারণে মক্কার মাহাত্ম্য ও সম্মান দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
দুই. হালাল, বৈধ। আয়াতের মর্মার্থ এই যে, আপনার জন্য মক্কা নগরীতে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হালাল করে দেওয়া হবে। মক্কা নগরীতে যুদ্ধ-বিগ্রহ করা সকলের জন্য নিষিদ্ধ। কিন্তু রাসূল স.-এর জন্য শুধু মক্কা বিজয়ের দিন উক্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া ?” হয়েছিল। সেদিনের পর থেকে পূর্বোক্ত নিষেধাজ্ঞাই কিয়ামত পর্যন্ত বহাল রাখা হয়।

আয়াত-৩.
শপথ জন্মদাতার এবং যা সে জন্ম দিয়েছে তার। এখানে ‘জন্মদাতা’ বলে আদি পিতা হযরত আদম আ. আর ‘সে যা জন্ম দিয়েছে’ বলে আদম সন্তানদের বোঝানো হয়েছে। এভাবে এ আয়াতে হযরত আদম ও দুনিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব আদম সন্তানের শপথ করা হয়েছে। অতঃপর শপথের জবাবে আল্লাহ তা’আলা পরের আয়াতে বলেন,

আয়াত-৪.
অবশ্যই আমি মানুষকে কষ্ট-ক্লেশের মধ্যে সৃষ্টি করেছি। এর শাব্দিক অর্থ: শ্রম ও কষ্ট। মানুষ সৃষ্টিগতভাবে জীবনের শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত শ্রম ও কষ্টের মধ্যে থাকে। মায়ের গর্ভাশয়ে আবদ্ধ থাকে, জন্মের সময় কষ্ট স্বীকার করে, এরপর আসে জননীর দুগ্ধ পান করার ও তা ছাড়ার কষ্ট। তারপর পড়ালেখা করা ও নৈতিকতা শিক্ষা গ্রহণ করার শ্রম ও কষ্ট। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর ইসলামী বিধান অনুযায়ী চলার কষ্ট সহ্য করতে হয়। বড় হওয়ার পর জীবিকা ও জীবনোপকরণ সংগ্রহের কষ্ট, সন্তান লাভের পর তার পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়ার কষ্ট, বিভিন্ন বিপদের সম্মুখীন হওয়ার কষ্ট ও বার্ধক্যজনিত সমস্যার কষ্ট মানুষের ওপর দিয়ে অতিবাহিত হয়। দুনিয়ার জীবন শেষ হওয়ার পর মৃত্যু, করব ও হাশর এবং তাতে আল্লাহর সামনে জবাবদিহিতা ইত্যাদি কষ্টে মানুষকে পড়তে হবে।

আয়াত-৫.
কাফের ও পাপিষ্ঠ মানুষ কি মনে করে যে, তার ওপর কেউ কখনো ক্ষমতাবান হবে না? সে কি মনে করে যে, তার ধন-সম্পদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় অবস্থা দূর করে দেওয়ার মতো কোনো সভা নেই? এমন কেউ নেই যে তার থেকে দুনিয়াতে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারে ওপরকালে তাকে শাস্তি দিতে পারে? তার জানা উচিত যে, তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা’আলা। সব কিছু করার ক্ষমতা রাখেন।

আয়াত-৬.
কাফের ব্যক্তি গর্ব ও অহংকার করে বলে যে, আমি রাসূলের শত্রুতা ও ইসলামেরবিরোধিতায় প্রচুর সম্পদ ব্যয় করেছি। এসব জঘন্য পাপকাজে সম্পদ ব্যয় করাকে সে গুণ মনে করে। সে দুনিয়াতে থাকতেই বা মৃত্যুর পর বুঝতে পারবে যে, এসব অর্থ এমনিতেই নষ্ট হয়ে গেছে; বরং উল্টো তার নিজের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আয়াত-৭.
সে কি মনে করে যে, তার দুষ্কর্মসমূহ কেউ দেখেনি? তার জানা থাকা উচিত যে, সে সম্পদ কোথায় থেকে উপার্জন করেছে ও কোথায় তা ব্যয় করেছে আল্লাহ তা’আলা সব কিছু দেখেছেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করবেন। কালবী রহ. বলেন, আবুল আশাদ্দ মিথ্যুক ছিল। সে রাসূল স.-এর শত্রুতায় সম্পদ ব্যয় না করেই বলেছে, আমি প্রচুর সম্পদ ব্যয় করেছি। সে যে মিথ্যাবাদী আল্লাহ তা’আলা তা দেখেছেন।

আয়াত-৮.
আমি কি তাকে দেখার জন্য দুটি চোখ দিইনি? যিনি দেখার জন্য মানুষকে চোখ দান করেছেন, তিনি নিজে কি দেখছেন না? যিনি সবাইকে দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন, তিনি সকলের চেয়ে বেশি দেখবেন—এটাই স্বাভাবিক।

আয়াত-৯.
এবং জিহ্বা ও দুটি ঠেটি দিইনি? যেগুলোর সাহায্যে সে কথা বলে এবং পানাহার করে। দুই ঠোঁটের দ্বারা দাঁত ও মুখের ভেতর অংশ ঢেকে রাখে। জিহ্বা ও দুই ঠোঁট না থাকলে মানুষ কথা বলতে পারত না। মনের ভাব ইশারায় ব্যক্ত করতে হতো।

আয়াত-১০,
نَّجْدَيْنِ শব্দটি نَّجْدَ এর দ্বিবচন। এর শাব্দিক অর্থ: ঊর্ধ্বগামী পথ। এখানে প্রকাশ্য পথ বোঝানো হয়েছে। উদ্দেশ্য হলো, আমি তাকে দুটি পথ দেখিয়েছি। একটি হলো সত্য, হেদায়েত ও সাফল্যের পথ। আরেকটি হলো মিথ্যা, বিভ্রান্তি ও ধ্বংসের পথ। যেন মানুষ খারাপ পথ থেকে দূরে থাকে এবং ভালো পথে চলে। আর এই পথ দেখিয়ে দেওয়া সংক্ষিপ্তভাবে হয়েছে জ্ঞান-বুদ্ধি ও প্রকৃতির মাধ্যমে, আর বিস্তারিতভাবে হয়েছে নবী- রাসূলদের আগমন ও আসমানী কিতাব নাযিল করার মাধ্যমে।

আয়াত-১১. ১২
عَقَبَةُ বলা হয় পাহাড়ের বিরাট প্রস্তর খণ্ডকে এবং দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী গিরিপথকে । শত্রুরআক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার কাজে এ গিরিপথ মানুষকে সহায়তা করে। এ হিসেবে আল্লাহর ইবাদতকে গিরিপথ ব্যক্ত করা হয়েছে। গিরিপথ যেমন শত্রুর কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়, সৎকর্ম এবং আল্লাহর ইবাদতও পরকালের আজাব থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় ।

আয়াত-১৩.
এক নম্বর কাজ হলো, হূর্ত, দাস মুক্ত করা। রাসূল স. বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুমিন দাসকে মুক্ত করবে আল্লাহ তা’আলা ওই দাসের প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে তার প্রতিটি অঙ্গ জাহান্নাম থেকে মুক্ত করবেন। (সহীহ মুসলিম-১৫০৯)

আয়াত-১৪. ১৫
এতিম আত্মীয়কে ক্ষুধার দিনে অনুদান করা। এতিমকে খাদ্য দান করলে অনেক সাওয়াব পাওয়া যায়। আর এতিম আত্মীয়কে খাদ্য দান করলে দ্বিগুণ সাওয়াব পাওয়া যায়।
এক. খাদ্য দান করার সাওয়াব। দুই. আত্মীয়ের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ও তার হক আদায় করার সাওয়াব। রাসূল স. বলেন, দরিদ্রকে দান করলে দান করার সাওয়াব হয়। আর আত্মীয়কে দান করলে দ্বিগুণ সাওয়াব পাওয়া যায়। এক. দান করার সাওয়াব, দুই. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ও তার হক আদায় করার সাওয়াব। (তিরমিযী-৬৫৮, ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান।)

আয়াত-১৬.
কিংবা দুর্ভিক্ষের দিনে ধূলি-ধূসরিত মিসকিনকে খাদ্য দান করা। অভাব-অনটনের কারণে রাস্তা-ঘাটে বা খালি মাটিতে পড়ে থাকে-এমন নিঃস্ব পথিক ব্যক্তিকে দান করা বেশি সাওয়াবের কাজ।

আয়াত-১৭.
তিন নম্বর কাজ হলো, অতঃপর তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া, যারা ঈমান আনে। উপরোক্ত আমলসমূহ কবুল হওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় শর্ত হলো ঈমান। ঈমান না থাকলে সব আমলই ফলহীন। পরকালে তা উপকার দেবে না। চার নম্বর কাজ হলো, তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া, যারা পরস্পরকে ধৈর্যধারণের উপদেশ দেয় ও দয়া করার উপদেশ দেয়। ধৈর্যধারণের উপদেশ দেওয়ার ব্যাখ্যা হলো, একে অপরকে ঈমান ও আমলের ওপর অবিচল থাকা, পাপকর্ম থেকে বেঁচে থাকা ও বিপদাপদে ধৈর্যধারণের উপদেশ দেয়। আর মানুষের প্রতি দয়া করার উপদেশ দেয়। রাসূল স. বলেন, যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি দয়া করেন না। (সহীহ বুখারী-৭৩৭৬)

অপর হাদীসে রাসূল স. বলেন, দয়াবান মানুষের প্রতি অসীম দয়ালু আল্লাহ তা’আলা দয়া | করেন। তোমরা জমিনে বসবাসরত মানুষের প্রতি দয়া করো, তাহলে আকাশে বিদ্যমান আল্লাহ। তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। (তিরমিযী-১৯২৪, ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ)

আয়াত-১৮.
উপরোক্ত চারটি কাজ যারা করে, তারাই সৌভাগ্যশালী। তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর।মহান আরশের ডান দিকে স্থান পাবে এবং ডান হাতে আমলনামা লাভ করবে। তারা সবাই জান্নাতে যাবে।

আয়াত-১৯.
আর যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে, তারাই হতভাগা। এই হতভাগাদের কিয়ামতের দিন আরশের বাঁ দিকে দাঁড় করানো হবে এবং তাদের আমলনামা দেওয়া হবে বাঁ হাতে। তারা জাহান্নামে যাবে।

আয়াত-২০.
তাদের ওপর থাকবে আবদ্ধ আগুন। তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে বের হওয়ার সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারা জাহান্নাম থেকে বের হতে পারবে না। তাদের কষ্ট ও যন্ত্রণা বাইরে বের হবে না এবং বাইরের শান্তি ও আরাম তাদের কাছে পৌঁছবে না।

নির্দেশনা

১. মক্কা নগরী সম্মানিত ও পবিত্র। সেখানে বসবাসকারী রাসূল স.-এর সুউচ্চ মাকাম ও মর্যাদা রয়েছে । বসবাসকারীর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার কারণে বাসস্থানের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা বেড়ে যায়। কাজেই আমাদের প্রিয় নবী মোহাম্মদ স.-এর বসবাসের কারণে মক্কা নগরীর মাহাত্ম্য ও মর্যাদা দ্বিগুণ হয়ে গেছে । মক্কা নগরীতে যুদ্ধ-বিগ্রহ সকলের জন্য নিষিদ্ধ । রাসূল স.-এর জন্য শুধু মক্কা বিজয়ের দিন কাফেরদের বিরুদ্ধে মক্কার হারাম এরিয়াতে যুদ্ধ করা হালাল করে দেওয়া হয়েছিল । সেদিনের পর থেকে পূর্বোক্ত নিষেধাজ্ঞাই কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য বহাল রাখা হয়।

২. আদি পিতা হযরত আদম আ. ও তাঁর সৎ সন্তানদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। তাই আয়াতে মানব পিতা হযরত আদম আ. ও তাঁর সৎ সন্তানদের শপথ করা হয়েছে।

৩. মানুষ সারা জীবন শ্রম ও কষ্টের মাঝে থাকে । মৃত্যুর সময় এবং কবর ও হাশরের মাঠে কঠিন বিপদাপদ ও শাস্তির সম্মুখীন হবে। পরিশেষে যদি জান্নাতে যেতে পারে, তাহলে স্থায়ী শান্তি ও আরাম-আয়েশে বসবাস করবে। আর যদি জাহান্নামে যায়, তাহলে তার ওপর কষ্ট ও শাস্তির মাত্রা সীমাহীন বেড়ে যাবে।

৪. যে ব্যক্তি রাসূল স.-এর শত্রুতা, ইসলামের বিরোধিতা ও পাপাচারের স্থানে সম্পদ ব্যয় করে, তার দোষারোপ করা হয়েছে এবং কল্যাণের পথে সম্পদ ব্যয় করতে তাকে উপদেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ এটা তার উপকারে আসবে ও আল্লাহর শাস্তি থেকে তাকে রক্ষা করবে।

৫. পরকালে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার উপায় হলো, ঈমান আনা ও আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয় করা এবং পরস্পরকে ধৈর্যধারণের উপদেশ দেওয়া ও দয়া করার উপদেশ দেওয়া।

আরো পড়ুন :

৯১.সূরা আশ শামস سورة الشمس Surah Shams এর তাফসির ও শানে নুযুল

৯২.সূরা আল লাইল سورة الليل Surah Lail এর তাফসির ও শানে নুযুল

৯৩.সূরা আদ দুহা سورة الضحى Surah Duha এর তাফসির ও শানে নুযুল

ট্যাগ সমূহ : সূরা বালাদ,سورة البلد, সূরা আল বালাদ, সূরা বালাদ এর শানে নুযুল, সূরা বালাদ এর তাফসির, সূরা বালাদ এর অনুবাদ, সূরা বালাদ বাংলা উচ্চারণ সহ, সূরা বালাদ এর শিক্ষা, সূরা বালাদ এর বাংলা তর্জমা, surah balad, surah balad bangla, surah balad ayat 4, surah balad transliteration, surah balad pdf, surah balad with bangla translation, surah balad in english, surah balad benefits, surah balad meaning, সূরা আল বালাদ এর অর্থ, বালাদ এর অর্থ কি,سوره البلد, تفسير سورة البلد للاطفال, سورة البلد مكرر,সূরা বালাদ,سورة البلد, সূরা আল বালাদ, সূরা বালাদ এর শানে নুযুল, সূরা বালাদ এর তাফসির, সূরা বালাদ এর অনুবাদ, সূরা বালাদ বাংলা উচ্চারণ সহ, সূরা বালাদ এর শিক্ষা, সূরা বালাদ এর বাংলা তর্জমা,
surah balad, surah balad bangla, surah balad ayat 4, surah balad transliteration, surah balad pdf, surah balad with bangla translation, surah balad in english, surah balad benefits, surah balad meaning, সূরা আল বালাদ এর অর্থ, বালাদ এর অর্থ কি,سوره البلد, تفسير سورة البلد للاطفال, سورة البلد مكرر,সূরা বালাদ,سورة البلد, সূরা আল বালাদ, সূরা বালাদ এর শানে নুযুল, সূরা বালাদ এর তাফসির, সূরা বালাদ এর অনুবাদ, সূরা বালাদ বাংলা উচ্চারণ সহ, সূরা বালাদ এর শিক্ষা, সূরা বালাদ এর বাংলা তর্জমা, surah balad, surah balad bangla, surah balad ayat 4, surah balad transliteration, surah balad pdf, surah balad with bangla translation, surah balad in english, surah balad benefits, surah balad meaning, সূরা আল বালাদ এর অর্থ, বালাদ এর অর্থ কি,سوره البلد, تفسير سورة البلد للاطفال, سورة البلد مكرر,

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top