১১৩. সূরা ফালাক Sura Falak سورة الفلق এর তাফসির ও শানে নূযুল

সূরা ফালাক, সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ, সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ, সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ ছবি, সূরা ফালাক ছবি, সূরা ফালাক ও সূরা নাস, সূরা ফালাক এর তাফসীর, সূরা ফালাক এর শানে নুযুল, সূরা ফালাক এর অর্থ, সূরা ফালাক এর শানে নুযুল। সূরা ফালাক, Sura Falak, سورة الفلق, সূরা ফালাক, Sura Falak, سورة الفلق, সূরা ফালাক, Sura Falak,سورة الفلق,
সূরা ফালাক, Sura Falak,سورة الفلق,

সূরার পরিচ

সূরা নং : ১১৩রুকুর সংখ্যা : ১
সূরার নাম : সূরা আল-ফালাক্ব।সূরার অর্থ : প্রভাত, ঊষা, সকাল, ভোর ইত্যাদি।
আয়াত সংখ্যা : ৫সিজদার সংখ্যা : ০
অক্ষর সংখ্যা : ৭১শ্রেণী : মাদানী।
শব্দের সংখ্যা : ২৩পাড়ার সংখ্যা : ৩০

সূরা ফালাক Sura Falak سورة الفلق এর তাফসির ও শানে নূযুল

بسم الله الرحمن الرحيم

শুরু করছি আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
(١) قُلۡ اَعُوۡذُ  بِرَبِّ الۡفَلَقِ

(১) বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার।
(٢) مِنۡ شَرِّ  مَا خَلَقَ

(২) তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে।
 (٣) وَ مِنۡ شَرِّ غَاسِقٍ  اِذَا وَقَبَ

(৩) অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়।
 (٤) وَ مِنۡ شَرِّ النَّفّٰثٰتِ  فِی الۡعُقَدِ

(৪) গ্রন্থিতে ফুৎকার দিয়ে জাদুকারিণীদের অনিষ্ট থেকে।
(٥) وَ مِنۡ شَرِّ حَاسِدٍ  اِذَا حَسَدَ 

(৫) হিংসুকের অনিষ্ট থেকে; যখন সে হিংসা করে।

শাব্দিক বিশ্লেষণ

قُلۡ : (আপনি বলুন), আদেশসূচক ক্রিয়া, মধ্যম পুরুষ, একবচন, পুংলিঙ্গ, শব্দটির মূল হলো “القول” বলা, কথা বলা, উচ্চারণ করা, আলাপ করা, কথায় প্রকাশ করা ।

آعوذ : (আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি), বর্তমানকালীন ক্রিয়া, উত্তম পুরুষ, একবচন, পুংলিঙ্গ, শব্দটির মূল হলো “العياذ و المعاذ – ” আশ্রয় গ্রহণ করা, আশ্রয় নেওয়া, নিরাপত্তা তালাশ করা।


الفلق : (প্রভাত, ঊষা, সকাল, ভোর, ফাটল), বিশেষ্য পদ, ঊর্ট ক্রিয়া, এর অর্থ হলো বিদীর্ণ করা, দ্বিখণ্ডিত করা, ভেঙে ফেলা, প্রভাত উদ্ভাসিত হওয়া, সকাল হওয়া ইত্যাদি।


غاسق : (গাঢ় অন্ধকারপূর্ণ রাত্রি), কর্তাবাচক বিশেষ্য, একবচন, পুংলিঙ্গ।غاسق ক্রিয়ামূল, অর্থ হলো অন্ধকার হওয়া, আঁধারে নিমজ্জিত হওয়া ইত্যাদি ।

وقب: (অন্ধকার আচ্ছন্ন হয়েছে), সাধারণ অতীতকালীন ক্রিয়া, একবচন, বহুবচন : اوقاب প্রথম পুরুষ, পুংলিঙ্গ। وقبا ক্রিয়ামূল, অর্থ হলো অস্ত যাওয়া, ডুবে যাওয়া, আলোহীন হওয়া, ছড়িয়ে পড়া, আলোহীন হওয়া, ইত্যাদি।


النفثت : (ফুৎকার দানকারিণীগণ, তন্ত্র-মন্ত্রকারিণীগণ), কর্তাবাচক বিশেষ্য, বহুবচন, একবচন হলো النفا ثة স্ত্রীলিঙ্গ। نفثا ক্রিয়ামূল, অর্থ: ফুঁক দেওয়া, থুথু ফেলা, নিঃশ্বাসের সঙ্গে বাতাস বের করে দেওয়া।

সূরার আলোচ্য বিষয় :

সূরা ফালাক ও সূরা নাস কতিপয় অনিষ্ট সৃষ্টিকারী জিনিস থেকে মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সূরা দুটিকে ‘আশ্রয় প্রার্থনার সূরা’ বলা হয়।

সূরা ফালাক এর শানে নুযুল :

সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস একই প্রেক্ষাপটে নাযিল হয়েছে বলে মুফাসসিরগণ মত ব্যক্ত করেছেন। রাসূলুল্লাহ স. জাদুর কারণে অসুস্থ হওয়ার ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সূরাদ্বয় মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে। কেননা রাসূলুল্লাহ স.-কে জাদু করার ঘটনা মদীনার ইহুদীদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল । আবার অনেক মুফাসসিরগণ সূরাটা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন। বস্তুত দুটি মতই বিশুদ্ধ। কেননা সূরাদ্বয়ের ভাব বিশ্লেষণ ও বক্তব্যের বিষয় হতে স্পষ্ট ধারণা করা যায় যে, সূরা দুটি প্রথমে মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।

মক্কায় সূরা দুটি নাযিলের প্রেক্ষাপট ছিল এমন যে, রাসূল স.-এর নবুওয়াতের আলোক মশাল উজ্জ্বলিত হলে মক্কার মুশরিকরা তাঁর বিরোধিতা শুরু করে। নানাভাবে তাঁর ক্ষতি করার পাঁয়তারা করে। এমন করুণ মুহূর্তে মহান আল্লাহ তাঁর নবী স.-কে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এবং তাঁরই নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করার জন্য সূরা দুটি অবতীর্ণ করেন। এ সূরা দুটির ভাব-বিষয় এক হওয়ার কারণে ‘সূরাতাইন মু’আওয়াযাতাইন’ (দুটি আশ্রয় প্রার্থনার সূরা) বলা হয় ।

সপ্তম হিজরী মুহাররম মাস। খাইবার হতে ইহুদীদের একটি প্রতিনিধিদল মদীনায় উপস্থিত হলো এবং লবীদ ইবনে আ’সম নামের একজন প্রখ্যাত জাদুকরের সাক্ষাৎ করল। তারা তাকে বলল, “মুহাম্মদ আমাদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে, তা তুমি ভালো করেই জানো; আমরা তাঁর ওপর জাদু করার বহু চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফলতা লাভ করতে পারিনি। এই কারণে আমরা তোমার কাছে আসতে বাধ্য হয়েছি। আমরা তোমাকে তিনটি ‘আশরাফি’ (স্বর্ণমুদ্রা) দিচ্ছি; তুমি এটা গ্রহণ করো ও মুহাম্মদের ওপর খুব শক্ত ও তীব্র ক্রিয়াসম্পন্ন জাদুর আঘাত হানো।”

এই সময় রাসূলুল্লাহ স.-এর কাছে একটা ইহুদী ছেলে খাদেম ছিল । এই ছেলেটির সঙ্গে যোগসাজশ করে ওই জাদুকর রাসূল স.-এর চিরুনির একটি টুকরা সংগ্রহ করতে সক্ষম হলো। এতে রাসূল স.-এর চুল ছিল। এই চুল ও চিরুনির দাঁতের ওপর জাদু করা হয়। এই জাদু একটা পুরুষ খেজুরগাছের ছড়ার আবরণে রেখে লবীদ বনু যাইকের যারওয়ান বা যী-আরওয়ান নামে এক কূপের তলায় পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিল।

জাদুর ক্রিয়ায় রাসূলুল্লাহ স. ক্রমে দুর্বল হয়ে আসছিলেন, কিন্তু নবী হিসেবে তাঁর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল, তা যথাযথ পালন করার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারেনি । বস্তুত রাসূল স.-এর ওপর জাদুর ক্রিয়া শুধু তাঁর দেহ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। তাঁর নবুয়াতের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে জাদুর ক্রিয়া সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত ছিল।

শেষের দিকে তিনি একদিন হযরত আয়েশা রা.-এর গৃহে থাকাবস্থায় আল্লাহর নিকট দোয়া করলেন, মুহূর্তে তিনি নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। এই ঘুমের মধ্যে রাসূলে আরাবী দুজন ফেরেশতার মাধ্যমে স্বপ্নযোগে অবহিত হতে পারেন যে, তাঁকে জাদু করা হয়েছে। কীভাবে জাদু করা হলো? কী পদ্ধতি অবলম্বন করা হলো? এ জাদু থেকে উত্তরণের উপায় কী-সব কিছুই তিনি অবগত হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাসূল স. আলী রা. আ’ম্মার ইবন ইয়াসার রা. ও যুবাইর রা.-কে বনু যারওয়ান বা যী-যারওয়ান কূপের কাছে প্রেরণ করেন।

পরে আরো কতিপয় সাহাবাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ স. নিজেও সেখানে উপস্থিত হন। ওই কূপ থেকে পানি তোলা হলো। তখন দেখা গেল যে, খেজুরগাছের ছড়ার সঙ্গে পেঁচানো একগাছি সুতার এগারোটি গিঁট লাগানো রয়েছে। তাঁর সঙ্গে একটি গমের পুঁটলিও ছিল, তাতে কয়েকটি সুঁই বসানো রয়েছে। জিবরাঈল আ. এসে বললেন, আপনি ‘মু’আওয়াযাতাইন’ তথা সূরা ফালাক্ব ও নাস পাঠ করুন। এভাবে রাসূল স. সূরা দুটি পাঠ করার মাধ্যমে জাদুর প্রভাব থেকে আরোগ্য লাভ করেন।

সূরা ফালাক্ব ও নাসের শানে নুযূল সংক্ষিপ্ত ও বিশদ বহু বর্ণনা রয়েছে। অপর এক বর্ণনায় উল্লেখ আছে, একবার রাসূলুল্লাহ স. অসুস্থ হয়ে পড়েন। শারীরিকভাবে প্রচণ্ড অস্থিরতা অনুভব করেন। এক রাতে স্বপ্নে দেখলেন, দুজন ফেরেশতা তাঁর কাছে আগমন করলেন। একজন মাথার কাছে এসে বসলেন আর অন্যজন পায়ের কাছে। তারা উভয়ে পরস্পর কথপোকথন করতে লাগলেন। তারা নিজেদের মধ্যে এভাবে বাক্য বিনিময় করছিলেন। ‘তাঁর কী হয়েছে? তিনি অসুস্থ। কী অসুখ? তাঁকে জাদু করা হয়েছে। কে জাদু করেছে? এক ইহুদী ব্যক্তি, যার নাম লাবীদ ইবনে আ’সাম। কীভাবে জাদু করেছে? চামড়ার ফিতায় জাদুমন্ত্র করে পাথর চাপা দিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে অমুক কূপে। যাও, সেটিকে বের করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দাও।’

রাসূলুল্লাহ স. এতটুকু স্বপ্ন দেখার পর ঘুম ভেঙে গেল। সকাল বেলা রাসূলুল্লাহ স. কতিপয় সাহাবাকে নিয়ে স্বপ্নে উল্লিখিত কূপে গেলেন। সেখানে পাথর চাপা দিয়ে রাখা জাদুমন্ত্রের ফিতাটি উদ্ধার করে আনলেন। কিতাটিতে একটি সুতা পেঁচানো রয়েছে এবং তাতে এগারোটি গ্রন্থি দেখা গেল। কিন্তু এ গ্রন্থিগুলো না খোলা গেলে নবীজি স.-এর আরোগ্য লাভ সম্ভব হবে না। এমন করুণ পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহ তা’আলা স্বীয় হাবীবের নিকট ওহী প্রেরণ করলেন। এ প্রেক্ষাপটে সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস নাযিল হলো।

এ সূরাদ্বয়ের আয়াত সংখ্যা হলো এগারোটি। প্রিয় নবী এ সূরার একটি করে আয়াত পাঠ করতে লাগলেন আর সঙ্গে সঙ্গে একটি করে গিঁট বা গ্রন্থি খুলে যেতে লাগল । যখন তিনি সূরা দুটি পড়ে শেষ করলেন ততক্ষণে সবগুলো গিট খুলে গেল। এর ফলশ্রুতিতে নবীজি আলাইহিস সালাম সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেন এ সূরা দুটির মহত্ত্বের কারণে উলামাগণ বলেছেন, কেউ যদি সব সময় এ সূরা দুটি পাঠ করে তাহলে কোনো জাদু-মন্ত্র তাকে স্পর্শ করতে সক্ষম হবে না।

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ স. রাত্রিকালে যখন বিছানায় যেতেন তখন তিনি সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করে হাতের উভয় তালুতে দিয়ে সারা দেহের যতটুকু অংশ হাতের নাগাল পাওয়া যায় ততটুকু পর্যন্ত হাতের ছোঁয়া দিতেন। প্রথমে মাথায়, তারপর মুখে এবং এরপর দেহের সামনের অংশে তিনবার এভাবে হাত ফিরাতেন। (সহীহ বুখারী-৫০১৭)

সূরা ফালাক এর তাফসীর :

আয়াত-১.
হে নবী! আপনি আল্লাহর নিকট আশ্রয় গ্রহণের জন্য এবং অন্যদেরকে আশ্রয় গ্রহণের পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়ার জন্য এভাবে বলুন, আমি প্রভাতের প্রতিপালকের নিকট আশ্রয় কামনা করছি। যিনি রাতের আঁধার বিদীর্ণ করে ভোরের আলো উদ্ভাসিত করেন সে মহান আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি। الفلق এর শাব্দিক অর্থ বিদীর্ণ হওয়া। এখানে উদ্দেশ্য হলো রাতের নিশি শেষে ভোর হওয়া । অন্য এক আয়াতে আল্লাহর গুণ فالق الإصباح প্রভাতকারী, বর্ণনা হয়েছে। এ সূরায় আল্লাহর অন্যান্য গুণ থেকে এটি অবলম্বন করার রহস্য এই হতে পারে যে, রাতের অন্ধকার
প্রায়ই অনিষ্ট ও বিপদের কারণ হয়ে থাকে। ভোরের আলো সেই বিপদাপদের আশঙ্কা দূর করে দেয়। এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, যে ব্যক্তি প্রভাতের পালনকর্তার কাছে আশ্রয় চাইবে, তিনি তার সকল বিপদাপদ দূর করে দেবেন। (মাযহারী)

আয়াত-২.
আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি সৃষ্টিকুলের সে সকল জিনিস থেকে, যার মধ্যে অনিষ্ট রয়েছে। আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম রহ. লেখেন, شر শব্দটি দুই প্রকার অনিষ্টকে শামিল করে ।


এক. প্রত্যক্ষ অনিষ্ট ও বিপদাপদ, যা দ্বারা মানুষ সরাসরি কষ্ট পায়।
দুই. এ ধরনের অনিষ্ট, যা বিপদের কারণ হয়ে থাকে। যেমন-কুফর, শিরক, বিদ’আত, কুসংস্কার ইত্যাদি।

কুরআন-হাদীসে যেসব বস্তু থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা আছে, তাতে এই দুই প্রকারই অন্তর্ভুক্ত। সেগুলো হয় নিজেই বিপদ, না হয় কোনো বিপদের কারণ। আলোচ্য আয়াতে। من شر ما خلق (তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে।) উল্লিখিত দুই প্রকার অনিষ্ট তথা সমগ্র সৃষ্টির অনিষ্টই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কাজেই আশ্রয় গ্রহণের জন্য এ বাক্যটিই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু পরবর্তী আয়াতে আরো তিন ধরনের বস্তুর অনিষ্ট থেকে আশ্রয়ের কথা উল্লেখ করেছেন এর বিশেষ কারণ হলো ওই তিনটি অনিষ্ট প্রায় সময় এবং সচরাচর হয়ে থাকে। ওই তিনটি অনিষ্ট হলো নিম্নরূপ-

আয়াত-৩.
এক. গাঢ় অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আশ্রয় গ্রহণ করছি এ গভীর রাতে সংঘটিত যাবতীয় অনাচার-অনিষ্ট থেকে। কেননা রাতের অন্ধকারেই কালো জাদু, বিপদাপদের ঘনঘটা ইত্যাদি ক্ষতির আশঙ্কা প্রবল থাকে। রাতের বেলায় জিন, শয়তান, চোর-ডাকাত বিচরণ করে। শত্রুরা আক্রমণ করে। জাদুর ক্রিয়াও রাতে বেশি হয়। তাই রাতের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে

আয়াত-৪,
দুই. সে সকল নারী জাদুকর, যারা সুতা বা ফিতায় গিরা দিয়ে ফুৎকারের মাধ্যমে জাদু করে তাদের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় গ্রহণ করছি। আলোচ্য আয়াতে ‘ফুৎকার দানকারিণী’ বলতে নারীদের কথা উল্লেখ থাকলেও মূলত এর দ্বারা সেসব দল ও ব্যক্তিকে বোঝানো উদ্দেশ্য, যারা জাদুকর্ম করার সাথে সম্পৃক্ত এবং এগুলোর মাধ্যমে মানুষের অনিষ্ট সাধনে পারদর্শী। তবে নারীদের বিষয়টি সুস্পষ্ট করে উল্লেখ করার পেছনে বিশেষ কারণ হলো এই যে,

তাফসীরকারগণ বলেন, লাবীদ ইবনে আ’সম রাসূল স.-এর ওপর যে জাদুটোনা করেছিল তাতে কয়েকটি মেয়েও জড়িত ছিল। অথবা হতে পারে সাধন ক্রিয়া, রোগ-ব্যাধির মাধ্যমে অর্জিত জাদুবিদ্যার সব কিছু যেহেতু কোনো না কোনোভাবে নারী ও নারী সম্পর্কিত বিষয়াদির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকে কিংবা নারীরা এ কাজে দক্ষ বেশি হয়ে থাকে, তাই বিশেষভাবে তাদের অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষার্থে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


জাদুগ্রস্ত হওয়া নবুওয়াতের পরিপন্থী নয়
অগ্নি, পানি ইত্যাদি স্বাভাবিক ক্রিয়াশীল বস্তুর ন্যায় জাদুর ক্রিয়া। অগ্নি দহন করে অথবা উত্তপ্ত করে, পানি ঠাণ্ডা করে। এগুলো সবই স্বাভাবিক ব্যাপার। পয়গম্বরগণ এগুলোর ঊর্ধ্বে নন। তবে আল্লাহ তা’আলা ইচ্ছা করলে যেকোনোভাবে নবীদের মুক্ত করতে পারেন। আল্লাহ তা’আলা ইব্রাহীম আ.-কে আগুন থেকে এবং মুহাম্মদ স.-কে জাদুর অনিষ্ট থেকে মুক্ত করেছিলেন।

আয়াত-৫.
তিন. আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তাকে অঢেল নিয়ামত দান করেন, আবার যাকে ইচ্ছা কমিয়ে দেন। কেবল আল্লাহর ইচ্ছায়ই বান্দা নিয়ামতপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু কিছু মানুষ ঐশ্বর্য নিয়ামতপ্রাপ্ত এমন বান্দাদের সহ্য করতে পারে না। মনে হিংসা লালন করে। ধন-সম্পদ, যাতে কমে যায় সে অভিলাষে হিংসায় রত থাকে। হিংসুক তার মনের অবস্থাকে সংযত রাখতে ব্যর্থ হয় এবং উঠা-বসা ও আচার-আচরণে তার হিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। এমতাবস্থায় তার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য যে, এখানে দুটি বিষয় স্মরণ রাখা জরুরি। একটি হলো হিংসা আর অপরটি হলো ঈর্ষা।

হিংসার অর্থ হলো, আল্লাহ অপরকে যে নিয়ামত ও ঐশ্বর্য দান করেছেন, তা তার হাতছাড়া হয়ে নিজের হাতে চলে আসার কামনা করা। পক্ষান্তরে যদি এই কামনা করা হয় যে, অমুককে যে নিয়ামত দেওয়া হয়েছে, আমাকেও অনুরূপ বা তার চেয়ে বেশি নিয়ামত দান করা হোক, তাহলে এমন কামনাকে ঈর্ষা বলে। হিংসা করা হারাম। তবে ঈর্ষা করাতে কোনো অসুবিধা নেই। একজন অন্যজনকে দেখে স্বপ্ন দেখার প্রতি উৎসাহ পাবে, তার মতো বড় হতে চাইবে, এটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু কারো ক্ষতি কামনা করে নিজে লাভবান হতে চাওয়া অনেক বড় পাপ। এটি হিংসা। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা হিংসা থেকে বিরত থাকো। কেননা হিংসা সকল নেকী ও পুণ্যকে এমনভাবে ধ্বংস করে দেয়, যেমন আগুন শুকনো কাঠকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয়।’ (আবু দাউদ-৪৮৬৭ সহীহ)।

সুতরাং হিংসার মতো গর্হিত ও মহাপাপ থেকে আল্লাহ আমাদেরকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন।

ট্যাগ সমূহ : সূরা ফালাক, সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ, সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ, সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ ছবি, সূরা ফালাক ছবি, সূরা ফালাক ও সূরা নাস, সূরা ফালাক এর তাফসীর, সূরা ফালাক এর শানে নুযুল, সূরা ফালাক এর অর্থ, সূরা ফালাক এর শানে নুযুল। সূরা ফালাক, Sura Falak, سورة الفلق, সূরা ফালাক, Sura Falak, سورة الفلق, সূরা ফালাক, Sura Falak,سورة الفلق, সূরা ফালাক, সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ সহ, সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ, সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ ছবি, সূরা ফালাক ছবি, সূরা ফালাক ও সূরা নাস, সূরা ফালাক এর তাফসীর, সূরা ফালাক এর শানে নুযুল, সূরা ফালাক এর অর্থ, সূরা ফালাক এর শানে নুযুল , Sura Falak, سورة الفلق, Sura Falak, سورة الفلق, Sura Falak,سورة الفلق,

আরো পড়ুন :

১১৪. সূরা নাস এর তাফীসর

০১. সূরা ফাতিহা এর তাফসীর নামকরন ও শানে-নুযূল

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top