১১২.সূরা ইখলাস سورة الاخلاص Sura Ikhlas এর তাফসির ও শানে নুযূল

সূরা ইখলাস, سورة الاخلاص  sura ikhlas,সূরা ইখলাস বাংলা উচ্চারণ ছবি, সূরা ইখলাস এর বাংলা অর্থ, সূরা ইখলাসের ফজিলত, সূরা ইখলাস এর ফজিলত, সূরা ইখলাস বাংলা, সুরা ইখলাস বাংলা উচ্চারণ, সূরা ইখলাস আরবি, সূরা ইখলাস আরবি বাংলা উচ্চারণ, সূরা ইখলাস বাংলা অর্থসহ, সূরা ইখলাস এর শানে নুযুল, সূরা ইখলাসের তাফসীর, সূরা ইখলাসের ব্যাখ্যা, sura ikhlas, sura ekhlas, সূরা ইখলাস এর অর্থ, سورة الاخلاص,
سوره الاخلاص ,سورة الاخلاص للاطفال ,سورة الاخلاص مكتوبة ,تفسير سورة الاخلاص ,معنى سورة الاخلاص
সূরা ইখলাস, سورة الاخلاص sura ikhlas,

সূরার পরিচয়

সূরা নং : ১১২রুকু সংখ্যা : ১
সূরার নাম : সূরা ইখলাসসূরা অর্থ : নিষ্ঠা ও নির্ভেজাল
আয়াত সংখ্যা : ৪সিজদা সংখ্যা : ০
শব্দ সংখ্যা : ১৫শ্রেণী : মাক্কী
অক্ষর সংখ্যা : ৫৭পারার সংখ্যা :৩০

সূরা ইখলাস سورة الاخلاص Sura Ikhlas এর তাফসির ও শানে নুযূল :

بسم الله الرحمن الرحيم
শুরু করছি আল্লাহর নামে; যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
(١)قل هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ
উচ্চারণ: কুল হুয়াল্লাহু আহাদ।
(১) বলুন, তিনি আল্লাহ, একক
(٢)اللَّهُ الصَّمَدُ
উচ্চারণ: আল্লাহুচ্ছামাদ।
(২) আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,
(٣)- لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ
উচ্চারণ : লাম ইয়ালীদ ওয়া লাম ইউলাদ।
(৩). তিনি কাউকে ’জন্ম’ দেননি এবং কেউ তাঁকে ’জন্ম’ দেয়নি।
(٤)وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
উচ্চারণ :- ওয়ালাম ইয়া কুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ।
(৪) তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।

শাব্দিক বিশ্লেষণ

هُوَ : (সে, তিনি), সর্বনাম, প্রথম পুরুষ, একবচন, পুংলিঙ্গ।

اللَّهُ : (আল্লাহ), বরকতময় উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন পরাক্রমশালী মহান প্রভুর একটি বিশিষ্ট নাম; পৃথিবীর প্রতিটি ভাষায় আল্লাহ শব্দকে আল্লাহই ব্যবহার করা হয়। শব্দটির কোনো বিশ্লেষণ দরকার নেই। শব্দটির ব্যাকরণিক কোনো স্ত্রীলিঙ্গ নেই । উল্লেখ্য যে, আল্লাহ নামটি বিশেষ মহত্ত্বপূর্ণ। এ ছাড়া আল্লাহর আরো অনেকগুলো নাম রয়েছে। আল্লাহ তা’আলার যাবতীয় নাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

الصَّمَدُ : (অমুখাপেক্ষী, প্রয়োজনমুক্ত, অভাবমুক্ত, চিরন্তন, শাশ্বত), বিশেষ্য পদ। এটি আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম, এ শব্দটি কেবলমাত্র আল্লাহ তা’আলার জন্যই প্রযোজ্য।


لَمْ يَلِدْ : (তিনি জন্ম দেননি), সাধারণ অতীতকালের অর্থে বর্তমানকালীন ক্রিয়া, প্রথম পুরুষ, একবচন, পুংলিঙ্গ । ولدا ক্রিয়ামূলের অর্থ হলো জন্ম দেওয়া, সন্তান উৎপাদন করা, জনক হওয়া, প্রসব করা ইত্যাদি।

لَمْ يُولَد: (তাঁকে জন্ম দেওয়া হয়নি), অতীতকালের অর্থে বর্তমানকালীন ক্রিয়া, প্রথম পুরুষ, একবচন, পুংলিঙ্গ।

وَلَمْ يَكُن : (সে হয় না), একবচন, প্রথম পুরুষ, পুংলিঙ্গ। كينا و كينو نة ক্রিয়ামূল এর অর্থ: হওয়া, ঘটা, থাকা, হয়, আছে, ছিল)।

كُفُوًا : (সমতুল্য, সমকক্ষ, সমান যোগ্য কেউ), الكفء একবচন, তার বহুবচন হলো- لكفاء

সূরার আলোচ্য বিষয়

আলোচ্য সূরা ইখলাসে মহান আল্লাহ তা’আলার পরিচয় বর্ণিত হয়েছে। এতে একনিষ্ঠ ও নির্ভেজাল তৌহিদ বা একত্ববাদের কথা বলা হয়েছে। এই সূরার অর্থ ও অন্তর্নিহিত নিষ্ঠাপূর্ণ ভাবধারার দৃষ্টিতে এর নামকরণ করা হয়েছে সূরা ‘ইখলাস’ বলে। ইখলাস অর্থ নিষ্ঠা, নির্ভেজাল, আসল ।


সূরা ইখলাস এর নামকরণ :

আল্লাহ তা’আলার নির্ভেজাল একত্ববাদ ও নিষ্ঠাপূর্ণ ঈমান সম্পর্কিত বিষয় এ সূরার মূল আলোচ্য বিষয় হওয়ার কারণে এর নামকরণ হয়েছে সূরা ইখলাস। ইখলাস অর্থ: নিষ্ঠা ও নির্ভেজাল। এ সূরাটি শিরকমুক্ত করে নির্ভেজাল ও নিষ্ঠাপূর্ণ একত্ববাদের সাথে মানুষকে সংশ্লিষ্ট করার উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হয়েছে। তাই এর নাম সূরা ইখলাস। এ সূরার মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে তাফসীর বিশারদ আলেমগণ এ সূরার ২০টিরও বেশি নাম উল্লেখ করেছেন। সূরা তাওহীদ ও সূরা নাজাত এই সূরার বিশেষ নাম।

সূরা ইখলাস এর ফজীলত :

মহানবী স. বলেন, যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ। ‘সূরা ইখলাস অবশ্যই এক-তৃতীয়াংশ সমতুল্য।’ (সহীহ বুখারী-৬৬৪৩)
সাহাবী আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেন, তোমরা কি রাতে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতে অপারগ? তাঁরা বলেন, তা কীভাবে? তিনি বলেন, ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ তিলাওয়াত করা কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ সমতুল্য।’ (সহীহ মুসলিম-৮১১)

মায়াজ ইবনে আনাস আল জুহানী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেন, ‘যে ব্যক্তি কুল হুয়াল্লাহু আহাদ দশবার তিলাওয়াত করবে তার জন্য আল্লাহ তা’আলা বেহেশতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ-৩/৪৩৭ সহীহ, ‘সহীহুল জামী’ আলবানী)

সূরা ইখলাস এর শানে নুযূল

সূরাটি নাযিল হওয়ার বিষয়ে কয়েকটি বর্ণনা পাওয়া যায়, সেগুলো হলো- উবাই ইবনে কা’ব রা. বর্ণনা করেন, একবার মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ স.-কে বলল, ‘হে মুহাম্মদ! আমাদের সামনে তোমার রবের গুণাবলি বর্ণনা করো।’ তখন এই সূরাটি নাযিল হয় আর রাসূল স. তা পাঠ করেন। (তিরমিযী-৩৩৬৪, হাসান)

আবুল আলীয়া রা. থেকে বর্ণিত, একদা কুরাইশের লোকেরা রাসূল স.-কে বলল, ‘আপনার আল্লাহর বংশ-পরিচয় আমাদেরকে বলুন’। তখন এই সূরাটি অবতীর্ণ হয়। (তিরমিযী-৩৩৬৫, গ্রহণযোগ্য)


আনাস রা. বলেন, আরবের কতিপয় ইহুদী রাসূল স.-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ‘হে আবুল কাসেম! আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে নূর হতে, আদমকে মাটির পচা-গলা হতে, ইবলিশকে অগ্নিশিখা হতে, আকাশমণ্ডল ধোঁয়া হতে এবং পৃথিবী পানির ফেনা হতে তৈরি করেছেন। এখন আপনি আপনার আল্লাহ সম্পর্কে বলুন, তাঁকে কী দিয়ে বানানো হয়েছে? রাসূল স. তাদের এই জিজ্ঞাসার কোনো জবাব দিলেন না। পরে জিবরাঈল আ. সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করে লোকদের শোনাতে বলেন। (তাফসীরে কাবীর, ইমাম রাযী)


অপর বর্ণনা মতে, তাদের প্রশ্নটি ছিল ‘হে মুহাম্মদ! বলো তোমার আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে?’ অতঃপর এই সূরা অবতীর্ণ হয়। (তাফসীরে ইবনে আরাবী)

সংক্ষিপ্ত তাফসির

আয়াত-১.
আল্লাহর পরিচয় জানতে চেয়ে আরবের মুশরিকদের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে আল্লাহ এ সূরাটি নাযিল করে তাঁর প্রিয় হাবীবকে বলেন, হে মুহাম্মদ! আপনি বলুন, তিনিই আল্লাহ, যিনি আপন সত্তা ও গুণে এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর সত্তায় একাধিকের কোনো অবকাশ নেই। তাঁর কোনো সমতুল্য-সমকক্ষ কেউ নেই। তাঁর অনুরূপও কেউ নেই। আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে দ্বিত্যবাদ, ত্রিত্ববাদ ও বহুত্ববাদের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

পারস্যসহ তৎকালীন সময়ের অগ্নিপূজক মুশরিক, যাদের বিশ্বাস হলো সৃষ্টিকর্তা দুজন, একজন হলো ভালো সৃষ্টিকারী, তাঁর নাম ‘ইয়াযদাঁ’। আর অন্যজন হলো মন্দ জিনিস সৃষ্টিকারী, তার নাম ‘আহরামান’। তাদের দ্বিত্যবাদের ধারণাকে এ আয়াতের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এ ছাড়া খ্রিস্টান সম্প্রদায় তিন আল্লাহ বা থার্ড গড়ের বিশ্বাস লালন করে; এবং হিন্দু ধর্মের লোকজন বহু ঈশ্বর বা বহু দেবতায় বিশ্বাস রাখে, তাদের বিশ্বাসের অসারতা ঘোষণা করা হয়েছে।

আয়াত-২.
আল্লাহ কোনো কিছুর মুখাপেক্ষী নন, সকল কিছুই তাঁর মুখাপেক্ষী। অস্তিত্ব লাভের জন্য কোনো সৃজনকারীর প্রতিও তিনি মুখাপেক্ষী নন।

আয়াত-৩.
আল্লাহ কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি। তাঁর কোনো সন্তান নেই এবং তিনিও কারো সন্তান নন। এর মাধ্যমে মূলত ইহুদী ও খ্রিস্টানদের ধর্ম বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ইহুদীরা মনে করে, উযাইর আ. আল্লাহর পুত্র। অন্যদিকে খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে ঈসা আ. বা যিশু আল্লাহর পুত্র। তাদের কারো বিশ্বাস যথার্থ নয় বলে এ আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে। সাথে সাথে খ্রিস্টানরা যে যিশুকে খোদা বলে মনে করে তাদের এ বিশ্বাসের প্রতিবাদ করা হয়েছে এভাবে যে, আল্লাহ তিনিই, যাঁকে জন্ম দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ আল্লাহ বিশেষ মর্যাদা হলো তিনি কারো সন্তান নন। অথচ যিশু মরিয়ম বা মেরির সন্তান। মরিয়মের গর্ভে ঈসা আ.-এর জন্ম হয়েছে। সুতরাং কোনো মানবের সন্তান কী করে খোদা হতে পারে!

আয়াত-৪.
কেউ তাঁর সমকক্ষ নয়। এ আয়াতের মাধ্যমে মূলত অপরাপর আরো যত শিরক আছে সবগুলোকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। যারা আল্লাহর সভায় অংশীদার সাব্যস্ত না করলেও তাঁর গুণাবলিতে অন্যদের সাব্যস্ত করে তাদের ধারণাকে প্রতিহত করা হয়েছে। গুণে-মানে আল্লাহর সমকক্ষ কেউ নেই।

সূরার শিক্ষা

১. আল্লাহর সত্তা, তাঁর গুণাবলি, তাঁর প্রতিপালন ক্ষমতায় কোনো অংশীদার নেই। এতে তাঁর কোনো সমকক্ষ নেই।
. মানব থেকে সৃষ্ট, মানব তৈরি কোনো কিছুই খোদা হতে পারে না। মানুষ অন্য মানুষের প্রতিপালক হতে পারে না। কেউ রাজা আর কেউ প্রজা এমন নয়, বরং সকলেই আল্লাহর গোলাম। তিনি আল্লাহ চিরন্তন, অবিনশ্বর, শাশ্বত, মহাবিশ্বের অধিপতি, সার্বভৌম ক্ষমতার একচ্ছত্র আধিপত্য তাঁরই।
. সকল প্রকার শিরক নিষিদ্ধ। আল্লাহ সকল পাপ মোচন করলেও শিরকের পাপ ক্ষমা করেন না। আল-কুরআনে দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা হয়েছে, শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ, অপরাধ। (সূরা লোকমান-১৩)


উল্লেখ্য যে, শিরক দুই প্রকার : এক. শিরক আল-আকবর : (বড় শিরক), আল্লাহর সত্তা, তাঁর গুণাবলি ও ইবাদতের ক্ষেত্রে অন্য কাউকে শরিক করা হলো বড় শিরক। উদাহরণত, আল্লাহকে সিজদা দেওয়া ইবাদত, কিন্তু কোনো প্রতিমা বা মাজার ও পীর বাবাকে সিজদা করা কিংবা গুণীজনদের পা ছুঁয়ে সিজদা করা হারাম ও শিরক। আর অপর শিরকের নাম হলো শিরক আল-আসগর বা ছোট শিরক, রাসূলুল্লাহ স.-কে ছোট শিরকের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, রিয়া বা লৌকিকতা হলো ছোট শিরক। অর্থাৎ যে কাজ আল্লাহর জন্য করা হয় তাতে লৌকিকতা প্রদর্শন ছোট শিরকের অন্তর্ভুক্ত। এই শিরক অনেক সূক্ষ্ম । তাই এতে মানুষ সহজে নিপতিত হয়। এ জন্য এটাকে বেশি মারাত্মক শিরক বলা হয়েছে।

ট্যাগ সমূহ : سورة الاخلاص sura ikhlas,সূরা ইখলাস বাংলা উচ্চারণ ছবি, সূরা ইখলাস এর বাংলা অর্থ, সূরা ইখলাসের ফজিলত, সূরা ইখলাস এর ফজিলত, সূরা ইখলাস বাংলা, সুরা ইখলাস বাংলা উচ্চারণ, সূরা ইখলাস আরবি, সূরা ইখলাস আরবি বাংলা উচ্চারণ, সূরা ইখলাস বাংলা অর্থসহ, সূরা ইখলাস এর শানে নুযুল, সূরা ইখলাসের তাফসীর, সূরা ইখলাসের ব্যাখ্যা, sura ikhlas, sura ekhlas, سورة الاخلاص,
سوره الاخلاص ,سورة الاخلاص للاطفال ,سورة الاخلاص مكتوبة ,تفسير سورة الاخلاص ,معنى سورة الاخلاص سورة الاخلاص Sura Ikhlas

আরো পড়ুন :

সূরা ফালাক Sura Falak سورة الفلق এর তাফসির ও শানে নূযুল

০১. সূরা ফাতিহা এর তাফসীর নামকরন ও শানে-নুযূল

১১৪. সূরা নাস এর তাফীসর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top