১০১.সূরা ক্বারিয়াহ Sura Karia سورة القارعة এর তাফসির ও শানে নুযুল

সূরা ক্বারিয়াহ এর শানে নুযুল, সূরা ক্বারিয়াহ বাংলা উচ্চারণ, سورة القارعة, سوره القارعه, সূরা ক্বারিয়াহ এর তাফসির, সূরা ক্বারিয়াহ, সূরা কারিয়াহ এর তাফসির, সূরা ১০১, সূরা কারিয়াহ বাংলা উচ্চারণ, সূরা কারিয়াহ ফজিলত,সূরা কারিয়াহ দারস,সূরা কারিয়াহ তাফসির, সূরা কারিয়াহ এর অর্থ, সূরা কারিয়া বাংলা উচ্চারণ, sura karia, سورة القارعه,সূরা কারিয়াহ এর শানে নুযুল,
সূরা কারিয়াহ

সূরার পরিচয় :

সূরার নাম : সূরা আল ক্বারিয়াহসূরার অর্থ : মহাপ্রলয়
সূরা নং : ১০১রুকু সংখ্যা : ১
আয়াত সংখ্যা : ১১সিজদা সংখ্যা : ০
শব্দ সংখ্যা : ৩৬পারার সংখ্যা : ৩০
বর্ণ : ১৫৮শ্রেণী : মাক্কী

সূরা ক্বারিয়াহ Sura Karia سورة القارعة এর তাফসির ও শানে নুযুল


بسم الله الرحمن الرحيم

শুরু করছি মহান আল্লাহ তা’আলার নামে; যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

(١) ٱلْقَارِعَةُ

(১) করাঘাতকারী,

(٢) مَا ٱلْقَارِعَةُ

(২) করাঘাতকারী কী?

(٣) وَمَآ أَدْرَىٰكَ مَا ٱلْقَارِعَةُ

(৩).করাঘাতকারী সম্পর্কে আপনি কী জানেন?

(٤) يَوْمَ يَكُونُ ٱلنَّاسُ كَٱلْفَرَاشِ ٱلْمَبْثُوثِ

(৪) যেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মতো

(٥) وَتَكُونُ ٱلْجِبَالُ كَٱلْعِهْنِ ٱلْمَنفُوشِ

(৫) এবং পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙিন পশমের মতো।

(٦) فَأَمَّا مَن ثَقُلَتْ مَوَٰزِينُهُۥ

(৬) অতএব যার পাল্লা ভারী হবে,

(٧) فَهُوَ فِى عِيشَةٍ رَّاضِيَةٍ

(৭) সে সুখী জীবন যাপন করবে।

(٨) وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَٰزِينُهُۥ

(৮). আর যার পাল্লা হালকা হবে,

(٩) فَأُمُّهُۥ هَاوِيَةٌ

(৯) তার ঠিকানা হবে হাবিয়া।

(١٠) وَمَآ أَدْرَىٰكَ مَا هِيَهْ

(১০) আপনি জানেন তা কী?

(١١) نَارٌ حَامِيَةٌۢ

(১১) প্রজ্বলিত অগ্নি!

শাব্দিক বিশ্লেষণ

ٱلْقَارِعَةُ : (মহাপ্রলয়) বিশেষ্য, স্ত্রীলিঙ্গ । ٱلْقَارِعَةُ (মহাপ্রলয়, কিয়ামত এমন বড় বিপর্যয়, যা জাতিকে ধ্বংস করে দেয়) ال নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।

مَآ أَدْرَىٰكَ : শব্দটির মূল হলো ادراء (জানানো, অবহিত করা) ادرى (সে জানিয়েছে) ক্রিয়া, অতীতকাল, প্রথম পুরুষ, একবচন, পুংলিঙ্গ। শেষে সংযুক্ত সর্বনাম ك (তোমাকে) এবং শুরুতে প্রশ্নবোধক অব্যয় ما (কী?) যুক্ত হয়েছে। مَآ أَدْرَىٰكَ (কিসে তোমাকে জানাবে?)

كَٱلْفَرَاشِ : (পতঙ্গের মতো) فراش বিশেষ্য (পতঙ্গ, প্রজাপতি)। নির্দিষ্ট বোঝাতে ال ব্যবহৃত হয়েছে। পূর্বে সম্বন্ধসূচক অব্যয় ك (মতো) যুক্ত।

المبثوث : (ছড়ানো ) বিশেষ্য, নির্দিষ্ট বোঝাতে শুরুতে ال যুক্ত হয়েছে শব্দটি মূল হলো بث (ছড়ানো, বিক্ষিপ্ত করা)।

كَٱلْعِهْنِ : (পশমের মতো) বিশেষ্য, পূর্বে আছে নির্দিষ্ট বোঝাতে ال এবং তার পূর্বে সম্বন্ধসূচক অব্যয় ك (মতো) যুক্ত হয়েছে।

ثَقُلَتْ : শব্দটির মূল হলো ثقالت (ভারী হওয়া) ثقلت (ভারী হয়েছে) ক্রিয়া, অতীতকাল, পূর্বে আছে সংযোজক সর্বনাম مَن ثَقُلَتْ (যে, যার) مَن ثَقُلَتْ (যার ভারী হবে)

مَوَٰزِينُهُ : (তার পাল্লা) বিশেষ্য, বহুবচন। একবচন হলো ميزان (পাল্লা) শেষে কর্ম হিসেবে সর্বনাম ه (তার) যুক্ত হয়েছে।

خَفَّتْ : শব্দটির মূল হলো خف (হালকা হওয়া, গুরুত্বহীন হওয়া) خَفَّتْ (সে হালকা হয়েছে) ক্রিয়া, অতীতকাল, প্রথম পুরুষ, স্ত্রীলিঙ্গ, একবচন । পূর্বে সংযোজক অব্যয় اما (আর) এবং সংযোজক সর্বনাম من (যারা) أَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَٰزِينُه (আর যার নেকীর পাল্লা ভারী হবে)।

فَأُمُّهُ : (অতএব তার আশ্রয়স্থল) বিশেষ্য ام (মা, জননী আশ্রয়স্থল) শেষে সংযুক্ত সর্বনাম ه (তার) আর শুরুতে সংযোজক অব্যয় ف (অতএব) যুক্ত হয়েছে।

مَا هِيَهْ : সেটা কী? (কী?) এবং স্বতন্ত্র সর্বনাম هى (সে) এর মিলিত রূপ ما هى (সেটা কী?) শেষের ه কে এটা هاءالؤقت বলা হয়। এটা সর্বনামের ه নয়। هى এর শেষে ماهى যুক্ত হয়ে হয়েছে।

সূরার আলোচ্য বিষয়

সূরা ক্বারিয়ার আলোচ্য বিষয় হলো কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়া এবং পরকালে পুনরায় জীবিত হয়ে আল্লাহর দরবাবে পার্থিব জীবনের কৃতকর্মের হিসাব দেওয়া এবং প্রতিদান গ্রহণের জন্য মানুষের উপস্থিত হওয়া। এ সূরায় মহাপ্রলয় তথা কিয়ামতের ভয়াবহ ও বিভীষিকাময় পরিস্থিতি বর্ণনা করার পর আলোচনা করা হয়েছে মানুষের আমলের ওজন করার জন্য হাশরের মাঠে আল্লাহর বিচার ও আদালত বসবে। সৎ কাজের পরিমাণ যাদের বেশি হবে এবং ওজনের পাল্লা ভারী হবে তাদের পরিণাম শুভ হবে । আর অসৎ কর্মের পরিমান যাদের বেশি হবে এবং ওজনের পাল্লা ভারী হবে তাদের পরিণাম হবে খুবই মর্মান্তিক।

সূরা ক্বারিয়াহ এর তাফসির

আয়াত. ১-৩.
আপনি কি জানেন মহাপ্রলয় কী? এখানে উত্তর জানতে প্রশ্ন করা হয়নি। বরং প্রশ্ন করে কিয়ামতের ভয়াবহতা বোঝানো হয়েছে। কিয়ামতের ভয়াবহতা কেমন হবে, তা মানুষ অনুমান করতে অক্ষম। তাই নিম্নের আয়াতগুলোতে তার কিছু নিদর্শন বর্ণনা করা হয়েছে।

আয়াত-৪.
কিয়ামত সেদিন হবে, যেদিন মানুষ বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের ন্যায় হয়ে যাবে। পতঙ্গের সাথে তুলনা করা হয়েছে কয়েকটি কারণে পতঙ্গ যেমন ঝাঁকে ঝাঁকে অস্থির এবং ব্যাকুল হয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে, তেমনি পৃথিবীর সমস্ত মানুষও একটি ময়দানে সমবেত হবে। পতঙ্গের মতো শক্তিহীন ও দুর্বল হয়ে যাবে। আর অস্থির ও ব্যাকুল হয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করবে। তবে এ অবস্থা থেকে ঈমানদাররা নিরাপদ থাকবে।

আয়াত-৫.
পশম ধুনা হলে যেমন তা খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে চতুর্দিকে উড়তে থাকে, তেমনি শিঙ্গায় ফুৎকারের সাথে সাথে পাহাড়গুলোর খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে উড়তে থাকবে। আল্লাহ ধুনিত পশম দ্বারা কিয়ামতের দিনে পাহাড়গুলোর অবস্থা বুঝিয়েছেন। তাহলে মানুষের কী অবস্থা হবে, তা সহজেই বোঝা যায়। ধ্বংস তাদের জন্যই, যারা এত সুন্দর করে বোঝানোর পরেও সঠিক পথে আসছে না।

আয়াত-৬.
তারপর যার নেক আমলের পাল্লা ভারী হবে সে জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে। আমলের ওজন-ইখলাস, তাকওয়া ও আন্তরিকতার ভিত্তিতে হবে।

আয়াত-৭.
এবং সে সন্তোষজনক জীবনে থাকবে। চিরস্থায়ী জান্নাতই হবে তার নিরাপদ ঠিকানা।

আয়াত-৮. ৯.
আর যার নেক আমলের পাল্লা হালকা হবে অথবা কাফের-মুশরিকের মতো যার কোনো নেক আমলই থাকবে না তার বাসস্থান হবে হাবিয়া। হাবিয়া হলো প্রজ্বলিত অগ্নি বা জাহান্নামের নিম্ন স্তর । যার আমলের পাল্লা হালকা হবে, প্রজ্বলিত অগ্নি বা জাহান্নামের নিম্ন স্তর হবে তার আশ্রয়স্থল।

ام অর্থ: মা। মা হলো আশ্রয়স্থল। তাই ام বলে এখানে আশ্রয়স্থল বোঝানো হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যেভাবে মায়ের কোলে শিশুর আশ্রয়স্থল, ঠিক তেমনিভাবে কাফেরদের আবাসস্থল হবে জাহান্নাম। আল ক্বারিয়া সূরায় আমলের ওজন ও তার হালকা এবং ভারী হওয়ার মাধ্যমে জাহান্নাম অথবা জান্নাত লাভের বিষয়টা আলোচিত হয়েছে। আমলের ওজন দুবার হবে।

একবার ওজন করে মুমিন ও কাফেরদের মধ্যে পার্থক্য বিধান করা হবে। এরপর মুমিনদের মধ্যে সৎ কর্ম ও অসৎ কর্ম পার্থক্য বিধানের জন্য হবে দ্বিতীয় ওজন। এ সূরায় বাহ্যত প্রথম ওজন বোঝানো হয়েছে। তাফসীরে মাজহারীতে আছে, কুরআনে কারীমে সাধারণত কাফের ও সৎ কর্মপরায়ণ মুমিনের শাস্তি ও প্রতিদান বর্ণনা করা হয়েছে। মুমিনদের মধ্যে যারা সৎ ও অসৎ মিশ্র কর্ম করে, কুরআনে কারীমে সাধারণত তাদের দান-প্রতিদানের বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হয়নি।

এ পরিসরে আরেকটি বিষয় জানা প্রয়োজন, বিচার দিবসে মানুষের আমল ওজন করা হবে, গণনা হবে না। আমলের ওজন-ইখলাস তথা আন্তরিকতাপূর্ণ ও সুন্নতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সংখ্যায় কম হলেও তার আমলের ওজন বেশি হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সংখ্যায় নামায-রোযা, সদকা-খয়রাত, হজ্ব-ওমরা অনেক করে, কিন্তু সুন্নতের সাথে সামঞ্জস্য কম, এতে ইখলাস ও তাকওয়া নেই, তার আমলের ওজন কম হবে।

আয়াত-১০. ১১.
তুমি কি জানো তা কী? হাবিয়া কী?
তা অত্যন্ত প্রজ্বলিত অগ্নি। দোজখের গভীরে যে আজাব আছে তার ভয়াবহতা কারো বোধগম্য নয়। তাই এতটুকু বুঝে নাও যে এই আগুনের তীব্রতা এতই বেশি যে এর সামনে দুনিয়ার কোনো আগুনের তুলনা চলে না।

নির্দেশনা

১. মৃত্যুর পর পুনরুত্থান এবং প্রতিদান দিবসের প্রতি বিশ্বাস না থাকা দ্বীনকে অস্বীকার করার নামান্তর।
২. যারা কাফের ও বেঈমান, যাদের নেক আমল নেই; কিয়ামতের ভয়াবহতা তাদেরকে আরো বেশি ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলবে।
৩. আমলের ওজন করা হবে ইখলাস এবং তাকওয়ার ভিত্তিতে। অতএব যার নেক আমলের পাল্লা ভারী হবে তার আশ্রয়স্থল হবে জান্নাত। অন্যথায় জাহান্নাম।

আরো পড়ুন :

১০২.সূরা তাকাসুর سورة التكاثر Sura takasur এর তাফসির ও শানে নুযুল

১০৩.সূরা আছর سورة العصر Sura Asr এর তাফসির ও শানে নুযুল

১০৪.সূরা হুমাযাহ سورة الهمزة Sura humajah এর তাফসির ও শানে নুযুল

ট্যাগ সমূহ : সূরা ক্বারিয়াহ এর শানে নুযুল, সূরা ক্বারিয়াহ বাংলা উচ্চারণ, سورة القارعة, سوره القارعه, সূরা ক্বারিয়াহ এর তাফসির, সূরা ক্বারিয়াহ, সূরা কারিয়াহ এর তাফসির, সূরা ১০১, সূরা কারিয়াহ বাংলা উচ্চারণ, সূরা কারিয়াহ ফজিলত,সূরা কারিয়াহ দারস,সূরা কারিয়াহ তাফসির, সূরা কারিয়াহ এর অর্থ, সূরা কারিয়া বাংলা উচ্চারণ, sura karia, سورة القارعه,সূরা কারিয়াহ এর শানে নুযুল,সূরা ক্বারিয়াহ এর শানে নুযুল, সূরা ক্বারিয়াহ বাংলা উচ্চারণ, سورة القارعة, سوره القارعه, সূরা ক্বারিয়াহ এর তাফসির, সূরা ক্বারিয়াহ, সূরা কারিয়াহ এর তাফসির, সূরা ১০১, সূরা কারিয়াহ বাংলা উচ্চারণ, সূরা কারিয়াহ ফজিলত,সূরা কারিয়াহ দারস,সূরা কারিয়াহ তাফসির, সূরা কারিয়াহ এর অর্থ, সূরা কারিয়া বাংলা উচ্চারণ, sura karia, سورة القارعه,সূরা কারিয়াহ এর শানে নুযুল,

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top