সূরার পরিচয় :
সূরার নাম : সূরা নাযিয়াত। | সূরার অর্থ : প্রচেষ্টাকারী। |
সূরা নং : ৭৯ | রুকু সংখ্যা : ২ |
আয়াত সংখ্যা : ৪৬ | সিজদা সংখ্যা : ০ |
শব্দ সংখ্যা : ১৭৯ | পারার সংখ্যা : ৩০ |
অক্ষর সংখ্যা : ৭৬২ | শ্রেণী : মাক্কী। |
সূরা নাযিয়াত سورة النازعات Surah An Naziat এর তাফসির ও শানে নুযুল
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ শুরু করছি আল্লাহ তা’আলার নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু । |
(١) وَٱلنَّٰزِعَٰتِ غَرْقًا (১) শপথ সেই ফেরেশতাগণের, যারা নির্মমভাবে আত্মা উৎপাটন করে, |
(٢) وَٱلنَّٰشِطَٰتِ نَشْطًا (২) শপথ তাদের, যারা আত্মার বাঁধন খুলে দেয় মৃদুভাবে; |
(٣) وَٱلسَّٰبِحَٰتِ سَبْحًا (৩) শপথ তাদের, যারা সম্ভরণ করে দ্রুতগতিতে, |
(٤) فَٱلسَّٰبِقَٰتِ سَبْقًا (৪) শপথ তাদের, যারা দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয় এবং |
(٥) فَٱلْمُدَبِّرَٰتِ أَمْرًا (৫) শপথ তাদের যারা সকল কর্ম নির্বাহ করে, কিয়ামত অবশ্যই হবে। |
(٦) يَوْمَ تَرْجُفُ ٱلرَّاجِفَةُ (৬) যেদিন প্রকম্পিত করবে প্রকম্পিতকারী, |
(٧) تَتْبَعُهَا ٱلرَّادِفَةُ (৭) অতঃপর পশ্চাতে আসবে পশ্চাৎগামী; |
(٨) قُلُوبٌ يَوْمَئِذٍ وَاجِفَةٌ (৮) সেদিন অনেক হৃদয় ভীত-বিহ্বল হবে। |
(٩) أَبْصَٰرُهَا خَٰشِعَةٌ (৯) তাদের দৃষ্টি নত হবে। |
(١٠) يَقُولُونَ أَءِنَّا لَمَرْدُودُونَ فِى ٱلْحَافِرَةِ (১০) তারা বলে, আমরা কি পূর্বাবস্থায় প্রত্যাবর্তিত হবই, |
(١١) أَءِذَا كُنَّا عِظَٰمًا نَّخِرَةً (১১) গলিত অস্থি হয়ে যাওয়ার পরও? |
(١٢) قَالُوا۟ تِلْكَ إِذًا كَرَّةٌ خَاسِرَةٌ (১২) তারা বলে, তবে তো এ প্রত্যাবর্তন সর্বনাশা হবে। |
(١٣) فَإِنَّمَا هِىَ زَجْرَةٌ وَٰحِدَةٌ (১৩) অতএব, এটা তো কেবল এক মহা-নাদ, |
(١٤) فَإِذَا هُم بِٱلسَّاهِرَةِ (১৪) তখনই তারা ময়দানে আবির্ভূত হবে। |
(١٥) هَلْ أَتَىٰكَ حَدِيثُ مُوسَىٰٓ (১৫) মুসার বৃত্তান্ত আপনার কাছে পৌঁছেছে কি? |
(١٦) إِذْ نَادَىٰهُ رَبُّهُۥ بِٱلْوَادِ ٱلْمُقَدَّسِ طُوًى (১৬) যখন তার পালনকর্তা তাকে পবিত্র ভুয়া উপত্যকায় আহ্বান করেছিলেন, |
(١٧) ٱذْهَبْ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُۥ طَغَىٰ (১৭) ফেরাউনের কাছে যাও, নিশ্চয়ই সে সীমালঙ্ঘন করেছে। |
(١٨) فَقُلْ هَل لَّكَ إِلَىٰٓ أَن تَزَكَّىٰ (১৮) অতঃপর বলো, তোমার পবিত্র হওয়ার আগ্রহ আছে কি? |
(١٩) وَأَهْدِيَكَ إِلَىٰ رَبِّكَ فَتَخْشَىٰ (১৯) আমি তোমাকে তোমার পালনকর্তার দিকে পথ দেখাব, যাতে তুমি তাকে ভয় করো। |
(٢٠) فَأَرَىٰهُ ٱلْءَايَةَ ٱلْكُبْرَىٰ (২০) অতঃপর সে তাকে মহা-নিদর্শন দেখাল। |
(٢١) فَكَذَّبَ وَعَصَىٰ (২১) কিন্তু সে মিথ্যারোপ করল এবং অমান্য করল। |
(٢٢) ثُمَّ أَدْبَرَ يَسْعَىٰ (২২) অতঃপর সে প্রতিকার চেষ্টায় প্রস্থান করল। |
(٣٢) فَحَشَرَ فَنَادَىٰ (২৩) সে সকলকে সমবেত করল এবং সজোরে আহ্বান করল, |
(٣٤) فَقَالَ أَنَا۠ رَبُّكُمُ ٱلْأَعْلَىٰ (২৪) এবং বলল, আমিই তোমাদের সেরা পালনকর্তা। |
(٢٥) فَأَخَذَهُ ٱللَّهُ نَكَالَ ٱلْءَاخِرَةِ وَٱلْأُولَىٰٓ (২৫) অতঃপর আল্লাহ তাকে ইহকালের ও পরকালের শাস্তি দিলেন। |
(٢٦) إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّمَن يَخْشَىٰٓ (২৬) যে ভয় করে তার জন্য অবশ্যই এতে শিক্ষা রয়েছে। |
(٢٧) ءَأَنتُمْ أَشَدُّ خَلْقًا أَمِ ٱلسَّمَآءُ بَنَىٰهَا (২৭) তোমাদের সৃষ্টি অধিক কঠিন, না আকাশের, যা তিনি নির্মাণ করেছেন? |
(٢٨) رَفَعَ سَمْكَهَا فَسَوَّىٰهَا (২৮) তিনি একে উচ্চ করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন। |
(٢٩) وَأَغْطَشَ لَيْلَهَا وَأَخْرَجَ ضُحَىٰهَا (২৯) তিনি এর রাত্রিকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং এর সূর্যালোক প্রকাশ করেছেন। |
(٣٠) وَٱلْأَرْضَ بَعْدَ ذَٰلِكَ دَحَىٰهَآ (৩০) পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন। |
(٣١) أَخْرَجَ مِنْهَا مَآءَهَا وَمَرْعَىٰهَا (৩১) তিনি এর মধ্য থেকে এর পানি ও ঘাস নির্গত করেছেন, |
(٣٢) وَٱلْجِبَالَ أَرْسَىٰهَا (৩২) পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, |
(٣٣) مَتَٰعًا لَّكُمْ وَلِأَنْعَٰمِكُمْ (৩৩) তোমাদের ও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের উপকারার্থে। |
(٣٤) فَإِذَا جَآءَتِ ٱلطَّآمَّةُ ٱلْكُبْرَىٰ (৩৪) অতঃপর যখন মহাসংকট এসে যাবে। |
(٣٥) يَوْمَ يَتَذَكَّرُ ٱلْإِنسَٰنُ مَا سَعَىٰ (৩৫) অর্থাৎ যেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম স্মরণ করবে |
(٣٦) وَبُرِّزَتِ ٱلْجَحِيمُ لِمَن يَرَىٰ (৩৬) এবং দর্শকদের জন্য জাহান্নাম প্রকাশ করা হবে, |
(٣٧) فَأَمَّا مَن طَغَىٰ (৩৭) তখন যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন না করেছে; |
(٣٨) وَءَاثَرَ ٱلْحَيَوٰةَ ٱلدُّنْيَا (৩৮) এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, |
(٣٩) فَإِنَّ ٱلْجَحِيمَ هِىَ ٱلْمَأْوَىٰ (৩৯) তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। |
(٤٠) وَأَ مَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِۦ وَنَهَى ٱلنَّفْسَ عَنِ ٱلْهَوَىٰ (৪০) পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার রবের সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল-খুশি থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে; |
(٤١) فَإِنَّ ٱلْجَنَّةَ هِىَ ٱلْمَأْوَىٰ (৪১) তার ঠিকানা হবে জান্নাত। |
(٤٢) يَسْـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَىٰهَا (৪২) তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, কিয়ামত কখন হবে? |
(٤٣) فِيمَ أَنتَ مِن ذِكْرَىٰهَآ (৪৩) এর বর্ণনার সাথে আপনার কী সম্পর্ক? |
(٤٤) إِلَىٰ رَبِّكَ مُنتَهَىٰهَآ (৪৪) এর চরম জ্ঞান আপনার পালনকর্তার কাছে। |
(٤٥) إِنَّمَآ أَنتَ مُنذِرُ مَن يَخْشَىٰهَا (৪৫) যে একে ভয় করে, আপনি তো কেবল তাকেই সতর্ক করবেন। |
(٤٦) كَأَ نَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَهَا لَمْ يَلْبَثُوٓا۟ إِلَّا عَشِيَّةً أَوْ ضُحَىٰهَا (৪৬) যেদিন তারা একে দেখবে; সেদিন তাদের মনে হবে যেন তারা দুনিয়াতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক সকাল অবস্থান করেছে। |
সূরা নাযিয়াত এর আলোচ্য বিষয়
আলোচ্য নাযিয়াত সূরায় কিয়ামত, মৃত্যুর পরবর্তী জীবন এবং এর সংশ্লিষ্ট কতিপয় অবস্থার বিবরণ পেশ করা হয়েছে। তা ছাড়া আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূল স. কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার পরিণতি সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে।
সূরা নাযিয়াত এর শানে নুযুল
হিজরতের পূর্বে যেসব অকাট্য প্রমাণসহ আয়াত নাযিল হয়েছিল মক্কার হঠকারী কাফেররা নিজেদের জ্ঞান-বুদ্ধির ফলে ওই সকল আয়াত বিশ্বাস করত না এবং এর প্রতি কোনো ভ্রূক্ষেপও করত না। অথচ কিয়ামতের ধ্বংস-প্রলয় সম্পর্কে বারবার তাদের বলা হচ্ছিল। আল্লাহর অসীম কুদরতের কথাও তাদের নিকট বারবার বিবৃত হচ্ছিল । তবুও তারা বলত, কিয়ামত হবে—এ কথাটা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ সূরা নাযিল করে কিয়ামতের সম্ভাবনাকে পূর্ণ নিশ্চয়তার সাথে প্রমাণ করেন।
আয়াত-১
কসম সে ফেরেশতাদের, যাঁরা কঠোরভাবে প্রাণ বের করেন। এখানে আযাবের জন্য নিয়োজিত ওই সব ফেরেশতাকে বোঝানো হয়েছে, যাঁরা কাফেরদের আত্মা নির্মমভাবে বের করেন। যেহেতু এই নির্মমতা আত্মিক, তাই দর্শকদের অনুভব করা জরুরি নয়।
আয়াত-২
এবং যারা মৃদুভাবে বন্ধন খুলে দেয়, অর্থাৎ যে সমস্ত ফেরেশতা মুমিনের শরীর থেকে জীবনের বন্ধন খুলে দেন। ফলে সে খুশিতে বরযখের দিকে দ্রুতবেগে যেতে চায় ।
আয়াত-৩
এবং যারা তীব্র গতিতে সাঁতরিয়ে চলে। এখানে মৃত্যুর কাজে নিয়োজিত ওই সমস্ত ফেরেশতা উদ্দেশ্য, যাঁরা মানুষের রূহ কবজ করার পর দ্রুতগতিতে আকাশের দিকে নিয়ে যান।
আয়াত-৪
অনন্তর যারা দ্রুতবেগে দৌড়ায়। এখানে বলা হচ্ছে, যে আত্মা ফেরেশতাগণের হস্তগত হয়, তাকে ভালো অথবা মন্দ ঠিকানায় পৌঁছানোর কাজে তারা দ্রুততায় একে অপরকে ডিঙ্গিয়ে যায়। তারা মুমিনের আত্মাকে জান্নাতের আবহাওয়ায় ও নিয়ামতের জায়গায় এবং কাফেরের আত্মাকে জাহান্নামের আবহাওয়ায় ও আজাবের জায়গায় পৌঁছে দেয়।
আয়াত-৫
অতঃপর প্রত্যেক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ যে সমস্ত আত্মাকে সাওয়াব ও আরাম দেওয়ার আদেশ হয়, ফেরেশতাগণ তার জন্য সাওয়াব ও আরামের ব্যবস্থা করেন। এবং যাকে আযাব ও কষ্টে রাখার আদেশ হয়, তাঁরা তার জন্য আযাব ও কষ্টের ব্যবস্থা করেন।
আয়াত-৬
যেদিন প্রকম্পনকারী কাঁপিয়ে দেবে। এর দ্বারা শিঙ্গার প্রথম ফুৎকার বোঝানো হয়েছে। প্রথমবার ফুঁ দেওয়া হলে আসমান ও যমীনের সমস্ত প্রাণী বেহুঁশ ও ভীতবিহ্বল হয়ে মৃত্যু ঘটবে এবং বিশ্বজগৎ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। দ্বিতীয় ফুৎকারে সবার পুনরুত্থান হবে। সূরা নাবার ১৮ নম্বর আয়াতে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
আয়াত-৭
তার পেছনে আসবে পরবর্তীটি। এর দ্বারা শিঙ্গার দ্বিতীয় ফুঁ বোঝানো হয়েছে। প্রথম ফুৎকারে সকলের মৃত্যু ঘটবে আর দ্বিতীয় ফুৎকারে সকলে জীবিত হয়ে হাশরের মাঠে একত্র হবে। অনেকে প্রশ্ন করে থাকে মৃত্যু এবং জীবিত করা বিপরীতমুখী দুটি কাজ একইভাবে বা ফুৎকারের মাধ্যমে সমাধান হবে কেমন করে? বর্তমান বিজ্ঞান যুগে এ ধরনের সংশয় থাকার কথা নয়। লক্ষ করুন, যে বাটনে মোবাইল ফোন বন্ধ করা হয়, ঠিক ওই বাটনে তা চালু করা হয় ।
আয়াত-৮-৯
সেদিনের ভয়াবহতার দরুন অনেক হৃদয় প্রকম্পিত হবে এবং অপমান ও লজ্জার কারণে চোখ অবনত হয়ে থাকবে।
আয়াত-১০-১১
তারা (কাফেরগণ) বলে, আমাদেরকে কি পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে? অর্থাৎ আমাদের মৃত্যুর পর পুনরায় আগের মতো জীবিতাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে? এবং আমরা যখন গলিত অস্থিতে পরিণত হব তখনও কি আমাদের জীবিতাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে?
আয়াত-১২
তারা বলে, তাহলে তো সেটা বড় ক্ষতির প্রত্যাবর্তন। অর্থাৎ বাস্তবিকই যদি আমাদের পুনরায় জীবিত করা হয়, তবে আমরা বড় ক্ষতিগ্রস্ত হব। কেননা আমরা দ্বিতীয় জীবনের জন্য কোনো রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করিনি।
আয়াত-১৩-১৪
এটা তো কেবল একটি ভীষণ ধ্বনি হবে। অর্থাৎ কাফেররা এ কাজ অনেক মুশকিল মনে করে। অথচ আল্লাহ তা’আলা অগ্র-পশ্চাতের সকলকে একটিমাত্র ধ্বনির মাধ্যমে হাশরে দণ্ডায়মান করবেন। এ কথাটি বোঝানোর জন্যই পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে। ফলে সকলেই তৎক্ষণাৎ মাঠে এসে উপস্থিত হবে।’ একেই ساهرة (মাঠ) বলা হয়েছে। অতঃপর কিয়ামত অবিশ্বাসীদের হঠকারিতা ও শত্রুতার ফলে রাসূলুল্লাহ স. যে মর্মপীড়া অনুভব করতেন, তা দূর করার উদ্দেশ্যে নবী মূসা আ. ও ফেরাউনের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, তা বোঝানোর জন্য যে অন্যান্য নবীর সাথেও কাফেররা এমন আচরণ করেছে।
আয়াত-১৫-২৪
এ আয়াতসমূহে মূসা আ. ও ফেরাউনের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। ফেরাউন নিজেকে বড় খোদা দাবি করেছিল। তার পতন হয়েছে। মূসা আ. ফেরাউনকে আল্লাহ তা’আলার ভয় ও মারিফাতের দাওয়াত দিয়েছেন। এবং দাওয়াত দেওয়ার ক্ষেত্রে দলিল পূর্ণতার জন্য তাঁর সবচেয়ে বড় মু’জিযা লাঠি সাপ হওয়াকে প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু এতদসত্ত্বেও সে মূসা আ.-কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল এবং তাঁকে অমান্য করল। এবং মূসা আ.- এর মোকাবিলা করার জন্য জাদুকরদের জমা করল। ফেরাউন বলল যে, আমিই তো সবচেয়ে বড় প্রতিপালক। এই মূসা নবীকে কে পাঠিয়েছিলেন? আপনাকে যিনি প্রেরণ করেছেন মূসা আ.-কে তিনিই পাঠিয়েছিলেন। তাই আপনি তাদের আচরণে বিচলিত না হয়ে সেদিনের কথা স্মরণ করুন, যেদিন মূসা আ.-কে তাঁর প্রভু মিসরের পবিত্র ভূমিতে ত্বোয়া উপত্যকায় আহ্বান করে বলেছিলেন, সীমালঙ্ঘনকারী ফেরাউনের কাছে তুমি যাও ।
انك بالواد المقدس طوى.. إذهب إلى فرعون إنه طغى
নিশ্চয়ই তুমি পবিত্র উপত্যকা তুয়ায় (ত্বোয়াহা-১২) অতএব তুমি ফেরাউনের দিকে যাও, সে সীমালঙ্ঘনকারী। (ত্বোয়াহা-২৪)
মিসরে সিনাই পর্বত উপকূলে বিশাল এক ময়দানকে মুকাদ্দাস ময়দান বা পবিত্র ভূমি হিসেবে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ময়দানে তিনি আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন, তাই এটাকে পবিত্র ভূমি বলা হয়েছে। এক তাফসীর অনুযায়ী, এর এক অংশের নাম ত্বোয়া। অপর বর্ণনায় ত্বোয়া অর্থ: অতিক্রম করা। মূসা আ. এ ময়দানে প্রায় ১০ বছর অবস্থানের পর তা অতিক্রম করেছিলেন। তাই এটাকে ত্বোয়া বলা হয়েছে।
আয়াত-২৫-২৬
অনন্তর আল্লাহ ফেরাউনকে আখেরাতের ও দুনিয়ার আজাবে পাকড়াও করলেন। দুনিয়ায় পানিতে ডোবানোর মাধ্যমে এবং আখেরাতে আগুনে জ্বালানোর মাধ্যমে। এই ঘটনার মধ্যে অনেক বিষয় নসিহত ও শিক্ষাগ্রহণের মতো আছে। যারা আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করে।
আয়াত-২৭-৩৩
এ আয়াতসমূহে মরে মাটিতে পরিণত হয়ে যাওয়ার পর পুনরুজ্জীবন কিরূপে হবে! কাফেরদের এই বিস্ময়ের জবাব দেওয়া হয়েছে। অতঃপর নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সৃজিত বস্তুসমূহের উল্লেখ করে অসাবধান মানুষকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে যে, যে মহান সত্তা কোনোরূপ উপকরণ ব্যতিরেকেই এসব মহাসৃষ্টিকে প্রথমবার অস্তিত্ব দান করেছেন, তিনি যদি এগুলোর ধ্বংসপ্রাপ্তির পর পুনরায় সৃষ্টি করে দেন, তবে এতে বিস্ময়ের কী আছে? আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তোমাদের পুনরায় সৃষ্টি করা অধিক কঠিন না আকাশের, যা তিনি নির্মাণ করেছেন।’ আরো যে কত বিশাল সৃষ্টিরাজি তার বিশ্লেষণও পরবর্তী আয়াতগুলোতে দিয়েছেন।
আয়াত-৩৪-৪১
এখানে আবার কিয়ামতের দিনের কঠোরতা, প্রত্যেকের আমলনামা সামনে আসা এবং জান্নাতি ও জাহান্নামীদের ঠিকানা বর্ণনা করা হয়েছে। অবশেষে জান্নাতী ও জাহান্নামীদের দুটি করে বিশেষ আলামত উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমে জাহান্নামীদের দুটি বিশেষ আলামত বর্ণিত হয়েছে।
এক. আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করা।
দুই. পার্থিব জীবনকে পরকালের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া, যে কাজ অবলম্বনে দুনিয়াতে সুখ ও আনন্দ পাওয়া যায়। কিন্তু পরকালে তার জন্য আযাব নির্দিষ্ট আছে, সে ক্ষেত্রে পরকালের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করে দুনিয়ার সুখ ও আনন্দকেই অগ্রাধিকার দেওয়া। দুনিয়াতে যার মধ্যে উল্লিখিত আলামত দুটি পাওয়া যায় তার সম্পর্কে বলা হয়েছে
জাহান্নামই তার ঠিকানা।
এরপর জান্নাতীদের বিশেষ দুটি আলামতের বর্ণনা করা হয়েছে।
এক. দুনিয়াতে প্রত্যেক কাজের সময় এ ভয় করা যে, একদিন আল্লাহ তা’আলার সামনে উপস্থিত হয়ে এ কাজের হিসাব দিতে হবে।
দুই. অবৈধ খেয়াল-খুশি চরিতার্থ করা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখা । যে ব্যক্তি দুনিয়াতে এই দুটি গুণ অর্জন করতে সক্ষম হয়, কুরআন পাক তাকে সুসংবাদ দেয় যে জান্নাতই তার ঠিকানা।
আয়াত-৪২
হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আলোচ্য আয়াত মক্কার মুশরিকদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। ঘটনাটি হলো যে মক্কার মুশরিক সম্প্রদায়ের লোকেরা বিদ্রূপাত্মকভাবে হযরত | রাসূল স.-কে জিজ্ঞেস করেছিল যে কিয়ামত কবে হবে? মুশরিকদের জিজ্ঞেস করার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা আলোচ্য আয়াত নাযিল করেছেন, ‘তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে কিয়ামত কখন হবে।’ এ বিষয়ে সূরা নাবায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত-৪৩-৪৪
ঠিক কখন কিয়ামত হবে, তা কেবল আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন। এ সম্পর্কে তিনি কাউকে অবহিত করেননি। আপনাকেও নয়। তা আপনি যখন জানেন না, তখন এ সম্পর্কে সওয়াল-জওয়াব করা ও এ নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ আপনার কোথায়-যে আপনি তাতে লিপ্ত হবেন?
আয়াত-৪৫
আপনার কাজ কিয়ামতের দিন-ক্ষণ জানানো নয়; বরং কিয়ামত যে অবশ্যম্ভাবী তা জানানো এবং তার বিভীষিকা সম্পর্কে সতর্ক করা। যদিও এ সতর্কীকরণ সকলের জন্যই ব্যাপক, কিন্তু এর দ্বারা উপকৃত হয় কেবল তারাই, যারা সেই দিনকে ভয় করে। এ কারণেই বিশেষভাবে তাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আয়াত-৪৬
আখেরাতে পৌঁছার পর তার বিভীষিকা দেখে দুনিয়ার জীবন বা কবরে অবস্থানকালীন জীবনকে খুবই সংক্ষিপ্ত মনে হবে।
নির্দেশনা
১. আল্লাহ তা’আলা যে সমস্ত আয়াত ও বিধান নাযিল করেছেন সেগুলোকে নিজের জ্ঞান-বুদ্ধির উর্ধ্বে মনে করতে হবে।
২. কিয়ামত সংঘটিত হওয়া ও কিয়ামতের পূর্বাপর ভয়াবহতার বিষয়টি পূর্ণ বিশ্বাস করতে হবে।
৩. পরকালের ঠিকানা জান্নাত বানানোর জন্য জান্নাতীদের বিশেষ দুটি গুণ অর্জন করতে হবে। গুণ দুটি হলো-
এক. দুনিয়াতে সকল কাজের সময় এ ভয় করা যে, একদিন আল্লাহ তা’আলার সামনে
উপস্থিত হয়ে এ কাজের হিসাব দিতে হবে।
দুই. অবৈধ খেয়াল-খুশি চরিতার্থ করা থেকে নিজেকে নিবৃত রাখতে হবে।
আরো পড়ুন :
৮০.সূরা আবাসা سورة عبس Surah Abasa এর তাফসির ও শানে নুযুল
৮১.সূরা আত তাকভীর سورة التكوير Surah At Takwir এর তাফসির ও শানে নুযুল
৮২.সূরা আল ইনফিতার سورة الانفطار Surah Al Infitar এর তাফসির ও শানে নুযুল
ট্যাগ সমূহ : সূরা আন নাযিয়াত, সূরা আন নাযিয়াত বাংলা উচ্চারণ, সূরা আন নাযিয়াত তাফসীর,সূরা নাযিয়াত এর শানে নুযুল, surah an najiyah, surah an naziat ayat 30, surah an naziat full, سورة النازعات,surah an naziat with urdu translation, surah an naziat pdf, surah an naziat benefits, surah an naziat mp3, সূরা নাযিয়াত, সূরা নাযিয়াত তাফসীর, সূরা নাযিয়াত আয়াত ৩০, সূরা নাযিয়াত এর তাফসীর, সূরা নাযিয়াত এর শানে নুযুল, সূরা নাযিয়াত বাংলা অর্থ, সূরা নাযিয়াত বাংলা অনুবাদ, সূরা নাযিয়াত বাংলা উচ্চারণ, সূরা নাযিয়াত আয়াত ৪০, সূরা নাযিয়াত তেলাওয়াত, surah najiyah,নাযিয়াত নামের অর্থ কি, সূরা নাযিয়াত বাংলা অর্থ, সূরা নাযিয়াত বাংলা অনুবাদ, সূরা নাযিয়াত বাংলা উচ্চারণ, সূরা নাযিয়াত, সুরা নাযিয়াত, সূরা নাযিয়াত তাফসীর, সূরা নাযিয়াত,تفسير سورة النازعات, সূরা নাযিয়াত বাংলা অর্থ, সূরা নাযিয়াত তাফসীর, সূরা নাযিয়াত আয়াত ৩০, সূরা নাযিয়াত আয়াত ৪০, সূরা নাযিয়াত এর তাফসীর, সূরা নাযিয়াত বাংলা অনুবাদ, ৭৯ নং সূরা, সূরা নাযিয়াত বাংলা উচ্চারণ, সূরা মাযিয়াত আয়াত ৪৬, সূরা নাযিয়াত তেলাওয়াত, সূরা আন নাযিয়াত বাংলা উচ্চারণ, সূরা আন নাযিয়াত তাফসীর, সূরা আন নাযিয়াত,ইযা যা আ নাসরুল্লাহি সূরা, সূরা নাজিয়াত তেলাওয়াত, সূরা নাযিয়াত,سوره النازعات, معاني سورة النازعات, شرح سورة النازعات, |