৯১.সূরা আশ শামস سورة الشمس Surah Shams এর তাফসির ও শানে নুযুল

সূরা আশ শামস এর শানে নুযুল, সূরা আশ শামস বাংলা উচ্চারণ, সূরা আশ শামস আয়াত ৯, সূরা আশ শামস এর ফজিলত, সূরা আশ শামস আয়াত ১০, সূরা আশ শামস এর অনুবাদ, সূরা আশ শামস এর শিক্ষা,, সূরা আশ শামস এর ব্যাখ্যা, সূরা আশ শামস তেলাওয়াত, سورة الشمس, সূরা শামস বাংলা উচ্চারণ, সূরা শামস আয়াত ৯, সূরা শামস এর শানে নুযুল, সূরা শামস অর্থসহ, সূরা শামস, সূরা শামস এর বাংলা অনুবাদ, সূরা শামস আয়াত ১০, সূরা শামস এর শানে নুযুল, সূরা শামস এর তাফসীর, সূরা আশ শামস, সূরা আশ শামস এর অনুবাদ, সূরা আশ শামস আয়াত ৯, সূরা আশ শামস বাংলা উচ্চারণ, সূরা আশ শামস আয়াত ৯ ১০, সূরা আশ শামস বাংলা অনুবাদ, সূরা আশ শামস বাংলা উচ্চারন, সূরা শামস, সূরা শামস আয়াত ৯, সূরা শামস বাংলা উচ্চারণ সহ, সূরা শামস এর বাংলা অনুবাদ, সূরা শামস অর্থসহ, সূরা শামস বাংলা উচ্চারণ, সূরা শামস এর তাফসীর,surah shams, surah shams bangla, benefits of surah shams, surah shams with bangla translation, surah shams tafseer, surah shams translation, surah shams with bangla, surah shams arabic text, sura shams, سوره الشمس, سورة الشمس مكتوبة, سوره الشمس سوره الشمس, فضل سورة الشمس,
সূরা আশ শামস এর শানে নুযুল

সূরার পরিচয় :

সূরার নাম : সূরা আশ শামস।সূরার অর্থ : সূর্য।
সূরা নং : ৯১রুকু সংখ্যা : ১
আয়াত সংখ্যা : ১৫সিজদা সংখ্যা : ০
শব্দ সংখ্যা : ৫৪পারার সংখ্যা : ৩০
অক্ষর সংখ্যা : ২৪৭শ্রেণী : মাক্কী।

সূরা আশ শামস سورة الشمس Surah Shams এর তাফসির ও শানে নুযুল


بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

শুরু করছি আল্লাহ তা’আলার নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

(١) وَٱلشَّمْسِ وَضُحَىٰهَا

(১) শপথ সূর্যের ও তার কিরণের,

(٢) وَٱلْقَمَرِ إِذَا تَلَىٰهَا

(২) শপথ চন্দ্রের, যখন তা সূর্যের পেছনে চলে,

(٣) وَٱلنَّهَارِ إِذَا جَلَّىٰهَا

(৩) শপথ দিবসের, যখন সে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে,

(٤) وَٱلَّيْلِ إِذَا يَغْشَىٰهَا

(৪) শপথ রাত্রির, যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে,

(٥) وَٱلسَّمَآءِ وَمَا بَنَىٰهَا

(৫) শপথ আকাশের এবং যিনি তা নির্মাণ করেছেন, তাঁর।

(٦) وَٱلْأَرْضِ وَمَا طَحَىٰهَا

(৬) শপথ জমিনের এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন, তাঁর,

(٧) وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّىٰهَا

(৭) শপথ আত্মার এবং যিনি তাকে যথাযথ করেছেন, তাঁর,

(٨) فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَىٰهَا

(৮) অতঃপর তাকে (আত্মাকে) তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন,

(٩) قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّىٰهَا

(৯) অবশ্যই সে সফল, যে তাকে (আত্মাকে) পবিত্র করে

(١٠) وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّىٰهَا

(১০) আর অবশ্যই সে বিফল, যে তাকে (আত্মাকে) কলুষিত করে।

(١١) كَذَّبَتْ ثَمُودُ بِطَغْوَىٰهَآ

(১১) সামুদ জাতি নিজেদের সীমালঙ্গনের কারণে (তাদের নবী হযরত সালিহ আ.) এর প্রতি মিথ্যারোপ করেছে।

(١٢) إِذِ ٱنۢبَعَثَ أَشْقَىٰهَا

(১২) যখন তাদের সর্বাধিক হতভাগ্য ব্যাক্তি (উচু হত্যা করতে) তৎপর সামুন বিস্তারোপ হয়ে উঠল

(١٣) فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ ٱللَّهِ نَاقَةَ ٱللَّهِ وَسُقْيَٰهَا

(১৩) তখন অন্তাহর রাসুল (সালিহ আ.) তাদেরকে বললেন, তোমরা আল্লাহর উহাকে (হত্যা করা বর্জন করো) এবং তার পানি পান করানোর (বিষয়ে সতর্ক থাকো)

(١٤) فَكَذَّبُوهُ فَعَقَرُوهَا فَدَمْدَمَ عَلَيْهِمْ رَبُّهُم بِذَنۢبِهِمْ فَسَوَّىٰهَا

(১৪) তারা তাঁর (রাসূলের) প্রতি মিথ্যারোপ করল এবং তাকে (উস্ত্রীকে) হত্যা করল। তখন তাদের পাপের কারণে তাদের পালনকর্তা তাদেরকে ধ্বংস করে একাকার করে দিলেন।

(١٥) وَلَا يَخَافُ عُقْبَٰهَا

(১৫) আল্লাহ তা’আলা এই ধ্বংসের কোনো (বিরূপ) পরিণতির আশঙ্কা করেন না ।

সূরা আশ শামস এর শানে নুযুল ও আলোচ্য বিষয়

এ সূরায় দুটি বিষয়ের আলোচনা এসেছে :
এক. মানুষের আত্মার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা আত্মাকে সৎ কর্ম ও অসৎ কর্মের জ্ঞান দান করেছেন।
দুই. সামূদ সম্প্রদায়ের অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন করার বর্ণনা এসেছে। তারা কুফর ও শিরকে লিপ্ত ছিল। তাদের রাসূল হযরত সালিহ আ.-কে অবিশ্বাস করেছিল এবং উষ্ট্রীকে হত্যা করেছিল । ফলে তাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

সূরা শামস এর তাফসীর

আয়াত-১.
শপথ সূর্যের ও তার কিরণের তথা পূর্বাহ্নের কিরণের।

আয়াত-২.
শপথ চাঁদের, যখন তা সূর্যের পেছনে চলে। এ আয়াতে পূর্ণিমা ও তার নিকটবর্তী কয়েক রাতের চাঁদকে বোঝানো হয়েছে। এসব রাতে সূর্য অস্ত যাওয়ার পরপরই পরিপূর্ণ আলো নিয়ে চাঁদ উদিত হয়। সূর্য ও চন্দ্রের শপথ করা হয়েছে। কারণ এ দুটিতে মানুষের অনেক উপকার রয়েছে। সন্ধাবেলা একই সময়ে আল্লাহর বড় দুটি কুদরত প্রকাশ পায়, সূর্য ডুবে যাওয়া ও চন্দ্র উদিত হওয়া

আয়াত-৩.
শপথ দিনের, যখন সে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে। অর্থাৎ যখন দিন শুরু হয়ে বেলা যেতে থাকে, তখন সূর্য উজ্জ্বল দেখা যায়। কোনো কোনো তাফসীরবিদ এই অর্থ করেছেন যে, শপথ দিনের, যখন তা পৃথিবীকে আলোকিত করে।

আয়াত-৪.
শপথ রাতের, যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে। অর্থাৎ যখন রাত সূর্যের আলোকে ঢেকে দেয় এবং চতুর্দিকে অন্ধকার ছেয়ে যায়।

আয়াত-৫.
শপথ আকাশের এবং যিনি তা নির্মাণ করেছেন তাঁর। কোনো কোনো তাফসীরবিদ এই অর্থ করেছেন যে, শপথ আকাশের ও তা নির্মাণের।

আয়াত-৬.
শপথ জমিনের এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন তাঁর। কোনো কোনো তাফসীরবিদ বলেছেন, শপথ জমিনের ও তা বিস্তৃত করার।

আয়াত-৭.
শপথ আত্মার এবং যিনি তাকে যথাযথ করেছেন তাঁর। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা মানুষের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অনেক সুন্দর করে যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে চলার জন্য দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি, বাকশক্তি ও চিন্তাশক্তি দান করেছেন। কোনো কোনো তাফসীরবিদ বলেছেন, শপথ আত্মার ও তাকে যথাযথ করার। তবে তিনটি আয়াতে অধিকাংশ তাফসীরবিদ প্রথম ব্যাখ্যাটি করেছেন। ৫, ৬, ৭ নং আয়াতে সৃষ্টির শপথকে স্রষ্টার শপথের পূর্বে উল্লেখ করার তাৎপর্য হলো, মানুষ যেন এসব বড় বড় সৃষ্টির মধ্যে চিন্তা করে এগুলোর স্রষ্টা আল্লাহ তা’আলাকে চিনতে পারে।

আয়াত-৮.
অতঃপর আত্মাকে অসৎ কর্ম ও সৎ কর্মের জ্ঞান দান করেছেন। আল্লাহ তা’আলা মানুষকে সুস্থ বিবেক ও বিশুদ্ধ স্বভাবের মাধ্যমে সৎ কর্ম ও অসৎ কর্মে পার্থক্য করার জ্ঞান দান করেছেন এবং নবী-রাসূলদের প্রেরণ করে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টিগতভাবে মানুষের মধ্যে ইবাদত ও গুনাহ করার যোগ্যতা রেখেছেন। অতঃপর তাকে যেভাবে ইবাদতের কাজ করার স্বাধীনতা ও সক্ষমতা দান করেছেন, ঠিক তেমনি গুনাহের কাজ করার স্বাধীনতা ও সক্ষমতা দান করেছেন।

অতএব, সে যদি নিজ ইচ্ছা ও সক্ষমতায় ইবাদতের কাজ করে, তাহলে সাওয়াব পাবে। আর যদি নিজ ইচ্ছায় ও সক্ষমতায় গুনাহ করে তাহলে শাস্তির যোগ্য হবে। এ থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ তা’য়ালা মানুষের মধ্যে পাপ করা ও ইবাদত করার যোগ্যতা গচ্ছিত রেখেছেন, কিন্তু তাকে কোনো একটি করতে বাধ্য করেননি। বরং তাকে উভয়ের মধ্য থেকে যেকোনো একটি স্বেচ্ছায় গ্রহণ করার বিশেষ এক প্রকার ক্ষমতা দিয়েছেন।

সাহাবী আবু হুরায়রা ও ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ স. যখন এই আয়াত তিলাওয়াত করতেন, তখন উচ্চস্বরে নিচের দোয়াটি পাঠ করতেন- اللّهُمَّ اتَ نَفْسِى تَقْوَاهَا – اَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا وَأَنْتَ خَيْرَ مَنْ زَكَاهَا অর্থ : হে আল্লাহ আমার আত্মাকে তাকওয়া (সৎ কর্ম করার) সক্ষমতা দিন। আপনি আমার তত্ত্বাবধায়ক ও পৃষ্ঠপোষক। আপনি অন্তরের শ্রেষ্ঠ সংশোধনকারী। (সহীহ মুসলিম-২৭২২)

আল্লাহ তা’আলা উল্লিখিত সাতটি বস্তুর শপথ করার পর জবাবে বলেছেন,

আয়াত-৯.
অবশ্যই সে ব্যক্তি সফল, যে পাপকর্ম থেকে বিরত থেকে সৎ কর্ম করে সে তার আত্মাকে শুদ্ধ করে । সফলতার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, সে পরকালে স্থায়ী শান্তি ও আকাঙ্ক্ষার স্থান জান্নাত লাভ করবে এবং সমস্ত বিপদাপদ ও জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে। আল্লাহ তা’আলা এমন ব্যক্তিকে কখনো কখনো দুনিয়াতেও সম্মান এবং সুখময় জীবন দান করে সফল বানিয়ে দেন। زكها শব্দটি تزكية থেকে। শব্দের প্রকৃত অর্থ: অন্তরের অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা অর্জন করা।

আয়াত-১০.
আর অবশ্যই সে ব্যক্তি বিফল, যে সৎ কর্ম পরিত্যাগ করে কুফর ও পাপ কর্ম করে নিজেকে গোপন রাখে এবং হেয় করে । পাপিষ্ঠ ব্যক্তি লজ্জায় মানুষের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। সমাজে তার সম্মান ও মর্যাদা থাকে না। সে নিজেকে অন্যদের থেকে গোপন রাখার চেষ্টা করে। এমন ব্যক্তি পরকালে বিফল ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জাহান্নামে যাবে। دس শব্দের অর্থ: মাটিতে প্রোথিত করা। قَدْ خَابَ مَنْ دَشيها যে নিজেকে কলুষিত করেছে।
মোটকথা, সেই ব্যক্তি সফল, যাকে আল্লাহ শুদ্ধ করেন। আর সেই ব্যক্তি ব্যর্থ, যাকে আল্লাহ পাপে ডুবিয়ে দেন। এ আয়াত সমগ্র মানবকে দুই ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে, সফলকাম ও ব্যর্থ।

আয়াত-১১.
সফলকাম ও ব্যর্থ দুই ভাগে মানুষকে বিভক্ত করার পর দ্বিতীয় প্রকার মানুষের একটি ঘটনা দৃষ্টান্তস্বরূপ আল্লাহ তা’আলা উল্লেখ করেন। তাদের অশুভ পরিণতি বর্ণনা করে মহান প্রভু বলেন, সামূদ জাতি নিজেদের সীমালঙ্ঘনের কারণে হযরত সালিহ আ.-কে মিথ্যারোপ করেছে।

সামূদ জাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

সামূদ একটি প্রাচীন আরব জাতির নাম। তারা সমতল ভূমিতে বিশালকায় অট্টালিকা অহেতুক তৈরি করত । এগুলোতে বসবাস করত না বরং পাহাড় কেটে প্রকোষ্ঠ নির্মাণ করে তাতে বসবাস করত। সামূদ সম্প্রদায় আল্লাহ ও পরকাল ভুলে গিয়ে মূর্তি পূজায় লিপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে একত্ববাদের পথ দেখানোর জন্য হযরত সালিহ আ.-কে নবী হিসেবে পাঠালেন। তিনি তাদের বংশের একজন মানুষ ছিলেন, কিন্তু তারা তাঁর দাওয়াত কবুল করেনি; বরং তাকে মিথ্যারোপ করেছে।

সে শহরে একটি বড় শক্ত পাথর ছিল। তারা সেটিকে ‘কাতিবা’ নামে ডাকত। একবার সামূদ সম্প্রদায় হযরত সালিহ আ.-কে বলল আপনি যদি বাস্তবেই আল্লাহর নবী হন, তাহলে ‘কাতিবা’ পাথরের ভেতর থেকে একটি দশ মাসের গর্ভবতী সবল ও স্বাস্থ্যবান উষ্ট্রী বের করে আমাদের দেখান। হযরত সালিহ আ. তাদের কাছ থেকে এই অঙ্গীকার নিলেন যে, আল্লাহ তা’আলা যদি এই উষ্ট্রী বের করে দেন, তবে তোমরা আমার দাওয়াতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে কি না? আমার অনুসরণ করবে কি না? সবাই যখন তাঁর দাওয়াত গ্রহণ করার ব্যাপারে অঙ্গীকার করল, তখন সালিহ আ. নামায পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন যে,

হে আল্লাহ! আপনি তাদের দাবি পূরণ করে দেন। দোয়ার সাথে সাথে ‘কাতিবা’ পাথর থেকে তাদের দাবির অনুরূপ একটি উষ্ট্রী বের হয়ে এলো। সালিহ আ.-এর এই আশ্চর্য মোজেযা দেখে তৎক্ষণাৎ অনেকে ঈমান এনেছিল, কিন্তু অধিকাংশ লোক ঈমান আনেনি। তিনি সম্প্রদায়কে অঙ্গীকার ভঙ্গ করতে দেখে ভয় করলেন যে, এদের ওপর শাস্তি এসে যেতে পারে। তাই তাদের কল্যাণ কামনা করে বললেন তোমরা এই উষ্ট্রীকে হত্যা করিও না; বরং এর দেখাশোনা করো। সামূদ জাতি যে কূপ থেকে পানি পান করত এবং তাদের জন্তুদের পান করাত, এই উষ্ট্রীও সে কূপ থেকেই পানি পান করত। কিন্তু এই আশ্চর্য ধরনের উস্ত্রী যখন পানি পান করত, তখন কূপের পানি শেষ করে ফেলত।

তাই হযরত সালিহ আ. আল্লাহর নির্দেশে ফয়সালা করে দিলেন যে, এক দিন এই উষ্ট্রী কূপ থেকে পানি পান করবে এবং অন্যদিন সম্প্রদায়ের সবাই পানি নেবে। যেদিন উষ্ট্রী পানি পান করত, সেদিন তারা উষ্ট্রীর দুধ পান করত ওপাত্রে তা ভর্তি করে রাখত । এ অবস্থায় অনেক দিন চলে যাওয়ার পর তাদের কুফরী আরো বেড়ে গেল । তারা সবাই একমত হলো যে, এই উষ্ট্রীকে আমরা হত্যা করে ফেলব। যেন প্রতিদিন আমরা কূপের পানি পেতে পারি।সামূদ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় হতভাগা কুদার বিন সালিফ উষ্ট্রীকে হত্যা করতে তৎপর হয়ে উঠল ।

এই অপরাধে তার সাথে মিসদা নামক এক ব্যক্তি জড়িত ছিল প্রথমে মিসদা উষ্ট্রীর পায়ের পেন্ডলিতে তীর নিক্ষেপ করল। তারপর কুদার তরবারি দিয়ে আঘাত করে তার পা কেটে ফেলল । যখন উষ্ট্রীটি মাটিতে পড়ে গেল, তখন পুনরায় কুদার এর গলায় আঘাত করে এটাকে হত্যা করে দিল। নারীর প্রলোভনে পড়ে কুদার ও মিসদা এ জঘন্য অপরাধটি করেছিল । পরে আল্লাহ তা’আলা গোটা সামূদ জাতিকে তাদের ওপর দিক থেকে বিকট আওয়াজ ও নিচ দিক থেকে ভূমিকম্পের শাস্তি দ্বারা সবাইকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।

আয়াত-১২.
যখন তাদের সর্বাধিক হতভাগ্য ব্যক্তি উষ্ট্রী হত্যা করতে তৎপর হয়ে উঠল। এই হতভাগার নাম ছিল কুদার ইবনে সালিফ। এই হত্যাকাণ্ডে তার সাথে আরেক দুর্ভাগা মিসদা জড়িত ছিল তা ছাড়া আরো সাতজন তাদের সাথে ছিল। হযরত সালিহ আ.-এর কাছে যখন উষ্ট্রীকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রের সংবাদ এলো, তখন তিনি তার জাতিকে বললেন,

আয়াত-১৩.
তোমরা আল্লাহর উষ্ট্রীকে হত্যা করা বর্জন করো এবং তাকে পানি পান করানোর বিষয়ে সতর্ক হও। তার পানি পানে বাধা দিও না। এ আয়াতে পানি পান করানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে এ জন্য যে, মূলত সামূদ জাতি কূপের পানি একচেটিয়া দখল করার জন্য উষ্ট্রীকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল।

এই উষ্ট্রীটিকে আর ‘আল্লাহর উষ্ট্রী’ বলার কারণ হলো, আল্লাহ তা’আলা ওই উষ্ট্রীকে তাঁর একত্ববাদের প্রমাণ ও হযরত সালিহ আ.-এর নবুওয়াতের অন্যতম নিদর্শন বানিয়েছিলেন।

আয়াত-১৪.
তারা সালিহ আ.-এর প্রতি মিথ্যারোপ করল, তাঁকে অবিশ্বাস করল। অর্থাৎ তিনি বলেছিলেন, তোমরা যদি এ উষ্ট্রীকে হত্যা করো, তাহলে তোমাদের ওপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আপতিত হবে। তারা সালিহ আ.-এর এ কথাকে মিথ্যা মনে করল । এবং তারা উষ্ট্রীকে হত্যা করল। যেহেতু সম্প্রদায়ের ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সবাই উষ্ট্রীকে হত্যা করতে রাজি ছিল, তাই হত্যার সম্বোধন সবার প্রতি করে বলা হয়েছে যে, তারা উষ্ট্রীকে হত্যা করেছে।

সামূদ জাতির কুফর ও শিরক করা, নবীকে অবিশ্বাস করা ও উষ্ট্রীকে হত্যা করার অপরাধে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ধ্বংস করে একাকার করে দিলেন। তিনি ওপর দিক থেকে বিকট আওয়াজ ও নিচের দিক থেকে ভূমিকম্প দ্বারা তাদের সবাইকে ধ্বংস করে দিলেন। دم শব্দটি এমন কঠোর শাস্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, যা বার বার কোনো জাতি বা ব্যক্তির ওপর পতিত হয় এবং তাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এ আজাব জাতির আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাইকে বেষ্টন করে নেয়।

আয়াত-১৫.
আল্লাহ তা’আলা এই ধ্বংসের কোনো বিরূপ পরিণতির আশঙ্কা করেন না। পৃথিবীর রাজা-বাদশাহগণ কোনো জাতিকে ধ্বংস করে দিলে, সে জাতির অবশিষ্ট লোক অথবা তাদের সমর্থকদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার আশঙ্কা করতে থাকত। যারা অপরকে হত্যা করে তারা নিজেরাও হত্যা হওয়ার আশঙ্কায় থাকে, কিন্তু আল্লাহ তা’আলা কারো পক্ষ থেকে কোনো সময় বিপদের আশঙ্কা করেন না।

নির্দেশনা

১. সূরার শুরুতে আল্লাহ তা’আলা যে সাতটি বস্তুর শপথ করেছেন, তিনি এসব সৃষ্টি করে তাঁর অসীম ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ করেছেন।
২. আল্লাহ তা’আলার অবাধ্যতা করা থেকে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। কেননা তা দুনিয়া ও আখিরাতে মানুষের ধ্বংস ও শাস্তির কারণ হয়।
৩. আল্লাহ তা’আলা রাসূল স.-কে সান্ত্বনা দিয়েছেন যে, যেভাবে সামূদ জাতি সালিহ আ.-এর প্রতি মিথ্যারোপ করেছে, সেভাবে কুরাইশের লোকেরা আপনার প্রতি মিথ্যারোপ করেছে। তাই এতে বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

আরো পড়ুন :

৯২.সূরা আল লাইল سورة الليل Surah Lail এর তাফসির ও শানে নুযুল

৯৩.সূরা আদ দুহা سورة الضحى Surah Duha এর তাফসির ও শানে নুযুল

৯৪.সূরা ইনশিরাহ سورة الشرح Surah Inshirah এর তাফসীর ও শানে নুযুল

ট্যাগ সমূহ : সূরা আশ শামস এর শানে নুযুল, সূরা আশ শামস বাংলা উচ্চারণ, সূরা আশ শামস আয়াত ৯, সূরা আশ শামস এর ফজিলত, সূরা আশ শামস আয়াত ১০, সূরা আশ শামস এর অনুবাদ, সূরা আশ শামস এর শিক্ষা,, সূরা আশ শামস এর ব্যাখ্যা, সূরা আশ শামস তেলাওয়াত, سورة الشمس, সূরা শামস বাংলা উচ্চারণ, সূরা শামস আয়াত ৯, সূরা শামস এর শানে নুযুল, সূরা শামস অর্থসহ, সূরা শামস, সূরা শামস এর বাংলা অনুবাদ, সূরা শামস আয়াত ১০, সূরা শামস এর শানে নুযুল, সূরা শামস এর তাফসীর, সূরা আশ শামস, সূরা আশ শামস এর অনুবাদ, সূরা আশ শামস আয়াত ৯, সূরা আশ শামস বাংলা উচ্চারণ, সূরা আশ শামস আয়াত ৯ ১০, সূরা আশ শামস বাংলা অনুবাদ, সূরা আশ শামস বাংলা উচ্চারন, সূরা শামস, সূরা শামস আয়াত ৯, সূরা শামস বাংলা উচ্চারণ সহ, সূরা শামস এর বাংলা অনুবাদ, সূরা শামস অর্থসহ, সূরা শামস বাংলা উচ্চারণ, সূরা শামস এর তাফসীর,surah shams, surah shams bangla, benefits of surah shams, surah shams with bangla translation, surah shams tafseer, surah shams translation, surah shams with bangla, surah shams arabic text, sura shams, سوره الشمس, سورة الشمس مكتوبة, سوره الشمس سوره الشمس, فضل سورة الشمس,

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top