
সূরার পরিচয় :
সূরার নাম : সূরা ফজর। | সূরার অর্থ : ভোর, প্রভাত। |
সূরা নং : ৮৯ | রুকু সংখ্যা : ১ |
আয়াত সংখ্যা : ৩০ | সিজদা সংখ্যা : ০ |
শব্দ সংখ্যা : ১৩৯ | পারার সংখ্যা : ৩০ |
অক্ষর সংখ্যা : ৫৭৩ | শ্রেণী : মাক্কী। |
সূরা আল ফাজর سورة الفجر Surah Fajr এর তাফসির ও শানে নুযুল
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ শুরু করছি আল্লাহ তা’আলার নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। |
(١) وَٱلْفَجْرِ (১) শপথ প্রভাতের |
(٢) وَلَيَالٍ عَشْرٍ (২) শপথ দশ রাতের |
(٣) وَٱلشَّفْعِ وَٱلْوَتْرِ (৩) শপথ জোড় ও বিজোড়ের, |
(٤) وَٱلَّيْلِ إِذَا يَسْرِ (৪) এবং শপথ রাতের; যখন তা গত হতে থাকে। |
(٥) هَلْ فِى ذَٰلِكَ قَسَمٌ لِّذِى حِجْرٍ (৫) তাতে কি বুদ্ধিমানের জন্য শপথ আছে? |
(٦) أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِعَادٍ (৬) আপনি কি দেখেননি! আপনার পালনকর্তা আদ বংশের সাথে কী আচরণ করেছিলেন। |
(٧) إِرَمَ ذَاتِ ٱلْعِمَادِ (৭) স্তম্ভের অধিকারী ইরাম গোত্রের সাথে |
(٨) ٱلَّتِى لَمْ يُخْلَقْ مِثْلُهَا فِى ٱلْبِلَٰدِ (৮) যাদের সমান দৈহিক গঠন ও বলবীর্যে পৃথিবীর কোনো দেশে কাউকে সৃষ্টি করা হয়নি |
(٩) وَثَمُودَ ٱلَّذِينَ جَابُوا۟ ٱلصَّخْرَ بِٱلْوَادِ (৯) এবং সামুদ গোত্রের সাথে কেমন করেছিলেন? যারা উপত্যকায় বড় বড় শক্ত পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করেছিল। |
(١٠) وَفِرْعَوْنَ ذِى ٱلْأَوْتَادِ (১০) এবং বহু কীলকের অধিকারী ফেরাউন এর সাথে কেমন করেছিলেন। |
(١١) ٱلَّذِينَ طَغَوْا۟ فِى ٱلْبِلَٰدِ (১১) যারা দেশে দেশে সীমালঙ্ঘন করেছিল। |
(١٢) فَأَكْثَرُوا۟ فِيهَا ٱلْفَسَادَ (১২) এবং সেখানে বিস্তর অশান্তি সৃষ্টি করেছিল। |
(١٣) فَصَبَّ عَلَيْهِمْ رَبُّكَ سَوْطَ عَذَابٍ (১৩) অতঃপর আপনার পালনকর্তা তাদেরকে শাস্তির চাবুক মারলেন। |
(١٤) إِنَّ رَبَّكَ لَبِٱلْمِرْصَادِ (১৪) নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক পর্যবেক্ষণের স্থানে রয়েছেন। |
فَأَ مَّا ٱلْإِنسَٰنُ إِذَا مَا ٱبْتَلَىٰهُ رَبُّهُۥ فَأَكْرَمَهُۥ وَنَعَّمَهُۥ فَيَقُولُ رَ بِّىٓ أَكْرَمَنِ (١٥) (১৫) মানুষ এরূপ যে, যখন তার পালনকর্তা তাকে পরীক্ষা করেন সম্মান ও সুখ দান করেন, সে বলে, আমার পালনকর্তা আমাকে সম্মান দান করেছেন। |
(١٦) وَأَ مَّآ إِذَا مَا ٱبْتَلَىٰهُ فَقَدَرَ عَلَيْهِ رِزْقَهُۥ فَيَقُولُ رَ بِّىٓ أَهَٰنَنِ (১৬) আর যখন তিনি তাকে পরীক্ষা করেন, তার রিযিক সঙ্কুচিত করে, তখন সে বলে, আমার পালনকর্তা আমাকে হেয় করেছেন। |
(١٧) كَلَّا بَل لَّا تُكْرِمُونَ ٱلْيَتِيمَ (১৭) কখনো এমন নয়; বরং তোমরা এতিমকে সম্মান করো না। |
(١٨) وَلَا تَحَٰٓضُّونَ عَلَىٰ طَعَامِ ٱلْمِسْكِينِ (১৮) এবং অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দেওয়ার জন্য পরস্পরকে উৎসাহিত করো না । |
(١٩) وَتَأْكُلُونَ ٱلتُّرَاثَ أَكْلًا لَّمًّا (১৯) এবং তোমরা মৃতের ত্যাজ্য সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে খেয়ে ফেলো। |
(٢٠) وَتُحِبُّونَ ٱلْمَالَ حُبًّا جَمًّا (২০) এবং তোমরা ধন-সম্পদকে অত্যধিক ভালোবাসো। |
(٢١) كَلَّآ إِذَا دُكَّتِ ٱلْأَرْضُ دَكًّا دَكًّا (২১) (এসব পাপকাজের শাস্তি হবে না) এটা কখনো ঠিক নয়। (শাস্তি তখন হবে) যখন পৃথিবীকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে সমতল বানিয়ে দেওয়া হবে। |
(٢٢) وَجَآءَ رَبُّكَ وَٱلْمَلَكُ صَفًّا صَفًّا (২২) এবং আপনার রব ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে উপস্থিত হবেন; |
(٢٣) وَجِا۟ىٓءَ يَوْ مَئِذٍۭ بِجَهَنَّمَ يَوْ مَئِذٍ يَتَذَكَّرُ ٱلْإِنسَٰنُ وَأَنَّىٰ لَهُ ٱلذِّكْرَىٰ (২৩) এবং সেদিন জাহান্নামকে আনা হবে, সেদিন মানুষ বুঝতে পারবে কিন্তু তখন এই বুঝে আসা কীভাবে তার কাজে আসবে? |
(٢٤) يَقُولُ يَٰلَيْتَنِى قَدَّمْتُ لِحَيَاتِى (২৪) সে বলবে, হায়! আমার এখানকার জীবনের জন্য আমি যদি আগে পাঠাতাম |
(٢٥) فَيَوْمَئِذٍ لَّا يُعَذِّبُ عَذَابَهُۥٓ أَحَدٌ (২৫) সেদিন তাঁর (আল্লাহর) শাস্তির মতো শাস্তি কেউ দিতে পারবে না। |
(٢٦) وَلَا يُوثِقُ وَثَاقَهُۥٓ أَحَدٌ (২৬) এবং তাঁর বাঁধার মতো কেউ বাঁধতে পারবে না। |
(٢٧) يَٰٓأَيَّتُهَا ٱلنَّفْسُ ٱلْمُطْمَئِنَّةُ (২৭) (মুমিন ব্যক্তিকে বলা হবে) হে প্রশান্ত আত্মা! |
(٢٨) ٱرْجِعِىٓ إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً (২৮) তুমি তোমার রবের নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও (তার নিকট) সন্তোষভাজন হয়ে। |
(٢٩) فَٱدْخُلِى فِى عِبَٰدِى (২৯) অতঃপর, আমার (নেক) বান্দাদের মধ্যে শামিল হও। |
(٣٠) وَٱدْخُلِى جَنَّتِى (৩০) এবং (তাদের সাথে) আমার জান্নাতে প্রবেশ করো। |
সূরা আল ফাজর এর আলোচ্য বিষয়
এই সূরায় তিনটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে :
এক. কুফর ও গুনাহের শাস্তি পরকালে অবশ্যই হবে। তবে কখনো দুনিয়াতেও কাফেরদের প্রতি আজাব এসে যায়। এ ক্ষেত্রে তিনটি জাতিকে শাস্তি দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ১. আদ জাতি, ২. সামূদ জাতি, ৩. ফেরাউন সম্প্রদায়।
দুই. মহান আল্লাহ তাঁর চিরন্তন নিয়মের বর্ণনা দিয়েছেন যে, তিনি মানুষকে দুঃখ-দুর্দশায় ফেলে যেভাবে পরীক্ষা করেন, তেমনি সুখ ও সম্মান দিয়েও পরীক্ষা করেন।
তিন. পরকালের ভয়াবহ অবস্থার কথা বলা হয়েছে। সেদিন মানুষ সৌভাগ্যশালী ও হতভাগা—এই দুই দলে বিভক্ত হবে। সৌভাগ্যশালীদের উত্তম পরিণতি ও হতভাগাদের খারাপ পরিণতির বর্ণনা এসেছে।
এই সূরায় পাঁচটি বস্তুর শপথ করে إِنَّ رَبَّكَ لَبِٱلْمِرْصَادِ আয়াতে বর্ণিত বিষয়বস্তুকে জোরদার করা হয়েছে । এই দুনিয়ায় তোমরা যা কিছু করছ, মহান আল্লাহ সব কিছুর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। পর্যবেক্ষণ করছেন। অতএব, প্রত্যেক মানুষকে তার আমল অনুযায়ী দুনিয়া ও পরকালে বিনিময় দেওয়া হবে।
সূরা ফাজর এর শানে নুযুল
يَٰٓأَيَّتُهَا ٱلنَّفْسُ ٱلْمُطْمَئِنَّةُ এখান থেকে শেষ চারটি আয়াত হযরত উসমান রা.-এর ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। অন্য বর্ণনা মতে, হযরত হামযা রা.-এর ক্ষেত্রে নাযিল হয়েছে। তবে যেহেতু আয়াতসমূহের শব্দে নির্দিষ্ট কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি তাই সকল মুমিন ব্যক্তি এ সুসংবাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
সূরা ফাজর এর তাফসীর
আয়াত-১.
শপথ প্রভাতের। তাফসীরবিদগণ প্রভাতের ব্যাখ্যায় একাধিক মত ব্যক্ত করেছেন :
এক. প্রত্যেক দিনের প্রভাতকাল উদ্দেশ্য । কারণ প্রভাতকাল রাতের অন্ধকার দূর করে গোটা বিশ্বে এক মহাবিপ্লব নিয়ে আসে এবং আল্লাহ তা’আলার অসীম ক্ষমতার প্রমাণ বহন করে।
দুই. মুহররম মাসের প্রথম তারিখের প্রভাতকাল উদ্দেশ্য। এই দিনটিতে ইসলামী চন্দ্ৰ বছরের সূচনা হয়।
তিন. জিলহজ্ব মাসের দশম তারিখের প্রভাতকাল বোঝানো হয়েছে।
আয়াত-২.
এবং শপথ দশ রাতের। দশ রাত দ্বারা জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ রাত বোঝানো হয়েছে। রাসূল স. বলেছেন, জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের নেক আমল বছরের অন্য যেকোনো দিনের নেক আমলের চেয়ে বেশি পছন্দীয় । সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদ করা কি এর চেয়ে বেশি পছন্দীয় আমল নয়? তখন তিনি বললেন, না! আল্লাহর পথে জিহাদ করাও এ দশ দিনের আমলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আমল নয়। তবে যে আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য জানমাল নিয়ে বের হওয়ার পর আর ফিরে আসেনি। (তিরমিযী-৭০৭)
রাসূলুল্লাহ স. আরো বলেছেন, জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের নেক আমল আল্লাহর কাছে। বেশি পছন্দীয় আর কোনো আমল নেই। অতঃপর সাহাবাগণ বলেন, জিহাদও নয়? রাসূলুল্লাহ স. বললেন, না। তবে যে নিষ্ঠার সাথে তার সম্পদসহ বের হয় এবং কিছু ফেরত না আনে। (সহীহ বুখারী-৯৬৯)
আয়াত-৩.
শপথ জোড় ও বিজোড়ের। জোড় ও বিজোড় দ্বারা কী উদ্দেশ্য-এ ব্যাপারে তাফসীরবিদদের বিভিন্ন মত পাওয়া যায়-
এক. বিজোড় হলো আরাফার দিন জিলহজ্বের নবম তারিখ । আর জোড় হলো ইয়াওমুন্নাহর জিলহজ্বের দশম তারিখ ।
দুই. জোড় বলে সমস্ত সৃষ্টিজগৎ বোঝানো হয়েছে। কেননা আল্লাহ তা’আলা সমগ্র সৃষ্টিকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। যথা-আসমান ও জমিন, জল ও স্থল, জিন ও মানব, চন্দ্ৰ ও সূর্য এবং নর ও নারী। এগুলোর বিপরীতে বিজোড় একমাত্র আল্লাহ তা’আলার সত্তা। قل هو اللّهُ أَحد বলুন, তিনি আল্লাহ এক। (সূরা ইখলাস-১)
আয়াত-৪.
এবং শপথ রাতের, যখন তা গত হতে থাকে। এখানে রাতের গত হওয়া ও চলার দ্বারা দুটি অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে : এক. শপথ রাতের, যখন তা চলতে চলতে শেষ হতে থাকে। অর্থাৎ রাতের প্রস্থান। দুই. শপথ রাতের, যখন তা চলে আসতে থাকে। অর্থাৎ রাতের আগমন। যেহেতু প্রথম আয়াতে প্রভাত তথা দিন আগমনের শপথ করা হয়েছে, তাই এই আয়াতে রাত আগমনের অর্থ নেওয়া বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আয়াত-৫.
তাতে কী, অর্থাৎ উপরোক্ত শপথসমূহে কি বুদ্ধিমানের জন্য শপথ আছে? 3 এর শাব্দিক অর্থ: বাধা। মানুষের বিবেক মানুষকে মন্দকাজ থেকে বাধা দেয়। তাই ? অর্থ: এখানে বিবেক ব্যবহার হয়েছে। এ প্রশ্নটির উদ্দেশ্য হলো, বিবেকবানের জন্য এসব শপথ ও যথেষ্ট কি না—এই প্রশ্ন প্রকৃতপক্ষে মানুষকে জাগ্রত করার একটি কৌশল ।
উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তা’আলার মাহাত্ম্য সম্পর্কে তাঁর সপথ করে কোনো বিষয় বর্ণনা করার গুরুত্ব এবং সপক্ষের বিষয়সমূহের বৈশিষ্ট্যের সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে যে বিষয়ের শপথ করা হয় তার নিশ্চয়তা প্রমাণিত হয়ে যাবে। পরবর্তী আয়াতসমূহে কাফেরদের প্রতি আজাবের ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গুনাহের শাস্তি পরকালে হওয়া চিরধার্যকৃত বিষয়। মাঝেমধ্যে দুনিয়াতেও তা প্রেরণ হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে তিনটি জাতির আজাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, আদ বংশ, সামূদ গোত্র এবং ফেরাউন সম্প্রদায়।
আয়াত-৬.
হে মুহাম্মদ! আপনি কি অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা দেখেননি? বা আপনার কাছে কি সংবাদ পৌছেনি যে, আপনার পালনকর্তা আদ গোত্রের সঙ্গে কী আচরণ করেছিলেন?
আয়াত-৭.
স্তম্ভের অধিকারী ইরাম গোত্রের সাথে।
এখানে প্রশ্ন করা উদ্দেশ্য নয়; বরং আদ, সামূদ ও ফেরাউন সম্প্রদায়ের ওপর যে আজাব এসেছিল, রাসূল স. ও অন্যদের কাছে এর স্বীকারোক্তি নেওয়া উদ্দেশ্য। আদ একটি প্রাচীন আরব গোত্রের নাম। তাদের একজন পূর্বপুরুষের নাম আদ। সে হিসেবে তাদেরকে আদ গোত্র বলা হয়। আদের পিতার নাম আওস। আওসের পিতা ইরাম। আদ গোত্রের আবার দুটি বংশধর ছিল।
এক. পূর্ববর্তী বংশধর । তাদেরকে প্রথম আদ বলা হতো । দুই. পরবর্তী বংশধর। তাদেরকে দ্বিতীয় আদ বলা হতো । এখানে আদের নামের পর ইরাম নামটি যুক্ত করার কারণ হলো, প্রথম আদকে নির্দিষ্ট করা। কারণ দ্বিতীয় আদের তুলনায় প্রথম আদ ইরামের বেশি নিকটতম। অতএব, এই আয়াতের প্রথম আদ উদ্দেশ্য। আদ জাতি হাদরামাওতের কাছে ইয়ামানের পাশে আহকাফে বসসাস করত। আহকাফ হলো বালুকাময় পাহাড়সমূহ।
আদ জাতিকে স্তম্ভের অধিকারী বলার দুটি কারণ : এক. তারা মজবুত খুঁটি ও স্তম্ভ দিয়ে পশমের তৈরি তাঁবু টানিয়ে তাতে বসবাস করত। দুই. তাদের শরীর স্তম্ভ ও খুঁটির ন্যায় দীর্ঘ ছিল। তারা বারো হাত লম্বাবিশিষ্ট অত্যন্ত শক্তিশালী মানুষ ছিল । কোনো কোনো তাফসীরবিদ ذَاتِ ٱلْعِمَادِ এর তাফসীর করেছেন, উঁচু উঁচু প্রসাদের অধিকারী। অর্থাৎ আদ জাতি অযথা মহাসড়কের পাশে সুউচ্চ প্রাসাদসমূহ নির্মাণ করত। এগুলোতে তারা বসবাস করত না।
আয়াত-৮.
সে যুগে পৃথিবীর কোনো দেশে তাদের মতো দৈহিক গঠন ও শক্তি-সাহসে অন্য কাউকে সৃষ্টি করা হয়নি। মহান আল্লাহ আদ জাতির কাছে হযরত হুদ আ.-কে নবী বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তারা নবীর দাওয়াত গ্রহণ করেনি। কুফর ও মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করেনি। এর পরিণতিতে তাদের ওপর আট দিন, সাত রাত্রি পর্যন্ত প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আজাব এসেছিল। ফলে তাদের বাগান ও দালানকোঠা ভূমিস্যাৎ হয়ে যায়। মানুষ ও জীবজন্তু উড়তে থাকে । অতঃপর উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে ধ্বংস হয়ে যায়।
আয়াত-৯.
হে নবী! আপনি কি অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা দেখেননি? বা আপনার কাছে কি সংবাদ পৌছেনি যে, আপনার প্রতিপালক সামূদ গোত্রের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিলেন? যারা ‘কুরা উপত্যকায়’ পাহাড়ের বড় বড় পাথর কেটে সুরক্ষিত ও দৃঢ় বাসস্থান নির্মাণ করেছিল। (وادى القرى) তথা কুরা উপত্যকাটি সামূদ গোত্রের একটি শহরের নাম। হিজর (حجر) তাদের আরেকটি শহরের নাম। বর্তমানে একে ‘মাদায়িনু ছালিহ’ বলা হয়। এ শহরগুলো হিজাজ ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। ইরামের এক পুত্রের নাম ছিল আছির। আছিরের পুত্রের নাম সামূদ। এ সামুদেরই বংশধর ‘সামূদ গোত্র’ নামে পরিচিত। তাদের কাছে হযরত ছালেহ আ. নবী হয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তারা তাঁকে না মেনে কুফর ও মূর্তিপূজায় লিপ্ত ছিল। পরবর্তীতে তাদেরকে বিকট আওয়াজ ও ভূমিকম্পের শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল।
আয়াত-১০,
আপনি কি অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা দেখেননি? বা আপনার কাছে কি সংবাদ পৌঁছেনি যে, আপনার প্রতিপালক বহু কীলকের অধিকারী ফেরাউনের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিলেন? এই আয়াতে ফেরাউনকে أَوْتَادِ (বহু কীলক-পেরেক) এর অধিকারী বলা হয়েছে। أَوْتَادِ হলো وتد এর বহুবচন।
তাফসীরবিদগণ ফেরাউনকে কীলকের অধিকারী বলার দুটি ব্যাখ্যা করেছেন :
এক. ফেরাউন মানুষের হাত-পায়ে পেরেক মেরে তাকে ঝুলিয়ে রেখে শাস্তি দিত। অথবা হাত-পায়ে চারটি পেরেক বেঁধে তার ওপর পাথর নিক্ষেপ করত।
দুই. ফেরাউন বিপুল সৈন্য-সামন্তের অধিকারী ছিল। যাদের তাঁবু গাড়াসহ সামরিক বিভিন্ন প্রয়োজনে অনেক পেরেকের দরকার হতো। তাই তাকে কীলকের অধিকারী বলা হয়েছে।
আয়াত-১১. ১২.
আরাম-আয়েশ, সম্পদ ও ক্ষমতার নেশায় মত্ত হয়ে আদ জাতি, সামূদ জাতি ও ফেরাউন প্রত্যেকেই নিজ নিজ দেশে তাণ্ডব সৃষ্টি করেছিল। সেখানে তারা কুফর ও শিরিকে নিমজ্জিত ছিল এবং মানুষ হত্যা, জুলুম-নির্যাতন ও বড় বড় অপকর্ম করত।
আয়াত-১৩.
অবশেষে আপনার প্রতিপালক তাদের ওপর শাস্তির কশাঘাত করলেন। ফলে তারা নিজেরা ও তাদের দলবল সবাই ধ্বংস হয়ে যায়। তাদের বিপুল সরঞ্জাম ও উপায়-উপকরণ কোনো কাজে লাগেনি। আদ, সামূদ ও ফেরাউন গোত্রের ওপর অবতীর্ণ শাস্তিকে سَوْطَ عَذَابٍ (কশাঘাত বা চাবুকের) শাস্তি বলার কারণ হলো, কশাঘাত করে যেভাবে দেহের বিভিন্ন অংশে শাস্তি হয়, তেমনিভাবে তাদের ওপরও বিভিন্ন প্রকার শাস্তি নাযিল করা হয়। আদ জাতিকে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করা হয়। সামূদ জাতিকে নিচের দিক থেকে ভূমিকম্প আর ওপর দিক থেকে বিকট আওয়াজ দ্বারা খতম করা হয়েছিল। আর ফেরাউন ও তার বাহিনীকে লোহিত সাগরে ডুবিয়ে মারা হয়েছে।
আয়াত-১৪.
নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক পর্যবেক্ষণের স্থানে রয়েছেন। مِرْصَادِ শব্দের অর্থ: সতর্ক দৃষ্টি রাখার ঘাঁটি, যা কোনো উচ্চ স্থানে স্থাপিত হয়ে থাকে। পর্যবেক্ষণ বা নজরদারিতে চারটি বিষয় থাকে-
এক. পর্যবেক্ষণের জায়গা বা ঘাঁটি শত্রুর কাছে অজানা থাকে।
দুই. ওই ঘাঁটি দিয়েই শত্রুকে যেতে হয়।
তিন. ঘাঁটিতে পর্যবেক্ষণকারী শত্রুর অবস্থা জানতে পারে।
চার. তার হাতে শত্রু আটক হয়ে যায়।
এই চারটি বিষয় আল্লাহ তা’আলার ক্ষেত্রে আরো বেশি মাত্রায় পাওয়া যায় । যেমন দেখুন,
এক. মহান আল্লাহ তা’আলা কত বেশি জানেন ও তিনি কোন জায়গা থেকে কীভাবে আমাদের দেখছেন, মানুষ তা জানে না।
দুই. মানুষ মহান আল্লাহর দেওয়া জীবন পথই পাড়ি দিচ্ছে।
তিন. আল্লাহ তা’আলা মানুষের কথা ও কাজ সব কিছু দেখছেন ও শুনছেন।
চার. কেউ তাঁর আটক থেকে বাঁচতে পারবে না। তিনি প্রতিটি মানুষের কথা ও কাজের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন । প্রত্যেক মানুষকে তার আমল অনুযায়ী দুনিয়া ও আখেরাতে প্রতিদান ও শাস্তি দেবেন।
আয়াত-১৫.
فَأَمَّا ٱلْإِنسَٰنُ সাধারণত মানুষের দুটি স্বভাবগত অভ্যাসের আলোচনা করছেন, আর মানুষকে যখন তার প্রতিপালক সম্মান, ধন-সম্পদ, সন্তানাদি ও সুস্থতা দিয়ে পরীক্ষা করেন, তখন সে দুটি ভ্রান্ত ধারণায় পতিত হয়, এক. আমি মূলত আল্লাহর নিকট সম্মানিত তিনি আমাকে সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন। আমি যদি তাঁর নিকট প্রত্যাখ্যাত হতাম, তিনি আমাকে এসব নিয়ামত দান করতেন না।
দুই. সে মনে করতে থাকে যে, এই সম্মান ও ধন-সম্পদ ইত্যাদি আমার ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও কর্মপ্রচেষ্টার ফল । এমনিতে এসব পাইনি। আমি এর যোগ্য ছিলাম, তাই পেয়েছি।
আয়াত-১৬.
এমনিভাবে যখন তিনি মানুষকে অভাব-অনটন দিয়ে পরীক্ষা করেন, তখনও সে দুটি ভ্রান্ত ধারণায় পতিত হয় : এক. আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাখ্যাত ও অসম্মানিত। তিনি আমাকে অপদস্থ করেছেন।
দুই. আমি সম্মান, ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি পাওয়ার উপযুক্ত ছিলাম। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা আমাকে এগুলো দেননি। তিনি আমাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করেছেন। কাফের ও মুশরিকদের মধ্যে এ ধরনের ধারণা বিদ্যমান ছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, আজকাল মুসলমানও এ বিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছে। পরের আয়াতে আল্লাহ তা’আলা এ ভুল ধারণার খণ্ডন করেছেন।
আয়াত-১৭.
তোমাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন। দুনিয়াতে সম্মান, ধন-সম্পদ, সন্তানাদি ও সুস্থতা লাভ করা আল্লাহর কাছে সম্মানিত হওয়ার নিদর্শন নয় এবং এগুলো পাওয়া মানুষের ব্যক্তিগত যোগ্যতার বলেও নয়। তেমনি অভাব-অনটনে দিন কাটানো আল্লাহর কাছে প্রত্যাখ্যাত ও লাঞ্ছিত হওয়ার প্রমাণ নয় এবং এসব নিয়ামত না পাওয়া মানুষের যা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে আগে থেকেই নির্ধারিত। উভয় অবস্থায় আল্লাহ মানুষকে অযোগ্যতারও দলিল নয়; বরং এ সব কিছু পাওয়া আর না পাওয়া সম্পূর্ণ তাকদীরি বিষয়, ” পরীক্ষা করে থাকেন। তিনি কাউকে সব কিছু দিয়ে এই পরীক্ষা করেন যে, সে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কিনা।
আবার কাউকে অভাব-অনটন দিয়ে পরীক্ষা নেন যে, সে ধৈর্যধারণ করে কিনা। তাই মুমিনের কাজ হবে এই যে, এসব নিয়ামত পেয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা অপনোদন করার পর তাদের কয়েকটি মন্দ স্বভাবের কথা বলা হয়েছে- এবং অভাব-অনটন ও অন্যান্য বিপদের সময় ধৈর্যধারণ করা। কাফেরদের ভ্রান্ত ধারণা কাফেরদের প্রথম মন্দ স্বভাব সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে বলেন, আমি তোমাদেরকে ধন-সম্পদ দান করার পরও তোমরা এতিমদের সম্মান করো না। এতিমকে। সম্মান করার পথ হলো, তার প্রাপ্য তাকে দেওয়া। তার ব্যয়ভার গ্রহণ করা এবং নিজের সন্তানের মতো তাকে সম্মান করা।
আয়াত-১৮.
কাফেরদের দ্বিতীয় মন্দ স্বভাব সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে বলেছেন, নিজেদের সম্পদ থেকে অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদান করা তো দূরের কথা, অন্যদেরকে এ কাজে তোমরা উৎসাহিতও করো না।
আয়াত-১৯.
কাফেরদের তৃতীয় মন্দ স্বভাব সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন, তোমরা ওয়ারিশি সম্পত্তিতে নিজেদের অংশের সাথে নারী ও ছোট বাচ্চাদের অংশ জোর করে নিয়ে একত্রে খেয়ে ফেলো। মুশরিকদের স্বভাব এটা ছিল যে, তারা এতিম সন্তান ও নারীদেরকে ওয়ারিশি সম্পত্তি দিত না। তাদের অংশ নিজেরাই খেয়ে ফেলত, যা ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ।
এই আয়াতের আরেকটি ব্যাখ্যা হলো এই যে, মৃত ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় হালাল-হারাম একত্রিত করে যে সম্পদ উপার্জন করেছে, তোমরা জেনে-শুনে তার হালাল-হারাম সম্পদ একত্রে খেয়ে ফেলো।
আয়াত-২০.
কাফেরদের চতুর্থ মন্দ স্বভাব সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন, তোমরা ধন-সম্পদকে অত্যধিক ভালোবাসো। হালাল-হারাম সব সম্পদই পেতে পছন্দ করো। ‘অত্যধিক ভালোবাসো’ বলার মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, ধন-সম্পদের ভালোবাসা এক পর্যায়ে নিন্দনীয়। নয়; বরং মানুষের জন্মগত বিষয়। তবে সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া এবং তাকেই জীবনের উদ্দেশ বানানো নিন্দনীয়।
আয়াত-২১.
কখনো এমন নয় যে, উপরোক্ত পাপ কাজসমূহের শাস্তি হবে না। শাস্তি তখন হবে, যখন কিয়ামতের ভূকম্পনের দ্বারা পৃথিবীর পাহাড়-পর্বত ও টিলাগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়ে জমিনকে সমতল প্রান্তরে পরিণত করা হবে। তখন আর উঁচু-নিচু কোনো জায়গা থাকবে না । دَكًّا دَكًّا : দুবার বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, কিয়ামতের ভূকম্পন একের পর এক অব্যাহত থাকবে।
আয়াত-২২.
আর আপনার প্রতিপালক সৃষ্টিকুলের মাঝে বিচার-ফয়সালা করার জন্য হাশরের মাঠে আগমন করবেন। ফেরেশতাগণ আল্লাহর সামনে সারিবদ্ধভাবে উপস্থিত হবেন। সাত আকাশের ফেরেশতাগণ সাতটি কাতার হয়ে জিন ও মানুষকে বেষ্টন করে নেবেন। আল্লাহ তা’আলা হাশরের মাঠে কীভাবে আসবেন, তা তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। তিনি আপন শান অনুযায়ী যেভাবে চান, সেভাবে আসবেন।
আয়াত-২৩.
হাশরের ময়দানে জাহান্নামকে নিয়ে এসে আরশের বাঁ পাশে রাখা হবে। সবাই জাহান্নাম দেখতে পাবে এবং এর গর্জন ও বিকট আওয়াজ শুনতে পাবে। জাহান্নামকে উপস্থিত করার কী উদ্দেশ্য ও কীভাবে আনা হবে, তা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে বাহ্যত বোঝা যায়, সপ্তম পৃথিবীর গভীরে অবস্থিত জাহান্নাম তখন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে এবং সব সমুদ্র অগ্নিময় হয়ে তাতে শামিল হয়ে যাবে। এভাবে জাহান্নাম হাশরের আঙিনায় সবাই দেখতে পাবে। রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, কিয়ামতের দিন সত্তর হাজার লাগাম পরিয়ে জাহান্নামকে টেনে হাশরের মাঠে আনা হবে। প্রতিটি লাগাম সত্তর হাজার ফেরেশতা ধরে টানবে। (সহীহ মুসলিম-২৮৪২, খ. ৪, পৃ. ২১৮৪)
মানুষ সেদিন বুঝতে পারবে যে, দুনিয়াতে তার কী করা উচিত ছিল আর সে কী করে এসেছে। কাফের ব্যক্তি তখন ভালোভাবে বুঝতে পারবে। কিন্তু তখন এই বুঝে আসা কীভাবে তার কাজে আসবে? কেননা পরকাল কর্মজগৎ নয়; বরং তা হলো প্রতিদানজগৎ।
আয়াত-২৪.
জাহান্নামি লোক বলবে হায়! আমার পরকালের এ জীবনের জন্য আমি যদি নেক আমলের ভাণ্ডার আগে পাঠাতাম, তাহলে তা এ পথের জন্য সম্বল হতো। আমি তো খালি হাতে চলে এসেছি। কিন্তু কুফর ও গুনাহের শাস্তি চলে আসার পর এ আক্ষেপ কোনো কাজে আসবে না।
আয়াত-২৫.
সেদিন আল্লাহ তা’আলা পাপিষ্ঠ ও কাফেরকে এমন কঠিন শাস্তি দেবেন, যা দুনিয়াতে কেউ কোনো অপরাধীকে দেওয়ার কল্পনাও করতে পারবে না।
আয়াত-২৬.
এবং তিনি তাদেরকে শিকল ও বেড়ি দিয়ে এমন শক্তভাবে বাঁধবেন, যেভাবে দুনিয়ার কোনো মানুষ কাউকে বাঁধতে পারবে না।
আয়াত-২৭.
কিয়ামত দিবসে নাফরমান আত্মার করুণ পরিস্থিতি বর্ণনার পর আল্লাহর বাধ্য আত্মার জন্য পরম আনন্দের সংবাদ বর্ণনা করছেন। সেদিন অথবা কবর থেকে ওঠার পর তাকে ফেরেশতা সুসংবাদ দিয়ে শান্ত করবে। তখন ফেরেশতা বলবে, يَٰٓأَيَّتُهَا ٱلنَّفْسُ ٱلْمُطْمَئِنَّةُ হে প্রশান্ত আত্মা! তখন মুমিনদের রূহকে প্রশান্ত আত্মা বলে সম্বোধন করা হবে। অর্থাৎ যে আত্মা আল্লাহর স্মরণ ও আনুগত্যের দ্বারা প্রশান্তি লাভ করে এবং তা না করলে অশান্তি ভোগ করে। মুমিন বান্দার মন সবচেয়ে বেশি প্রশান্তিতে থাকে। যার কারণে সে বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করে এবং সুখ ও শান্তিতে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً এই আত্মা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট এবং আল্লাহ তা’আলাও তার প্রতি সন্তুষ্ট।
আয়াত-২৮.
তুমি তোমার প্রতিপালকের সান্নিধ্য লাভ ও তার প্রতিদান পাওয়ার দিকে ফিরে যাও এবং তোমার জন্য জান্নাতে প্রস্তুতকৃত নিয়ামতের দিকে ফিরে যাও। আল্লাহর স্থায়ী নিয়ামতের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে ও তোমার নেক আমলের কারণে আল্লাহর কাছে সন্তোষভাজন হয়ে ফিরে যাও।
আয়াত-২৯.
আমার নেককার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও।
আয়াত-৩০.
এবং তাদের সাথে আমার জান্নাতে প্রবেশ করো । মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুর সময় ফেরেশতাদের দ্বারা তাকে এ সুসংবাদ শোনানো হয়। তার মৃত্যুর পর কবর থেকে পুনরুত্থান করার পর আবার তাকে এ সুসংবাদ শোনানো হবে এবং কিয়ামতের মাঠে বিচারকাজ শেষ হওয়ার পর পুনরায় তাকে এ সুসংবাদ দেওয়া হবে,
فَٱدْخُلِى فِى عِبَٰدِى প্রশান্ত আত্মাকে সম্বোধন করে বলা হবে, আমার নেককার বান্দাদের কাতারভুক্ত হয়ে যাও এবং তাদের সাথে আমার জান্নাতে প্রবেশ করো। এ আদেশ হতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, জান্নাতে প্রবেশ করা ধর্মপরায়ণ, সৎ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ওপর নির্ভরশীল । তাদের সাথেই জান্নাতে প্রবেশ করা যাবে। এ থেকে জানা যায় যে, যারা দুনিয়াতে ধার্মিক ও সৎকর্ম পরায়ণ লোকদের সঙ্গ অবলম্বন করে, তারা যে তাদের সাথে জান্নাতে যাবে, এটা তারই আলামত। এ কারণেই সুলাইমান আ. দোয়া প্রসঙ্গে বলেছিলেন, وَاَدْخِلْنِي بِرَحْمَتِكَ فِي عِبَادِكَ الصَّلِحِينَ ‘আপনার করুণায় সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
নবী ইউসুফ আ. বলেছিলেন, والحقنى بالصلحين সৎকর্মশীলদের সাথে সম্পৃক্ত করুন। সৎ সংসর্গ একটি মহা নিয়ামত, যা পয়গম্ববরগণও উপেক্ষা করতে পারেন না। وَٱدْخُلِى جَنَّتِى আমার জান্নাতে প্রবেশ করো। আল্লাহ তা’আলা জান্নাতের সম্মান প্রদর্শনার্থে ‘আমার জান্নাত’ বলেছেন। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, জান্নাত শুধু চিরন্তন সুখ-শান্তির আবাসস্থলই নয়, বরং সর্বোপরি এটা আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির স্থান।
নির্দেশনা
১. জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ রাত্রির বিশেষ মর্যাদা কুরআনুল কারীম দ্বারা প্রমাণিত।
২.বাধ্য ও অত্যাচারী জাতিগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার অসীম ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এতে বোঝা যায় যে, তিনি মানুষকে মৃত্যু দেওয়ার পর পুনরুত্থান করে তাকে প্রতিদান ও শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
৩. আল্লাহ তা’আলার পাকড়াও এবং শাস্তি থেকে সবাইকে বেঁচে থাকতে হবে। সুতরাং যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, যারা শরীয়তবিরোধী আইন জারি করে এবং জুলুম-অত্যাচার ও অপকর্ম করে, তারা যেন গুনাহের পথ ছেড়ে তাওবা করে নেয় এবং নিজেদের শাস্তির চাবুক থেকে বাঁচিয়ে রাখে।
৪. যার সম্পদ রয়েছে সে আল্লাহর কাছে সম্মানিত এবং যে অভাব-অনটনে আছে, সে আল্লাহর কাছে লাঞ্ছিত, এটি একটি বস্তুবাদী চিন্তা, যা ইসলামের দৃষ্টিতে কখনো সঠিক নয় । মূলত আল্লাহর কাছে সম্মানিত সেই ব্যক্তি, যাকে তিনি ইবাদত ও পরকালের উপকারী আমলের তৌফিক দান করেন।
৫. এতিমকে সম্মান করা এবং গরিব-মিসকিনকে খাদ্য দান করা প্রত্যেক মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
৬. মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ পুরুষ হোক কিংবা নারী, বড় হোক বা ছোট—সবাইকে তার প্রাপ্য সম্পদ দিয়ে দেওয়া আবশ্যক।
৭. ধন-সম্পদের অত্যধিক ভালোবাসা নিন্দনীয়। যে কারণে মানুষ এর যথাযথ হক আদায় করতে পারে না।
৮. যারা আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য না করে বা কম করে, কিয়ামতের দিন তারা চরম আক্ষেপ করবে।
৯. যে প্রশান্ত আত্মার অধিকারী হবে, তাকে মৃত্যুর সময়, কবর থেকে ওঠার পর ও পরকালে হিসাব-নিকাশ শেষ হওয়ার পর এই সুসংবাদ দেওয়া হবে যে, তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং তাদের সাথে আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।
আরো পড়ুন :
৯৩.সূরা আদ দুহা سورة الضحى Surah Duha এর তাফসির ও শানে নুযুল
৯৪.সূরা ইনশিরাহ سورة الشرح Surah Inshirah এর তাফসীর ও শানে নুযুল
৯৫.সূরা ত্বীন سورة التين Surah Tin এর তাফসির ও শানে নুযুল
ট্যাগ সমূহ : সূরা আল ফাজর, সূরা ফজর ২৭-৩০, সূরা ফজর এর ফজিলত, সূরা ফজর বাংলা উচ্চারণ, সূরা আল ফাজর শেষ তিন আয়াতে কোন বিষয়ে আলোচনা, সূরা ফাজর আয়াত ২৭, সূরা ফাজর এর শানে নুযুল, সূরা ফজার এর তাফসীর, সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর,সুরা ফজর আয়াত ২৪, سورة الفجر,সূরা আল ফাজর আয়াত ২৭-৩০, সূরা আল ফাজর শেষ তিন আয়াতে কোন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, সূরা আল ফাজর বাংলা উচ্চারণ, সূরা আল ফাজর আয়াত ৩০, surah al fajr transliteration, surah al fajr full, surah al-fajr pdf, surah al fajr in english, surah al fajr translation, সূরা ফাজর বাংলা উচ্চারণ, সূরা ফাজর ২৭-৩০, সূরা ফাজর আয়াত ২৪, সূরা ফাজর এর অর্থ, সূরা ফজর আয়াত ২৮, surah fajr, surah fajr, surah fajr read online,সুরা ফাজর ২৭-৩০,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর, সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর, সূরা আল ফাজর, সূরা আল ফাজর শেষ তিন আয়াতে কোন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, সুরা ফাজর অর্থ,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর, সুরা ফাজর, বাংলা অনুবাদ, সুরা ফাজর, সূরা আল ফাজর আয়াত ৩০, সূরা ফাজর, সূরা ফাজর ২৭-৩০, surah fajr, surah fajr bangla, surah fajr 27-30surah fajr pdf, surah fajr transliteration, surah fajr last 3 ayat, surah fajr 27-30 bangla, surah fajr translation, surah fajr meaning, সূরা ফজর, সূরা ফজর এর শানে নুযুল, সূরা ফজর এর ফজিলত, সূরা ফজর বাংলা অনুবাদ, সূরা ফজর বাংলা উচ্চারণ, সূরা ফজর বাংলা, সূরা ফজর তাফসীর,سوره الفجر, سورة الفجر مكتوبة, تفسير سورة الفجر للاطفال,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর,সূরা আল ফাজর, |