সূরার পরিচয় :
সূরার নাম : সূরা আল ইনফিতার। | সূরার অর্থ : বিদীর্ণ করা। |
সূরা নং : ৮২ | রুকু সংখ্যা : ১ |
আয়াত সংখ্যা : ১৯ | সিজদা সংখ্যা : ০ |
শব্দ সংখ্যা : ৮০ | পারার সংখ্যা : ৩০ |
অক্ষর সংখ্যা : | শ্রেণী : মাক্কী। |
সূরা আল ইনফিতার سورة الانفطار Surah Al Infitar এর তাফসির ও শানে নুযুল
بسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ শুরু করছি আল্লাহ তা’আলার নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। |
(١) إِذَا ٱلسَّمَآءُ ٱنفَطَرَتْ (১) যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে, |
(٢) وَإِذَا ٱلْكَوَاكِبُ ٱنتَثَرَتْ (২) যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে, |
(٣) وَإِذَا ٱلْبِحَارُ فُجِّرَتْ (৩) যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে, |
(٤) وَإِذَا ٱلْقُبُورُ بُعْثِرَتْ (৪) এবং যখন কবরসমূহ উঠানো হবে, |
(٥) عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ وَأَخَّرَتْ (৫) তখন প্রত্যেকে জেনে নেবে সে কী অগ্নে প্রেরণ করেছে এবং কী পশ্চাতে ছেড়ে এসেছে। |
(٦) يَٰٓأَيُّهَا ٱلْإِنسَٰنُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ ٱلْكَرِيمِ (৬) হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল ? |
(٧) ٱلَّذِى خَلَقَكَ فَسَوَّىٰكَ فَعَدَلَكَ (৭) যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন। |
(٨) فِىٓ أَىِّ صُورَةٍ مَّا شَآءَ رَكَّبَكَ (৮) যিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছামতো আকৃতিতে গঠন করেছেন। |
(٩) كَلَّا بَلْ تُكَذِّبُونَ بِٱلدِّينِ (৯) কখনো বিভ্রান্ত হয়ো না; বরং তোমরা প্রতিদান দিবসকে মিথ্যা মনে করো। |
(١٠) وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَٰفِظِينَ (১০) অবশ্যই তোমাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। |
(١١) كِرَامًا كَٰتِبِينَ (১১) সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। |
(١٢) يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ (১২) তারা জানে, যা তোমরা করো। |
(١٣) إِنَّ ٱلْأَبْرَارَ لَفِى نَعِيمٍ (১৩) সৎকর্মশীলগণ থাকবে জান্নাতে। |
(١٤) وَإِنَّ ٱلْفُجَّارَ لَفِى جَحِيمٍ (১৪) এবং দুষ্কর্মীরা থাকবে জাহান্নামে; |
(١٥) يَصْلَوْنَهَا يَوْمَ ٱلدِّينِ (১৫) তারা বিচার দিবসে তথায় প্রবেশ করবে। |
(١٦) وَمَا هُمْ عَنْهَا بِغَآئِبِينَ (১৬) তারা সেখান থেকে পৃথক হবে না । |
(١٧) وَمَآ أَدْرَىٰكَ مَا يَوْمُ ٱلدِّينِ (১৭) আপনি জানেন, বিচার দিবস কী? |
(١٨) ثُمَّ مَآ أَدْرَىٰكَ مَا يَوْمُ ٱلدِّينِ (১৮) অতঃপর আপনি জানেন, বিচার দিবস কী? |
(١٩) يَوْمَ لَا تَمْلِكُ نَفْسٌ لِّنَفْسٍ شَيْـًٔا وَٱلْأَمْرُ يَوْمَئِذٍ لِّلَّهِ (১৯) যেদিন কেউ কারো কোনো উপকার করতে পারবে না এবং সেদিন সব কর্তৃত্ব হবে আল্লাহর । |
সূরার আলোচ্য বিষয়
এ সূরার মূল আলোচ্য বিষয় হলো কিয়ামত ও পরকাল। নবী করীম স. বলেন, ‘যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিনকে প্রত্যক্ষভাবে দেখতে চায় সে যেন সূরা তাকভীর, ইনফিত্বার ও সূরা ইনশিক্বাক্ব পাঠ করে ।’ (সুনানুত তিরমিযী-৩৩৩৩ হাসান)
সূরা আল ইনফিতার এর তাফসীর
আয়াত-১-৫
আকাশ বিদীর্ণ হওয়া, নক্ষত্রসমূহ ঝরে যাওয়া, মিঠা ও নোনা সমুদ্র একাকার হয়ে যাওয়া, কবর থেকে মৃতদের বের হয়ে আসা ইত্যাকার কিয়ামতের ঘটনা যখন ঘটে যাবে, তখন প্রত্যেকেই জেনে নেবে সে কী অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং কী পেছনে রেখে গেছে। অগ্রে প্রেরণ করার দ্বারা সেসব সৎকর্ম বোঝানো হয়েছে, যা দুনিয়ার জীবনে সম্পাদন করে আখেরাতের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে। আখেরাতের পুঁজি বানিয়েছে। আর সে কী পেছনে রেখে গেছে’ এটা এমন সব সৎকর্ম বোঝানো হয়েছে, যা তার করে যাওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তা না করেই মারা গেছে ও সেগুলো দুনিয়ায় রেখে গেছে।
আয়াত-৬-৮
আল্লাহ তা’আলা মানুষ সৃষ্টি করেছেন, সুবিন্যস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন। তিনি সব মানুষকে একই আকার-আকৃতিতে সৃষ্টি করেননি। এরূপ করলে পারস্পরিক স্বাতন্ত্র্য থাকত না। এই আয়াতসমূহে মানুষের সৃষ্টির প্রারম্ভিক পর্যায় উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে সামান্য চিন্তা-ভাবনা করলে মানুষ আল্লাহ ও রাসূল স.- এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে পারত এবং তাঁদের নির্দেশনাবলির চুল পরিমাণও বিরুদ্ধাচরণ করত না। কিন্তু মানুষ ভুল-ভ্রান্তিতে পড়ে আছে। তাই সাবধান করার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করা হয়েছে : হে মানুষ! তোমার সূচনা ও পরিণামের এসব অবস্থা সামনে থাকা সত্ত্বেও তোমাকে কিসে বিভ্রান্ত করল যে আল্লাহর নাফরমানি শুরু করেছ?
আয়াত-৯
না, কখনো না, তোমরা তো শেষ বিচারকে অস্বীকার করে থাকো । অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলার শক্তি সম্পর্কে এই ধোঁকায় থাকা উচিত নয় যে, তিনি মৃতদের পুনরায় জীবিত করতে পারবেন না (নাউযুবিল্লাহ)।
আয়াত-১০-১২
অথচ তোমাদের জন্য কিছু তত্ত্বাবধায়ক (ফেরেশতা) নিযুক্ত আছে, সম্মানিত লিপিকারবৃন্দ, যারা জানে তোমরা যা করো। এখানে সেই সকল ফেরেশতাকে বোঝানো হয়েছে, যারা মানুষের কর্মসমূহ লিপিবদ্ধ করার কাজে নিয়োজিত। তাদের দ্বারাই মানুষের আমলনামা প্রস্তুত হয়। حَٰفِظِينَ এর অর্থ: আপদ বিপদ থেকে রক্ষাকারী। আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক মানুষের হেফাজতের জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। তারা রাত-দিন মানুষের হেফাজতে নিয়োজিত থাকে।
তবে আল্লাহ তা’আলা যার জন্য বিপদ অবধারিত করে দিয়েছেন, ফেরেশতাগণ ওই বিপদ থেকে রক্ষা করেন না। অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, له معقبت من بين يديه ومن خلفه يحفظونه من أمر الله ‘মানুষের জন্য পালাক্রমে আগমনকারী পাহারাদার ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছেন। তারা আল্লাহর আদেশে সামনে ও পেছনে থেকে তার হেফাজত করেন।’ (সূরা রা’দ-১১)
আয়াত-১৩-১৫
পূর্ববর্তী ৫ নং আয়াতে যে কর্ম সামনে আসার কথা বলা হয়েছিল, আলোচ্য আয়াতে তারই শাস্তি ও প্রতিদান উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা সৎকর্ম করত তারা নিয়ামতে তথা জান্নাতে থাকবে এবং অবাধ্য ও নাফরমানরা জাহান্নামে থাকবে।
আয়াত-১৬
জাহান্নামীরা কোনো সময় জাহান্নাম থেকে পৃথক হবে না। কারণ তাদের জন্য চিরকালীন আজাবের নির্দেশ আছে। আহলে সুন্নত ওয়াল জামা’আতের ঐক্যবদ্ধ মতানুসারে কাফের ও খোদাদ্রোহীরা চিরস্থায়ী জাহান্নামে থাকবে। কোনো ঈমানদার মুসলমান চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না। তাওবার মাধ্যমে অথবা যেকোনোভাবে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী তাদের ক্ষমা করে দিতে পারেন। তাহলে জাহান্নামমুক্ত হয়ে যাবে। আর কোনো মুসলমান পাপীকে জাহান্নামে দেওয়া হলেও শাস্তির পর তাদের মুক্ত করে বেহেশতে প্রবেশ করানো হবে। কারণ চিরস্থায়ী জাহান্নাম সম্পর্কিত কিছু আয়াতে কাফেরদের কথা উল্লেখ আছে।
এছাড়া অপর একটি আয়াত الا ما شاء ربك (‘তবে যার বিষয়ে তোমার প্রভু ইচ্ছা করেন’। সূরা হুদ-১০৭), এর মাধ্যমে মুসলমানদের চিরস্থায়ী জাহান্নামী হওয়া থেকে ভিন্ন বোঝানো হয়েছে। অপর আয়াতে দয়াময় প্রভু ঘোষণা করেন, ‘মুমিনদের অণু পরিমাণ আমলের বিনিময় প্রদান করা হবে’। (সূরা যিলযাল-৮)
সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে, অণু পরিমাণ ঈমানদার ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। (আহমদ-১৯৬৪৯ হাদীস সহীহ)
আয়াত-১৭-১৯
তুমি কি জানো কর্মফল দিবস কী? আবারও, তুমি কি জানো কর্মফল দিবস কী? তা সেই দিন, যে দিন কেউ কারো জন্য কিছু করার সামর্থ্য রাখবে না এবং সেদিন কেবল আল্লাহরই কর্তৃত্ব চলবে। হাশরের ময়দানে কোনো ব্যক্তি নিজ ইচ্ছায় অন্যের কোনো উপকার করতে পারবে না এবং কারো কষ্ট লাঘবও করতে পারবে না। এতে সুপারিশ করবে না, এরূপ বোঝা যায় না। কেননা কারো সুপারিশ করা নিজ ইচ্ছায় হবে না, যে পর্যন্ত আল্লাহ কাউকে কারো সুপারিশ করার অনুমতি না দেন। তাই আল্লাহ তা’আলাই আসল আদেশের মালিক। তিনি স্বীয় অনুগ্রহে কাউকে সুপারিশের অনুমতি দিলে এবং তা কবুল করলে তা-ও তাঁরই আদেশে হবে।
নির্দেশনা
১. হিসাব-নিকাশের দিন প্রত্যেক মানুষ অগ্রে কী পাঠিয়েছে এবং পশ্চাতে কী রেখে গেছে, তা জানতে পারবে। তাই সকলের জন্য জরুরি হলো, দুনিয়াতে থাকাবস্থায় নেক আমল বেশি বেশি করা এবং দুনিয়াতে কিছু ভালো জিনিসের ভিত্তি স্থাপন করে যাওয়া, যেন সে মৃত্যুর পরেও এর ফল পেতে থাকে।
২. প্রত্যেক মানুষের জন্য জরুরি হলো, দুনিয়াতে বেশি বেশি নেক আমল করে নেককারদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পরকালে জান্নাতের ওয়ারিশ হওয়া এবং ওই বিচার দিবসকে ভয় করা, যেদিনের কর্তৃত্ব থাকবে একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হাত
আরো পড়ুন :
৮৪.সূরা ইনশিকাক سورة الانشقاق Surah Inshiqaq এর তাফসির ও শানে নুযুল
৮৫.সূরা বুরুজ سورة البروج Surah Al Buruj এর তাফসির ও শানে নুযুল
৮৬.সূরা তারিক سورة الطارق Surah Tariq এর তাফসির ও শানে নুযুল
ট্যাগ সমূহ : সূরা ইনফিতার,সূরা আল ইনফিতার এর তাফসীর, সূরা আল ইনফিতার এর শানে নুযুল, سورة الانفطار, সূরা ইনফিতার এর দারস, সূরা ইনফিতার এর তাফসীর, সূরা ইনফিতার এর শানে নুযুল, সূরা আল ইনফিতার, সূরা আল ইনফিতার বাংলা অনুবাদ, সূরা আল ইনফিতার আয়াত ৬, সূরা আল ইনফিতার বাংলা, surah al infitar transliteration, surah al infitar in english, surah al infitar bangla, surah al infitar, surah al infitar latin, surah al infitar ayat 1-19, সূরা আল ইনফিতার, সুরা আল ইনফিতার আয়াত ৬, সুরা আল ইনফিতার বাংলা অনুবাদ, সূরা আল ইনফিতার বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অনুবাদ সহ সূরা আল ইনফিতার, সূরা আল ইনফিতার বাংলা, সূরা আল-বুরুজ অর্থ, সূরা আল বুরুজ বাংলা অনুবাদ, ইনফিতার সূরা, সুরা আল বুরুজ বাংলা উচ্চারণ, সূরা আল বুরুজ এ কয়টি বিষয়ে শপথ করা হয়েছে, আল ইনফিতার, surah al infitar,দারসুল কুরআন সূরা ইনফিতার, সূরা আল ইনফিতার তাফসীর, সূরা ইনফিতার এর তাফসীর,معاني سورة الانفطار, حل درس سورة الانفطار للصف الخامس, سوره الانفطار, সূরা ইনফিতার,সূরা আল ইনফিতার এর তাফসীর, সূরা আল ইনফিতার এর শানে নুযুল,সূরা আল ইনফিতার আয়াত ৬ |