৮৭.সূরা আল আলা سورة الاعلى Surah Al A’la এর তাফসির ও শানে নুযুল

সূরা আল আ'লা, سورة الاعلى,সূরা আল আলা এর শানে নুযুল,সূরা আল আলা, সূরা আল আলা এর তাফসীর, surah al-a'la pdf, surah al a'la translation, surah al a'la, surah al a'la ayat 16-17surah al-a'la ayat 1-19surat al a'la latin, surah al-a la ayat 1-19 latin, সূরা আলা বাংলা উচ্চারণ, সূরা আনা তাফসীর, সূরা আলা ১৬-১৭, সাব্বি হিসমা রক্মিকাল আলা সূরা, সুরা আলা এর ফজিলত, সূরা আ'লা আয়াত ১৪, সেরা সূরা আলাক বাংলা উচ্চারণ, সূরা আলা,সূরা আ'লা আয়াত ১৪, সূরা আল আলা,সূরা আল আলা,আল্লা তালু আলাইইয়া ওয়া তৃনী মুছলিমীন, আ'লা অর্থ কি, সূরা আলাক, সুরা আলা এর ফজিলত, আল্লাহ সূরা, সূরা আলা বাংলা উচ্চারণ, সূরা আলা ১৬-১৭,سوره الاعلى, سورة الأعلى, سورة الاعلي, سورة الاعلى مكتوبة,সূরা আল আলা
সূরা আল আলা এর শানে নুযুল

সূরার পরিচয় :

সূরার নাম : সূরা আল আলা।সূরার অর্থ : সুউচ্চ।
সূরা নং : ৮৭রুকু সংখ্যা : ১
আয়াত সংখ্যা : ১৯সিজদা সংখ্যা : ০
শব্দ সংখ্যা : ৭২পারার সংখ্যা : ৩০
অক্ষর সংখ্যা : ২৯৮শ্রেণী : মাক্কী।

সূরা আল আলা سورة الاعلى Surah Al A’la এর তাফসির ও শানে নুযুল


بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

শুরু করছি আল্লাহ তা’আলার নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

(١) سَبِّحِ ٱسْمَ رَبِّكَ ٱلْأَعْلَى

(১) আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন।

(٢) ٱلَّذِى خَلَقَ فَسَوَّىٰ

(২) যিনি সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন ।

(٣) وَٱلَّذِى قَدَّرَ فَهَدَىٰ

(৩) যিনি সুপরিমিত করেছেন ও পথ প্রদর্শন করেছেন

(٤) وَٱلَّذِىٓ أَخْرَجَ ٱلْمَرْعَىٰ

(৪) এবং যিনি তৃণাদি উৎপন্ন করেছেন,

(٥) فَجَعَلَهُۥ غُثَآءً أَحْوَىٰ

(৫) অতঃপর করেছেন তাকে কালো আবর্জনা।

(٦) سَنُقْرِئُكَ فَلَا تَنسَىٰٓ

(৬) আমি আপনাকে পাঠ করাবো, ফলে আপনি ভুলবেন না।

(٧)- إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُ إِنَّهُۥ يَعْلَمُ ٱلْجَهْرَ وَمَا يَخْفَىٰ

(৭) আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। নিশ্চয়ই তিনি জানেন সকল প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়।

(٨) وَنُيَسِّرُكَ لِلْيُسْرَىٰ

(৮) আমি আপনার জন্য সহজ শরীয়ত সহজতর করে দেব।

(٩) فَذَكِّرْ إِن نَّفَعَتِ ٱلذِّكْرَىٰ

(৯) উপদেশ ফলপ্রসূ হলে উপদেশ দান করুন,

(١٠) سَيَذَّكَّرُ مَن يَخْشَىٰ

(১০) যে ভয় করে; সে উপদেশ গ্রহণ করবে।

(١١) وَيَتَجَنَّبُهَا ٱلْأَشْقَى

(১১) আর যে হতভাগা, সে তা উপেক্ষা করবে।

(١٢) ٱلَّذِى يَصْلَى ٱلنَّارَ ٱلْكُبْرَىٰ

১২) সে মহা-অগ্নিতে প্রবেশ করবে।

(١٣) ثُمَّ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيَىٰ

(১৩) অতঃপর সেখানে সে মরবেও না, জীবিতও থাকবে না।

(١٤) قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ

(১৪) নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়।

(١٥) وَذَكَرَ ٱسْمَ رَبِّهِۦ فَصَلَّىٰ

(১৫) এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে; অতঃপর নামায আদায় করে।

(١٦) بَلْ تُؤْثِرُونَ ٱلْحَيَوٰةَ ٱلدُّنْيَا

(১৬) বস্তুত তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও,

(١٧) وَٱلْءَاخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰٓ

(১৭) অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী ।

(١٨) إِنَّ هَٰذَا لَفِى ٱلصُّحُفِ ٱلْأُولَىٰ

(১৮) এটা লিখিত রয়েছে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে;

(١٩) صُحُفِ إِبْرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ

(১৯) ইব্রাহীম ও মুসার কিতাবসমূহে।

সূরার আলোচ্য বিষয় :

আল্লাহ তা’আলা সূরায়ে আ’লায় এ তিনটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন :

১. তাওহীদ,
২. রিসালাত,
৩. আখেরাত।

১. তাওহীদ : তাওহীদ সম্বন্ধে বলা হয়েছে, আল্লাহর নামে তাসবীহ করো । কারণ তিনিই সৃষ্টিকুলের প্রতিটি জিনিসই সৃষ্টি করেছেন, তাতে ভারসাম্য স্থাপন করেছেন, তার তাকদীর নির্ধারণ করেছেন।

২. রিসালাত : রিসালাত তথা মানুষকে হেদায়াতের পথে নিয়ে আসা সম্বন্ধে রাসূল স.-কে বলা হয়েছে, আপনার দায়িত্ব কেবল সত্য প্রচার করা। যার মনে মারাত্মক পরিণতির ভয় আছে সে অবশ্যই তা কবুল করবে। আর যে তা শুনতে অনাগ্রহী কিংবা তার থেকে দূরে থাকতে চায়, সে নিজেই তার খারাপ পরিণতি ভোগ করবে।

৩. আখেরাত : পরিশেষে আখেরাত সম্বন্ধে বলা হয়েছে, মানুষের আসল চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত
পরকাল । পরকালীন কল্যাণই হওয়া উচিত তাদের লক্ষ্য। কেননা এই দুনিয়া নশ্বর-ধ্বংসশীল ।

সূরা আল আলা এর শানে নুযুল :

আলোচ্য সূরাটি একেবারে প্রথম দিকে অবতীর্ণ হয়, যখন রাসূল স. ওহী গ্রহণের জন্য পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে ওঠেননি। ওহী নাযিল হওয়ার সময় তাঁর মনে মনে এ আশঙ্কা জাগত যে, হয়তো শব্দ ও ভাষা ভুলে যেতে পারেন। তাই এই সূরার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ স.-কে এই বলে আল্লাহ তা’আলা নিশ্চয়তা দেন যে, তিনি এই সূরা ভুলে যাবেন না। স্মরণ করানোর ভার আল্লাহর ওপর। কাজেই এ ব্যাপারে তিনি যেন চিন্তিত না হন।

সূরা আল আলা এর তাফসীর

আয়াত-১.
আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন। হাদীস শরীফে এসেছে, ওকবা ইবনে আমের জোহানী রা. বর্ণনা করেন, যখন সূরা আ’লা নাযিল হয় তখন রাসূলুল্লাহ স. বললেন, “إجعلوها في سجودكم ” অর্থাৎ তোমরা “سبحان ربي الأعلى“ কালেমাটি সিজদায় পাঠ করো। (আবু দাউদ-১/৫৪২, হা. ৮৬৯, ইবনে মাজাহ-১/৫৮০, হা. ৮৮৭, হাসান লিগাইরিহী)

আয়াত-২. ৩
যিনি নির্ধারণ করেছেন, তারপর পথ পদর্শন করেছেন। উক্ত আয়াত দুটিতে সব জগৎ সৃষ্টিতে আল্লাহর অপার রহস্য ও শক্তি সম্পর্কিত গুণাবলির বর্ণনা রয়েছে।

প্রথম গুণ : “خلق”-এর অর্থ কেবল সৃষ্টি করাই নয়; বরং কোনো পূর্ব নমুনা ব্যতিরেকে কোনো কিছুকে নাস্তি থেকে আস্তিতে আনয়ন করা। কোনো সৃষ্টির এ কাজ করার সাধ্য নেই, একমাত্র আল্লাহ তা’আলার কোনো পূর্ব নমুনা ব্যতিরেকে যখন ইচ্ছা, যাকে ইচ্ছা নাস্তি থেকে আস্তিতে আনয়ন করে।

দ্বিতীয় গুণ : “ تسوية ”-এর অর্থ সামঞ্জস্যপূর্ণ। উদ্দেশ্য এই যে, তিনি প্রত্যেক বস্তুর দৈহিক গঠন, আকার-আকৃতি ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে বিশেষ মিল রেখে তাকে অস্তিত্ব দান করেছেন। মানুষ ও প্রত্যেক জীব-জানোয়ারকে তার প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্যশাল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়েছেন। হস্তপদ ও অঙ্গসমূহের মধ্যে এমন জোড়া ও প্রাকৃতিক স্প্রিং সংযুক্ত করেছেন, যার ফলে এগুলোকে চতুর্দিকে ঘোরানো-মোড়ানো যায়। এই বিস্ময়কর মিল স্রষ্টার রহস্য ও শক্তি-সামর্থ্যে বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য যথেষ্ট।

তৃতীয় গুণ : “تقدير”-এর অর্থ কোনো বস্তুকে বিশেষ পরিমাণ সহকারে সৃষ্টি করা। শব্দটি ফয়সালা অর্থেও ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে আল্লাহর ফয়সালা। এখানে এই অর্থই বোঝানো হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহ
তা’আলা দুনিয়ার বস্তুসমূহকে সৃষ্টি করেই ছেড়ে দেননি; প্রত্যেক বস্তুকে বিশেষ কাজের জন্য সৃষ্টি করে সে কাজের উপযুক্ত সম্পদ দিয়ে তাকে সে কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন। চিন্তা করলে দেখা যায় যে, এটা কোনো বিশেষ শ্রেণির সৃষ্টির মধ্যে সীমিত নয়—সমগ্র সৃষ্ট জগৎ ও সৃষ্টিকেই আল্লাহ তা’আলা বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং সে কাজেই নিয়োজিত করে দিয়েছেন। প্রত্যেক বস্তু তার পালনকর্তার নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

চতুর্থ গুণ : هداية”-এর অর্থ স্রষ্টা যে কাজের জন্য যাকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে সে কাজের পথনির্দেশও দিয়েছেন। সত্যিকারভাবে এই পথনির্দেশে আকাশ ও পৃথিবীর যাবতীয় সৃষ্টিই অন্তর্ভুক্ত আছে। কেননা এক বিশেষ ধরনের বুদ্ধি ও চেতনা মহান আল্লাহ তায়ালা সবাইকে দিয়েছেন।

আয়াত-৪. ৫.
এরপর তাকে কালো মিশ্রিত লাল বর্ণের খড়কুটায় পরিণত করেছেন। উক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ তা’আলা উদ্ভিদ সম্পর্কিত স্বীয় কুদরত ও হেকমত বর্ণনা করেছেন। তিনি ভূমি থেকে সবুজ-শ্যামল ঘাস উৎপন্ন করেছেন, অতঃপর একে শুকিয়ে কাল রঙে পরিণত করেছেন এবং সবুজতা বিলীন করে দিয়েছেন। এতে মানুষের পরিণতির দিকেও ইঙ্গিত রয়েছে যে, দেহের এই সজীবতা, সৌন্দর্য, স্ফূর্তি ও চাতুর্য আল্লাহ তা’আলারই দান। কিন্তু পরিশেষে এ সবই নিঃশেষিত হয়ে যাবে।

আয়াত-৬. ৭.
আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। নিশ্চয়ই তিনি জানেন প্রকাশ্য ও গোপন বিষয় পূর্ববর্তী আয়াত সমূহে আল্লাহ তা’আলা স্বীয় কুদরত ও হিকমতের কতিপয় বহিঃপ্রকাশ বর্ণনা করার পর এ স্থলে রাসূলুল্লাহ স.-কে নবুওয়তের কর্তব্য সম্পর্কে কয়েকটি জরুরি নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশ দানের পূর্বে তাঁর কাজ সহজ করে দেওয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন। প্রথম দিকে যখন জিবরাঈল আ. রাসূলুল্লাহ স.-কে কুরআনের কোনো আয়াত শোনাতেন, তখন তিনি আয়াতের শব্দাবলি ভুলে যাওয়ার আশঙ্কায় জিবরাঈল আ.-এর সাথে তা পাঠ করতেন।

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা কুরআন মুখস্থ করানোর দায়িত্ব নিজে গ্রহণ করেছেন এবং ব্যক্ত করেছেন যে, জিবরাঈল আ. চলে যাওয়ার পর কুরআনের আয়াতসমূহ বিশুদ্ধরূপে পাঠ করানো এবং স্মৃতিতে সংরক্ষিত করা আমার দায়িত্ব। কাজেই আপনি চিন্তিত হবেন না । তবে সে আয়াতগুলো ব্যতীত, যেগুলো সম্পূর্ণ ভুলিয়ে দেওয়াই উদ্দেশ্য। কারণ তা-ও এক ধরনের “نسخ” তথা রহিতকরণ। আর রহিত করা অথবা বিস্মৃত করার রহস্যসমূহ সম্যকভাবে জ্ঞাত হওয়া কেবল তাঁরই শান, যিনি গোপন ও প্রকাশ্য সব বিষয় সম্পর্কে অবহিত। কেবল তিনিই জানেন কোন কথা চিরদিনের জন্য বলবৎ রাখা উচিত, আর কোন কথা একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর তুলে নেওয়া উচিত।

আয়াত-৮.
আমি আপনার জন্য সহজ শরীয়ত সহজতর করে দেব। আল্লাহ তা’আলা আপনাকে এরূপ করে দেবেন যে, শরীয়ত আপনার স্বভাবে পরিণত হবে এবং আপনি তার ছাঁচে গঠিত হয়ে যাবেন।

আয়াত-৯.
সুতরাং উপদেশ ফলপ্রসূ হলে উপদেশ দান করুন। আল্লাহ তা’আলা যখন আপনার প্রতি এমন অনুগ্রহ করেছেন, তখন আপনিও অন্যদের নিকট এই ধারা পৌঁছে দিন এবং নিজের পূর্ণতা দ্বারা অন্যদেরকেও পরিপূর্ণ করে তুলুন। আয়াতে ‘যদি উপদেশ ফলপ্রসূ হয়’ এই শর্ত আরোপ করার কারণ হলো, উপদেশ দান তখনই জরুরি সাব্যস্ত হয়, যখন শ্রোতার পক্ষ থেকে তা গ্রহণ করার প্রবল ধারণা থাকে। আর এমনও হতে পারে যে, উপদেশ দানের গুরুত্ব বোঝানোর উদ্দেশ্যে এই শর্ত আরোপ করা হয়েছে। অর্থাৎ ‘উপদেশ’ দ্বারা যদি কেউ উপকৃত হয়, তাহলে আপনার উচিত উপদেশ দান করা। আর এটা নিশ্চিত যে, প্রত্যেকে না হলেও কেউ কেউ অবশ্যই উপদেশ দ্বারা উপকৃত হবে।

আয়াত-১০.
যে ভয় করে, সে-ই উপদেশ গ্রহণ করবে । বোঝানো দ্বারা সে-ই বোঝে, উপদেশ দ্বারা সে-ই উপকৃত হয়, যার অন্তরে আল্লাহর সামান্যতম ভয় থাকে। যার পরিণতির চিন্তা থাকে।

আয়াত-১১. ১৩.
অতঃপর সেখানে সে মরবেও না, জীবিতও থাকবে না। কষ্ট ও দুঃখের অবসান ঘটানোর জন্য মৃত্যু আসবে না এবং সুখের জীবনও তার ভাগ্যে জুটবে না। তবে হ্যাঁ, সে এমন এক জীবন লাভ করবে, যার বিপরীতে মৃত্যুই হবে তার কাম্য। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।

আয়াত-১৪.
অবশ্যই সে সফল হয়েছে, যে শুদ্ধ হয়েছে। বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ, অনুভবযোগ্য ও তাৎপর্যগত সব ধরনের নাপাকী থেকে পবিত্র হয়েছে এবং নিজের দেহ-মনকে বিশুদ্ধ আক্বীদা-বিশ্বাস, উন্নত অভ্যাস-চরিত্র ও নেক আমল দ্বারা সজ্জিত করেছে।

আয়াত-১৫.
এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করেছে, অতঃপর নামায আদায় করেছে। পাক-পবিত্র হয়ে তাকবীরে তাহরীমার মধ্যে আপন পালনকর্তার নাম উচ্চারণ করেছে। তারপর নামায পড়েছে। বাহ্যত এতে ফরয ও নফল সব রকম নামায অন্তর্ভুক্ত। কেউ কেউ “تزكى”-এর অর্থ সদকায়ে ফিতর, “ذكراسم ربه ”-এর উদ্দেশ্য ঈদের তাকবীর, আর “فضلى”-এর তাফসীর ঈদের নামায দ্বারা করেছেন। তাহলে আয়াতের মর্ম হবে, সফল তারা, যারা সদকায়ে ফিতর আদায় করল, আল্লাহর নামে তাকবীর বলল। অতঃপর ঈদের নামায আদায় করল । তবে প্রথম তাফসীরই সুস্পষ্ট।

আয়াত-১৬.
বস্তুত তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে ইহকালকে পরকালের ওপর প্রাধান্য দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এর কারণ এই যে, ইহকালের নিয়ামত ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য উপস্থিত এবং পরকালের নিয়ামত ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দৃষ্টি থেকে উধাও ও অনুপস্থিত।

তাই অপরিণামদর্শী লোকেরা। উপস্থিতকে অনুপস্থিতের ওপর প্রাধান্য দিয়ে বসে, যা তাদের জন্য চিরস্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। এ ক্ষতির কবল থেকে উদ্ধার করার জন্যই আল্লাহ তা’আলা খোদায়ী কিতাব ও রাসূলগণের মাধ্যমে পরকালের নিয়ামত ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, যেন সেগুলো উপস্থিত ও বিদ্যমান। এ কথাও বলে দেওয়া হয়েছে যে, তোমরা যাকে নগদ মনে করে অবলম্বন করো, তা আসলে কৃত্রিম, অসম্পূর্ণ ও দ্রুত ধ্বংসশীল । এরূপ বস্তুতে নিমজ্জিত হওয়া ও তার জন্য স্বীয় শক্তি ব্যয় করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

আয়াত-১৭.
অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী। তোমরা যারা দুনিয়াকে পরকালের ওপর প্রাধান্য দাও, একটু চিন্তা করো যে, তোমরা কী বস্তু ছেড়ে কী বস্তু অবলম্বন করছো । যে দুনিয়ার জন্য তোমরা পাগলপারা, প্রথমত, তার বৃহত্তম সুখ ও আনন্দ, দুঃখ-কষ্ট ও পরিশ্রমের মিশ্রণ থেকে মুক্ত নয়, দ্বিতীয়ত, তার কোনো স্থিরতা ও স্থায়িত্ব নেই।

আজ যে বাদশাহ, কাল সে পথের ভিখারী। আজকের যুবক ও বীর্যবান, আগামীকাল দুর্বল ও অক্ষম। এটা দিবা-রাত্রি চোখের সামনে ঘটছে। এর বিপরীতে পরকাল এসব দোষ থেকে মুক্ত। পরকালের প্রত্যেক নিয়ামত ও সুখ উৎকৃষ্টই উৎকৃষ্ট। দুনিয়ার কোনো নিয়ামত ও সুখের সাথে তার কোনো তুলনা হয় না। তদুপরি তা চিরস্থায়ী । অতএব, যে বস্তু গুণ ও পরিমাণ উভয় দিক থেকে উত্তম ও চিরস্থায়ী, তাকে বাদ দিয়ে অধম বস্তু গ্রহণ করা তা কেবল বোকারাম হতভাগাদেরই কাজ।

আয়াত-১৮.
সূরার সব বিষয়বস্তু অথবা সর্বশেষ বিষয়বস্তু (পরকালের উৎকৃষ্ট হওয়া ও চিরস্থায়ী হওয়া) কেবল কুরআনেরই দাবি নয়; বরং তা পূর্ববর্তী সহীফাসমূহেও রয়েছে।

আয়াত-১৯.
ইবরাহীম ও মূসার সহীফাসমূহে। উপরোক্ত বিষয়গুলো ইবরাহীম আ. ও মূসা আ.-এর গ্রন্থসমূহেও উল্লিখিত হয়েছে। তা কখনো রহিত বা পরিবর্তন হয়নি। এ হিসেবে বিষয়টি আরো গুরুত্ববহ হয়ে গেল ।

সূরা আল আলা এর নির্দেশনা :

১. আল্লাহর নামেরই কেবল তাসবীহ পাঠ করা, অন্য কারোর নয়।
২. সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ “سبحان ربي الأعلى” পড়া।
৩. নামাযের শুরুতে তাকবীরে তাহরীমা বলা।
৪. যিকির-আযকার, নামায-যাকাত ইত্যাদি যাবতীয় আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে চলা।
৫. দুনিয়া বিমুখতা অবলম্বন করে আখেরাতমুখী হওয়া।

আরো পড়ুন :

৮৯.সূরা আল ফাজর سورة الفجر Surah Fajr এর তাফসির ও শানে নুযুল

৯০.সূরা বালাদ سورة البلد Surah Balad এর তাফসির ও শানে নুযুল

৯১.সূরা আশ শামস سورة الشمس Surah Shams এর তাফসির ও শানে নুযুল

ট্যাগ সমূহ : সূরা আল আ’লা, سورة الاعلى,সূরা আল আলা এর শানে নুযুল,সূরা আল আলা, সূরা আল আলা এর তাফসীর, surah al-a’la pdf, surah al a’la translation, surah al a’la, surah al a’la ayat 16-17surah al-a’la ayat 1-19surat al a’la latin, surah al-a la ayat 1-19 latin, সূরা আলা বাংলা উচ্চারণ, সূরা আনা তাফসীর, সূরা আলা ১৬-১৭, সাব্বি হিসমা রক্মিকাল আলা সূরা, সুরা আলা এর ফজিলত, সূরা আ’লা আয়াত ১৪, সেরা সূরা আলাক বাংলা উচ্চারণ, সূরা আলা,সূরা আ’লা আয়াত ১৪, সূরা আল আলা,সূরা আল আলা,আল্লা তালু আলাইইয়া ওয়া তৃনী মুছলিমীন, আ’লা অর্থ কি, সূরা আলাক, সুরা আলা এর ফজিলত, আল্লাহ সূরা, সূরা আলা বাংলা উচ্চারণ, সূরা আলা ১৬-১৭,سوره الاعلى, سورة الأعلى, سورة الاعلي, سورة الاعلى مكتوبة,সূরা আল আলা,সূরা আল আলা,সূরা আল আলা,সূরা আল আলা
সূরা আল আ’লা, سورة الاعلى,সূরা আল আলা এর শানে নুযুল,সূরা আল আলা, সূরা আল আলা এর তাফসীর, surah al-a’la pdf, surah al a’la translation, surah al a’la, surah al a’la ayat 16-17surah al-a’la ayat 1-19surat al a’la latin, surah al-a la ayat 1-19 latin, সূরা আলা বাংলা উচ্চারণ, সূরা আনা তাফসীর, সূরা আলা ১৬-১৭, সাব্বি হিসমা রক্মিকাল আলা সূরা, সুরা আলা এর ফজিলত, সূরা আ’লা আয়াত ১৪, সূরা আল আলা, সূরা আলাক বাংলা উচ্চারণ, সূরা আলা,সূরা আ’লা আয়াত ১৪, আল্লা তালু আলাইইয়া ওয়া তৃনী মুছলিমীন, আ’লা অর্থ কি, সূরা আলাক, সুরা আলা এর ফজিলত, আল্লাহ সূরা, সূরা আলা বাংলা উচ্চারণ, সূরা আলা ১৬-১৭,سوره الاعلى, سورة الأعلى, سورة الاعلي, سورة الاعلى مكتوبة,সূরা আল আলা,সূরা আল আলা,

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top