সূরার পরিচয় :
সূরার নাম : সূরা আন নাস। | সূরার অর্থ : মানবজাতি। |
সূরা নং : ১১৪ | রুকু সংখ্যা : ১ |
আয়াত সংখ্যা : ৬ | সিজদা সংখ্যা : ০ |
শব্দ সংখ্যা : ২০ | পারার সংখ্যা : ৩০ |
অক্ষর সংখ্যা : ৮০ | শ্রেণী : মাদানী |
সূরা আন নাস سورة الناس Surah An Nas এর তাফসির ও শানে নুযুল
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ শুরু করছি আল্লাহ তা’আলার নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। |
(١) قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ (১) বলুন, আমি আশ্রয় কামনা করছি মানুষের পালনকর্তার, |
(٢) مَلِكِ ٱلنَّاسِ (২) মানুষের অধিপতির, |
(٣) إِلَٰهِ ٱلنَّاسِ (৩) মানুষের মা’বুদের |
(٤) مِن شَرِّ ٱلْوَسْوَاسِ ٱلْخَنَّاسِ (৪) তার অনিষ্ট থেকে; যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্মগোপন করে, |
(٥) ٱلَّذِى يُوَسْوِسُ فِى صُدُورِ ٱلنَّاسِ (৫) যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে |
(٦) مِنَ ٱلْجِنَّةِ وَٱلنَّاسِ (৬) জিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে। |
শাব্দিক বিশ্লেষণ
ٱلْوَسْوَاسِ : (কুমন্ত্রণাদাতা), বিশেষ্য, অন্তরে যে সকল মন্দ বিষয় উত্থাপিত হয় তাকে ওয়াসওয়াসা বলে।
ٱلْخَنَّاسِ : (আত্মগোপনকারী, যে নিঃশব্দে চোরের মতো চলাফেরা করে, শয়তান), বিশেষ্য, মূলত এর দ্বারা দুষ্ট প্রকৃতির মানুষ, জিন ও শয়তানকে বোঝানো উদ্দেশ্য।
يُوَسْوِسُ : (সে কুমন্ত্রণা দেয়), বর্তমানকালীন ক্রিয়া, একবচন, প্রথম পুরুষ, পুংলিঙ্গ, শব্দটির মূল হলো الوسوسة কুমন্ত্রণা দেওয়া, খারাপ পরামর্শ দেওয়া, মন্দ কাজে প্ররোচিত করা ।
সূরার আলোচ্য বিষয়
সূরা নাস গুরুত্ব ও তাৎপর্যের দিক থেকে অসাধারণ। পূর্বের সূরা, সূরা ফালাক্বের ন্যায় এ সূরাকেও ‘আশ্রয় প্রার্থনার সূরা’ বলা হয়। এতে মহান রব্বেকারীমের নিকট দুষ্ট প্রকৃতির মনুষ্য জাতি ও জিন জাতির অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার নিমিত্তে কীভাবে আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে তার শিক্ষা বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
সূরা আন নাস এর শানে নুযুল
সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস দুটি একত্রে অবতীর্ণ হয়েছে। দুটি সূরার শানে নুযূল অভিন্ন, যা সূরা ফালাক্বের আলোচনায় উল্লেখ হয়েছে।
সূরা আন নাস এর তাফসির
আয়াত-১. ৩.
বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার। মানুষের অধিপতির। মানুষের মা’বুদের কাছে। আল্লাহ ইহজগৎ-পরজগৎ সকল কিছুর পালনকর্তা, অধিপতি এবং মা’বুদ হওয়া সত্ত্বেও কেবল মানুষের পালনকর্তা, মানুষের অধিপতি, মানুষের মা’বুদ বলে আয়াতত্রয়ে উল্লেখ করার কারণ হলো, আল্লাহ মানুষকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছেন, মানুষকে সৃষ্টির সেরা ঘোষণা করেছেন । সুতরাং এ মানুষকে সম্বোধন করলে বাকিদেরও সম্বোধন হয়ে যায় । আর তা ছাড়া মানুষের মধ্যে, হিংসা, বিদ্বেষ, কুমন্ত্রণা প্রদান ও অনিষ্ট করার প্রবণতা রয়েছে। তাই আল্লাহর আলোচ্য গুণগুলো মানুষের সাথে সম্পর্কিত করে বলা হয়েছে।
আয়াত-৪. ৫.
অধিক আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় গ্রহণ করছি। যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়।
এই আয়াতে خَنَّاسِ থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। خَنَّاسِ শব্দটি خنس থেকে উৎপন্ন । অর্থ: আত্মগোপন করা, পশ্চাতে সরে যাওয়া। মানুষ আল্লাহর নাম উচ্চারণ করলে পেছনে সরে যাওয়া ও আত্মগোপন করা শয়তানের অভ্যাস। মানুষ গাফেল হলে আবার অগ্রসর হয়। তাই خَنَّاسِ আত্মগোপনকারী হলো শয়তান। যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। মানুষ ও জিন জাতি উভয়কে ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই শয়তান এই দুই জাতিকেই কুমন্ত্রণা দেয়। মানুষ শ্রেষ্ঠ জাতি হওয়ার কারণে মানুষ উল্লেখ করার মধ্যে জিন জাতিও অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
যে বিষয় থেকে আশ্রয় চাওয়া উদ্দেশ্য তা হলো শয়তানের অসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা থেকে। শয়তান মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। রাসূলুল্লাহ স. বলেন, প্রত্যেক মানুষের অন্তরে দুটি গৃহ আছে। একটিতে ফেরেশতা ও অপরটিতে শয়তান বাস করে। মানুষ যখন আল্লাহর যিকির করে তখন শয়তান পেছনে সরে যায়। যখন যিকিরে থাকে না (গাফেল হয়) তখন তার তৎপরতা মানুষের অন্তরে স্থাপন করে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দিতে থাকে ।
আয়াত-৬.
জিন ও মানুষের মধ্য থেকে। শয়তান যেমন আত্মগোপনে কুমন্ত্রণা দেয়, ঠিক তেমনি কতক মানুষ কুমন্ত্রণায় লিপ্ত থাকে । অতএব, সারমর্ম এই দাঁড়াল যে, আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূল স.-কে জিন শয়তানের অনিষ্ট থেকে এবং মানুষ শয়তানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা শিক্ষা দিয়েছেন। জিন শয়তান আড়ালে থেকে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। আর মানুষ শয়তান সামনাসামনি কথা ও কর্মের মাধ্যমে অথবা সূক্ষ্ম চক্রান্তের মাধ্যমে কুমন্ত্রণা দেয়। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্য শত্রু করেছি শয়তান, মানব ও জিনকে। তারা ধোঁকা দেওয়ার জন্য একে অপরকে চমকপ্রদ কথাবার্তা শিক্ষা দেয়।’ (সূরা আল আনআম-১১২)
নির্দেশনা
১. আশ্রয় কামনা একমাত্র আল্লাহর নিকট করা, তিনি এ মহাবিশ্বের প্রতিপালক ও আশ্রয়দাতা।
২. আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে কিছু কিছু সৃষ্টিতে অনিষ্ট রয়েছে। কিংবা সেগুলোকে অবলম্বন করে কুচক্রীমহল শত্রুপক্ষকে ক্ষতি সাধন করতে পারে। এ জন্য এজাতীয় ক্ষতি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
৩. এ সূরায় অন্ধকার রাত ও জাদুকারিণীদের অনিষ্টের কথা ফুটে উঠলেও এ ছাড়া আরো অনেক বিষয় রয়েছে, যার মাধ্যমে ক্ষতি সাধন করা হয়ে থাকে। সে সকল বিষয়ও এর অন্তর্ভুক্ত হবে। বস্তুত মানুষের ক্ষতি করা, কারো সাথে শত্রুতা পোষণ করা অনেক বড় পাপ। মানুষ মানুষের ক্ষতি করে থাকে প্রধানত তিনটি বিষয়ে- জানের ক্ষতি, ধন-সম্পদের ক্ষতি এবং ইজ্জত-আব্রু, মান-সম্মানের ক্ষতি সাধন। এই তিন ধরনের ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয়ের পদ্ধতি এ সূরায় শিক্ষা দেওয়া হয়েছে । হাদীসে রাসূল স. বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সে ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অন্যরা নিরাপদ থাকে।’ অর্থাৎ তার মাধ্যমে কেউ কোনোরূপ ক্ষতি বা অনিষ্টের শিকার হয় না। (সহীহ বুখারী-১০, সহীহ মুসলিম-৪০)
৪. হিংসা অত্যন্ত অপছন্দনীয় ও নিন্দনীয় কাজ। হিংসা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। হিংসুকের হিংসা কেবল তাকেই পোড়ায় না বরং যাবতীয় পুণ্যকেও ভস্ম করে দেয়।
৫. শয়তান দৃশ্যমান নয়, মনুষ্য চোখে তাকে দেখা না গেলেও সে বিদ্যমান ও মানুষের শত্রু তা সত্য। সে মানুষকে বিপথগামী করার ক্ষমতা রাখে। এক হাদীসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই শয়তান বলেছে, হে রব! আমি তোমার ইজ্জত-সম্মানের কসম করে বলছি, আমি তোমার বান্দাদেরকে যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের শরীরে রূহ থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত বিপথগামী করব। আল্লাহ বলেছেন, আমি আমার ইজ্জত ও মহত্ত্বের শপথ করে বলছি, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকব।’ (মুসনাদে আবী ইয়ালা-২/৪৫৮, হা. ১৩৬৯, মুসতাদরাকে হাকেম-৪/২৯০, হা. ৭৬৭২ সহীহ)
৬. শয়তানের অস্তিত্ব সত্য। সে মানুষকে আড়ালে থেকে ধোঁকা দেয়, মনে কুমন্ত্রণা দেয় । কতিপয় মানুষ এমন রয়েছে, যাদের মাঝে শয়তানী কূটচাল বিদ্যমান। তারা সরল-সত্য পথ থেকে বিচ্যুত । এরা মানুষরূপী শয়তান। তারাও মানুষদের কুমন্ত্রণা দেয় । জিন শয়তান এবং মানুষ শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায় হলো আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা।
উল্লেখ্য যে, আপন আপন ভাষায় আল্লাহর কাছে শয়তান ও অনিষ্টকারী মানুষ এবং অনিষ্টকারী জীবজন্তু থেকে আশ্রয় চাওয়া যায়। আউযুবিল্লাহ পড়ে অথবা রাসূলুল্লাহ স. থেকে বর্ণিত আশ্রয় প্রার্থনা করা সম্পর্কিত কোনো দোয়া পড়ে আশ্রয় চাওয়া যায়। এ ছাড়া সূরা ফালাক্ব ও নাস ইত্যাদি পড়ত আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া যায়।
আরো পড়ুন :
১১৩. সূরা ফালাক Sura Falak سورة الفلق এর তাফসির ও শানে নূযুল
১১২.সূরা ইখলাস سورة الاخلاص Sura Ikhlas এর তাফসির ও শানে নুযূল
১১০.সূরা নাসর سورة النصر sura Nasor এর তাফসির ও শানে নুযূল
ট্যাগ সমূহ : সূরা আন নাস, সুরা আন নাস বাংলা উচ্চারণ,সূরা আন নাস এর তাফসির , সূরা আন নাস এর শানে নুযুল,সূরা আন নাস এর অর্থ, সূরা ফাতিহা থেকে সূরা আন নাস, আন নাস অর্থ কি, সূরা আন নাস বাংলা উচ্চারণ সহ,সূরা নাস ও ফালাক,سورة الناس,surah an nas,surah an nas 100 times,surah an-nas ayat 1-6,surah an nas ayat 1, surah an nas ayat 2, surah an nas tahun 2, surah an nas ayat 3, surah an nas 1-3, surah an nas ayat ke 3, surah an nas, surah an nas ayat 4, surah an nas ayat ke 4, surah an nas ayat 5,dalil surah an nas 5, surah an nas ayat 6,surah an nas 1-6,সূরা নাস,সূরা নাস বাংলা উচ্চারণ সহ,সূরা নাসর,সূরা নাস বাংলা,সূরা নাস বাংলা অর্থসহ,সূরা নাসর বাংলা উচ্চারণ,,সূরা নাস সূরা ফালাক,সূরা নাস অর্থ কি,,সূরা নাস এর তাফসীর,সূরা নাস এর অর্থ,সূরা নাম আরবি,,সূরা নাস এর শানে নুযুল, সূরা নাস সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ, সূরা নাস অর্থসহ,সূরা নাস অর্থ,,সূরা নাস অডিও,سوره الناس, تفسير سورة الناس, سورة الناس للاطفال,সূরা আন নাস, সুরা আন নাস বাংলা উচ্চারণ,সূরা আন নাস এর তাফসির , সূরা আন নাস এর শানে নুযুল,সূরা আন নাস এর অর্থ, সূরা ফাতিহা থেকে সূরা আন নাস, আন নাস অর্থ কি, সূরা আন নাস বাংলা উচ্চারণ সহ,সূরা নাস ও ফালাক, |