সূরার পরিচয় :
সূরার নাম : সূরা আদিয়াত | সূরার অর্থ : দ্রুতগামী ঘোড়া |
সূরা নং : ১০০ | রুকু সংখ্যা : ১ |
আয়াত সংখ্যা : ১১ | সিজদা সংখ্যা : ০ |
শব্দ সংখ্যা : ৪০ | পারার সংখ্যা : ৩০ |
অক্ষর সংখ্যা : ১৬৪ | শ্রেণী : মাক্কী |
সূরা আদিয়াত سورة العاديات Sura Adiyat এর তাফসীর ও শানে নুযুল
بسم الله الرحمن الرحيم শুরু করছি আল্লাহ তা’আলার নামে; যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। |
(١) وَٱلْعَٰدِيَٰتِ ضَبْحًا (১) শপথ ঊর্ধ্বশ্বাসে চলমান অশ্বসমূহের, |
(٢) فَٱلْمُورِيَٰتِ قَدْحًا (২) অতঃপর ক্ষুরাঘাতে অগ্নিবিচ্ছুরক অশ্বসমূহের |
(٣) فَٱلْمُغِيرَٰتِ صُبْحًا (৩) অতঃপর প্রভাতকালে আক্রমণকারী অশ্বসমূহের |
(٤) فَأَثَرْنَ بِهِۦ نَقْعًا (৪) এবং যারা সে সময়ে ধূলি উৎক্ষিপ্ত করে। |
(٥) فَوَسَطْنَ بِهِۦ جَمْعًا (৫) অতঃপর যারা শত্রুদলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে |
(٦) إِنَّ ٱلْإِنسَٰنَ لِرَبِّهِۦ لَكَنُودٌ (৬) নিশ্চয়ই মানুষ তার পালনকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ। |
(٧) وَإِنَّهُۥ عَلَىٰ ذَٰلِكَ لَشَهِيدٌ (৭) এবং সে অবশ্য এ বিষয়ে অবহিত |
(٨) وَإِنَّهُۥ لِحُبِّ ٱلْخَيْرِ لَشَدِيدٌ (৮) এবং সে নিশ্চিতই ধন-সম্পদের ভালোবাসায় মত্ত। |
(٩) أَفَلَا يَعْلَمُ إِذَا بُعْثِرَ مَا فى ٱلْقُبُورِ (৯) সে কি জানে না ? যখন কবরে যা আছে তা উত্থিত হবে; |
(١٠) وَحُصِّلَ مَا فِى ٱلصُّدُورِ (১০) এবং অন্তরে যা আছে, তা অর্জন করা হবে? |
(١١) إِنَّ رَبَّهُم بِهِمْ يَوْمَئِذٍ لَّخَبِيرٌۢ (১১) সেদিন তাদের কী হবে; সে সম্পর্কে তাদের রব সবিশেষ জ্ঞাত। |
শাব্দিক বিশ্লেষণ
ٱلْعَٰدِيَٰتِ : শব্দটি عدؤ উদ্ভূত । অর্থ: দৌড়ানো। এর অতীতকাল। عدا অর্থ: অতিক্রম করেছে, গমন করেছে। শব্দটি বিশেষ্য, বহুবচন। এর একবচন হলো عادية অর্থ দ্রুতগামী ঘোড়া । নির্দিষ্ট বোঝাতে শুরুতে ال যুক্ত ٱلْعَٰدِيَٰتِ হয়েছে।
ضَبْحًا : ঘোড়ার দৌড় দেওয়ার সময় তার বক্ষ থেকে নির্গত শব্দ । শব্দটির মূল হলো ضبح (হাঁপানো, জোরে শ্বাস নেওয়া) বিশেষ্য অর্থ: হাঁপাতে হাঁপাতে। বাক্যে কর্ম হিসেবে ব্যবহার হয়েছে।
ٱلْمُورِيَٰتِ : শব্দটির মূল হলো ايراء (অগ্নি নির্গত করা, প্রজ্বলিত করা) বিশেষ্য, স্ত্রীলিঙ্গ, বহুবচন ٱلْعَٰدِيَٰتِ কে অনুসরণ করে ٱلْمُورِيَٰتِ(যে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত করে) হয়েছে।
قَدْحًا : শব্দটি বিশেষ্য, অর্থ: (ঘর্ষণের সাহায্যে আগুন বের করা) শব্দটি বাক্যে কর্ম হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় قَدْحًا (অগ্নিস্ফুলিঙ্গ) হয়েছে।
ٱلْمُغِيرَٰتِ : শব্দটির মূল হলো اغارة (আক্রমণ করা, অভিযান চালানো) বিশেষ্য, বহুবচন, স্ত্রীলিঙ্গ العديت কে অনুসরণ করে ٱلْمُغِيرَٰتِ (যারা অভিযান চালায়) হয়েছে।
صُبْحًا : শব্দটি বিশেষ্য, অর্থ: প্রভাত। বাক্যে কর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় صُبْحًا (প্রভাতে) হয়েছে।
فَأَثَرْنَ : শব্দটির মূল হলো اثارة (উসকানো, জাগ্রত করা, উড়ানো) অতীতকাল, প্রথম পুরুষ, স্ত্রীলিঙ্গ, বহুবচন ف সংযোজক অব্যয় (অতএব) যুক্ত হওয়ায় فَأَثَرْنَ (অতএব তারা উড়ায়) হয়েছে।
نَقْعًا : শব্দটি বিশেষ্য, অর্থ: ধুলাবালি, আর্দ্রতা) বাক্যে কর্ম হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় نَقْعًا (ধুলাবালি) হয়েছে ।
وَسَطْنَ : শব্দটির মূল হলো , (অভ্যন্তরে ঢুকে পড়া, মাঝখানে থাকা) আর (তারা অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে) অতীতকাল, প্রথম পুরুষ, স্ত্রীলিঙ্গ, বহুবচন। فَوَسَطْنَ (অতঃপর তারা অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে)।
كند : لَكَنُودٌ অর্থ: (অকৃতজ্ঞ হওয়া, উপকার অস্বীকার করা) বিশেষ্য كنود (অকৃতজ্ঞ) আর لكنود (অবশ্যই অকৃতজ্ঞ)
لَشَهِيدٌ : শব্দটির মূল شهود (সাক্ষ্য দেওয়া, অবলোকন করা) বিশেষ্য (সাক্ষী, শহীদ) আর عَلَىٰ ذَٰلِكَ لَشَهِيدٌ অর্থ: এর ওপর অবশ্যই সাক্ষী।
أَفَلَا : (অতএব না কি?) সংযোজক অব্যয় ف (তবে, অতএব) এবং ক্রিয়া, বিশেষণ لا (না) এর মিলিত রূপ فلا পূর্বে হলো প্রশ্নবোধক ক্রিয়া বিশেষণ । (কি?)
بُعْثِرَ : শব্দটির মূল হলো بعشرة (ছড়িয়ে দেওয়া, উত্থিত করা) ক্রিয়া, অতীতকাল, প্রথম পুরুষ, পুংলিঙ্গ, একবচন, কর্মবাচ্য, পূর্বে সংযোজক অব্যয় اذا (যখন) إِذَا بُعْثِرَ অর্থ: যখন তা উত্থিত করা হবে।
حُصِّلَ : শব্দটির মূল হলো تحصيل (প্রকাশ করা) ক্রিয়া, অতীতকাল, প্রথম পুরুষ, পুংলিঙ্গ, একবচন, কর্মবাচ্য। حصل অর্থ: তা প্রকাশ করা হবে।
رب : إِنَّ رَبَّهُم বিশেষ্য অর্থ: রব, প্রতিপালক । শুরুতে ক্রিয়া বিশেষণ ان (নিশ্চয়ই) এবং শেষে সর্বনামهم (তাদের) যুক্ত হওয়ায় إِنَّ رَبَّهُم অর্থ হবে নিশ্চয়ই তাদের রব।
يَوْمَئِذٍ : (সেই দিন) يوم বিশেষ্য, একবচন। এর বহুবচন হলো ايام (দিন সময়)। এর সঙ্গে اذ (সময়) এর সম্বন্ধকারক রূপ اذ যুক্ত হয়ে يَوْمَئِذٍ (সেই দিন) অর্থ হয়েছে।
لَّخَبِيرٌۢ : শব্দটি বিশেষ্য, একবচন অর্থ: অবহিত, অভিজ্ঞ, দক্ষ। বহুবচন হলো خبراء এর পূর্বে ক্রিয়া বিশেষ্য (অবশ্যই) আসায় لَّخَبِيرٌۢ (অবশ্যই অবহিত) হয়েছে।
আলোচ্য বিষয় :
আলোচ্য সূরা আদিয়ায় দুটি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।
এক. ইসলাম আসার পূর্বে মরু আরবের মানুষের জুলুম, অত্যাচার-অবিচার এবং মারামারি-কাটাকাটির একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
দুই. পরকাল অবিশ্বাসের পরিণাম যে কত ভয়াবহ ও মারাত্মক হতে পারে এবং মহা বিচারের দিন মানুষের আমলসহ মনের গোপন উদ্দেশ্য ও নিয়্যাতের বিচার-বিশ্লেষণ হবে, তা আলোচনা করা হয়েছে।
সূরা আদিয়াত এর শানে নুযুল
রাসূলুল্লাহ স. বনু কেনানা গোত্রের বিরুদ্ধে কতিপয় সাহাবীকে পাঠালেন। তাদের আমীর ছিলেন মুনযির ইবনে আমর আনসারী রা.। তারা প্রত্যাবর্তন করতে বিলম্ব করায় মুনাফিকরা অপপ্রচার করল যে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। তখন সাহাবীদের নিরাপদ থাকার খবর দিয়ে আল্লাহ তা’আলা এই সূরা অবতীর্ণ করেন।
সূরা আদিয়াত এর তাফসীর
আয়াত-১. ৭.
এই সূরায় আল্লাহ তা’আলা সামরিক ঘোড়ার কিছু বিশেষ অবস্থা বর্ণনা করেছেন এবং তাদের শপথ করে বলেছেন যে, মানুষ তার পালনকর্তার প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ । উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তা’আলা যদি কোনো বস্তুর শপথ করে কিছু বর্ণনা করেন, বর্ণিত বিষয় সে শপথকৃত বস্তুর সাথে গভীর সামঞ্জস্য থাকে। এমনকি, সে বস্তু যেন ওই বিষয়ের সাক্ষ্য দান করে। এই সূরায় সামরিক ঘোড়ার কঠোর কর্তব্যনিষ্ঠার বিষয়টা যেন মানুষের অকৃজ্ঞতার সাক্ষ্যস্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে।
কেননা সামরিক ঘোড়া যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিজের জীবন বিপন্ন করে মানুষের আদেশ ও ইঙ্গিতের অনুসরণ হিসেবে কত কঠোর পরিশ্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শত্রুদের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। অথচ এসব ঘোড়া মানুষ সৃষ্টি করেনি। তাদেরকে যে ঘাস-পানি মানুষ দেয়, তাও তার সৃজিত নয়। আল্লাহর সৃষ্টি করা জীবনোপকরণকে মানুষ তাদের কাছে পৌঁছে দেয় মাত্র। এখন ঘোড়াকে দেখুন, সে মানুষের এতটুকু অনুগ্রহকে কীভাবে চিনে এবং স্বীকার করে। সামান্য ইশারায় সে তার জীবনকে নির্ভয়ে বিপদের মুখে ঠেলে দেয় এবং কঠোরতর কষ্ট সহ্য করে।
পক্ষান্তরে মানুষের প্রতি লক্ষ করুন, আল্লাহ তা’আলা তাকে এক ফোঁটা তুচ্ছ বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছেন, বিভিন্ন কাজের শক্তি দিয়েছেন, বুদ্ধি ও চেতনা দান করেছেন, তার পানাহারের সামগ্রী সৃষ্টি করেছেন এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সহজলভ্য করে তার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ এত সব উচ্চস্তরের অনুগ্রহেরও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না।
হাসান বসরী রহ. বলেন, لَكَنُودٌ সেই ব্যক্তি, যে বিপদ স্মরণ রাখে এবং অনুগ্রহ ভুলে যায়।
ইমাম তিরমিযীর মতে, যে অনুগ্রহ দেখে, কিন্তু অনুগ্রহদাতাকে দেখে না। (মাআরিফুল কুরআন)
আয়াত-৮.
وَإِنَّهُۥ لِحُبِّ ٱلْخَيْرِ لَشَدِيدٌ এ আয়াতে خَيْرِ শব্দের অর্থ হলো মঙ্গল । আরবে ধন-সম্পদকেও خَيْرِ (মঙ্গল) বলা হয় । প্রকৃতপক্ষে কোনো কোনো ধন-সম্পদ মানুষকে হাজারো বিপদে জড়িয়ে দেয়। হারাম ধন-সম্পদ তো পরকালে মানুষের জন্য বিপদ হবে। কিন্তু আরবের প্রথা অনুযায়ী, এ আয়াতে ধন-সম্পদকে خَيْرِ (মঙ্গল) বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। উপরোক্ত আয়াতে সামরিক ঘোড়ার শপথ করে দুটি বিষয় বলা হয়েছে-
এক. মানুষ অকৃতজ্ঞ, সে কষ্ট স্মরণ রাখে এবং অনুগ্রহ ভুলে যায় ।
দুই. সে ধন-সম্পদের লালসায় মত্ত। এমনকি, ধন-সম্পদের লালসায় মত্ত হওয়ার কারণেই অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর অকৃতজ্ঞ হয়।
আয়াত-৯. ১১.
মানুষ কি জানে না যে, কিয়ামতের দিন সব মৃতকে কবর থেকে জীবিত উত্থিত করা হবে এবং অন্তরের সকল কিছু ফাঁস হয়ে যাবে? এটাও সবার জানা যে, আল্লাহ তা’আলা সব অবস্থা সম্পর্কেই অবহিত। অতএব তদানুযায়ী শাস্তি ও প্রতিদান দেবেন। কাজেই বুদ্ধিমানের কর্তব্য হলো অকৃতজ্ঞতা না করা এবং ধন-সম্পদের লালসায় মত্ত না হওয়া।
নির্দেশনা :
১. সম্পদের প্রতি আসক্ত না হয়ে ঈমান এবং নেক আমল দিয়ে নিজের দুনিয়া ও আখিরাতকে সুসজ্জিত করা উচিত।
২. পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ইসলামী আক্বীদার মৌলিক বিষয়। তাই পরকালের বিচার এবং কর্মফলকে অস্বীকার করার অর্থ ইসলামকে অস্বীকার করা।
আরো পড়ুন :
১০৩.সূরা আছর سورة العصر Sura Asr এর তাফসির ও শানে নুযুল
১০৪.সূরা হুমাযাহ سورة الهمزة Sura humajah এর তাফসির ও শানে নুযুল
১০৫.সূরা ফীল سورة الفيل Sura fil এর তাফসির ও শানে নুযুল
ট্যাগ সমূহ : সূরা আদিয়াত, সূরা আদিয়াত বাংলা উচ্চারণ, সূরা আদিয়াত অর্থ, সূরা আদিয়াত এর শানে নুযুল, সূরা আদিয়াত এর তাফসীর, সূরা আদিয়াত এর ফজিলত, সূরা আদিয়াত আয়াত ৬, সূরা আদিয়াত এর শিক্ষা, সূরা আদিয়াত এর বাংলা উচ্চারণ সহ, সূরা আদিয়াত এর অর্থ, সূরা আদিয়াত বাংলা অনুবাদ,sura adiyat, سورة العاديات,سوره العاديات,سورة العاديات للاطفال, ১০০ নং সূরা,সূরা আদিয়াত, সূরা আদিয়াত বাংলা উচ্চারণ, সূরা আদিয়াত অর্থ, সূরা আদিয়াত এর শানে নুযুল, সূরা আদিয়াত এর তাফসীর, সূরা আদিয়াত এর ফজিলত, সূরা আদিয়াত আয়াত ৬, সূরা আদিয়াত এর শিক্ষা, সূরা আদিয়াত এর বাংলা উচ্চারণ সহ, সূরা আদিয়াত এর অর্থ, সূরা আদিয়াত বাংলা অনুবাদ,sura adiyat, سورة العاديات,سوره العاديات,سورة العاديات للاطفال, ১০০ নং সূরা, |