৮১.সূরা আত তাকভীর سورة التكوير Surah At Takwir এর তাফসির ও শানে নুযুল

সূরা তাকভীর, সূরা আত তাকভীর,সূরা আত তাকভীর এর তাফসির , সূরা আত তাকভীর এর শানে নুযুল ,সূরা তাকভীর আয়াত ২৯, সূরা তাকভীর আয়াত ১৯, সূরা তাকভীর বাংলা অনুবাদ, سورة التكوير, সূরা তাকভীর আয়াত ২৩, সূরা তাকভীর আয়াত ১৮,সূরা আত তাকভীর,সূরা আত-তাহরীম অনুবাদ, সূরা তাকভীর বাংলা অনুবাদ, সূরা আত তাকভীর, সূরা আত তাকভীর আয়াত ৬, সূরা আত তাকভীর, সূরা আত তাকভীর আয়াত ১১, সূরা আত তাকভীর আয়াত ৮, সূরা আত তাকভীর আয়াত ১১, সূরা তাকভীর আয়াত ২৯,সূরা আত তাকভীর বাংলা উচ্চারণ, সুরা তাকভীর বাংলা উচ্চারণ, সূরা তাকভীর বাংলা উচ্চারণ সহ,সূরা আত তাকভীর,  সূরা আত তাকভীর, সূরা আত-তাকভীর এর ফজিলত, সূরা আত-তাকভীর এর তাফসীর,সূরা তাকভীর তাফসীর,surah at takwir, সূরা আত তাকভীর, surah at takwir verse 26, সূরা আত তাকভীর, surah at takwir bangla, surah at takwir translation, surah at takwir ayat 27, surah at takwir ayat 17-18, surah at takwir urdu translation, সূরা আত তাকভীর, surah at takwir ayat 15-16, surah at takwir meaning, surah at takwir ayat 1-10, সূরা আত তাকভীর, surah at takwir 1-3, surah at takwir 17-18,সূরা আত তাকভীর, surah at takwir 1-3 latin, surah at takwit 15-16, surah at takwir 19, সূরা আত তাকভীর, surah at takwir ayat 15-16, surah at takwir ayat 1-29 latin, surah at takwir ayat 16, surah at-takwir ayat 19 21,সূরা আত তাকভীর,  surah at takwit ayat 15, surah at takwit ayat 29, surah at takwir ayat 26,সূরা আত তাকভীর, surah at takwit 26, surah at takwir 29, surah at takwir 20, surah at takwir ayat 27,surah at takwir 1-29,حل درس سورة التكوير, حل درس سورة التكوير للصف الخامس, سوره التكوير, সূরা আত তাকভীর

সূরা আত তাকভীর এর পরিচয় :

সূরার নাম : সূরা তাকভীর।সূরার অর্থ : অন্ধকারাচ্ছন্ন।
সূরা নং : ৮১রুকু সংখ্যা : ১
আয়াত সংখ্যা : ২৯সিজদা সংখ্যা : ০
শব্দ সংখ্যা : ১০৪পারার সংখ্যা : ৩০
অক্ষর সংখ্যা :শ্রেণী : মাক্কী।

সূরা আত তাকভীর سورة التكوير Surah At Takwir এর তাফসির ও শানে নুযুল


بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

শুরু করছি আল্লাহ তা’আলার নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু ।

(١) إِذَا ٱلشَّمْسُ كُوِّرَتْ

(১) যখন সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে,

(٢) وَإِذَا ٱلنُّجُومُ ٱنكَدَرَتْ

(২) যখন নক্ষত্র মলিন হয়ে যাবে,

(٣) وَإِذَا ٱلْجِبَالُ سُيِّرَتْ

(৩) যখন পর্বতমালা চলমান করা হবে,

(٤) وَإِذَا ٱلْعِشَارُ عُطِّلَتْ

(৪) যখন দশ মাসের গর্ভবতী উগ্রীসমূহ উপেক্ষিত হবে;

(٥) وَإِذَا ٱلْوُحُوشُ حُشِرَتْ

(৫) যখন বন্য পশুরা একত্রিত দশ মানের যখন হয়ে যাবে,

(٦) وَإِذَا ٱلْبِحَارُ سُجِّرَتْ

(৬) যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে,

(٧) وَإِذَا ٱلنُّفُوسُ زُوِّجَتْ

(৭) যখন আত্মাসমূহকে যুগল করা হবে,

(٨) وَإِذَا ٱلْمَوْءُۥدَةُ سُئِلَتْ

(৮) যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে,

(٩) بِأَىِّ ذَنۢبٍ قُتِلَتْ

(৯) কী অপরাধে তাকে হত্য করা হলো?

(١٠) وَإِذَا ٱلصُّحُفُ نُشِرَتْ

(১০) যখন আমলনামা খোলা হবে,

(١١) وَإِذَا ٱلسَّمَآءُ كُشِطَتْ

(১১) যখন আকাশের আবরণ অপসারিত হবে,

(١٢) وَإِذَا ٱلْجَحِيمُ سُعِّرَتْ

(১২) যখন জাহান্নামের অগ্নি প্রজ্বলিত করা হবে

(١٣) وَإِذَا ٱلْجَنَّةُ أُزْلِفَتْ

(১৩) এবং যখন জান্নাত সন্নিকটবর্তী হবে,

(١٤) عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّآ أَحْضَرَتْ

(১৪) তখন প্রত্যেকেই জেনে নেবে সে কী উপস্থিত করেছে।

(١٥) فَلَآ أُقْسِمُ بِٱلْخُنَّسِ

(১৫) আমি শপথ করি যে; নক্ষত্রগুলো পশ্চাতে সরে যায়।

(١٦) ٱلْجَوَارِ ٱلْكُنَّسِ

(১৬) চলমান হয় ও অদৃশ্য হয়,

(١٧) وَٱلَّيْلِ إِذَا عَسْعَسَ

(১৭) শপথ নিশাবসান ও

(١٨) وَٱلصُّبْحِ إِذَا تَنَفَّسَ

(১৮) প্রভাত আগমন কালের,

(١٩) إِنَّهُۥ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ

(১৯) নিশ্চয়ই কোরআন সম্মানিত রাসূলের আনীত বাণী,

(٢٠) ذِى قُوَّةٍ عِندَ ذِى ٱلْعَرْشِ مَكِينٍ

(২০) যিনি শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাশালী,

(٢١) مُّطَاعٍ ثَمَّ أَمِينٍ

(২১) সবার মান্যবর, সেখানকার বিশ্বাসভাজন ।

(٢٢) وَمَا صَاحِبُكُم بِمَجْنُونٍ

(২২) এবং তোমাদের সাথি পাগল নন।

(٢٣) وَلَقَدْ رَءَاهُ بِٱلْأُفُقِ ٱلْمُبِينِ

(২৩) তিনি সেই ফেরেশতাকে প্রকাশ্য দিগন্তে দেখেছেন।

(٢٤) وَمَا هُوَ عَلَى ٱلْغَيْبِ بِضَنِينٍ

(২৪) তিনি অদৃশ্য বিষয় বলতে কৃপণতা করেন না ।

(٢٥) وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَيْطَٰنٍ رَّجِيمٍ

(২৫) এটা বিতাড়িত শয়তানের উক্তি নয়।

(٢٦) فَأَيْنَ تَذْهَبُونَ

(২৬) অতএব, তোমরা কোথায় যাচ্ছ?

(٢٧) إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعَٰلَمِينَ

(২৭) এটা তো কেবল বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশ,

(٢٨) لِمَن شَآءَ مِنكُمْ أَن يَسْتَقِيمَ

(২৮) তার জন্য, যে তোমাদের মধ্যে সোজা চলতে চায়।

(٢٩) وَمَا تَشَآءُونَ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلْعَٰلَمِينَ

(২৯) তোমরা আল্লাহ তা’আলার অভিপ্রায়ের বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পারো না।

সূরার আলোচ্য বিষয়

সূরা তাকভীরে দুটি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একটি পরকাল সম্পর্কিত বিষয় ও অপরটি রিসালাত সম্পর্কিত বিষয়। প্রথম ১৩ টি আয়াতে ‘কিয়ামত’- মহাপ্রলয় ও পুনরুত্থানের ১০ টি ঘটনা বিবৃত হয়েছে। তন্মধ্যে প্রথম ছয়টি আয়াতে মহাপ্রলয়ের ভয়াবহ বিভীষিকার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এর পরবর্তী সাতটি আয়াতে কিয়ামতের দ্বিতীয় পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে।

সূরা আত তাকভীর এর শানে নুযুল

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে কেউ কেয়ামতকে প্রত্যক্ষ দেখতে চায় সে যেন সূরা ‘ইযাস সামছু কুওয়িরাত, ইযাস সামায়ুন ফাতারতি ও ইযাস সামায়ুন সাক্কাত’ পড়ে। [তিরমিযী: ৩৩৩৩] এখানে প্রথম ছয়টি আয়াতের ভাষ্য কিয়ামতের প্রথম অংশ অর্থাৎ শিঙ্গায় প্রথমবার যে ফুৎকার দেয়া হবে তার সাথে সংশ্লিষ্ট।

উবাই ইবন কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, কিয়ামতের পূর্বে ছয়টি নিদর্শন রয়েছে। মানুষ যখন হাটে- বাজারে থাকবে, তখন হঠাৎ সূর্যের আলো চলে যাবে এবং তারকারাজি দেখা যাবে; ফলে তারা আশ্চর্য হবে। তারা তাকিয়ে দেখার সময়েই হঠাৎ করে তারাগুলো খসে পড়বে। এরপর পাহাড়গুলো মাটির উপর পড়বে, নড়া-চড়া করবে এবং পুড়ে যাবে; ফলে বিক্ষিপ্ত ধুলোর মত হয়ে যাবে। তখন মানুষ জিনের কাছে এবং জিন মানুষের কাছে ছুটে আসবে। জন্তু-জানোয়ার-পাখি সব মিশে যাবে এবং একে অপরের সাথে একত্রিত হবে।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর যখন বন্য পশু গুলোকে একত্র করা হবে” [সূরা তাকভীর: ৫] তারপর জিন মানুষদের বলবে, আমরা তোমাদের নিকট সংবাদ নিয়ে আসছি। তারা যখন সাগরের নিকট যাবে তখন দেখবে তাতে আগুন জ্বলছে। এ সময়ে সপ্ত যমীন পর্যন্ত এবং সপ্তম আসমান পর্যন্ত এক ফাটল ধরবে। এরপর এক বায়ু এসে তাদেরকে মৃত্যুবরণ করাবে। (তাবারী)

সূরা আত তাকভীর এর তাফসীর

আয়াত-১
যখন সূর্যকে নিষ্প্রভ করা হবে। সূর্যকে ভাঁজ করার ধরনটা কী রকমের হবে তা আল্লাহ তা’আলাই জানেন। তবে এতটুকু বিষয় তো পরিষ্কার যে, তার ফলে সূর্যের আলো শেষ হয়ে যাবে। তাই কেউ কেউ আয়াতের অর্থ: করেছেন, ‘যখন সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে’। তা কিয়ামতের একটি নিদর্শন।

আয়াত-২
আর যখন নক্ষত্রসমূহ খসে খসে পড়বে। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন সমস্ত নক্ষত্র খসে খসে সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হবে এবং তার আলো দূরীভূত হয়ে যাবে।

আয়াত-৩
আর যখন পর্বতসমূহকে চলমান করা হবে। অর্থাৎ টুকরা টুকরা হয়ে বাতাসের সাথে উড়তে থাকবে।

আয়াত-৪
এবং যখন ১০ মাসের গর্ভবতী উটনিকেও পরিত্যক্ত রূপে ছেড়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ সেই কালে আরববাসীর কাছে উটনিকে সর্বাপেক্ষা মূল্যবান সম্পদ মনে করা হতো। উটনি গর্ভবতী হলে তো তার দাম আরো বেড়ে যেত। গর্ভকাল ১০ মাস পূর্ণ হয়ে গেলে সে উটনি হতো সর্বাপেক্ষা দামি। এ আয়াতে বলা হয়েছে, কিয়ামত যখন সংঘটিত হবে, তখন প্রত্যেকে এমন দিশাহারা হয়ে পড়বে যে, কারো অর্থ-সম্পদ সামলানোর মতো সময় থাকবে না। তাই এমন মূল্যবান উটনিও উপেক্ষিত হবে।

আয়াত-৫
এবং যখন বন্য পশুসমূহ একত্র করা হবে। অর্থাৎ কিয়ামতের বিভীষিকাময় অবস্থা দেখে বন্য পশুরাও ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে, তাই তারা সব জড়ো হয়ে যাবে, যেমন ঘোর দুর্যোগের সময় একাকী থাকার চেয়ে অন্যের সাথে একত্রে থাকলে কিছুটা স্বস্তিবোধ হয়।

আয়াত-৬
এবং যখন সাগরগুলিকে উত্তাল করে তোলা হবে। অর্থাৎ সাগরের পানি ফুঁসে উঠবে, সব সাগর একাকার হয়ে ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে। এর আরেক অর্থ: হতে পারে, সাগরগুলির পানি শুকিয়ে যাবে এবং তাতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।

আয়াত-৭
وَإِذَا ٱلنُّفُوسُ زُوِّجَتْ হাশরের ময়দানের পরিস্থিতি উল্লেখ হয়েছে। যখন হাশরে সমবেত লোকদের বিভিন্ন দলে দলবদ্ধ করে দেওয়া হবে। এই দলবদ্ধকরণ ঈমান ও কর্মের দিক দিয়ে করা হবে। কাফের এক জায়গায় ও মুমিন এক জায়গায়। কাফের ও মুমিনের মধ্যেও কর্ম ও অভ্যাসের পার্থক্য থাকে। এদিক দিয়ে কাফেরদেরও বিভিন্ন প্রকার দল হবে। আর মুমিনদেরও বিশ্বাস এবং কর্মের ভিত্তিতে দল হবে। বায়হাকী রেওয়ায়েত করেন, যারা ভালো হোক, মন্দ হোক একই প্রকার কর্ম করবে, তাদেরকে এক জায়গায় জড়ো করা হবে।

উদাহরণত— আলেমগণ এক জায়গায়, ইবাদতকারী সংসারবিমুখগণ এক জায়গায়, জিহাদকারী গাযীগণ এক জায়গায় এবং সদকা-খয়রাতে বৈশিষ্ট্যের অধিকারীগণ এক জায়গায় সমবেত হবে। এমনিভাবে মন্দ লোকদের মধ্যে চোর-ডাকাতকে এক জায়গায়, ব্যভিচারীকে এক জায়গায় এবং অন্যান্য বিশেষ গুনাহে অংশগ্রহণকারীদের এক জায়গায় জড়ো করা হবে । রাসূলুল্লাহ স. বলেন, হাশরে প্রত্যেক ব্যক্তি স্বজাতির সাথে থাকবে (কিন্তু এই জাতীয়তা বংশ অথবা দেশভিত্তিক হবে না, বরং কর্ম ও বিশ্বাসভিত্তিক হবে ।) তিনি এর
প্রমাণস্বরূপ وَكُنْتُمْ أَزْوَاجًا ثَلقَةً (তোমরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে) আয়াতটি পেশ করেন । অর্থাৎ, হাশরে লোকদের তিনটি প্রধান দল হবে-

এক. পূর্ববর্তী সৎকর্মী লোকদের,
দুই. আসহাবুল ইয়ামীনের এবং তিন. আসহাবুশ-শিমালের দল। প্রথমোক্ত দুই দল মুক্তি
পাবে এবং তৃতীয় দলটি হবে কাফের পাপাচারীদের। তারা মুক্তি পাবে না। (দুররে মানসূর)

আয়াত-৮-৯
এবং যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তাকে কী অপরাধে হত্যা করা। হয়েছিল?

প্রাক-ইসলামী যুগের একটি বর্বরতা ছিল এ রকম যে, মানুষ নারী জাতিকে অত্যন্ত অশুভ মনে করত। কোনো কোনো গোত্রে এই নিষ্ঠুর প্রথাও চালু ছিল যে, তাদের কারো ঘরে কন্যাসন্তান জন্ম নিলে তাকে চরম লজ্জাজনক মনে করত । আর সে লজ্জা ঢাকার জন্য তারা সন্তানটিকে জ্যান্ত কবর দিত। কিয়ামতে সেই সন্তানকে হাজির করে জিজ্ঞেস করা হবে, তাকে কী অপরাধে হত্যা করা হয়েছিল? এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সেই জালেমদের শাস্তি দেওয়া হবে, যারা তার প্রতি এরূপ পাশবিক আচরণ করেছিল ।

মূলত হত্যাকারীর শাস্তি সম্পর্কিত আলোচনা এ আয়াতের লক্ষ্য। তাই প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে বলে হত্যাকারীকে ধিক্কার দেওয়া উদ্দেশ্য। আসলে হত্যাকৃত কন্যা থেকে হত্যাকৃত বিষয়ে জানার প্রশ্ন করা হবে হত্যাকারীর মধ্যে আতঙ্ক ও ভয় সৃষ্টি করার জন্য। কেননা যে বিষয়ে হত্যাকৃত নিষ্পাপ কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হলো হত্যকারীর কী পরিস্থিতি হবে, তা সে সহজেই বুঝতে পারবে। এ ছাড়া হত্যাকৃত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে বলে তাকে তার হত্যার বিচার চাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে বোঝানো হয়েছে। ইসলাম নারীদের কীভাবে মূল্যায়ন করেছে এবং নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে এর উজ্জ্বল প্রমাণ এই আয়াতে রয়েছে।

আয়াত-১০-১৩
সহীফা শব্দের অর্থ: লিপিবদ্ধ বিষয়। এর বহুবচন সুহুফুন। এখানে যার যার আমলনামা বোঝানো হয়েছে وَإِذَا ٱلصُّحُفُ نُشِرَتْ- এবং যখন আমলনামা খুলে দেওয়া হবে। এবং যখন আকাশের আবরণ অপসারিত হবে। ফলে তাতে যা কিছু আছে সব প্রকাশ হয়ে পড়বে । এবং যখন জাহান্নামকে প্রজ্জ্বলিত করা হবে। এবং যখন জান্নাতকে নিকটবর্তী করা হবে। তখন প্রত্যেক ব্যক্তি ভালো-মন্দ যা কিছু হাজির করেছে, তা জানতে পারবে।

আয়াত-১৪
ইতিপূর্বে আলোচিত বিষয়গুলো যখন ঘটতে থাকবে, তখন প্রত্যেক ব্যক্তি জানতে পারবে সে (ভালো-মন্দ) যা কিছু হাজির করেছে। عَلِمَتُ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ وَأَخَّرَتُ আকাশ বিদীর্ণ হওয়া, নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়া, মিঠা ও নোনা সমুদ্র একাকার হয়ে যাওয়া, কবর থেকে মৃতদের বের হয়ে আসা ইত্যাকার কিয়ামতের ঘটনা যখন ঘটে যাবে, তখন প্রত্যেকেই জেনে নেবে সে কী অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং কী পশ্চাতে ছেড়েছে। অগ্রে প্রেরণ করার এক অর্থ: কাজ করা এবং পশ্চাতে ছাড়ার অর্থ: কাজ না করা। সুতরাং কিয়ামতের দিন প্রত্যেকেই জেনে নেবে সে সৎ-অসৎ কী কর্ম করেছে এবং সৎ-অসৎ কী কর্ম করেনি।

দ্বিতীয় অর্থ: এরূপও হতে পারে, অগ্রে প্রেরণ করেছে মানে যে কর্ম সে নিজে করেছে এবং পশ্চাতে ছেড়েছে মানে যে কর্ম সে নিজে তো করেনি, কিন্তু তার ভিত্তি ও প্রথা স্থাপন করে এসেছে। কাজটি সৎ হলে তার সাওয়াব সে পেতে থাকবে এবং অসৎ হলে তার গুনাহ আমলনামায় লিখিত হতে থাকবে। হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো উত্তম সুন্নত ও নিয়ম চালু করে, সে তার সাওয়াব সব সময় পেতে থাকবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোনো কুপ্রথা অথবা পাপকাজ চালু করে, যত দিন মানুষ এই পাপকাজ করবে, তত দিন তার
আমলনামায় এর গুনাহ লিখিত হতে থাকবে। (সহীহ মুসলিম-১০১৭)

আয়াত-১৫-১৮
আমি শপথ করছি সেই সব নক্ষত্রের, যা পেছন দিকে চলে যা চলতে চলতে অদৃশ্য হয়ে যায়। অর্থাৎ কোনো কোনো নক্ষত্র এমনও আছে, যাদের কখনো পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে যেতে দেখা যায় এবং কখনো পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে। যেন তারা একদিকে চলতে চলতে একপর্যায়ে উল্টো দিকে ঘুরে যায়। ফের চলতে চলতে একসময় দৃষ্টির আড়াল হয়ে যায়। নক্ষত্রদের এ রকম পরিক্রমণ আল্লাহ তা’আলার অপার শক্তির এক বিস্ময়কর নিদর্শন। তাই কুরআন মাজীদে তাদের শপথ করা হয়েছে। এবং শপথ করছি রাতের, যখন তার অবসান হয়। এবং ভোরের, যখন তা শ্বাস গ্রহণ করে। অর্থাৎ ভোরবেলা সাধারণত মৃদু বাতাস প্রবাহিত হয় । সেই বাতাসের বয়ে চলাকে অলংকারপূর্ণ ভাষায় ‘ভোরের শ্বাস গ্রহণ শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে।

আয়াত-১৯
ইতিপূর্বে আলোচিত নক্ষত্র, রাত ও প্রভাতের শপথ করে আল্লাহ তা’আলা বলছেন, নিশ্চয়ই এটা (কুরআন) এক সম্মানিত ফেরেশতার আনীত বাণী। এর দ্বারা হযরত জিবরাঈল আ.-কে বোঝানো হয়েছে, যিনি মহানবী স.-এর কাছে ওহী নিয়ে আসতেন । যে শক্তিশালী, আরশের অধিপতির কাছে মর্যাদাসম্পন্ন। যাকে সেখানে মান্য করা হয় এবং যে আমানতদার। ঊর্ধ্ব জগতে অন্যান্য ফেরেশতা তাকে মান্য করে চলে ।

আয়াত-২২
ওহীর বাহক ফেরেশতা জিবরাঈল আ.-এর শক্তি, ক্ষমতা ও গুণাবলি বর্ণনার সাথে সাথে ওহীর প্রাপকের ওপর মক্কাবাসীর আরোপিত অপবাদের অপনোদন করে মহান প্রভু ঘোষণা করেন, (হে মক্কাবাসী!) তোমাদের সঙ্গী (হযরত মুহাম্মদ স.) উন্মাদ নন।

আয়াত-২৩
নিশ্চয়ই সে তাকে (জিবরাঈলকে) স্পষ্ট দিগন্তে দেখতে পেয়েছে। হযরত জিবরাঈল আ. মহানবী স.-এর কাছে সাধারণত কোনো মানুষের আকৃতিতে আসতেন। কিন্তু একবার মহানবী স. তাকে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি আকাশের এক প্রান্তে নিজের আসল আকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করেন এবং মহানবী স. তাঁকে সেভাবে দেখতে পান।

আয়াত-২৪
এবং সে অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে কৃপণ নয়। অর্থাৎ মহানবী স. ওহীর মাধ্যমে অদৃশ্যবিষয়ক যা কিছু জানতেন, তা মানুষের কাছে গোপন করতেন না; বরং সকলের কাছেই তা প্রকাশ করে দিতেন। জাহেলী যুগে যারা কাহিন নামে পরিচিত ছিল, তারাও মানুষকে অদৃশ্য বিষয়ে জানানোর দাবি করত। তারা এটা করত দুষ্ট জিনদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে। জিনরা তাদের নানা রকমের মিথ্যা কথা শুনিয়ে দিত আর তাই তারা মানুষের কাছে প্রকাশ করত। তা-ও আবার টাকার বিনিময়ে । ফি ছাড়া তারা কাউকে কিছু বলতে চাইত না।

আল্লাহ তা’আলা কাফেরদের বলছেন, তোমরা মহানবী স.-কে ‘কাহিন’ (জ্যোতিষ) বলছ, অথচ জ্যোতিষরা তো তোমাদের কাছে মিথ্যা বলার ক্ষেত্রেও এমন কার্পণ্য করে যে বিনিময় ছাড়া কিছু বলতে চায় না। কিন্তু মহানবী স. অদৃশ্য বিষয়ে যেসব সত্য জানতে পারেন, তা তোমাদের কাছে প্রকাশ করতে কোনো কার্পণ্য করেন না এবং সে জন্য তিনি কোনো বিনিময়ও গ্রহণ করেন না।

আয়াত-২৫
এবং এটা (কুরআন) কোনো বিতাড়িত শয়তানের (রচিত) বাণীও নয়। কারণ শয়তান এ রকম নেকী ও পরহেযগারীর কথা, যা বনী আদমের সরাসরি উপকারে আসে, তা কখনো শেখাবে না।

আয়াত-২৬
তা সত্ত্বেও তোমরা কোন দিকে যাচ্ছ?। অর্থাৎ যখন তা মিথ্যা ও সন্দেহাতীত হয়ে সত্য হয়ে যাওয়া নিশ্চিত হয়ে গেল, তবুও এমন সুস্পষ্ট রাস্তা ছেড়ে কোথায় ভেগে যাচ্ছ?

আয়াত-২৭
এটা তো জগদ্বাসীর জন্য উপদেশ। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য এমন সত্য নসীহতনামা, যার মধ্যে উভয় জাহানের সফলতা বিদ্যমান।

আয়াত-২৮
তোমাদের মধ্যে যে সরল পথে থাকতে চায় তার জন্য। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন, বিশেষত ওই সমস্ত লোকের জন্য নসীহত, যারা অবাধ্যতার পথ এড়িয়ে সরল পথে চলতে চায় ।

আয়াত-২৯
তোমরা ইচ্ছা করবে না, যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক । অর্থাৎ তোমাদের উচিত তাঁর অভিমুখী হওয়া ও তাঁর কাছে দোয়া করা, যাতে তিনি তোমাদের অন্তরে সদিচ্ছা জাগ্রত করেন, সরল পথে চলার আগ্রহ দান করেন এবং তাতে প্রতিষ্ঠিত থাকতে সাহায্য করেন।

নির্দেশনা

১. অত্র সূরায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানুষদের কিয়ামতের দিন জুড়িয়ে দেওয়া হবে। নেককারকে নেককারদের সাথে এবং পাপীকে পাপীদের সাথে জুড়ে দেওয়া হবে। রাসূলুল্লাহ স. বলেন, যে যাকে মুহাব্বাত করবে পরকালে সে তার সঙ্গে থাকবে (মুসনাদুত ত্বয়ালিসী-১১৬৭)। তাই দুনিয়াতে প্রত্যেকের জন্য কর্তব্য হলো, নেককার ও সত্যবাদীদের সাথে সম্পর্ক রাখা। মহান প্রভু অপর আয়াতে বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সাথি হও।’ (সূরা তাওবাহ-১১৯)

২. প্রত্যেক ব্যক্তি যেহেতু কিয়ামতের দিন তার আমলসমূহ জানতে পারবে, তাই প্রত্যেকের জন্য জরুরি হলো, দুনিয়াতে নেক আমল বেশি বেশি করা।

৩. জিবরাঈল আ. আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে যে সমস্ত আয়াত নিয়ে এসেছেন রাসূলুল্লাহ স. কোনো কিছুই গোপন করেননি বরং সব কিছুই বর্ণনা করে দিয়েছেন। তাই বিনা দ্বিধায় রাসূলুল্লাহ স.-এর আনীত সকল বিষয়কে মান্য করা জরুরি।

আরো পড়ুন :

৮২.সূরা আল ইনফিতার سورة الانفطار Surah Al Infitar এর তাফসির ও শানে নুযুল

৮৩.সূরা মুতাফফিফীন سورة المطففين Al Mutaffifin এর তাফসির ও শানে নুযুল

৮৪.সূরা ইনশিকাক سورة الانشقاق Surah Inshiqaq এর তাফসির ও শানে নুযুল

ট্যাগ সমূহ : সূরা তাকভীর, সূরা আত তাকভীর,সূরা আত তাকভীর এর তাফসির , সূরা আত তাকভীর এর শানে নুযুল ,সূরা তাকভীর আয়াত ২৯, সূরা তাকভীর আয়াত ১৯, সূরা তাকভীর বাংলা অনুবাদ, سورة التكوير, সূরা তাকভীর আয়াত ২৩, সূরা তাকভীর আয়াত ১৮,সূরা আত তাকভীর,সূরা আত-তাহরীম অনুবাদ, সূরা তাকভীর বাংলা অনুবাদ, সূরা আত তাকভীর, সূরা আত তাকভীর আয়াত ৬, সূরা আত তাকভীর, সূরা আত তাকভীর আয়াত ১১, সূরা আত তাকভীর আয়াত ৮, সূরা আত তাকভীর আয়াত ১১, সূরা তাকভীর আয়াত ২৯,সূরা আত তাকভীর বাংলা উচ্চারণ, সুরা তাকভীর বাংলা উচ্চারণ, সূরা তাকভীর বাংলা উচ্চারণ সহ,সূরা আত তাকভীর, সূরা আত তাকভীর, সূরা আত-তাকভীর এর ফজিলত, সূরা আত-তাকভীর এর তাফসীর,সূরা তাকভীর তাফসীর,surah at takwir, সূরা আত তাকভীর, surah at takwir verse 26, সূরা আত তাকভীর, surah at takwir bangla, surah at takwir translation, surah at takwir ayat 27, surah at takwir ayat 17-18, surah at takwir urdu translation, সূরা আত তাকভীর, surah at takwir ayat 15-16, surah at takwir meaning, surah at takwir ayat 1-10, সূরা আত তাকভীর, surah at takwir 1-3, surah at takwir 17-18,সূরা আত তাকভীর, surah at takwir 1-3 latin, surah at takwit 15-16, surah at takwir 19, সূরা আত তাকভীর, surah at takwir ayat 15-16, surah at takwir ayat 1-29 latin, surah at takwir ayat 16, surah at-takwir ayat 19 21,সূরা আত তাকভীর, surah at takwit ayat 15, surah at takwit ayat 29, surah at takwir ayat 26,সূরা আত তাকভীর, surah at takwit 26, surah at takwir 29, surah at takwir 20, surah at takwir ayat 27,surah at takwir 1-29,حل درس سورة التكوير, حل درس سورة التكوير للصف الخامس, سوره التكوير, সূরা আত তাকভীর,

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top