রমজানের রোজা কত হিজরীতে ফরজ হয়েছে ?

”বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”

আল্লাহ তা’য়ালা মানুষের হেদায়েতের জন্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব “আল কুরআন” নাজিল করেছেন। আর এই শ্রেষ্ঠ কিতাব আল কুরআন নাজিল করেছেন রমজান মাসে। রমজান মাস নেয়ামতের মাস, কুরআন নাযিলের মাস। মুসলিম উম্মাহর জন্য নির্দেশনা হলো; যারা এই মাসটি পাবে তাদের জন্য রোজা পালন করতে হবে। কিন্তু ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই কি রোজা রাখা ফরজ ছিল ?বা রোজা কত হিজরীতে ফরজ হয় তা নিচে দেওয়া হলো :

রমজানের রোজা কত হিজরীতে ফরজ হয়েছে ?

হিজরতের পর মদিনায় ২য় হিজরীতে শাবান মাসের ১০ তারিখে রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছিল। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১১ হিজরী সালের রবিউল আউয়াল মাসে ইন্তেকাল করেন।

কিন্তু এ রোজা ফরজ হওয়ার আগেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম রোজা পালন করেছিলেন। আর তার সাহাবায়ে কেরামগণ পালন করতেন। রোজা পালনের ধাপগুলো হলো :

প্রথম ধাপ : রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক মাসে তিনটি করে রোজা পালন করতেন। আর তা দেখে সাহাবায়ে কেরামগন রোজা পালন করতেন। যাতে রোজা পালনের অভ্যাস তৈরি হয়।

কেউ কেউ বলেছেন, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি মাসে যে ৩ দিন রোজা রাখতেন, তা ছিল আইয়্যামে বীজের রোজা তথা আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা। আর তার প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উপর ফরজ ছিল।

দ্বিতীয় ধাপ : কুরাইশরা জাহিলি যুগে আশুরার রোজা রাখত। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনা এসে হযরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুকরণে তার স্মৃতি পালনের আশুরার দিন গুরুত্বের সঙ্গে নিজে যেমন সিয়াম বা রোজা রাখতেন এবং তার সঙ্গীদের এ রোজা রাখার তাগিদ দিয়েছেন।তখন এই রোজা ফরজ ছিল।

তৃতীয় ধাপ : অতঃপর সিয়াম বা রোজার বিধান নিয়ে কুরআনুল কারিমের আয়াত নাজিল হলো। কিন্তু শুরুতে তখন রোজা পূর্ণ আকারে ফরজ ছিল না। যার ইচ্ছা সে রোজা রাখত; আর যার ইচ্ছা সে না রেখে মিসকিনকে খাদ্য দান করত। কিন্তু রোজা রাখাটা আল্লাহর দরবারে পছন্দনীয় ছিল। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা বলেন :

“যারা রোজা রাখার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও রাখতে চায় না, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে। যে ব্যক্তি খুশির সঙ্গে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণকর। আর যদি তোমরা জানো রোজা রাখো, তাহলে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণকর। যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পারো। (সূরা বাকারা : ১৮৪)

চতুর্থ ধাপ : হিজরী দ্বিতীয় সনে শাবান মাসে আয়াত নাযিল করে পুরো রমজান মাস রোজা পালনের নির্দেশ দেন। ফলে প্রত্যেক সামর্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের উপর পুরো রমজান মাসের রোজা রাখা ফরজ হয়ে যায়। এই ধাপে আল্লাহ তা’য়ালা রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন। যা ছিল আগের সব নবী-রাসুলদের ধারাবাহিক রোজা পালনের অংশ। আল্লাহ তায়ালা বলেন :

রমজান মাসেই হলো সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন। যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায়-অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এই মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে। (সূরা বাকারা : ১৮৫)

সুতরাং সামর্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক (জ্ঞান সম্পন্ন সাবালক) স্থায়ীদের জন্য মিসকিনকে খাদ্য দানের বিধান রহিত হয়ে যায় এবং বৃদ্ধ ও রোগীদের জন্য তা বহাল রাখা হয়। কিছু কিছু আলেমগণের মতে এই বিধান গর্ভবতী ও দুগ্ধ দাত্রী নারীদের জন্য বহাল করার কথা বলা হয়। যারা গর্ভকালীন বা দুগ্ধ দান করে রোজা রাখলে তাদের সন্তানের বিশেষ ক্ষতি হবে আশঙ্কা থাকে।

সুতরাং রোজা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য আবশ্যকীয় বিধান। তারপর থেকেই মুমিন মুসলমান মাসব্যাপী রমজানের রোজা পালন করে আসছেন। আল্লাহ তা’আলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের রোজা পালন করার তৌফিক দান করুক। আল্লাহর নির্দেশ ফরজ বিধান যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক দান করুক। (আমীন)

আরো পড়ুন :

রোজার ফরজ কয়টি ও কি কি ?

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ সমূহ

রমজানের কুইজ

নামাজের ওয়াজিব ১৪ টি

নামাজের ফরজ মোট 13 টি

সমাজে প্রচলিত কিছু বিদআত

সমাজে প্রচলিত কিছু শিরক

০১. সূরা ফাতিহা এর তাফসীর নামকরন ও শানে-নুযূল

১১৪. সূরা নাস এর তাফীসর

কিয়ামতের আলামত সমূহ

ইনশাআল্লাহ কখন বলতে হয় এবং এর গুরুত্ব ও ফজিলত

আলহামদুলিল্লাহ এর ফজিলত ও গুরুত্ব এবং এর ব্যবহার বিস্তারিত

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top