সমাজে প্রচলিত কিছু বিদআত

সমাজে প্রচলিত কিছু বিদআত

বিদআত অর্থ : নতুন সৃষ্টি। শরিয়াতের পরিভাষায় বিদআত বলা হয় দ্বীনের মধ্যে কোন নতুন সৃষ্টিকে অর্থাৎ দিনের মধ্যে ইবাদত মনে করে এমন অতিরিক্ত সওয়াবের আশায় এমন কিছু আকিদা বা আমল সংযোজন ও বৃদ্ধি করা যা রাসূল (সাঃ) ও তার সাহাবীরা করেননি সেগুলোকে বিদআত বলে।

বিদআতিদের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হতে বিরত থাকো। নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন সৃষ্টি বিদআত আর প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী”।(বুখারি : ২৬৯৭)

সমাজে প্রচলিত কিছু বিদআত :

১. জোরে নিয়ত বলা : কোন মুসলিম বলল, ‘নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিয়া’, ‘নাওয়াইতুয়ান আসুমা’, ‘নাওয়াইতুয়ান আতা ওয়াদ্দিআ’ ইত্যাদি বলে মুখে নিয়ত করা বিদআত। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম হতে এ ধরণের কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : নিয়ত করার জিনিস এটা অন্তরের বিষয়। নিয়ত পড়ার জিনিষ নয়।

২. ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত দোয়া : জামাতে সালাত আদায়ের পর প্রত্যেকের জন্যই ব্যক্তিগতভাবে শরীয়ত সম্মত দোয়া ও তাজবীহ পাঠ করা বৈধ। যেমন, রাসুল (সাঃ) সালাতের পর দোয়া ও তাজবিহ পাঠ করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামগণ এরূপ আমল করতেন। কেননা তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সুন্নতকে যথাযথভাবে আমলে পরিণত করতেন।তাই জামাতে সালাত আদায়ের পর সম্মিলিতভাবে দোয়া রাসুলের (সা:) সুন্নত পরিপন্থী।

৩. মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফেরাত, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করার পর কিংবা বিবাহের খুতবার সময় সুরা ফাতেহা পাঠের জন্য লোকদের বলা : এগুলো সবই বেদায়াতের অন্তর্ভুক্ত কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত নেই এবং সাহাবায়ে কেরামগণ এ ধরনের আমল করেননি। অথচ তারাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর আমল সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত ছিলেন। এ থেকে প্রতীয়মান হলো যে, এ ধরনের আমল নব আবিষ্কৃত ও বিদআত।

৪. মৃত ব্যক্তির শোকে মাতম করা :সমাজে প্রচলিত কিছু বিদআত এর অন্যতম বিদআত হলো, মৃত ব্যক্তির শোকে মাতম করা, চল্লিশা করা, হাফেজ সাহেবদের এনে কুলখানি করানো এ ধারণায় যে, তা মৃত ব্যক্তির সান্তনা যোগাবে এবং মৃত ব্যক্তির উপকারে আসবে।

৫. কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত তাসবিহ তাহলিলের বাইরে বিভিন্ন সূফী ও পীরদের নানা ধরনের জিকির যা রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাতের পরিপন্থী। সুন্নতের সাথে এ বৈপরীত্য শব্দগত হোক, গঠনগত কিংবা সময় সাপেক্ষে হোক, সুন্নতের পরিপন্থী কোন জিকিরই গ্রহণযোগ্য নয়।

৬. কবরের উপর মাজারের নামে ঘর তৈরি করা, কবরের পাশে মসজিদ তৈরি করে সেখানে সালাত আদায় করা, তাতে মৃতদের দাফন করা, প্রত্যহ সে কবর জিয়ারত করা, বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে কবরের পাশে গিয়ে সালাত আদায় করা, কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তির উছিলা দিয়ে আল্লাহ তা’য়ালার নিকট দোয়া করা, অথবা কবরের পাশে গিয়ে দোয়া করা, কবরে লাইটিং বা আলো সজ্জা করা, এর প্রত্যেকটি বিদাত, ঘৃণিত এবং অপছন্দনীয় কাজ।

৭. ঈদ-ই মিলাদুন্নবী পালন করা।

৮. শব-ই মিরাজের সালাত বা সাওম বা এর উপলক্ষে কোনো ইবাদত করা।

৯. শব-ই বরাত এর উদ্দেশ্যে রোজা থাকা।

১০. মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআন পড়া। (মাদ্রাসা থেকে হুজুর/ছাত্র দিয়ে বা নিজে)

১১. জোরে জোরে চিল্লিয়ে জিকির করা।

১২. হাল্কায়ে জিকির, ইশকের জিকির, লাফালাফি, নাচানাচি জিকির।

১৩. প্রচলিত/তথাকথিত পীর-মুরিদী মানা বেদআত ও শিরক।

১৪. জায়নামাজের দোয়া পড়া।

১৫. কবরে হাত তুলে সবাই একত্রে দোয়া করা।

১৬. ১৩০ ফরজ মানা।

১৭. জন্মদিন, মৃত্যু দিবস, মা-বাবা দিবস, বিবাহ বার্ষিকী, ভ্যালেন্টাইন্স ডে, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস , পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি দিবস পালন করা।

১৮. আল্লাহকে “খোদা” বলা। (কেননা, খোদা শব্দে শিরক এর গন্ধ আছে।)

১৯. অজুতে ঘাড় মাসেহ করা

২০. কবর পাকা করা।

২১. আযানের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম আসলে চোখে তুই বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে দুই চোখের মধ্যে লাগিয়ে চুমু খাওয়া।

২২. মসজিদে নববীর সবুজ গম্বুজ দেখা মাত্রই দুরুদ ও সালাম পাঠ করা।

২৩. খুদবা বা অন্য সময় লাল বাতি জ্বালিয়ে রাখা এবং লিখে রাখা যে লাল বাতি জ্বলন্ত অবস্থায় সালাত আদায় করা নিষেধ।

২৪. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর কবরে গিয়ে কান্নাকাটি করাকে সাওয়াব মনে করা।

২৫. জামাত শুরু হয়ে গেলেও বা একামত হয়ে গেলেও নতুন করে সুন্নত পড়া।

২৬. দোয়া করার সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা জরুরি মনে করা।

২৭. খতমে আম্বিয়া।

২৮. নাপাক কাপড় সাত বার না ধুলে পাক হবে না মনে করা।

বেদআতির পরিণাম :

১. বেদআতিদের চূড়ান্ত পরিনাম জাহান্নাম।

২. বেদায়াতিরা চরমভাবে লাঞ্চিত হবে।

৩. যারা বেদাত করে তারা মূলত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে অপমান করে।

৪. বেদাআতীরা হাশরের ময়দানে হাউজে কাউসারের পানি পান করতে পারবে না।

আল্লাহ্ আমাদের সকলকে বিদআত থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুক। (আমীন)

সমাজে প্রচলিত কিছু শিরক জানতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top