রোজার ফরজ কয়টি ও কি কি ?

রোজার ফরজ বা রোকন হল দুইটি। যথা:

১.রোজার নিয়ত করা এবং ২. পানাহার ও কামাচার পরিত্যাগ করা।

১.রোজার নিয়ত করা :

রোজার ফরজ দুইটির প্রথম টি হলো নিয়ত করা। নিয়ত হলো মহান আল্লাহর আদেশ পালন করার উদ্দেশ্যে রোজা রাখার জন্য হৃদয় বা অন্তরের সংকল্প।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তার জন্যই দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটি হলো সঠিক দ্বীন। (সূরা বাইয়্যিনাহ : ৫)

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সমস্ত কর্ম নিয়তের উপর নির্ভরশীল এবং মানুষের তাই প্রাপ্য হয় যা সে নিয়ত করে। (বুখারী : ১)

সুতরাং যে ব্যক্তি ফরজ রোজা রাখবে, সে ব্যক্তির জন্য নিয়ত করা ওয়াজিব। আর নিয়ত হলো হৃদয়ের কাজ, তার সাথে মুখের কোন সম্পর্ক নেই। তার প্রকৃতত্ত্ব হলো, মহান আল্লাহর আদেশ পালন এবং তার সন্তুষ্টি লাভ করার উদ্দেশ্য কোন কাজ করার সংকল্প করা। বলা বাহুল্য, ‘নাওয়াইতুয়ান আসুমা গাদাম মীন সাহরী রামাজান’ বলে নিয়ত পড়া বেদআত। আসলে যে ব্যক্তির মনে মনে একথা জানবে যে, আগামীকাল রোজা, অতঃপর রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সেহেরী খাবে তার এমনিতেই নিয়ত হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিশুদ্ধ চিত্তে দিনের বেলায় সকল প্রকার রোজা নষ্টকারি জিনিস থেকে বিরত থাকার সংকল্প করবে, তার নিয়ত হয়ে যাবে। যদিও সে সেহেরী খাওয়ার সুযোগ না পায়।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : নিয়ত অবশ্যই ফজরের পূর্বে হওয়া জরুরী তবে রাত্রির যেকোনো অংশে করলেই তা যথেষ্ট ও বৈধ হবে।

হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত :

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, ফজরের পূর্বেই যে লোক রোজা থাকার নিয়ত করেনি তার রোজা হয়নি। ( তিরমিজি : ৭৩০)

তবে ‘নফল’ রোজার ক্ষেত্রে রাত থেকে নিয়ত করা শর্ত নয়; বরং ফজর উদিত হওয়ার পর কিছু না খেয়ে থাকলে দিনের বেলায় নিয়ত করলেও তা যথেষ্ট হবে।

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এসে বললেন, তোমাদের নিকট কোন কিছু আছে কি ? আমি বললাম না। তিনি বললেন, তাহলে আমি সিয়াম পালন করছি। এরপর আরেকদিন তিনি আমাদের কাছে এলেন; আমরা বললাম ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের জন্য হায়স (ঘি এবং পনির মিশ্রিত খেজুর) হাদিয়া পাঠান হয়েছে; তিনি বললেন, তুমি তা আমাকে দেখাও, আমার তো ভোর হয়েছে শাহীন অবস্থায়; তারপর তিনি তা আহার করলেন। (মুসলিম : ২৬০৫)

বিশেষ দ্রষ্টব্য : নির্দিষ্ট নফল (যেমন, আরাফা ও আশুরার) রোজার ক্ষেত্রে পূর্ব সতর্কতামূলক আমল হল, রাত থেকেই তার নিয়ত করে নেওয়া।

তবে যদি কেউ সফরে বা রোগে আক্রান্ত অথবা অন্য কোন ওযরের ফলে মাঝে রোজা না রেখে নিয়ত ছিন্ন করে ফেলছে তার জন্য অবশ্য ওযর দূর হওয়ার পর নতুন করে রোজা রাখার জন্য নিয়ত নবায়ন করা জরুরী।

যে ব্যক্তি খাওয়া অথবা পান করার সংকল্প করার পর পুনরায় স্থির করল যে, সে ধৈর্য ধরবে। অতএব সে পানাহার করল না এমন ব্যক্তির রোজা কেবলমাত্র পানহার করার ইচ্ছা ও সংকল্প হওয়ার জন্য নষ্ট হবে না। আর এই কাজ হল সেই ব্যক্তির মত, যে নামাজে কথা বলতে ইচ্ছে করার পর কথা বলে না, অথবা ওযু নষ্ট করার ইচ্ছা হওয়ার পর ওযু নষ্ট করে না। যেমন এই নামাজির ওই ইচ্ছার ফলে নামাজ বাতিল হবে না এবং তার অজুও শুদ্ধ থাকবে অনুরূপ ওই রোজাদারের পানাহার করার ইচ্ছা হওয়ার পর পানাহার না করে তা হলে তার রোজা বাতিল হবে না, বরং শুদ্ধ থাকবে।

যেহেতু নীতি হলো, যে ব্যক্তি ইবাদতে কোন নিষিদ্ধ কর্ম করার সংকল্প করে কিন্তু কার্যত তা করেনা, সে ব্যক্তির ইবাদত নষ্ট হয় না।

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি রোজার নিয়ত ছিন্ন করে দেয়, তার রোজা বাতিল। কেননা রাসূল (সা:) বলেছেন, সমস্ত কর্ম নিয়তের উপর নির্ভরশীল এবং মানুষের তাই প্রাপ্য হয় যা সে নিয়ত করে। (বুখারী : ১)

আর যদি কোন রোজাদার ব্যাক্তি মুরতাদ হয়ে যায় তাহলে সাথে সাথে তওবা করলেও তার রোজা নষ্ট হয়ে যায়। কারণ, মুরতাদের কাজ ইবাদতের নিয়ত বাতিল ও বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। আর এতে কারো কোন প্রকারের দ্বিমত নেই।

২. পানাহার ও স্ত্রী সহবাস পরিত্যাগ করা :

রোজার ফরজ এর ২য় টি হলো : পানাহার ও স্ত্রী সহবাস পরিত্যাগ করা। ফজর উদয় হওয়ার পর থেকে নিয়ে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সময় ধরে যাবতীয় রোজা নষ্ট করে জিনিস থেকে বিরত থাকা। মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

”আর যতক্ষণ না ভোরের সাদা রেখা কালো রেখা থেকে পৃথক হয়ে যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা খাও ও পান কর। তারপর রাতের আগমন পর্যন্ত রোজা পূর্ণ কর। আর তাদের সাথে (স্ত্রীদের সাথে) সহবাস করো না, যখন তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত থাকো। এসব আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমা। সুতরাং তোমরা এগুলো নিকটে যেও না। এভাবে আল্লাহ মানুষের সামনে স্বীয় নিদর্শনাবলী স্পষ্ট রূপে বর্ণনা করেন, যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে “ (সূরা বাকারা : ১৮৭)

উক্ত আয়াতে কালো ও সাদা সুতা বলে রাতের অন্ধকার ও দিনের শুভ্রতাকে বোঝানো হয়েছে।

আদী (রা:) হতে বর্ণিত : তিনি (আদী) একটি সাদা ও একটি কালো সুতা সঙ্গে রাখলেন। কিন্তু রাত অতিবাহিত হলে খুলে দেখলেন কিন্তু তার কাছে সাদা কালোর কোন পার্থক্য নিরূপিত হল না। যখন সকাল হলো তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমি আমার বালিশের নিচে (সাদা ও কালো রংয়ের দুটি সুতা) রেখেছিলাম (এবং তিনি রাতের ঘটনাটি বললেন)।

তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন, তোমার বালিশ তো খুবই বড় দেখছি। যদি কালো ও সাদা সুতা (সুবহি কাযীব ও সুবহি সাদিক) তোমার বালিশের নীচে থেকে রাখো। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম) আদী (রা:) এর বর্ণনা শুনে কৌতুক করে বলেছেন যে, গোটা পূর্বাকাশ যদি তোমার বালিশের নিচে রেখে থাকো তাহলে সে বালিশ তো খুব বড়ই দেখছি ( বুখারী : ৪৫০৯)

রোজার ফরজ

সমাজে প্রচলিত কিছু বিদআত

সমাজে প্রচলিত কিছু শিরক

নামাজের ওয়াজিব ১৪ টি

০১. সূরা ফাতিহা এর তাফসীর নামকরন ও শানে-নুযূল

১১৪. সূরা নাস এর তাফীসর

ইনশাআল্লাহ কখন বলতে হয় এবং এর গুরুত্ব ও ফজিলত

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top