রাতে বা দিনে ভয় পেলে যে দুআ পড়বে

ভয় পেলে যে দুআ পড়বে,বাচ্চারা ভয় পেলে কোন দোয়া পড়তে হয়,ভয় পেলে কি দোয়া পড়তে হয়,ভয়ের জন্য কোন সূরা পড়তে হয়,বাচ্চা ভয় পেলে করণীয়,ভয় পেলে পড়া যায় এমন কিছু দুআ,রাতে ভয় পেলে যে দোয়া পড়বেন,ঘুমের মধ্যে ভয় পেলে যেই দোয়া পড়বেন,

রাতে বা দিনে ভয় পেলে যে দুআ পড়বে

রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও বিপদ-আপদে এই দোয়াটি পাঠ করতেন এবং তাঁর উম্মতকেও এটি পাঠ করতে বলতেন। এই দোয়াটি নিয়মিত পাঠ করলে হৃদয়ে শান্তি আসবে, ভয় দূর হবে এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা বাড়বে। রাতে বা দিনে ভয় পেলে যে দুআ পড়বে দোয়াটি হলো-

✅ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বিপদাপদে ও ভয়ে নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন-

لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ ، لَا إِلَهَ الله رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَرَبُّ الْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আযিমুল হালিম, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুলআরশিল আযিম, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদি রাব্বুল আরশিল কারিম।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, তিনি মহান ও সহিষ্ণু। আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, তিনি মহান আরশের পালনকর্তা। আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, তিনি আকাশের পালনকর্তা, জমিনের পালনকর্তা এবং মহান আরশের পালনকর্তা।

আরো পড়ুন : কঠিন বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া

ভয় পেলে যে দুআ পড়বেন

ভয় পেলে যে দুআ পড়বেন: হযরত সাওবান রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) যখন কোনো কিছু দেখে ভয় পেতেন, তখন এ দুআ পড়তেন—

هُوَ اللهُ اللَّهُ رَبِّي لَا شَرِيكَ لَهُ .

উচ্চারণ: হুয়াল্লাহু, আল্লাহু রাব্বি লা-শারিকা লাহু।
অর্থ: তিনিই আল্লাহ, তিনি আমার প্রতিপালক, তাঁর কোনো শরিক নেই। [আমাল: ৩৩৫ ইবনুস সুন্নি: আমাল: ৫৭, নাসাঈ]

✅ হযরত আমর ইবনে শুআইব রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল সাঃ সাহাবায়ে কেরামকে ভয়ের সময় এই কালিমাগুলো পড়তে শিখিয়েছেন-

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ.

উচ্চারণ: আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন গাজাবিহি ওয়া শাররি ইবাদিহ। ওয়ামিন হামাজাতিশ শাইয়াতিনি ওয়া আন ইয়াহদুরুন।

অর্থ: আমি আল্লাহ তাআলার ক্রোধ থেকে পূর্ণাঙ্গ উক্তিসমূহের আশ্রয় নিচ্ছি , তার সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে এবং শয়তানের কুস্পর্শ ও উপস্থিতি থেকে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. তাঁর বুঝমান সন্তানদেরকে এ দুআ মুখস্থ করাতেন। আর অবুঝ বাচ্চাদের গলায় কাগজে লিখে ঝুলিয়ে দিতেন। [সুনানে আবু দাউদঃ ৩৮৯৩, সুনানে তিরমিযি: ৩৫১৯]। হাদিসটি হাসান।

✅ এছাড়া নিচের এই দুআটি সব ধরনের ভয় থেকে মুক্তি পেতে পড়া হয়। দোয়াটি হলো-

لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكَ وَ لَهُ الْحَمْدُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْر

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহদাহুলা শরিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ও হুয়া আলা কুল্লি শাই ইন কাদির।
অর্থ:আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই। রাজত্বও তার। প্রশংসা শুধু তারই। তিনিই সব কিছুর সর্বশক্তিমান।  (বুখারি ও মুসলিম)

আরো পড়ুন : ইস্তেখারার দোয়া ও নামাজের নিয়ম

ঘুমের মধ্যে ভয় পেলে যেই দোয়া পড়বেন

✅ আমর ইবনে শুআইব (রহ.) থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার সূত্র থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) তাদের ভীতিকর পরিস্থিতিতে এ বাক্যগুলোর মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করার শিক্ষা দিতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) এ বাক্যগুলো তার সাবালক সন্তানদের শেখাতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ ঘুমের মধ্যে ভয় পেলে এই দোয়া পড়বে। দোয়াটি হলো-

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ

উচ্চারণ: আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মতি মিন গাদাবিহি ওয়া ইক্বাবিহি ওয়া শাররি ইবাদিহি ওয়া মিন হামাযাতিশ শায়াত্বিনি ওযা আঁই-ইয়াহদুরুন।
অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীসমূহের ওসিলায় তার ক্রোধ ও শাস্তি থেকে, তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট থেকে, শয়তানের প্ররোচনা এবং আমার কাছে ওদের হাজির হওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।  

রাতে ভয় পেলে যে দোয়া পড়বেন

✅ রাতের অন্ধকারে অনেকেই ভয় অনুভব করেন। ইসলামে এই ভয় কাটিয়ে সুন্দর ঘুমের জন্য বিভিন্ন দোয়া ও উপায় শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাতে ভয় পেলে যে দোয়া পড়বেন তা হাদিসে বর্ণিত দোয়া ও উপায় নিচে দেওয়া হলো-

لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল ওয়াহিদুল কাহহার, রাব্বুস্সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়া মা বাইনাহুমাল আযিযুল গাফফার।
অর্থ: আল্লাহ ব্যতিত কোনো সত্য উপাস্য নেই; যিনি একক, প্রবল ক্ষমতাশালী; আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছুর প্রতিপালক। যিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।

ভয়ের জন্য কোন সূরা পড়তে হয়

আয়াতুল কুরসি: এটি কুরআনের সবচেয়ে শক্তিশালী আয়াতগুলির মধ্যে একটি এবং এটি শয়তান থেকে রক্ষা পেতে এবং হৃদয়ে শান্তি আনতে পড়া হয়। ভয় দূর করার জন্য আয়াতুল কুরসি একটি শক্তিশালী আশ্রয়। আয়াতুল কুরসি হলো পবিত্র কোরআনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আয়াত, যা বিভিন্ন বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে এবং হৃদয়ে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রদান করে। বিশেষ করে ভয়ের সময় এই আয়াতটি পাঠ করলে মনে সাহস ও ধৈর্য আসে।

ভয় থেকে মুক্তির জন্য সূরা ফালাক ও সূরা নাস: ইসলামে ভয় থেকে মুক্তি পেতে এবং নিরাপত্তা কামনা করার জন্য সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই দুটি সুরা শয়তানের কুমন্ত্রণ এবং নজর থেকে রক্ষা পেতে পড়া হয়। সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়া ভয় থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি সহজ ও কার্যকর উপায় । এই দুটি সূরা নিয়মিত পড়ার মাধ্যমে আপনি আল্লাহর রহমত ও নিরাপত্তায় থাকতে পারবেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, নবী (সাঃ) নিজেও এই দুটি সূরা প্রায়ই পড়তেন এবং তাঁর উম্মতকেও পড়ার নির্দেশ দিতেন।

আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম: শয়তানের ওসওসা থেকে রক্ষা পেতে এই দুআটি পড়া হয়। আপনি যদি ভয় অনুভব করেন, তাহলে আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম অবশ্যই পড়তে পারেন। এই দোয়া শয়তানের প্ররোচনার বিরুদ্ধে আশ্রয় চাওয়ার একটি শক্তিশালী উপায়। এটি আপনার মনকে শান্ত করতে এবং ভয়কে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে।

কেন আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম পড়া উচিত?

  • শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্তি: ভয় অনেক সময় শয়তানের প্ররোচনার ফল। এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে আপনি শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।
  • মনের শান্তি: এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে আপনার মন শান্ত হবে এবং আপনি আল্লাহর কাছে নিরাপদ বোধ করবেন।
  • আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: আল্লাহর উপর ভরসা রাখার ফলে আপনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হবেন।

ভয় দূর করার অন্যান্য উপায়

  • নিয়মিত নামাজ আদায় করা: নামাজ আদায় করলে হৃদয়ে শান্তি আসে এবং আল্লাহর কাছে আরো কাছাকাছি আসা যায়।
  • কুরআন তিলাওয়াত করা: কুরআন তিলাওয়াত করলে মন শান্ত হয় এবং আল্লাহর কালামের সান্ত্বনা পাওয়া যায়।
  • ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা: ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলে ধর্মীয় ভাইবোনদের সাথে মিশ্রিত হওয়ার সুযোগ হয় এবং ধর্মীয় জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।
  • দরুদ শরীফ পাঠ করা: দরুদ শরীফ পাঠ করলে নবীজি (সাঃ) এর উপর দরুদ ও সালাম পাঠানো হয় এবং আল্লাহর রাসূলের শাফাআত পাওয়ার আশা করা যায়।
  • ইস্তিগফার করা: নিজের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।

আরো পড়ুন :

নতুন কাপড় পড়ার দোয়া
কাপড় খোলার দোয়া ও পদ্ধতি
ঘুম থেকে উঠার দোয়া
বাথরুম থেকে বের হওয়ার দোয়া
মসজিদে প্রবেশের দোয়া
ঘুমানোর দোয়া

ট্যাগ সমূহ: বাচ্চারা ভয় পেলে কোন দোয়া পড়তে হয়,ভয় পেলে কি দোয়া পড়তে হয়,ভয়ের জন্য কোন সূরা পড়তে হয়?,বাচ্চা ভয় পেলে করণীয়,ভয় পেলে পড়া যায় এমন কিছু দুআ,রাতে ভয় পেলে যে দোয়া পড়বেন,ঘুমের মধ্যে ভয় পেলে যেই দোয়া পড়বেন, ভয় থেকে মুক্তির দোয়া

    Leave a Comment

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Scroll to Top