
বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া
বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া হলো মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যখন আমরা কোনো বিপদে পড়ি, তখন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া আমাদের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। একজন মুমিন হিসেবে আমাদের উচিত হলো এই বিপদকে ধৈর্য্যের সাথে মোকাবিলা করা এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা। রাসুলুল্লাহ (সা.)ও যখন কোনো বিপদে পড়তেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। একান্তভাবে প্রার্থনা করতেন। কোরআন ও হাদিসে বিভিন্ন বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া বর্ণিত হয়েছে। দোয়াগুলো ছোট ও সহজ। চাইলেই মুখস্থ করা যায়। এখানে কয়েকটি দোয়া দেওয়া হলো—
সুচিপত্র :
কঠিন বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বান্দার পরিবার, সম্পদ, সন্তানাদিতে যে বরকত দেবেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে যদি বান্দা এই দোয়া পড়ে, তাহলে এগুলোতে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বিপদাপদ দেখতে পাবে না। দোয়াটি হলো—
مَا شَاءُ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ
বাংলা উচ্চারণ: ‘মাশা আল্লাহু লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।’
বাংলা অর্থ: আল্লাহতায়ালা যা ইচ্ছা করেন তা হয়, আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি নেই। (ইবনুস সুন্নি, পৃষ্ঠা: ৩৫৭)
আরো পড়ুন : ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া।
বড় বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া
ছোট-বড় বিপদে যে দোয়া পড়বেন: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা সকল দুর্ঘটনায় ‘ইন্নালিল্লাহ’ বলবে। এমনকি জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও। কেননা এটিও একটা মুসিবত ও দুর্ঘটনা।” (ইবনুস সুন্নি, পৃষ্ঠা: ৩৫২)
আকস্মিক বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া
দোয়া ইউনুস পড়লে বিপদ কাটে: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মাছের পেটে ইউনুস (আ.) এ দোয়া পড়ে আল্লাহকে ডেকে ছিলেন এবং মুক্তি পেয়েছিলেন। যদি কোনো মুসলিম বিপদে পড়ে এ দোয়া পাঠ করে, আল্লাহ তা কবুল করবেন।
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
বাংলা উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা, ইন্নি কুংতু মিনাজ্জালিমিন।’
বাংলা অর্থ: তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তুমি পবিত্র সুমহান। নিশ্চয়ই আমি সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৭; মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস: ২২৯২)
৭০ টি বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া
হযরত আনাস (রা.) বলেন, ‘যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর কোনো কাজ কঠিন হয়ে দেখা দিত, তখন তিনি এ দোয়া পড়তেন। যথা—
يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ
বাংলা উচ্চারণ: ‘ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুমু বিরাহমাতিকা আসতাগিছু। আসলিহ লি শানি কুল্লাহু, ওয়ালা তাকিলনি ইলা নাফসি তারাফাতা আইনি।’
বাংলা অর্থ: হে চিরঞ্জীব! হে বিশ্ব চরাচরে ধারক! আমি তোমার রহমতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস: ২৪৫৪)
✅ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাঃ বিপদাপদে নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ ، لَا إِلَهَ الله رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَرَبُّ الْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আযিমুল হালিম, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুলআরশিল আযিম, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদি রাব্বুল আরশিল কারিম ।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আর কোনো মাবুদ নেই, যিনি অতি মহান অত্যন্ত সহনশীল। আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই, যিনি আসমান-জমিনের পালনকর্তা এবং মহান আরশের মালিক। অপর বর্ণনায় আছে- আল্লাহর রাসুল সাঃ যখন পেরেশান হতেন বা বিপদের সম্মুখীন হতেন, তখন উক্ত দুআ পড়তেন। [সহিহ বুখারি: ৬৩৪৫, সহিহ মুসলিম: ২৭৩০, সুনানে তিরমিযিঃ ৩৪৩১, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৮৮৩, আমাল: ৬৫২, নাসাঈ]
✅ হযরত আনাস রাযি. আল্লাহর রাসূল সাঃ থেকে বর্ণনা করেন, কোনো বিপদ আসলে আল্লাহর রাসূল সাঃ এ দুআ পড়তেন—
يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ .
উচ্চারণ: ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুম, রি-রাহমাতিকা আস্তাগিস।
অর্থ: হে শাশ্বত চিরজীবি, আপনার কাছেই ফরিয়াদ করি। [সুনানে তিরমিযি: ৩৫২২, আমাল ৩৩৮, ইবনুস সুন্নি]
হাদীসের মান : হাকেম বলেন, হাদিসের সনদ সহিহ।
✅ হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাঃ কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চিন্তিত হলে আকাশের দিকে মাথা উঠিয়ে এ দুআ পড়তেন-
سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيمِ .
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহিল আজিম।
অর্থ: মহান আল্লাহ তাআলার পবিত্রতা ঘোষণা করছি।
✅ খুব বেশি জোরালো দুআ করলে বলতেন-
يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ .
উচ্চারণ: ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুম ৷
অর্থ: হে চিরঞ্জীব, হে সকল কাজের নিয়ন্ত্রক! (আপনারই আশ্রয় চাই)। [সুনানে তিরমিযি: ৩৪৩২, আমাল: ৩৩৭, ইবনুস সুন্নি]
✅ হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাঃ বেশি বেশি এ দুআ পড়তেন-
اَللّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদদুনইয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে হেফাজত করুন। –সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এতটুকু বেশি আছে যে, আনাস রাযি. দুআ করতে চাইলে এ দুআটি করতেন। অন্য কোনো দুআ করলেও এটি সঙ্গে করতেন। [সহিহ বুখারি: ৬৩৮৯, সহিহ মুসলিমঃ ৩৬৯০]
বিপদে আসলে যে দোয়া পড়বেন
✅ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত: হযরত আলি রাযি. বলেন, আল্লাহর রাসুল সাঃ আমাকে এ দুআ শিখিয়েছেন এবং বিপদাপদের সময় ও মুসিবতের সময় তা পড়তে আদেশ করেছেন। দুআটি হলো-
إِلَهَ إِلَّا اللهُ الكَرِيمُ الْعَظِيمُ، سُبْحَانَهُ، تَبَارَكَ اللهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، اَلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল কারিমুল আজিম, সুবহানাহু তাবারাকাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজিম, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আর কোনো মাবুদ নেই, যিনি অতি সম্মানি ও মহান। তার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। মহান আরশের মালিক। আল্লাহ তাআলা বড় মহান পালনকর্তা । সকল প্রশংসা বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহ তাআলার জন্য। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রাযি. জ্বরে আক্রান্ত রোগিকে এটাপড়ে ফুঁ দিতেন। আর অনাত্মীয়ের কাছে বিবাহিত মেয়েদেরকে তা শিখিয়ে দিতেন। [আমাল: ৬৩০, নাসাঈ, আমাল: ৩৪৩, ইবনুস সুন্নি, মুসনাদে আহমাদ ১/৯৪, মাওয়ারিদ: ২৩৭১]
✅ হযরত আবু বাকরা রাযি. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাঃ বলেছেন: বিপদের সময়ের দুআ হলো-
اللَّهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُو، فَلَا تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِى طَرْفَةَ عَيْنٍ، وَأَصْلِحْ لِي شَأْنِي كُلَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাহমাতাকা আরজু, ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি তারফাতা আইনিন। ওয়া আসলিহ লি শানি কুল্লাহু, লা-ইলাহা ইল্লা আনতা ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার রহমতের কামনা করি। অতএব, কিছু সময়ের জন্যও আমাকে হেফজতের দায়িত্ব আমার ওপর ছেড়ে দিয়েন না। আমার সকল সমস্যার সমাধান আপনি করে দিন। আপনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। [সুনানে আবু দাউদ: ৫০৯০, আমাল: ৬৫১, নাসাঈ, আল আদাবুল মুফরাদ: ৭০১, আমাল: ৩৪২, মুসনাদে আহমাদ ৫/৪২, মাওয়ারিদ: ২৩৭০]
হযরত আসমা বিনতে উমাইস রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আজ আমাকে বলেছেন, আমি কি তোমাকে এমন দুআ শিক্ষা দেব যা তুমি বিপদের সময় পড়বে? তুমি বিপদের সময় এ দুআ পড়বে-
اللَّهَ اللَّهَ رَبِّي لَا أُشْرِكْ بِهِ شَيْئًا.
উচ্চারণ: আল্লাহ আল্লাহ রাব্বি, লা উশরিকু বি রাব্বি শাইআ।
অর্থ: একমাত্র আল্লাহই আমার প্রতিপালক, আমি তার সাথে কাউকে শরিক করি না। [সুনানে আবু দাউদ: ১৫২৫, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৯৮২, আমাল: ৬৪৭, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ৬/৩৬৯]
✅ হযরত আবু কাতাদা রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাঃ বলেছেন-
مَنْ قَرَأَ ايَةَ الْكُرْسِيَ وَخَوَاتِيمَ سُورَةِ الْبَقَرَةِ عِنْدَ الكَرْبِ أَغَاثَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ.
অর্থ: যে ব্যক্তি বিপদের সময় আয়াতুল কুরসি ও সুরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো তেলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে মসিবতের সময় সাহায্য করবেন। [ইবনুস সুন্নি: ৩৪৪] হাদিসটি দুর্বল।
সকল বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া
✅ হযরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রাযি. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাঃ বলেছেন, আমি এমন দুআ জানি যদি সেটি কোনো মসিবতে আক্রান্ত ব্যক্তি পড়ে, তাহলে তার বিপদ দূর হয়ে যায়। দুআটি হলো হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম অন্ধকারে (মাছের পেটে থেকে) যে দুআটি করেছিলেন—
لا إلهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ.
উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জালিমিন।
অর্থ: আপনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। আপনি পাক-পবিত্র। [হে আল্লাহ!] আমি সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। সুরা আম্বিয়া: ৮৭।
✅ ইমাম তিরমিযি রহ. উক্ত হাদিসটি হযরত সাদ রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসুল সাঃ বলেছেন-
دَعْوَةُ ذِي النُّونِ إِذْ دَعَا وَهُوَ فِي بَطْنِ الْحُوتِ . لَا إِلَهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ ، فَإِنَّهُ لَمْ يَدْعُ بِهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ فِي شَيْءٍ قَطُّ إِلَّا اسْتَجَابَ اللَّهُ لَهُ.
অর্থ: হযরত ইউনুস আ. যখন মাছের পেটে ছিলেন, তখন তিনি এই দুআটি করেছিলেন। কোনো মুসলিম যদি এ দুআটি পড়ে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার দুআ অবশ্যই কবুল করবেন। দুআটি হলো-
لا إِلهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ.
উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জালিমিন।
অর্থ: আপনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। আপনি পাক-পবিত্র। আমি সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। [আমাল: ৩৪৩, ইবনুস সুন্নি, আমাল: ৬৫৬, নাসাঈ, সুনানে তিরমিযি: ৩৫০০, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫০৫] হাদিসটি খুবই দুর্বল।
আরো পড়ুন :
ট্যাগ সমূহ: বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া,কঠিন বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া,৭০ টি বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া,আকস্মিক বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া,বড় বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া,বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া আরবিতে,বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া বাংলা |