দুআয় কী চাইব
দুআয় দুনিয়াবি নাকি পরকালীন বিষয় চাইব—এই নিয়ে আমরা অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যাই। কেউ শুধু দুনিয়াবি বিষয়ে দুআ করি, কেউ শুধু পরকালীন। কিন্তু আল্লাহ আমাদের দুনিয়া-আখিরাত উভয়ের জন্যই দুআ করতে শিখিয়েছেন । কুরআনের একটা অনিন্দ্যসুন্দর দুআ আছে। এই দুআর মাধ্যমেই আল্লাহ আমাদের একই সঙ্গে দুনিয়া ও আখিরাত চাওয়ার পদ্ধতি শিখিয়েছেন—
ربنا اتنا في الدنيا حسنة وفي الأخرة حسنة وقنا عذاب النار –
‘হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়ায় কল্যাণ দিন, আখিরাতে কল্যাণ দিন এবং জাহান্নামের আজাব থেকে আমাদের রক্ষা করুন।’ (সূরা বাকারা : ২০১)
এটা কুরআনের সবচেয়ে বিস্তৃত অর্থের (Comprehensive) দুআ। এই দুআটির মর্মার্থ যদি খেয়াল করি, তবে দেখব—চাওয়ার মতো যা কিছু আছে, সবই এই দুআর মাধ্যমে চাওয়া হয়। দুনিয়াও চাওয়া হয়, আখিরাতও চাওয়া হয় । অনেকটা যেন এমন—গাছেরটাও খেলাম, তলারটাও কুড়ালাম । সুবহানাল্লাহ!
এবার আমরা জানব—দুআ কীভাবে করতে হয়? অনেকে বলে থাকে—‘দুআ তো করি, কিন্তু কবুল তো হয় না।’ মূলত দুআ কবুলের জন্য কিছু আদব ও শর্তাবলি মানতে হয়। একই সঙ্গে দুআ কবুলের জন্য কিছু বিশেষ সময়ও আছে—যার সদ্ব্যবহার করতে হয়। চলুন, এবার এসব বিষয়ে জানা যাক।
দোয়ার আদব সমূহ
যদিও দুআ যখন-তখন করা যায়, তবুও এর কিছু আদব রয়েছে। এসব আদব মেনে দুআ করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। দোয়ার আদব সমূহ নিম্নরূপ-
(১). ‘দুআর আগে সুযোগ থাকলে অজু করে নিন।’ (সহিহ বুখারি : ৪৩২৩)
(২). ‘কিবলামুখী হয়ে দুআ করুন।’ (সহিহ বুখারি : ১০০৫)
কিবলামুখী হয়ে নামাজ পড়া ফরজ, কিন্তু দুআ করা ফরজ না। তবে কিবলামুখী হয়ে দুআ করলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
(৩). ‘হাত তুলে দুআ করুন।’ (সহিহ বুখারি : ২৮৮৪)
(৪). দুআ হাত তুলেও করা যায়, হাত না তুলেও করা যায়। কিন্তু বিশেষ দুআ হাত তুলেই করা উত্তম, এতে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
প্রিয়নবি বলেন— ‘আল্লাহ খুব লজ্জাশীল। বান্দা যখন হাত তুলে দুআ করে, তখন আল্লাহ তার হাত দুটোকে খালি অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ (সুনানে আবু দাউদ : ১৪৮৮)
তাই বলে সব দুআয়, সব জায়গায় হাত তোলা উচিত না। রাসূলুল্লাহ যেসব জায়গায় হাত তুলেছেন, সেসব জায়গায় হাত তুলুন। আর সাধারণ মাসনুনগুলো পড়ার সময় হাত তোলা অপ্রয়োজনীয়। যেমন : ঘুমের দুআ, মসজিদে প্রবেশের দুআ ইত্যাদি।
(৫). ‘দুআর শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও তারিফ করুন। নবির প্রতি দরুদ পড়ন।’ (জামে আত-তিরমিজি, নাসায়ি, সহিহুল-জামি: ৩৯৮৮)
(৬). দুআ করার সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শানে চোখের পানি ফেলুন। আল্লাহর রাহে চোখের পানি কখনো বৃথা যায় না
(৭). ‘সুযোগ থাকলে একান্ত নীরবে দুআ করুন। আল্লাহর সাথে ওয়ান টু ওয়ান দুআ বেশি ফলপ্রসূ হয়।’ (সূরা আ’রাফ : ৫৫)
(৮). ‘দুআর ভেতর নিজের পাপ স্বীকার করুন; নতজানু হয়ে কাতর কণ্ঠে মাফ চান। আল্লাহ তায়ালা অপরাধীর আত্মস্বীকৃতিকে পছন্দ করেন এবং তাতে সন্তুষ্ট হয়ে গুনাহ ক্ষমা করেন।’ (আহমাদ, আবু দাউদ, জামে আত-তিরমিজি, সহিহুল জামি : ১৬৫৩)
(৯). ‘দুআতে আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে কাকুতি-মিনতি করুন। কাকুতি- মিনতি ছাড়া দুআ আসলে পরিপূর্ণ হয় না। একজন ভিক্ষুক কাকুতি- মিনতি ছাড়া ভিক্ষা কি পায়?’ (সহিহ মুসলিম : ২১৮৯)
(১০). ‘দুআ করুন তিনবার। দুআর বেলায় কোনো জিনিস তিনবার চাওয়া বেশ উৎসাহমূলক একটি আদব। এতে দুআকারীর প্রয়োজনের মাত্রা বোঝা যায়।’ (জামে আত-তিরমিজি, নাসায়ি, সহিহুল-জামি : ৬২৭৫)
(১১). আল্লাহর সিফাতি নাম ধরে দুআ করুন। দুআ করার সময় আল্লাহর সুন্দর নাম ধরে দুআ করুন। তাতে আল্লাহ লজ্জায় পড়ে যান এবং দুআ কবুল করেন। যেমন : গুনাহ মাফ চাওয়ার সময় বলুন—ইয়া গাফফার, ইয়া গফুর, রিজিক চাওয়ার সময় বলুন—ইয়া রাজ্জাক, রহমত চাওয়ার সময় বলুন—ইয়া রহমান, ইয়া রহিম ইত্যাদি। (নাসায়ি : ১৩০০)
(১২). নিজেকে আল্লাহর কাছে ছোটো করে উপস্থাপন করুন।
(১৩). দুআর শেষে ‘আমিন’ বলুন। এটা সুন্নাত। এ ছাড়াও নামাজে ইমাম সাহেব যখন সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত শেষ করেন, তখন ‘আমিন’ বলুন। আমাদের ‘আমিন’ আর ফেরেশতাদের ‘আমিন’ যদি মিলে যায়, তাহলে আল্লাহ আমাদের জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন। (সহিহ বুখারি : ৭৮১)
(১৪). ‘দুআর পর দুই হাত মুখে নিয়ে মাসেহ করুন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৮৬৬)
এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে দুআ করতে পারলে, আল্লাহ আমাদের দুআ দ্রুত কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ।
আরো পড়ুন :
ট্যাগ সমূহ : দুআর আদব সমূহ,দোয়ার আদব সমূহ,দোয়ার আদব,দোয়ার আয়াত সমূহ,দোয়া সমূহ pdf,দোয়া ও আমল pdf,দোয়া ও আমল,আরবি দোয়া সমূহ,দোয়া সমূহ,আদম আ এর দোয়া,ইসলামিক দোয়া সমূহ,দুআয় কী চাইব,দোয়া চাইলে কি বলতে হয়,দুআ কবুল হওয়ার আমল,দুআ কবুলের দুআ,কী করলে দোয়া কবুল হবেই, |