তারাবি নামাজের নিয়ম

 তারাবি নামাজের দোয়া,তারাবি নামাজের নিয়ম,তারাবি নামাজের মোনাজাত
তারাবি নামাজের নিয়ম

আসসালামু আলাইকুম। সম্মানিত পাঠক বৃন্দ আজকে আমরা তারাবিহ নামাজের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানব ইনশাআল্লাহ।

বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে ইবাদতের নামে বহু বিদআত প্রচলিত আছে। ঠিক তারাবিহ নামাজের মধ্যেও অনেক রয়েছে। সেগুলো নিচে বিশ্লেষণ করা হবে ইনশাআল্লাহ।

তারাবি শব্দের অর্থ কি?

তারাবিহ আরবি শব্দ, যা তারবিহাতুন শব্দের বহুবচন; যার অর্থ হলো আরাম, বিরতি দেওয়া, বিশ্রাম নেওয়া, প্রশান্তি অর্জন ইত্যাদি। যেহেতু ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজে, প্রতি চার রাকাত অন্তর চার রাকাত নামাজের সমপরিমাণ সময় বিরতি দিয়ে আরামের সঙ্গে আদায় করা হয়; সেজন্য এই নামাজকে তারাবির নামাজ বলা হয়। এই নামাজ আদায় না করলে অবশ্যই গুনাগার হতে হবে।

রমজানের সিয়ামের বিশেষ অনুষঙ্গ তারাবির সালাত। মুমিন বান্দারা যথাযথ গুরুত্ব সহকারে তারাবির সালাত আদায় করে থাকেন। সারাদিন রোজা রেখে রাতে দীর্ঘক্ষণ তারাবির নামাজের কষ্ট, আনন্দ সঙ্গে উপভোগ করেন। পবিত্র রমজানের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতগুলোর অন্যতম এই সালাত।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজানের তারাবির নামাজ আদায় করে; তার অতীতের গুনাহ গুলো আল্লাহপাক ক্ষমা করে দেবেন। (বুখারী)

মূলত মাহে রমজানে এশার ফরজ ও সুন্নত সালাতের পর বিতিরের আগে তারাবির নামাজ আদায় করা হয়। সাধারণ নফল ও সুন্নতের চেয়ে অধিকতার মর্যাদাবান। গুরুত্বর দিক থেকে তারাবির নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা ওয়াজিবের কাছাকাছি।

তারাবি নামাজের নিয়ম :

তারাবির নামাজ মোট ২০ রাকাত। যা এশার ফরজ ও সুন্নত সালাতের পরে এবং বিতিরের আগে (২+২) করে মোট ২০ রাকাত নামাজ পড়তে হয়।

তারাবি নামাজের নিয়ত :

বর্তমান সময়ে নামাজের মধ্যে মুখে উচ্চারণ করে যে নিয়ত টি পাঠ করা হয়; সেটা কোন সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। নিয়ত হচ্ছে অন্তরের বিষয়। নিয়ত করতে হয়, নিয়ত পড়াটা জরুরী নয়। তাই প্রচলিত নিয়ত টি না পড়াই ভালো।

তারাবি নামাজের দোয়া :

তারাবিহ শব্দটি তরবিহাতুন শব্দের বহুবচন। এই সালাত টি কে তারাবি বলা হয় এইজন্য যে, এই সালাত টি আরাম করে করে পড়া হয়। চার রাকাত পর পর যে আমরা বসে থাকি তার কারণ হচ্ছে যেন আমাদের একটু রেস্ট বা আরাম করতে পারি। তবে বসা টা কোনো আবশ্যক নয়। না বসলেও কোনো অসুবিধা নেই নামাজ হয়ে যাবে।

এই চার রাকাত পর পর যে আমরা তারাবি নামাজের দোয়া টি পাঠ করি; এটা কোনো হাদিসে বর্ণিত নেই।

ইমামের পিছনে যারা নামাজ পড়ে তাদেরকে মুক্তাদি বলে। ইমাম সাহেব উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করে নামাজ পড়ান আর পিছনে মুক্তাদীরা শুধু শোনে; তাদের কে তেলওয়াত করতে হয় না। পুরো চার রাকাতে মুক্তাদীদের কোন কষ্ট হয় না। কষ্ট হয় শুধু ইমামের।

এখন কথা হচ্ছে যে চার রাকাত নামাজের পর সবাই যখন দোয়াটি পাঠ করে তখন বিশ্রামের সময়টা আর থাকলো না। চার রাকাত পর পর বসতে হয় বিশ্রামের জন্য; কিন্তু বিশ্রাম হইল কোথায় ?

খোলাসা কথা হচ্ছে চার রাকাত পর যে তারাবি নামাজের দোয়াটি আমরা পড়ি এই দোয়াটি কোন হাদিসে বর্ণিত হয়নি।

ইসলামের কোন কিছু যদি কোরআন হাদিসে না থাকে, নিজেরা যদি সেটাকে ইবাদত বানিয়ে নেই; কোরআন হাদিসের ফরমেটের মত করে, তাহলে সেটার কারণে সওয়াব না হয়ে বরং গোনাহ হওয়ার শঙ্কা আছে

এইজন্য সাবধান থাকতে হবে। চার রাকাত পরে কোন দোয়ার শিক্ষা ইসলাম দেয়নি আমাদেরকে। আর যেটা কোরআন হাদিস দেয়নি সেটা আপনি কেন বানিয়ে পড়বেন ?

এখন আসা যাক তারাবির মোনাজাত :

তারাবিহ নামাজের শেষে সম্মিলিতভাবে যে দোয়াটি পাঠ করা হয় সেটাও কোন সহিহ হাদিসে বর্ণিত নেই।

ইসলামের নামে যখন নিজেরা কোন কিছু বানিয়ে নেব এবং ইবাদতের ফরমেট তৈরি করব; সেটা বিদআত হবে।

মনে রাখবেন টাকা না থাকলে ফ্রী চান দোকানদার চাইলে দিয়ে দিতে পারে; কিন্তু জাল টাকা দিলে পিটন একটিও মাটিতে পড়বে না।

আমল নেই আল্লাহর কাছে বললেন, হে আল্লাহ! আমল বেশি করতে পারিনি। আল্লাহ চাইলে মাফ করে দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাতেও পারে। কিন্তু নকল আমল করছেন। ইসলামের নামে ভেজাল জিনিস নিয়ে আপনি আল্লাহর কাছে হাজির হচ্ছেন, আল্লাহ এটা কখনোই ক্ষমা করবেন না।

লেখাটা পড়ার পর অনেকের ধারণা হবে যে, সারা জীবন পরে আসলাম, বাপ-দাদারা পড়ে আসছেন আর এখন নিত্য নতুন কথা শুনছি।

আমরা বলি, মুসলমান কখনো অন্ধবিশ্বাসী হয় না। কোরআন হাদিসের দলিলের বাইরে গিয়ে বাপ-দাদার চৌদ্দগুষ্টি করে আসছে; এই অজুহাত দিয়ে মুসলমান কখনো ভুলভাল কিছু করতে পারেনা। কারণ, মক্কার মুশরিকরা এই কথা বলতো। যখন আমাদের নবি করিম (সা:) তাদের কে বলতেন, তাওহীদের দিকে ফিরে আসো আল্লাহর একত্ববাদ এর দিকে ফিরে আসো; তখন তারা বলতো যে, আমরা আমাদের বাপ দাদাকে যে অবস্থায় দেখেছি আমরা সেটাকে ধরে রাখবো। এটা অবশ্যই কোনো ভালো কথা নয়।

তাই বাপ-দাদার ভালো কাজ (আমল) গুলোকে আমরা ধারণ করবো ইনশাআল্লাহ্। তবে তাদের ভুল কিছু থাকলে; সেগুলোকে আমরা গ্রহণ করবো না।

অতএব, তারাবির চার রাকাত পরপর দোয়া; তারাবির মোনাজাত এগুলো কোনটাই কোরআন ও হাদিসের নির্দেশ নয়। আমরা ৪ রাকাত তারাবির পর বিশ্রাম করতে পারি, বসে থাকতে পারি, জিকির করতে পারি এটা আমাদের ব্যাপার। কিন্তু একটা দোয়া বানিয়ে নেব যেটা সবাইকে পড়তেই হবে, সুরের সাথে তালে তাল মিলিয়ে; এটা কখনোই উচিৎ নয়। শরীয়তের কোনো ইবাদতের মধ্যে নিজের মনগড়া কোনো পদ্ধতি ঢুকানো জায়েজ নয়। সুতরাং আমরা এটা করবো না।

বিদআত করলে ঠিকানা হবে জাহান্নাম। অতএব আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিদআতি আমল হতে বিরত রেখে সুন্নতি আমল করার তৌফিক দান করুক। (আমিন)

ট্যাগ সমূহ : তারাবি নামাজের দোয়া,তারাবি নামাজের নিয়ম,তারাবি নামাজের মোনাজাত,তারাবি নামাজের দোয়া তারাবি নামাজের নিয়ম কানুন,তারাবি নামাজ কত রাকাত, তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল, তারাবি নামাজ কি, তারাবির অর্থ কি, তারাবির নামাজ কত রাকাত, তারাবি নামাজের মোনাজাত ও দোয়া, তারাবির নামাজের নিয়ত,তারাবি নামাজের দোয়া তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত, তারাবি নামাজের দোয়া, তারাবি নামাজের নিয়ম। Tarabi namajer niom তারাবি নামাজের মোনাজাতTarabi namajer niomতারাবি নামাজের নিয়ম তারাবি নামাজের দোয়া
তারাবি নামাজের নিয়ম

আরো পড়ুন :

মাহে রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি

তারাবি নামাজ কত রাকাত

ভুল করে খেয়ে ফেললে কি রোজা হবে ?

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top