গোসলের ফরজ সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলো:
ঈমানদার কে সব সময় শারীরিক পরিছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হয়। কেননা, যে কোনো ইবাদতের আগে পবিত্রতা অর্জন করা অন্যতম প্রধান শর্ত। পবিত্রতার সাথে ইবাদত কবুল হওয়া না হওয়াও জড়িত। অর্থাৎ ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে পবিত্র অবস্থায় ইবাদত করা। আল্লাহ তা’য়ালা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকে ভালোবাসেন। আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতাকে পছন্দ করেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন,
“এবং যারা পবিত্র থাকে, তাদের আল্লাহ ভালোবাসেন” (সূরা বাকারা : ২২২)
“সেথায় এমন লোক আছে, যারা পবিত্রতা অর্জন ভালোবাসে এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের আল্লাহ ভালবাসেন।” (সুরা তাওবা : ১০৮)
ইসলামি শরীয়াহমতে, তিনটি আমল সম্পাদনের জন্য পবিত্রতা ফরজ বা পূর্ব শর্ত।
১ .নামাজ পড়া।
২. কোরআন স্পর্শ করা এবং
৩. কাবা শরীফ তাওয়াফ করা।
শারীরিক পবিত্রতা অর্জনের তিনটি পদ্ধতি হচ্ছেঃ ওযু, গোসল ও তায়াম্মুম। গোসল হলো সর্ববৃহৎ ও পরিপূর্ণ পবিত্রতা; যেটি এমন একটি ইবাদত, যার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ পবিত্রতা অর্জনের পাশাপাশি দেহ ও মনের বিশেষ প্রশান্তি লাভ হয়। শরীরের ক্লান্তি দূর হয়, মন প্রফুল্ল ও চিত্ত প্রসন্ন হয়। সঙ্গী ফেরেশতারা স্বস্তি লাভ করে, শয়তান ও শয়তানি ওয়াসওয়াসা বিদূরিত হয়। রূহ শান্তি পায় এবং নফস কলুষমুক্ত হয় এবং ইবাদতে মন আগ্রহ ও মনোনিবেশ বৃদ্ধি হয়।
গোসল কাকে বলে ?
পরিভাষায় আপাদমস্তক পুরো শরীর ধৌত করাকে গোসল বলা হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। (সূরা মায়িদাহ : ৬)।
গোসলের ফরজ সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলো-
গোসলের ফরজ তিনটি। যথা,
১.ভালোভাবে কুলি করা।
২. নাকের ভিতরে পানি দেওয়া।
৩. পুরো শরীর ধৌত করা।
১. ভালোভাবে কুলি করা : গোসলের প্রথম ফরজ হলো গরগড়া সহ কুলি করা। মুখের ভেতর অনেক সময় খাবারের উচ্ছিষ্ট জমে থাকে, গলার ভেতরেও কফ জমে থাকে, তাই গরগরাসহ কুলি করলে গলার কফ ও মুখের ভেতর জমে থাকা খাবারের উচ্ছিষ্ট দূর হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও ফরজ গোসলের অংশ হিসাবে কুলি করেছেন। (সহীহ বুখারী : ২৫৭ ও ২৬৫)
২. নাকের ভিতরে পানি দেওয়া : আরেকটি গোসলের ফরজ হচ্ছে নাকের ভেতর পানি দেওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও নাকে পানি দিয়েছেন। এই সম্পর্কিত একাধিক হাদীস বর্ণিত রয়েছে। (সহীহ বুখারী : ২৬৫)
৩. পুরো শরীর ধৌত করা : এমন ভাবে গোসল করতে হবে যাতে শরীরের কোন অঙ্গ শুকনো না থাকে। এ প্রসঙ্গে একাধিক হাদিস রয়েছে। সেসব হাদিস অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন গোসল করতেন তখন তার শরীরের সব অংশ ভেজা থাকতো। (সুনানে আবু দাউদ : ২১৭)
যে ব্যক্তি পবিত্রতার উদ্দেশ্যে গোসল করে, তার পাপগুলো ঝরে যায় এবং ঝরে যাওয়া প্রতিটি পানির ফোঁটা ও কণা একেকটি নেকি রূপে গণ্য হয়। (আল হাদিস)
গোসলের সুন্নত কয়টি
গোসলের সুন্নত ছয়টি। যথা,
১. গোসল শুরুর আগে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পাঠ করা।
২. পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করা।
৩. দুই হাতের কব্জি ওজুর মত তিনবার পরিষ্কার করা।
৪. কাপড় অথবা শরীরের কোথাও অপবিত্র কোনো কিছু লেগে থাকলে, গোসলের আগে তা পরিষ্কার করা।
৫. গোসলের আগে ওযু করা। গোসলের স্থান নিচু হলে ও পানি জমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে টাখনুসহ দুই পা পরে পরিষ্কার করা।
৬. ডান দিকে তিনবার, বাম দিকে তিন বার ও মাথার ওপর তিনবার পানি প্রবাহিত করা।
গোসল কখন সুন্নত
চারটি কারণে গোসল সুন্নত। কারণসমূহ হলো-
১.জুমার নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত।
২. ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত।
৩. ইহরামের জন্য গোসল করা সুন্নত।
৪. হাজীদের আরাফায় অবস্থানের সময় গোসল করা সুন্নত।
গোসলের সুন্নত পদ্ধতি
গোসলের ফরজ হওয়ার পর করনীয়: গোসলের আগে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সম্পন্ন করা। শরীরে বা কাপড়ে কোন নাপাক লেগে থাকলে তা পরিষ্কার করা। গোসলের আগে ওযু করা। পবিত্রতা অর্জন ও আল্লাহর নিকট্য লাভের উদ্দেশ্য গোসল করা। অতঃপর মাথায় পানি ঢালা, এরপর ডান কাঁধে পানি ঢালা, তারপর বা কাঁধে। এভাবে পুরো শরীর ভালোভাবে তিনবার ধৌত করা। নারীদের কানে ও নাকে অলঙ্কারাদি থাকলে তার ছিদ্রে পানি পৌঁছানো এবং আংটি, চুড়ি বা বালা ইত্যাদি নাড়াচাড়া করে ওই জায়গায় পানি পৌঁছানো। শরীরের যেসব অঙ্গে সাধারণত স্বাভাবিকভাবে সহজে পানি পৌঁছায় না; যেমন- কান, আঙ্গুলের ফাঁকা, বগলের নিচ, চোখের কিনারা ও চুলের গোড়া ইত্যাদি। ওইসব জায়গায় সযত্নে পানি পৌঁছানো।
উল্লেখ্য যে নখে নেইলপলিশ লাগানো থাকলে তা সম্পূর্ণ উঠানো ব্যতীত অজু গোসল শুদ্ধ হবে না, পানি স্পর্শ পরিপূর্ণভাবে থাকতে হবে । কাপড়ের নাপাক লেগে থাকলে তিনবার কচলে ধুতে হবে এরপর প্রতিবার ধোয়ার পর এমন ভাবে নিংড়াতে হবে, যাতে ঝুলিয়ে রেখে দিলে তা থেকে পানির ফোঁটা টপিকে না পরে। গোসলের আগে ওযু না করলেও পরে আর অজু করতে হবে না।
তবে ওযু ভঙ্গের কারণ ঘটলে অবশ্যই অজু করতে হবে এবং গোসলের পর পবিত্রতা প্রয়োজন, এমন ইবাদত যথা ‘নামাজ পড়া’ কাবা ঘর তাওয়াফ করা ও কোরআন স্পর্শ করে পড়া, যদি করে থাকেন তবে চাইলে আবার অজু করতে পারবেন। ওযু ও গোসলের পর ওই তিন আমলের কোনোটি না করলে এবং ওযু ভঙ্গের কারণ সংঘটিত না হলে দ্বিতীয়বার ওযু করা উচিত নয় এবং তা পানির অপচয় হিসেবে গণ্য হবে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে হাত মুখে পানি দেওয়া বা হাত-পা ও মুখ ধৌত করা যাবে; ওযু হিসেবে নয়।
গোসল ফরজ হওয়ার কারণ
পাঁচটি কারণে গোসল ফরজ হয়। কারণগুলো হচ্ছে-
১. স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে কিংবা পুরুষের বীর্যপাত হলে।
২. নারীদের ঋতুস্রাব অথবা পিরিয়ড হলে।
৩. সন্তান প্রসবের পর রক্তপাত বন্ধ হলে।
৪. মৃত ব্যাক্তিকে গোসল দেওয়া জীবিতদের জন্য।
৫. কোনো অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করলে।
রতিক্রিয়া, শুক্রপাত হওয়া (স্বপ্নে বা জাগরণে) এবং নারীদের ঋতুস্রাব ও প্রসবোত্তর স্রাব সমাপ্ত হওয়া। (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া, প্রথম খন্ড, পৃষ্টা: ২৭৮)। গোসল ফরজ হওয়ার পর বিনা কারণে বিলম্ব করা উচিত নয়। একবার গোসল করার পর উপরিউক্ত কারণগুলো কোনো একটি সংঘটিত হওয়ার আগ পর্যন্ত গোসল ফরজ হবে না। তবে প্রতি শুক্রবার গোসল করা সুন্নাত, উভয় ঈদের দিনে গোসল করা সুন্নত এবং বিশেষ ইবাদতের জন্য গোসল করা মুস্তাহাব। আমরা সাধারনত প্রতিদিন গোসল করে থাকি, এতে প্রবিত্রতার নিয়ত থাকলে সাওয়াব হিসেবে গণ্য হবে।
আরো পড়ুন:
রমজানের রোজা কত হিজরীতে ফরজ হয়েছে ?
রমজানের রোজা কত হিজরীতে ফরজ হয়েছে ?
ট্যাগ সমূহ : গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি,গোসলের ফরজ কয়টি ,গোসল ফরজ হওয়ার কারণ,গোসলের সুন্নত পদ্ধতি,গোসল কখন সুন্নত,গোসল কাকে বলে,গোসলের ফরজ, |