ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্তির দোয়া
ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্তির দোয়া: শয়তানের ওয়াসওয়াসা মানুষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্তির জন্য ইসলামে অনেক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণিত হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি যে, নবী করিম (সা.) নিজেও কত বেশি ইস্তেগফার করতেন। এ থেকে বোঝা যায় যে, ইস্তেগফার শুধু সাধারণ মানুষের জন্যই নয়, বরং নবী করিম (সা.) এর মতো পবিত্র ব্যক্তির জন্যও কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ইস্তেগফার মানে হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। যখনই আমরা কোনো পাপ করি বা কোনো ভুল করি, তখন আমাদের উচিত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। ইস্তেগফার করার মাধ্যমে আমরা আমাদের হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করতে পারি এবং শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি।
তওবা মানে হলো পাপ থেকে ফিরে আসা এবং ভবিষ্যতে আর সেই পাপ না করার সংকল্প করা। ইস্তেগফারের সাথে সাথে তওবা করাও খুবই জরুরি। কারণ, শুধু ক্ষমা চাওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং আমাদেরকে ভবিষ্যতে আর সেই পাপ না করার জন্যও প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নিচে ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্তির দোয়া সমূহ দেওয়া হলো-
ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্তির দোয়া
🔷আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطِنِ نَنْغْ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ.
অর্থ: শয়তান তোমাকে প্ররোচিত করলে, আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে পানাহ চাও । তিনি শোনেন, জানেন । [সুরা ফুসসিলাত: ৩৬] আল্লাহ তাআলা এখানে আমাদেরকে যে দুআ শিখিয়েছেন যে দুআ পড়তে বলেছেন, সেটি বলাই সবচেয়ে উত্তম।
🔷হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাঃ বলেন-
بانِ الشَّيْطانُ أَحَدَكُمْ فَيَقُولُ : مَنْ خَلَقَ كَذَا مَنْ خَلَقَ كَذَا حَتَّى يَقُولَ : مَنْ خَلَقَ رَبِّكَ؟ فَإِذَا بَلَغَهُ فَلْيَسْتَعِذْ بِاللَّهِ وَلْيَنْتَهِ.
অর্থ: শয়তান তোমাদের কাছে এসে এই বলে ওয়াসওয়াসা দিতে থাকবে যে, অমুক বস্তুটি কে সৃষ্টি করেছে? অমুক বস্তুটি কে সৃষ্টি করেছে? এমনকি অবশেষে সে বলে ফেলবে যে, তোমার রবকে কে সৃষ্টি করেছে? এ পর্যায়ে পৌঁছলে তোমরা আল্লাহর কাছে পানাহ চাও এবং এ কল্পনা থেকে বিরত থাকো । অন্য বর্ণনায় আছে-
لَا يَزَالُ النَّاسُ يَتَسَاءَلُونَ حَتَّى يُقَالَ : هَذَا خَلَقَ اللهُ الْخَلْقَ فَمَنْ خَلَقَ الله فَمَنْ وَجَدَ
অর্থ: মানুষ পরস্পর জিজ্ঞাসা করতে করতে এক পর্যায়ে বলে ফেলবে যে, বলে- এগুলো তো আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তাহলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? এমনটি কেউ অনুভব করলে সে যেন বলে, آمَنَا بِاللَّهِ وَبِرُسُلِهِ (আমানতু বিল্লাহ ওয়াবিরুসুলিহী) আমি আল্লাহ ও রাসুলগণের প্রতি ঈমান আনলাম। [সহিহ বুখারি: ৩২৭৬, সহিহ মুসলিমঃ ১৩৫, সুদানে আবু দাউদ: ৪৭২১, আমল: ৬৬২-৬৬৩, নাসাই, আমাল: ৬২৫, ইবনুস সুন্নি]
🔷হযরত আয়েশা রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাঃ বলেছেন-
منْ وَجَدَ مِنْ هَذَا الْوَسْوَاسِ شَيْئًا فَلَيَقُلْ امَنَّا بِاللَّهِ وَبِرُسُلِهِ ثَلَاثًا فَإِنَّ ذَلِكَ يَذْهَبْ عَنْهُ.
অর্থ: যে ব্যক্তির এই ধরনের ওয়াসওয়াসা হবে, সে যেন তিনবার آمَنَا بِاللَّهِ وَبِرُسُلِهِ (আমান্না বিল্লাহি ওয়াবিরুসুলিহী) ‘আমরা আল্লাহ ও রাসুলগণের প্রতি ঈমান এনেছি’ বলে। তাহলে তার এই ওয়াসওয়াসা দূর হয়ে যাবে। [আমাল: ৬২৪, ইবনুস সুন্নি]
আরো পড়ুন : নির্জনাবস্থায় ভয় পেলে যে দুআ পড়তে হয়
শয়তানের ওয়াসওয়াসা ও তার প্রতিকার
🔷হযরত উসমান ইবনে আবুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ حَالَ بَيْنِي وَبَيْنَ صَلَاتِي وَقِرَاءَتِي يَلْبِسُهَا عَلَى فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : ذَاكَ شَيْطَانٌ يُقَالُ لَهُ : خَتَزَبُ، فَإِذَا أَحْسَسْتَهُ فَتَعَوَّذُ بِاللَّهِ مِنْهُ، وَالْفِلْ على يسارك ثلاث . فَفَعَلْتُ ذَلِكَ . فَأَذْهَبَهُ اللهُ عَلَى.
অর্থ: আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! নামাজে কুরআন তিলাওয়াতের সময় শয়তান এসে সমস্যা সৃষ্টি করে। আল্লাহর রাসুল সাঃ বললেন, এটি ‘খিজাব’ নামক শয়তান। এমন অনুভব করলে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবে (আউজুবিল্লাহ পড়বে) এবং বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলবে। এর পর আমি এরূপ করেছি। তখন আল্লাহ তাআলা আমার থেকে তা দূর করে দিয়েছেন। [সহিহ মুসলিম ২২০৩, মুসনাদে আহমাদ: ৪/ ২১৬]
🔷হযরত আবু জুমাইল রহ. থেকে নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত, তিনি। বলেন—
سأَلْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ فَقُلْتُ مَا شَيْءٍ أَجِدُهُ فِي صَدْرِى قَالَ مَا هُوَ قُلْتُ وَاللهِ مَا أَتَكَلَّمُ بِهِ. قَالَ فَقَالَ ين أفنىءٌ مِنْ شَلَكٍ قَالَ وَضَحِكَ. قَالَ مَا نَجَا مِنْ ذَلِكَ أَحَدٌ قَالَ حَتَّى أَنزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلٌ فَإِن كلت فِي هَادٍ مِمَّا أَنزَلْنَا إِلَيَاكَ فَاسْأَلِ الَّذِينَ يَقْرَمُونَ الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكَ الْآيَةَ قَالَ فَقَالَ بِي إِذا وجدت في نفيات فيْنا فَقُل هو الأول والأخرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
অর্থ: আমি ইবনে আব্বাস রাযি.-কে জিজ্ঞাসা করি : আমি আমার মনে যা অনুভব করি, তা কি? তিনি বলেন : সেটি কি? আমি বিল : আল্লাহর কসম! আমি সে সম্পর্কে কিছু বলবো না। তিনি জিজ্ঞাসা করেন : তা কি সন্দেহ? রাবী বলেন; এরপর তিনি হাসেন এবং বলেনঃ এ থেকে কেউ-ই মুক্তি পায়নি। এমন কি মহান আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ যদি তোমার সন্দেহ থাকে, যা আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি তাহলে তোমার পূর্ব থেকে যারা কিতাব পাঠ করে আসছে তাদের জিজ্ঞাসা করো। রাবী বলেনঃ তখন ইবনে আব্বাস রাখি, আমাকে বলেন : যখন তুমি তোমার মনে সন্দেহের কিছু অনুভব করবে, তখন এ আয়াত তিলাওয়াত করবে :
هو الأول والأخرُ وَالظَّاهِرُ والبَاطِن وَهُوَ بِكُل شَىءٍ عَلِيمٌ .
উচ্চারণ: হুয়াল আউয়ালু ওয়াল আখিরু ওয়াজ্জাহিরু ওয়াল বাতিনু, ওয়া হুয়া বিকুল্লি শাইয়িন আলিম।
অর্থ: তিনি আদি, তিনি অনন্ত, তিনি প্রকাশ্য, তিনি অপ্রকাশ্য। তিনি সবকিছু জানেন। [সুনানে আবু দাউদ: ৫১১০]
আরো পড়ুন : আয়-রোজগার বাড়ার দোয়া ও আমল
ট্যাগ সমূহ : ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্তির দোয়া,ওয়াসওয়াসা রোগ থেকে মুক্তির উপায়,ওয়াসওয়াসা শয়তানের কুমন্ত্রণা pdf,নাপাকি নিয়ে ওয়াসওয়াসা,শয়তানের ওয়াসওয়াসা ও তার প্রতিকার,তীব্র ওয়াসওয়াসা,ওয়াসওয়াসা কি,ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্তির দোয়া,শয়তান থেকে বাঁচার দোয়া আরবি |