ইস্তেখারার দোয়া ও নামাজের নিয়ম

ইস্তেখারার দোয়া,ইস্তেখারার দোয়ার ছবি,ইস্তিখারার হুকুম,ইস্তেখারার দোয়া ও নামাজের নিয়ম,ইস্তিখারার আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ,এস্তেখারার নামাজ,এস্তেখারা,ইস্তেখারার দুআ

ইস্তেখারার দোয়া ও নামাজের নিয়ম

ইস্তেখারা হলো ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যার মাধ্যমে মুসলমানরা কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আল্লাহ তা’আলার সঠিক নির্দেশনা প্রার্থনা করে। ইস্তেখারার দোয়া করার মাধ্যমে মনের শান্তি পাওয়া যায় এবং সঠিক পথে চলার সহায়তা পাওয়া যায়। নিচে ইস্তেখারার দোয়া সমূহ তুলে ধরা হলো-

ইস্তিখারার আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ

ইস্তিখারার আভিধানিক অর্থ- ‘ইস্তিখারার অর্থ- কল্যাণ কামনা, সঠিক দিক-নির্দেশনা কামনা।
ইস্তিখারার পারিভাষিক অর্থ- মুবাহ ও জায়েয কাজের ব্যাপারে সন্দেহ দূরীভূত করার জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে আল্লাহ তা’আলার নিকট মঙ্গল প্রার্থনা করাকে ‘ইসতেখারা’ বলা হয়।

আরো পড়ুন : বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া

ইস্তিখারার হুকুম

ইস্তিখারার হুকুম : গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বা কাজে ‘ইস্তিখারা’ করা সুন্নাত ও মুস্তাহাব। উল্লেখ্য, ফরয ওয়াজিব কিংবা নাজায়েয কাজের জন্য ইস্তিখারা করা যাবে না যেমন- হজে যাব কি না, এরূপ বিষয়ে ইস্তিখারা করা যাবে না। বিবাহ-শাদী কোথায় করব, বিদেশ যাত্রা করব কি না? এসব বিষয়ে ইস্তিখারা করা যাবে।

এস্তেখারার নামাজ

এস্তেখারার নামাজ : হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল কাজেই আমাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দেওয়ার ন্যায় ইস্তেখারা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন-কোনো বিষয়ে তোমাদের কেউ চিন্তিত হলে সে যেন ফরয নামায ব্যতীত অতিরিক্ত দু’রাকআত নামায আদায় করে। অতঃপর দোয়া করবে।

যখন কোনো মুবাহ ও জায়েয কাজের ব্যাপারে সন্দেহ দেখা দেয় (ফরয ওয়াজিব কিংবা নাজায়েয কাজের জন্য এস্তেখারা নেই) যেমন কোথায় বিবাহ শাদী করব, বিদেশ যাত্রা করব কিনা, বা হজ্জ্বে কোনো তারিখ যাব (হজ্জ্বে যাব কিনা এরূপ এখন এস্তেখারা হয় না) ইত্যাদি বিষয়ে মন স্থির করতে না পারলে বিশেষ এক পদ্ধতিতে আল্লাহর নিকট মঙ্গল প্রার্থনা করাকে এস্তেখারা বলে।

এস্তেখারার তরীকা হলো- দুই রাকআত নফল নামায পড়ে মনোযোগের সাথে নিন্মোক্ত দুআ পাঠ করা, তারপর মনের মাঝে যে দিকে অধিক ঝোঁক সৃষ্টি হয় কিংবা যে বিষয়টা অধিক কল্যাণজনক মনে হয়, তাতে কল্যাণ নিহিত রয়েছে মনে করে সেটা করা। এক দিনে মনের অবস্থা এরূপ না হলে সাত দিন করা। তারপরও মন কোনো দিকে না ঝুঁকলে ভালো মন্দ বিবেচনা পূর্বক কাজ করে ফেললে এস্তেখারার বরকতে এবং আল্লাহর রহমতে মঙ্গল হবে।

বিঃ দ্রঃ : এস্তেখারা রাতের বেলায় করা এবং এস্তেখারার পর শয়ন করা এবং স্বপ্নের মাধ্যমেই এস্তেখারার ফল জানা যাবে-এরূপ জরুরি নয়। এস্তেখারা যে কোনো সময় করা যায়। এস্তেখারার পর শয়ন করা জরুরি নয়। জাগ্রত অবস্থায়ও তার মন যে কোনো এক দিকে ঝুঁকে যেতে পারে, আবার স্বপ্নের মাধ্যমেও কিছু জানতে পারে।

ইস্তেখারার দোয়া ও নামাজের নিয়ম

✅ হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-

كانَ رَسُولُ الله ﷺ يُعَلِّمُنَا الاِسْتِخَارَةَ كَمَا يُعَلِّمُنَا السُّورَةَ مِنَ الْقُرْآنِ يَقُولُ لَنَا « إِذَا هَمَّ أَحَدُكُمْ بِالْأَمْرِ فَلْيَرُكَعْ رَكْعَتَيْنِ مِنْ غَيْرِ الْفَرِيضَةِ وَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ وَأَنتَ عَلامُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَمَعَادِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِى فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسْرُهُ لِي وَبَارِكْ لِي فِيْهِ اللَّهُمَّ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُهُ شَرًّا لِي مِثْلَ الْأَوَّلِ فَاصْرِفْنِيْ عَنْهُ وَاصْرِفْهُ عَنِى وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ رَضْنِي بِهِ». أَوْ قَالَ « فِي عَاجِلِ أَمْرِى وَاجِلِهِ»

অর্থ : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ইস্তিখারার পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষা দান করতেন, যেমন তিনি আমাদেরকে কুরআন পাঠ শিক্ষা দিতেন। তিনি আমাদের বলতেন : যখন তোমাদের কেউ কোনরূপ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সম্মুখীন হবে, তখন এরূপ বলবে –

اللهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ وَأَنتَ عَلَامُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَمَعَادِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسْرُهُ لِي وَبَارِكْ لِي فِيْهِ اللَّهُمْ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُهُ شَرًّا با مِثْلَ الْأَوَّلِ فَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاصْرِفْهُ عَنِى وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ رَضِنِي بِهِ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্তাখিরুকা বি-ইলমিকা ওয়া আসতাকদিরুকা বি- কুদরাতিক। ওয়া আসআলুকা মিন ফাদলিকাল আজিম, ফা ইন্নিকা তাকদিরু ওয়া লা আকদিরু, ওয়া তা’লামু ওয়ালা আ’লামু, ওয়া আনতা আল্লামুল গুইয়ুব আল্লাহুম্মা ইন কুনতা তা’লামু আন্না হাযাল আমরা খাইরুন লি ফি দীনি ওয়া মাআশি ওয়া আকিবাতি আমরি। (অথবা বলেছেন: আজিলি আমরি আজিলিহ) ফাকদুরহু ওয়া ইয়াসসিরহু লি, সুম্মা বারিক লি ফিহ। ওয়া ইন কুনতা তালামু আন্না হাজাল- আমরা শাররুন লি ফি দীনি ওয়া মাআশি ওয়া আকিবাতি আমরি (অথবা বলেছেন: ফি আজিলি আমরি আজিলিহ) ফাসরিফহু আন্নি ওয়াসরিফনি আনহু, ওয়াকদুর লিয়াল খাইরা হাইসু কানা, সুম্মা আরদিনি।

অর্থ:-হে আল্লাহ! আমি মঙ্গল চাই তোমার নিকট, কেননা তুমি সর্বজ্ঞ। এবং আমি তোমার নিকট শক্তি চাই, কেননা তুমিই একমাত্র শক্তিমান । এবং তোমার মহৎ দান কামনা করি। কেননা তুমি ক্ষমতা রাখ, আমার কোন ক্ষমতা নাই। তুমি সব কিছু জান, আমি জানিনা এবং তুমিই গায়েবের সব কিছু জান । হে খোদা! যদি তুমি আমার জন্য এই কাজ মঙ্গলজনক মনে কর আমার দ্বীনের কাজে আমার জিন্দেগীতে, এবং আমার কাজের পরিণামে, তবে আমার জন্য ইহা নির্দিষ্ট করে দাও এবং সহজ করে দাও । অতঃপর এতে আমার জন্য বরকতও দান কর।

পক্ষান্তরে তুমি যদি আমার জন্য এই কাজ অমঙ্গলজনক মনে কর, আমার দ্বীনের কাজে আমার জিন্দেগীতে এবং আমার কর্মের পরিণামে তবে এই কাজ আমার নিকট হতে হটিয়ে দাও এবং আমাকে এ কাজ হতে দূরে রাখ এবং আমার জন্য মঙ্গলময় কাজ নির্দিষ্ট করে দাও যেখানেই তা থাকুক না কেন। অতঃপর আমাকে সেই কাজে রাজীও করে দাও।

এক বর্ণনায় فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي এর জায়গায় عَاجِلِ أَمْرِي وَاجِلِهِ উল্লেখ রয়েছে। তদ্রুপভাবে هَذَا الْأَمْرَ এর জায়গায় নিজের নাম নিবে, যেমন বলবে-هُذَا السَّفْرَ (এই সফরে) বা ( ِهُذَا النِّكَاحَ) এ বিবাহ ইত্যাদি । এস্তেখারার এই লম্বা দুআ মুখস্ত না থাকলে সংক্ষিপ্ত এই দুআটি পাঠ করবে- اللهُمَّ خِرْ لِي وَاخْتَرْ لِي

  • উপরোক্ত আরবীতে বর্ণিত এস্তেখারার দুআটি পড়া উত্তম, না পারলে মাতৃভাষায় ও দুআ করা যায় ।
  • এস্তেখারার নামায পড়ার সময় না পেলে শুধু দুআ পড়াই যথেষ্ট।

✅ দুর্বল সনদে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) যখন কোনো কাজ করতে ইচ্ছা করতেন, তখন বলতেন-

اللّهُمَّ خِرُلِي، وَاخْتَرْلِي.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা খিরলি ওয়াখতারলি ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমার এই কাজে কল্যাণ দান করুন এবং আমাকে উত্তম পন্থা অবলম্বনের তাওফিক দান করুন। [সুনানে তিরমিযি: ৩৫১৬]

✅ হযরত আনাস রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাঃ বলেছেন-

يَا أَنسُ إِذَا هَمَمْتَ بِأَمْرٍ فَاسْتَخِرُ رَبَّكَ فِيهِ سَبْعَ مَرَّاتٍ ثُمَّ انْظُرْ إِلَى الَّذِي سَبَقَ إِلَى قَلْبِكَ فَإِنَّ الخَيرَ فِيهِ.

অর্থ: হে আনাস! যখন কোনো কাজের সঙ্কল্প করো, তখন আল্লাহর নিকট সাতবার কল্যাণ কামনা (ইস্তেখারা) করো। এরপর মন যে দিকে ঝুঁকবে, সেটাই করবে। এতেই কল্যাণ নিহিত। [ইবনুস সুন্নি: ৫৯৮]

আরো পড়ুন :

নতুন কাপড় পড়ার দোয়া
কাপড় খোলার দোয়া ও পদ্ধতি
ঘুম থেকে উঠার দোয়া
বাথরুম থেকে বের হওয়ার দোয়া
মসজিদে প্রবেশের দোয়া
ঘুমানোর দোয়া

ট্যাগ সমূহ: ইস্তেখারার দোয়া,ইস্তেখারার দোয়ার ছবি,ইস্তিখারার হুকুম,ইস্তেখারার দোয়া ও নামাজের নিয়ম,ইস্তিখারার আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ,এস্তেখারার নামাজ,এস্তেখারা,ইস্তেখারার দুআ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top