ইতেকাফের ফজিলত

ইতেকাফের ফাজিলত, ইতেকাফের গুরুত্ব, ইতেকাফ ভঙ্গের কারণ সমূহ
ইতেকাফের ফাজিলত

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক বৃন্দ আপনাদের পড়ার সুবিধার্থে নিচে সূচিপত্র অনুযায়ী লেখা হলো-

১. ইতেকাফ অর্থ কি ?

২. ইতেকাফের নির্দেশ।

৩. ইতেকাফের উদ্দেশ্য।

৪. ইতেকাফের শর্ত সমুহ।

৫. ইতেকাফের প্রকারভেদ।

৬. ইতেকাফের ফাজিলত।

৭. ইতেকাফের গুরুত্ব।

৮. ইতেকাফের উপকারিতা।

৯. ইতেকাফের সময়-সীমা।

১০. ইতেকাফ ভঙ্গের কারণ সমূহ।

১১. ইতেকাফ ভেঙ্গে গেলে করণীয় কি ?

১২. যেসব কারণে ইতেকাফ ভাঙ্গা জায়েজ।

১৩ নারীদের ইতেকাফ।

১৪. ইতেকাফ অবস্থায় করণীয়।

উপরিউক্ত টপিক গুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো-

হযরত আয়েশা রাঃ হতে বর্ণিত; নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করবে সে দুটি ওমরা ও দুটি হজ্জ আদায় করার সওয়াব পাবে।

১.ইতেকাফ অর্থ কি ?

ইতেকাফ আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে- স্থির থাকা, আবদ্ধ থাকা, অবস্থান করা। শরীয়তের পরিভাষায়, মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন বা যেকোনো দিন দুনিয়াবী সব কার্যক্রম তথা পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মসজিদে বা ঘরে পবিত্র স্থানে ইবাদতের নিয়তে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে।

২.ইতেকাফের নির্দেশ :

ইতেকাফের ফজিলত ও উপকারিতা অনেক বেশি। কেননা ইতেকাফ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে হযরত ইব্রাহিম ও ইসমাইল আলাইহিস সালামকে নির্দেশ দিয়ে বলেন,

“আর আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইল আলাইহিস সালামকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ইতেকাফ কারী ও রুকু-সেজদা কারীদের জন্য পবিত্র রাখো। (সূরা বাকারা : ১২৫)

আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল কারিমে এ আয়াতে বাইতুল্লাহকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে ইতেকাফ করতে পারে।

৩.ইতেকাফের উদ্দেশ্য :

ইতেকাফের উদ্দেশ্য হচ্ছে- আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের একান্ত সান্নিধ্য অর্জন করা। সৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, স্রষ্টার সঙ্গে সম্পর্ক কায়েম করা। নিজেকে গুনাহ মুক্তির জন্য চেষ্টা করা। সর্বোপরি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো জামাতের সঙ্গে আদায় করা। আর রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফের বিশেষ উদ্দেশ্য হল, শবে কদরের মহান রাত্রির ফজিলত পরিপূর্ণ ভাবে পেয়ে যাওয়া। কারণ, শবে কদরের রাত সুনির্ধারিত নয়।

দুনিয়াবী ঝামেলা থেকে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হয়ে, বিনয় ও নম্রতায় নিজেকে আল্লাহর দরবারে সমর্পণ করা এবং বিশেষ করে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করার সুযোগ লাভ করাই ইতেকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, “আমি লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য ও মহিমা অনুসন্ধানে প্রথম ১০ দিন ও মাঝের ১০ দিন ইতেকাফ করেছি। অবশেষে আমার কাছে একজন ফেরেশতা এসে বললেন, তা শেষ দশকে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারা ইতেকাফ করতে চায়; তারা যেন শেষ দশকে এতেকাফ করে। অতঃপর সাহাবায়ে কেরাম তার সঙ্গে শেষ দশকে ইতেকাফ করলেন। (মুসলিম)

৪.ইতেকাফের শর্ত সমূহ :

ইতেকাফের শর্ত গুলো হল :-

১. নিয়ত করা।

২. জামাত অনুষ্ঠিত হয় এমন মসজিদে ইতেকাফ হতে হবে।

৩. ইতেকাফ কারী রোযাদার হবে।

৪. জ্ঞান সম্পন্ন মুসলমান হওয়া।

৫. স্ত্রী পুরুষের জানাবাত ও মহিলারা হায়েজ-নেফাস হতে পাক হওয়া।

৬. সর্বদা পবিত্র অবস্থায় থাকা।

৫.ইতেকাফের প্রকারভেদ :

ইতেকাফ ৩ প্রকার। যথা,

১. ওয়াজিব ইতেকাফ।

২. সুন্নত ইতেকাফ।

৩. নফল ইতেকাফ।

১. ওয়াজিব ইতেকাফ : মান্নতের ইতেকাফ কে ওয়াজিব ইতিকাফ বলে। কেউ যদি ইতেকাফ করার জন্য মানত করে তবে তাকে তা পূরণ করতেই হবে।

কারণ, আল্লাহ তা’আলা বলেন- “তারা যেনো তাদের মানত পূর্ণ করে।” (সূরা হজ্জ : ২৯)

২. সুন্নাত ইতেকাফ : রমজানের শেষ ১০ দিন যে ইতেকাফ করা হয় তাকে সুন্নত ইতেকাফ বলে। যা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ করেছেন। সুন্নাত ইতেকাফ রোজা পালনরত অবস্থায় করতে হয়।

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রত্যেক রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করতেন। এরপর তার পবিত্র স্ত্রীগণ ইতিকাফ করতেন। (বুখারী : ১/২৭১)

নফল ইতেকাফ : রমজানের শেষ ১০ দিন ছাড়া অন্য যেকোনো সময় যে ইতেকাফ করা হয় তাকে নফল ইতেকাফ বলে। এটি বছরে যেকোনো সময়ে, যে কোন মাসে, যে কোন দিনে করা যায়। তবে এই ইতেকাফের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক নয়।

৬.ইতেকাফের ফজিলত :

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসের শেষ দশকে ইতেকাফ করবে, তার নামে দুটি কবুল হজ্জ এবং ওমরাহর সওয়াব লেখা হবে। (বায়হাক্বী)

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “যে ব্যক্তি খালেছ নিয়তে ইতেকাফ করবে তার পূর্ববর্তী সকল সগিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও সর্বদা ইতেকাফ করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের কেউ ইতেকাফের প্রতি উৎসাহিত করতেন।

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, ইতেকাফকারী গুনাহ থেকে মুক্ত থাকে। তার সব নেক আমল এমনভাবে লিপিবদ্ধ হতে থাকে, যেমন ভাবে তিনি পূর্বে আমল করতেন। (ইবনে মাজাহ, মিসকাত) অর্থাৎ সে ইতেকাফের বাহিরে থাকতে যেসব ভালো কাজ করতো, যা তার ইতেকাফ থাকার কারণে করতে পারছে না, সেসব আমল আগের মতোই লিপিবদ্ধ হতে থাকবে।

আম্মাজান হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো। (বুখারী : ২০২০)

ইতেকাফের ফজিলত বর্ণনায় হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন ইতেকাফ করবে; আল্লাহ তা’আলা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন পরীখা পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি করবেন; যার দূরত্ব দুই দিগন্তের দুরুত্ব থেকে বেশি দূরত্ব হবে। ( কানযুল উম্মাল : ২৪০০৬)

রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের ইতেকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অর্থাৎ মহল্লার যেকোনো একজন ইতেকাফ করলে পুরো মহল্লা বাসীর পক্ষ থেকে ইতেকাফ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু মহল্লার একজন ব্যক্তিও যদি ইতেকাফ না করে তবে মহল্লার সবার সুন্নত পরিত্যাগের গুনাহ হবে। (দুররুল মুখতার : ২/৪৪০)

৭.ইতেকাফের গুরুত্ব :

ইতেকাফ কারী লাইলাতুল কদরের মর্যাদা লাভ করতে পারবে। কেননা, রমজানের শেষ দশকের রাতগুলোর মাঝে যেকোনো একটিতে লাইলাতুল কদর রয়েছে। আর লাইলাতুল কদরের ইবাদত হাজার মাস তথা ৮৩ বছর চার মাস ইবাদত করার চেয়েও উত্তম। সুতরাং যে ব্যক্তি শেষ দশকে ইতেকাফ করবে, তার প্রতিটি মুহূর্ত যেহেতু ইবাদত হিসেবে গণ্য হচ্ছে, ফলে সে লাইলাতুল কদর পেয়ে যাচ্ছেন। এ রাতের সমান মর্যাদা লাভ করতে পারছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির আশা নিয়েই ইতেকাফ করতেন।

২০ রমজানুল মোবারক সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগে থেকে ২৯ অথবা ৩০ রমজান অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার সূর্যাস্ত পর্যন্ত পুরুষদের জন্য মসজিদে এবং নারীদের জন্য নিজ গৃহে নামাজের নির্ধারিত স্থানে নিয়মিত একাধারে অবস্থান করতে হয়।

৮.ইতেকাফের উপকারিতা :

ইতেকাফের ওসিলায় অনেক পাপাচার ও গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকা যায়। কেননা, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহর ঘর যেন একটি প্রকৃত দুর্গ। তাছাড়া ইতেকাফ কারীর অবসর সময়ে কোন আমল না করলেও তার দিনরাত ইবাদত হিসাবেই গণ্য হয়। ইতেকাফ দ্বারা দুনিয়ার সব ঝামেলা ও সমস্যা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়। ঝামেলা ও সমস্যা মুক্ত সময়ে নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহ তায়ালার কাছে সঁপে দেওয়া যায়।

রোজার কারণে সারাদিন রোজা পালন ফেরেশতাদের সাথে মানুষের সামঞ্জস্য হয় এবং ফেরেশতাসুলভ আচরণের উপর অবিচল থাকার চমৎকার প্রশিক্ষণ হাসিল হয়। রোজার যাবতীয় আদব ও হক যথাযথ আদায় করে পরিপূর্ণ রোজা আদায় করার জন্য ইতেকাফ অত্যন্ত কার্যকর।

সর্বোপরী ইতেকাফ কারী ব্যক্তি মসজিদে অবস্থান করার ফলে স্বাভাবিক সময়ে যেসব আমল করতে অক্ষম, সেসব আমলেরও সওয়াব পায় ইতেকাফকারী। যেমন- জানাজায় শরিক হওয়া, অসুস্থদের সেবা করা ইত্যাদি আমল না করলেও তার সওয়াবের অংশীদার হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করে থাকে।

সুতরাং মুমিন মুসলমান রোজাদারের উচিত রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফে অংশগ্রহণ করা। কেননা রমজানের ইতেকাফ পালন যেমন মহান আল্লাহর নির্দেশ আবার প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাসনুন ইবাদতও বটে। তাই আমাদের উচিত কদর রাত্রি লাভের জন্য হলেও ইতেকাফে অংশগ্রহণ করা।

৯.ইতেকাফের সময়-সীমা :

নফল ইতেকাফ সামান্য সময়ের জন্যও হতে পারে। যদি কোন ব্যক্তি এক মিনিট কিংবা অর্ধ মিনিটের জন্য ইতেকাফের নিয়ত করে মসজিদে অবস্থান করে, তাহলে তা ইতেকাফ বলে গণ্য হবে। আর সুন্নত ইতেকাফের সময় হল, রমজানের ২০ তারিখের সূর্যাস্তের পর থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত। আর ওয়াজিব ইতেকাফের ন্যূনতম সময় হলো একদিন। একদিনের কম সময়ের জন্য ইতেকাফের মান্নত করা সহিহ নয়। একদিনের বেশি যতদিন ইচ্ছে ততো দিনেতে ইতেকফ এর মান্নত করা যাবে। তবে যেসব দিনে রোজা রাখা হারাম ওইসব দিনে ইতেকাফের মানত করা জায়েজ নেই । কারণ মান্নতের ইতেকাফের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক। রোজা রাখা ব্যতীত মন্নতের ইতেকাফ আদায় হবে না।

১০.ইতেকাফ ভঙ্গের কারণ :

১. যেসব জরুরতের কারণে মসজিদ থেকে বের হওয়া যায়, সেসব ক্ষেত্রে বের হয়ে বাহিরে সেই জরুরত ছাড়া একটু বেশি সময় অবস্থান করলে।

২. শরীয় জরুরত ছাড়া মসজিদ থেকে বের হলেই ইতেকাফ ভেঙে যাবে। তা ইচ্ছা করে হোক অথবা ভুল করে।

৩. ইতিকাফ কারী ব্যক্তি মসজিদের সীমানা মনে করে বের হয়েছে, পরে জানতে পারলো এটা মসজিদের সীমানার বাহিরে ছিল তাহলে সেক্ষেত্রে ও ইতেকাফ ভেঙ্গে যাবে।

৪. ইতিকাফের জন্য রোজা শর্ত। তাই কেউ যদি রোজা ভেঙ্গে ফেলে তাহলে তার ইতেকাফ ও ভেঙ্গে যাবে।

৫. স্ত্রী সহবাস করলে।

৬. স্ত্রীকে চুমু বা স্পর্শ করলে যদি মজি বের হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে ইতেকাফ ভেঙে যাবে।

যেসব কারণে ইতেকাফ ভেঙে যায় এবং কাজা আদায় করা ওয়াজিব হয়; সেসব কারণে নফল ইতেকাফ ও ভেঙে যায়। তবে নফল ইতেকাফের ক্ষেত্রে যেহেতু কোন সময়সীমা নির্ধারণ নেই, তাই তার কাজা আদায় করতে হবে না।

১১.ইতেকাফ ভেঙ্গে গেলে করণীয় :

১. কোন ব্যক্তির যদি সুন্নত ইতেকাফ ভেঙে যায় তাহলে সেই ব্যক্তি শুধু ওই দিনের ইতেকাফ কাজা করবে। পুরো ১০ দিনের কাজা আদায় করতে হবে না। তবে যেদিন কাজা আদায় করবে সেদিন রোজাও রাখতে হবে।

২. কোন কারনে ইতেকাফ ভেঙে গেলে তার উচিত মসজিদ এই অবস্থান করা। সুন্নত ইতিকাফ না হলেও নফল ইতেকাফের ফজিলত পাওয়া যাবে।

১২.যেসব কারণে ইতেকাফ ভাঙ্গা জায়েজ :

১. ইতেকাফ কারী যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তার চিকিৎসা মসজিদের বাইরে যাওয়া ছাড়া সম্ভব নয়; তবে তার জন্য ইতেকাফ ভেঙ্গে দেওয়ার অনুমতি আছে।

২. বাইরে কোন লোক পানিতে ডুবে যাচ্ছে অথবা আগুনে দগ্ধ হচ্ছে; তাকে বাঁচানোর আর কেউ নেই। অনুরূপ কোথাও আগুন লেগেছে, নেভানোর কেউ নেই, অন্যের প্রাণ বাঁচানো এবং আগুন নেভানোর জন্য ইতেকাফ কারীর ইতিকাফ ভেঙ্গে দেওয়ার অনুমতি আছে।

৩. যদি জোরপূর্বক মসজিদ থেকে ইতিকাফ কারীকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে ইতেকাফ ভেঙে দেওয়া জায়েজ। সেরুপ ইতেকাফ কারীর যদি এমন সাক্ষ্য দেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে, যা শরীয়ত অনুযায়ী তার জন্য ওয়াজিব; সেরূপ সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ইতেকাফ ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি আছে।

৪. বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তান-সন্তানি কঠিন অসুস্থতার কারণে ইতেকাফ ভেঙ্গে দেওয়া জায়েজ। তেমনি পরিবারের কোন প্রাণ, সম্পদ বা ইজ্জত আশঙ্কার সম্মুখীন হলে এবং ইতেকাফ অবস্থায় তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলে, ইতেকাফ ভেঙে দেওয়া জায়েজ। এছাড়া যদি কোন জানাজা হাজির হয় এবং জানাজা করার কেউ না থাকে তখন জানাজার ইমামতির জন্য ইতেকাফ ভেঙে দেওয়া যায়। (ফতহুল কবীর)

১৩.নারীদের ইতেকাফ :

ইতেকাফের ফজিলত শুধু পুরুষদের জন্য নির্ধারিত নয়। মহিলাদের জন্য ও রয়েছে এর ফজিলত। তবে তাদের ইতেকাফ পালনের ক্ষেত্রে নিয়ম একটু আলাদা নিচে তা নিয়ে আলোচনা করা হলো-

১. মহিলারা মসজিদে ইতিকাফ করতে পারবে না। তারা ঘরের একটি জায়গাকে ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করে সেখানে অবস্থান করবে।

২. বিবাহিত মহিলা হলে স্বামীর অনুমতি নিয়ে ইতকাফ করতে হবে।

৩. মাসিক দিনগুলো থেকে পবিত্র হয়ে ইতেকাফে বসতে হবে। অর্থাৎ মহিলারা খেয়াল করবে যে ইতেকাফের দিনগুলোতে তার মাসিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা।

৪. কোন মহিলা ইতেকাফ শুরু করে দেওয়ার পর মাসিক শুরু হলে, ওই দিনের ইতেকাফ ভেঙ্গে যাবে এবং সেদিনের ইতেকাফ কাজা আদায় করতে হবে।

৫. মহিলা ঘরের যেই জায়গায় ইতেকাফে বসবে, সেই জায়গা তার জন্য মসজিদের হুকুম হবে। সুতরাং কোন শরীয় বা একান্ত মানবীয় জরুরত ছাড়া সেখান থেকে বের হলে তার ইতেকাফ ভেঙে যাবে।

৬. পুরুষদের জন্য যেসব কারণে মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েজ আছে, তেমনি ভাবে সেই সব কারণে মহিলাদের জন্য ঘরের সেই নির্দিষ্ট জায়গা থেকে বের হওয়া জায়েজ আছে। যেসব কাজ করলে পুরুষদের ইতেকাফ ভেঙে যায় একজন ইতেকাফকারী মহিলা সেইসব কাজ করলেও তার ইতেকাফ ভেঙে যাবে।

১৪.ইতেকাফ অবস্থায় করণীয় :

ইতেকাফ অবস্থায় ভালো এবং নেক কথা বলা। অতিরিক্ত কথাবার্তা না বলা। বেকার বসে না থেকে নফল নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত করা এবং তাসবিহ তাহলিলে মুশগুল থাকা। ইতেকাফ অবস্থায় বিশেষ কোনো ইবাদত নেই। তাই যেকোন ইবাদত মন চাইলে করা যাবে।

আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে এই রমজানেই সুন্নত ইতেকাফ করার তাওফিক দান করুক। (আমিন)

ট্যাগ সমূহ : ইতেকাফের ফাজিলত ইতেকাফ অর্থ কি,ইতেকাফের নির্দেশ, ইতেকাফের উদ্দেশ্য,ইতেকাফের শর্ত সমুহ,ইতেকাফের প্রকারভেদ,ইতেকাফের ফাজিলত,ইতেকাফের গুরুত্ব,ইতেকাফের উপকারিতা,ইতেকাফের সময়-সীমা,ইতেকাফ ভঙ্গের কারণ সমূহ,ইতেকাফ ভেঙ্গে গেলে করণীয় কি,যেসব কারণে ইতেকাফ ভাঙ্গা জায়েজ,নারীদের ইতেকাফ,ইতেকাফ অবস্থায় করণীয়,ইতেকাফের গুরুত্ব,ইতেকাফের গুরুত্ব,ইতেকাফের শর্ত ইতেকাফ ভঙ্গের কারণ,যেসব কারণে ইতেকাফ ভাঙ্গা জায়েজ,ইতেকাফের ফজিলত,ইতেকাফের গুরুত্ব,ইতেকাফ ভঙ্গের কারণ,ইতেকাফ ভঙ্গের কারণ,যেসব কারণে ইতেকাফ ভাঙ্গা জায়েজ।
ইতেকাফের ফাজিলত

আরো পড়ুন :

মাহে রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি

শবে কদরের ফজীলত ও আমলসমূহ

তারাবি নামাজ কত রাকাত ?

ভুল করে খেয়ে ফেললে কি রোজা হবে ?

রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top