হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর জীবনী
মহানবী (স)-এর অগণিত সাহাবীর মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) অন্যতম। তিনি ইসলামের খেদমতে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিম্নরূপ-
১. নাম ও পরিচিতি :
তাঁর নাম আবদুল্লাহ, কুনিয়াত আবু আবদুর রহমান আল হুযালী, পিতার নাম মাসউদ, মাতার নাম ইবনে আবদ। তিনি একজন বিশিষ্ট সাহাবী ছিলেন।
২. জন্মগ্রহণ :
তিনি হিজরতের প্রায় ২৮ বছর পূর্বের কোনো এক শুভলগ্নে জন্মগ্রহণ করেন।
৩. বংশধারা :
তাঁর বংশ পরম্পুরা হলো, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ইবনে গাফির ইবনে হাবীব ইবনে শামাখ ইবনে মাখযুম ইবনে সাহেল ইবনে কাহিল ইবনে হারিস ইবনে সাদ ইবনে হুযাইল ইবনে মুদরিক ইবনে ইলিয়াস ইবনে নাজ্জার ইবনে সাদ ইবনে আদনান।
৪. ইসলাম গ্রহণ :
তাঁর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে কয়েকটি অভিমত পরিলক্ষিত হয়। যেমন-
ক. মুসতাদরাকে হাকেম ও ইবনে সাদের মতে, মহানবী (স) দারুল আরকামে প্রবেশের পূর্বেই তিনি ইসলামে দীক্ষিত হন।
খ. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) নিজেই বলতেন, ‘আমি ষষ্ঠ মুসলিম হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি।’
গ. ঐতিহাসিক মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (র)-এর মতে, মুসলমান।
ঘ. সিয়ারে আলামু নুবালা গ্রন্থকারের মতে, তিনি ১৭তম মুসলমান।
ঙ. ‘আল হাদীস ওয়াল মুহাদ্দিসুন’ গ্রন্থের বর্ণনানুসারে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) সাঈদ ইবনে যায়েদ (রা)-এর মুসলমান হওয়ার সময় মুসলমান হন। আর তিনি হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব তিনি ৩৩তম (রা)-এর পূর্বে মুসলমান হয়েছিলেন।
৫. হিজরত :
তিনি ইসলাম গ্রহণের পর মক্কায় প্রকাশ্যভাবে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেছিলেন। যার জন্য কুরাইশরা তাঁর প্রতি নির্মমভাবে অত্যাচার নির্যাতন চালায়। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রথমে আবিসিনিয়া পরে মদিনায় হিজরত করেন।
৬. যুদ্ধে অংশগ্রহণ :
ইবনে মাসউদ (রা) বদর ও উহুদ যুদ্ধসহ বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। হোনাইন যুদ্ধে তিনি বিশেষ বীরত্ব প্রদর্শন করেন। হযরত ওমর (রা)-এর যুগে সংঘটিত ঐতিহাসিক ইয়ারমুক যুদ্ধেও তিনি অংশগ্রহণ করেন।
৭. রাসূল (স)-এর খেদমত :
ইসলাম গ্রহণের পর মহানবী (স) তাঁকে নিজ পরিবারের মধ্যে শামিল করে নেন। এমনকি তাঁকে তাঁর আপনজনের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। নতুন কোনো আগন্তুক আসলে ইবনে মাসউদ (রা)-কে মহানবী (স)-এর পরিবারের সদস্য মনে করত। তিনি ছিলেন মহানবী (স)-এর বিশেষ খাদেম। রাসূল (স)-এর একান্ত গোপনীয় ব্যাপার সম্পর্কেও তিনি ওয়াকিফহাল ছিলেন । তিনি ছিলেন মহানবী (স)-এর সফরসঙ্গী। তাঁর মিসওয়াক, পাদুকা মুবারক, বিছানা, অযুর পানি ইত্যাদি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)-এর দায়িত্বে থাকত । তাই তিনি صَاحِبُ النَّعْلِ وَالطُّهُورِ وَالْوِسَادَةِ উপাধিতে ভূষিত ছিলেন। হযরত আবু মুসা আশয়ারী (রা) বলেন, আমি এবং আমার ভাই ইয়েমেন থেকে মক্কায় গিয়ে তাঁকে মহানবী (স)-এর পরিবারভুক্ত লক্ষ্য করেছি।
৮. দৈহিক গঠন :
দৈহিক গঠনের দিক থেকে তিনি অত্যন্ত হালকা-পাতলা ছিলেন। আর তিনি এত অধিক লম্বা ছিলেন যে, বসলেও সাধারণ মানুষের দাঁড়ানোর সমান দেখা যেত।
৯. সরকারি দায়িত্ব পালন :
তাঁকে হযরত ওমর (রা) কুফার শিক্ষক নিযুক্ত করেন এবং মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করেন। দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা) কুফাবাসীদের নিকট এ মর্মে পত্র লিখেন-
بعثت إلـيـكـم عـمّـارا اميرا وعبد الله بن مسعود معلما ووزيرا وهما من النجباء من أصحاب رسول الله (ص) ومن أهل بدر . فاقتدوا بهما وقد أثرتكم بعبد الله على نفسی ۔
অর্থাৎ, আমি তোমাদের নিকট হযরত আম্মারকে আমীর এবং আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)-কে শিক্ষক ও মন্ত্রী নিযুক্ত করে প্রেরণ করলাম। তাঁরা উভয়ই রাসূলুল্লাহ (স)-এর সম্মানিত সাহাবী এবং বদরী সাহাবী। অতএব তাদের অনুসরণ কর। আর আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)-কে আমার নিজের ওপর তোমাদের জন্য প্রাধান্য দিয়েছি।
কোনো কোনো বর্ণনা মতে, তাঁকে কুফার প্রধান বিচারপতি ও বায়তুল মালের তত্ত্বাবধায়ক পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল । হযরত ওসমান (রা)-এর সময়ও তিনি এ পদে বহাল ছিলেন।
১০. হাদীস বর্ণনা :
হাদীসশাস্ত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি রাসূল (স) হতে সর্বমোট ৮৪৮টি হাদীস বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে বুখারী ও মুসলিমে ৬৮, এককভাবে বুখারীতে ২১ আর মুসলিমে ৩৫টি হাদীস লিপিবদ্ধ হয়েছে। হাদীস শিক্ষার ব্যাপারে তিনি ছিলেন অত্যন্ত আগ্রহী, তীক্ষ্ণ ধীশক্তিসম্পন্ন এবং দুনিয়াবিমুখ ও নবীপ্রেমিক।
১১. তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনাকারীগণ :
অসংখ্য সাহাবী ও তাবেয়ী তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। সাহাবীগণের মধ্যে রয়েছেন- হযরত আবু মুসা আশয়ারী, ইমরান ইবনে হোসাইন, ইবনে আব্বাস, ইবনে ওমর, জাবের, আনাস, ইবনে যোবায়ের, আবু সাঈদ খুদরী, আবু হোরায়রা, আবু রাফে (রা) প্রমুখ। আর তাবেয়ীগণের মধ্যে আলকামা, আবু ওয়ায়েল আসওয়াদ, মাসরূক, ওবায়দা, কায়েস ইবনে আবু হাযেম (র) প্রমুখ ।
১২. চারিত্রিক মাধুর্য :
তিনি বাহ্যিক আচরণ এবং চাল-চলনে ছিলেন মহানবী (স)-এর সদৃশ। আর ন্যায় নিষ্ঠা, দক্ষতা ও বিচক্ষণতার এক জীবন্ত প্রতীক। মহানবী (স) তাঁর জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দান করেন। মহানবী (স) একদা বলেন, ‘উম্মে আবদের পুত্র তথা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) আমার উম্মতের জন্য যা পছন্দ করে আমিও তা পছন্দ করি। আর যা সে অপছন্দ করে আমিও তা অপছন্দ করি । তিনি একজন বড় মুহাদ্দিস, ফিকহবিদ ও মুফাসসির ছিলেন। মহানবী (স) তাঁর কুরআনের জ্ঞানের সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন- خُذُوا القرأن من اربعة مِنْ عَبْدِ اللهِ وَسَالِيم مَولى أبي حذيقَةً وَمُعَادٍ وَأَبَى بن كعيب অর্থাৎ, চারজন থেকে কুরআন শিক্ষা কর । তাঁরা হলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, সালেম, মুয়ায ও উবাই ইবনে কাব (রা)। বিশেষ করে ফিকহশাস্ত্রে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়।
১৩. ইন্তেকাল :
তিনি ৩২ হিজরীতে ৬০-এর অধিক বয়সে মদিনা অথবা কুফা নগরীতে ইন্তেকাল করেন। অধিকাংশের মতে, তিনি মদিনায় ইন্তেকাল করেন। তাঁকে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়।
আরো পড়ুন :
মুয়াজ ইবনে জাবাল রাঃ এর জীবনী
হযরত আবু যর গিফারী রাঃ এর জীবনী
হযরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ (রা) এর জীবনী
হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব রাঃ এর জীবনী
হযরত জাবের ইবনে আতীক রাঃ এর জীবনী
হযরত জোবায়ের ইবনে মুতয়িম রাঃ এর জীবনী
হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ আল জুহানী রাঃ এর জীবনী
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাঃ এর জীবনী
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর জীবনী
হযরত আবু মুসা আশয়ারী রাঃ এর জীবনী
হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাঃ এর জীবনী
হযরত সাহল ইবনে হানযালা রাঃ এর জীবনী
হযরত হাকেম ইবনে হাযম রাঃ এর জীবনী
ট্যাগ সমূহ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর জীবনী,হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ,হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর জীবনী,আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ,আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর জীবনী,আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী,হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর জীবনী,হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর জীবনী,hazrat abdullah ibn masud,hazrat abdullah ibn masood urdu,hazrat abdullah ibn masood,আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ,আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী,আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর জীবনী,হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর জীবনী, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর হাদিস |