আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাঃ এর জীবনী

আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস,আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাঃ এর জীবনী,আব্দুল্লাহ ইবনে আমর,আমর ইবনুল আস এর জীবনী,আমর ইবনুল আস,আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ এর জীবনী,আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ,
আবদুল্লাহ ইবনে আমর

আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাঃ এর জীবনী

হাদীসশাস্ত্রে যে সকল বাবী অসামান্য অবদান রেখেছেন, তন্মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) অন্যতম। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট সাহাবী ও কূটনীতিক। তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী নিম্নরূপ-

১. নাম ও পরিচিতি :

তাঁর নাম আবদুল্লাহ, উপনাম আবু মুহাম্মদ। পিতার নাম আমর ইবনুল আস । মাতার নাম রীতা বিনতুল তাঁদের পিতা পুত্রের বয়সের মুনাব্বিহ। তাঁর পিতা তাঁর চেয়ে ১৩, মতান্তরে ১২ বছরের বড় ছিলেন। আল্লামা ওয়াকেদী (র) বলেন, ব্যবধান ছিল দশ বছর।

২. বংশধারা :

তাঁর বংশধারা হলো, আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস ইবনে ওয়ায়েল ইবনে হিশাম ইবনে সুয়াইদ ইবনে সাহাম ইবনে আমর ইবনে হোসাইন ইবনে কাব ইবনে লুয়াই ইবনে গালিব আল করশিস সাহমী। তাঁরা কুরাইশ বংশের একটি শাখা বংশ।

৩. ইসলাম গ্রহণ :

তিনি স্বীয় পিতা আমরের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন একজন সুদক্ষ কূটনীতিক।

৪. জেহাদে অংশগ্রহণ :

পিতা ও পুত্র উভয়ই মক্কা বিজয়ের পূর্বে মদিনায় হিজরত করেন। মহানবী (স)-এর জীবদ্দশায় প্রায় সকল যুদ্ধে তাঁর পিতা স্বীয় নেতৃত্বের ঝাণ্ডা পুত্র আবদুল্লাহর হাতে তুলে দেন। সিফফীন যুদ্ধে পিতার চাপে হযরত মুয়াবিয়া (রা)-এর পক্ষ অবলম্বন করেন। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার কারণে তিনি আমরণ অনুশোচনা করেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, “হায় আমি যদি এ যুদ্ধের দশ বছর পূর্বে ইন্তেকাল করতাম!”

৫. গুণাবলি :

তিনি ছিলেন একজন বড় আবেদ, আলেম এবং হাফেযে কুরআন। তিনি মহানবী (স)-এর কাছে হাদীস লিপিবদ্ধ করে রাখার অনুমতি প্রার্থনা করলে, নবীজী তাঁকে অনুমতি প্রদান করেন। ইয়ালা ইবনে আতা স্বীয় মাতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি (তাঁর মাতা) আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা)-এর জন্য সুরমা প্রস্তুত করতেন। কেননা তিনি স্বীয় প্রভুর সান্নিধ্য লাভের নিমিত্ত রাতভর ইবাদতে মগ্ন থাকতেন এবং বাতি নিভিয়ে এত অধিক কান্নাকাটি করতেন যে, তার চক্ষুদ্বয়ের পালকসমূহ পড়ে গিয়ে চোখের কোঠা নষ্ট হয়ে গেছে।

তিনি প্রত্যেক রাত ইবাদতে এবং দিনের বেলা রোয়ায় কাটাতেন। এমনকি প্রতি রাতে কুরআন মাজীদ খতম করতেন। মহানবী (স)-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি তাকে এরূপ করতে বারণপূর্বক নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন তিন দিনের কমে পবিত্র কুরআন খতম না করেন এবং একদিন রোযা রাখেন আর একদিন রোযা ভঙ্গ করেন।

৬. হাদীসশাস্ত্রে তাঁর অবদান :

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) ছিলেন হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীগণের মধ্যে অন্যতম এবং আবদুল্লাহ নামের ফকীহগণের মধ্যেও তিনি ছিলেন অন্যতম। তাঁর বর্ণিত হাদীস সংখ্যা ৭০০ মতান্তরে ৬০০। ইমাম বুখারী ও মুসলিম (র) যৌথভাবে বর্ণনা করেছেন ১৭টি। ইমাম বুখারী এককভাবে ৮টি এবং ইমাম মুসলিম (র) বর্ণনা করেছেন ২০টি। কতিপয় কারণে তিনি হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে কম হাদীস বর্ণনা করেছেন। যেমন-
ক. তিনি প্রায় সময় ইবাদতে ব্যস্ত থাকতেন। খ. মক্কা বিজয়ের পর অধিকাংশ সময় তিনি মক্কা মদিনার বাইরে ছিলেন।

হাদীসশাস্ত্রে আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা)-এর অবদান সম্পর্কে নিম্নোক্ত অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে-
ক. ইমাম বুখারী (র) তার ‘ইলম’ অধ্যায়ে উপস্থাপন করেছেন যে, প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হোরায়রা (রা) বলেন- ما كان أحد أكثر حديثا عن رسول الله (ص) منى إلا ما كان من عبد الله بن عمرو فانه كان يكتب ولا أكتب . অর্থাৎ, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ব্যতীত মহানবী (স) থেকে আমার চেয়ে বেশি হাদীস কেউ আহরণ করতে পারেনি। কেননা তিনি লিখতেন এবং আমি লিখতাম না।

খ. অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তিনি মহানবী (স) থেকে যা শুনতেন তা লিখে রাখতেন।
গ. হযরত মুজাহিদ (র) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমরের নিকট একটি পাণ্ডুলিপি দেখে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কী? উত্তরে তিনি বললেন, এটা হলো ‘সাদেকা’ নামক গ্রন্থ। এতে ঐসব হাদীস রয়েছে যা আমি মহানবী (স) থেকে সরাসরি শুনেছি।

৭. যাঁদের থেকে তিনি হাদীস বর্ণনা করেছেন :

তিনি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর, আবুদ দারদা, মুয়ায ও আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা) প্রমুখ সাহাবীগণের নিকট থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৮. তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনাকারীগণ :

তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনাকারীগণের মধ্যে আবু উমামা, মিসওয়ার, সায়েব ইবনে ইয়াযিদ, আবুত তুফায়েল, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব, আবু সালামা, আতা, মুজাহিদ, ওরওয়া প্রমুখ ছিলেন অন্যতম।

৯. ইন্তেকাল :

তাঁর ইন্তেকালের স্থান ও সন সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। যেমন-
ক. কেউ কেউ বলেন, তিনি হিজরী ৬৩ সনে মদিনায় ‘হাররা’ যুদ্ধকালে কোনো এক রাতে ইন্তেকাল করেন।
খ, কেউ বলেন, ৭৩ হিজরীতে অথবা ৬৭ হিজরীতে অথবা ৫৫ হিজরীতে তায়েফে ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি রাসূল (স)-এর ইন্তেকালের পর ৫৩ বছর জীবিত ছিলেন।

আরো পড়ুন :

হযরত আব্বাস রাঃ এর জীবনী

হযরত মায়মুনা রাঃ এর জীবনী

হযরত ওমর রাঃ এর জীবনী

হযরত আয়েশা রাঃ এর জীবনী

আবু হুরায়রা রাঃ এর জীবনী

হযরত আবু বকর রা: এর জীবনী

হযরত ওসমান রাঃ এর জীবনী

হযরত আলী রাঃ এর জীবনী 

মুয়াজ ইবনে জাবাল রাঃ এর জীবনী

হযরত আবু যর গিফারী রাঃ এর জীবনী

হযরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ (রা) এর জীবনী

হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব রাঃ এর জীবনী

হযরত জাবের ইবনে আতীক রাঃ এর জীবনী

হযরত জোবায়ের ইবনে মুতয়িম রাঃ এর জীবনী

হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ আল জুহানী রাঃ এর জীবনী

ট্যাগ সমূহ : আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস,আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাঃ এর জীবনী,আব্দুল্লাহ ইবনে আমর,আমর ইবনুল আস এর জীবনী,আমর ইবনুল আস,আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ এর জীবনী,আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ,

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top