শিরক অর্থ কি ও শিরক কত প্রকার
মহান আল্লাহর বাণী- اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ অর্থাৎ, নিশ্চয়ই শিরক একটি মহা জুলুম। আমল বিধ্বংসী এ কাজ সৎকর্মশীলদের সকল নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। এর পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। মুশরিকের জন্য পরকালে জাহান্নাম অবধারিত। সকল নবী ও রাসূল প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য ছিল শিরক নামক ব্যাধি থেকে মানবতাকে মুক্ত করে তাওহীদের আলোতে আলোকিত করা। নিম্নে প্রশ্নালোকে এ সম্পর্কিত আলোচনা উপস্থাপন করা হলো-
শিরক শব্দের অর্থ
শিরক শব্দের অর্থ : শিরক অর্থ হচ্ছে অংশীদার সাব্যস্ত করা, সমকক্ষ মনে করা ইত্যাদি। যেমন বলা হয়- أَشْرَكَ بِاللَّهِ أَى جَعَلَ لَهُ شَرِيكًا فِي مُلْكِهِ অর্থাৎ, সে আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করেছে, অর্থাৎ তাঁর রাজত্বের ক্ষেত্রে তাঁর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করেছে।
শিরক এর সংজ্ঞা :
১. কিতাবুত তাওহীদ প্রণেতা বলেন- هو ان يدعُو مَعَ اللهِ غَيره أو يُصَرِفُ لَهُ شَيْئًا مِنْ أَنْوَاعِ الْعِبَادَةِ – الشرك অর্থাৎ, আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে আহ্বান করা অথবা ইবাদতের প্রকারসমূহ থেকে কোনো কিছুকে কারো দিকে ফিরানোকে শিরক বলে ।
২- আল্লামা রাবী ইবনে হাদী আল মাদখালী (র) বলেন, শিরক হচ্ছে আল্লাহর এমন কোনো সমকক্ষ স্থির করা, যাকে আল্লাহর মতোই ডাকা হয়, ভয় করা হয় ও তার কাছে আশা করা হয়, আল্লাহর মতোই তাকে ভালোবাসা নিবেদন করা হয়।
শিরক কত প্রকার
শিরক এর প্রকার : শিরক প্রধানত ২ প্রকার।
১. الشرك الأكبر তথা বড় শিরক। ২. اَلشِّرْكُ الْأَصْغَرُ তথা ছোট শিরক।
১.বড় শিরক হচ্ছে : الشَّرْكُ الْأَكْبَرُ هُوَ صَرْفُ شَىءٍ مِنْ اَنْوَاعِ الْعِبَادَةِ لِغَيْرِ اللّهِ . অর্থাৎ, শিরকে আকবর তথা বড় শিরক বলা হয়, ইবাদতের কোনো প্রকারকে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা ।
২. ছোট শিরক হচ্ছে : اَلشِّرْكُ الْأَصْغَرُ هُوَ مُرَاعَاهُ غَيْرِ اللهِ مَعَهُ فِي بَعْضِ الْأُمُورِ .অর্থাৎ, কোনো বিষয়ে আল্লাহর সাথে غَيْرِ اللهِ -এর প্রতি লক্ষ্য রাখা।
শিরকের বিধান :
শিরকের বিধান : মানবজীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ অধঃপতন ও ধ্বংস শিরকের মধ্যে নিহিত। কুরআন ও হাদীসের আলোকে শিরকের বিধান বা পরিণতি নিম্নরূপ-
১. শিরকের পাপ আল্লাহ ক্ষমা করেন না : তওবা তথা অনুতপ্ত হয়ে পাপ বর্জন করা সকল পাপের ক্ষমার মাধ্যম। তবে মহান আল্লাহ্ তওবা ছাড়াও সৎকাজের কারণে শাস্তির মাধ্যমে বা তাঁর অপার করুণায় অন্যসব পাপ ক্ষমা করতে পারেন। তবে শিরকের পাপ তিনি ক্ষমা করবেন না বলে পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে ঘোষণা করেন-اِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْيَركَ بِهِ وَيُغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدِ افْتَرى إِثْمًا عَظِيمًا
২. শিরক সকল পুণ্য কর্ম ধ্বংস করে : আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপনকারীদের সকল কর্ম নিষ্ফল হবে এবং পরকালে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেমন মহান আল্লাহর বাণী- وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّعَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ.
٢ـ وَمَنْ يَكْفُرْ بِالْإِيْمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الخَسِرِينَ
অর্থাৎ, কেউ ঈমানের সাথে কুফরী করলে তার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
৩. শিরক জাহান্নামের অনন্ত শাস্তির কারণ : মহান আল্লাহ অংশীবাদীদের জন্য চির শান্তির আবাস জান্নাত নিষিদ্ধ করবেন। পরিণামে তাদের জন্য তৈরি রয়েছে চির শাস্তির স্থান জাহান্নাম। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- إنه من يشرك بالله فقد حرم الله عليه الجنة ومأواه النار وما للـقـالـمـيـن مـن انـصـار
৪. শিরককারীর জানমালের বিধান : শিরককারীর জানমাল অন্যান্যদের জন্য হালাল করা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন- فاقتلوا المشركين حيث وجدتموهم وخذوهم واحضروهم واقـعـدوا لـهـم كـل مـرصـد
শিরক একটি জঘন্যতম অপরাধ। একটি শিরকের দ্বারা সারা জীবনের সমস্ত ভালো আমল নষ্ট হয়ে যায় এবং ব্যক্তি জাহান্নামের উপযুক্ত হয়ে যায়। তবে একনিষ্ঠ তওবার মাধ্যমে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সুতরাং শিরক সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভপূর্বক শিরক থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
আরো পড়ুন :
কবিরা গুনাহ থেকে মুক্তির উপায়
দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ সহ অর্থ
দোয়ায়ে মাসুরা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
কুরআন ও হাদীসের আলোকে মুনাফিকের আলামত কয়টি
ট্যাগ সমূহ : শিরকের, শিরক, শিরক কাকে বলে, শিরক অর্থ কি, শিরক থেকে বাঁচার দোয়া, শিরক কত প্রকার, শিরক শব্দের অর্থ কি, শিরক ,শিরক কয় ধরনের,শিরক থেকে বাঁচার উপায়, খোদা বলা কি শিরক,শিরকের প্রকারভেদ, শিরক কি এবং কেন,শিরক কি কি,শিরক কয় ধরনের, শিরকের গুনাহ,শিরক অর্থ কি ও শিরক কত প্রকার,শিরক অর্থ কি ও শিরক কত প্রকার,শিরক অর্থ কি ও শিরক কত প্রকার, |