
রোজার নিয়ত নিয়ে আলোচনা :
“প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল” (বুখারী : ১)। নিয়ত ছাড়া কোন কিছুই শুদ্ধ নয়। তেমনি ভাবে রোজা রাখার জন্য রোজার নিয়ত করতে হয়। আল্লাহ তা’আলা মুসলমান নারী ও পুরুষের জন্য রোজা ফরজ করেছেন।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” (সূরা বাকারা : ১৮৩)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে (অন্য বর্ণনায়) ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় তারাবির নামাজ পড়ে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারী : ১৯০১)
রোজার নিয়ত :
নিয়ত হচ্ছে অন্তরের বিষয়। মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা জরুরি নয়। কেউ যদি রোজা রাখার উদ্দেশ্যে ঘুম থেকে উঠে সেহেরী খায় তাহলে সেটা তার রোজার নিয়তের অন্তর্ভুক্ত হবে।
বাংলাদেশে রোজার একটি আরবি নিয়ত প্রসিদ্ধ, যেটা মানুষ মুখে পড়ে থাকেন। তবে একটি হাদিস ও ফিকাহের কোন কিতাবে বর্ণিত হয়নি। তবে কেউ চাইলে পড়তে পারেন। ( তবে জেনে রাখা উচিত যে, নিয়ত পড়ার চেয়ে নিয়ত করা গুরুত্বপূর্ণ)
রোজার আরবী নিয়ত :
উচ্চারণ : “নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মোবারক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম।”
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের (তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ) রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে কবুল করো। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: কেউ যদি আরবি নিয়ত মুখে উচ্চারণ না করে, কিন্তু কালকে রোজা রাখবে এই নিয়তে সেহরি খায় তাহলেও তার রোজা আদায় হয়ে যাবে।
আরবীতে বা বাংলায় রোজার নিয়ত না পড়লে যে রোজা আদায় হবে না এইরকম বিশ্বাস রাখা যাবে না।
রোজার নিয়ত করার সময় :
রোজা রাখার জন্য নিয়ত করা ফরজ। এ বিষয়টি অনেকে জানে-ই না। তাই অনেকে রোজার নিয়ত মুখে বলা বা মনে সংকল্প কোনোটি করেন না।। আবার মুখে রোজা প্রচলিত নিয়ত তথা আরবি ও বাংলা শব্দগুলো উচ্চারণ করে, অন্তরে রোজা রাখার দৃঢ়সংকল্প না থাকলে তা নিয়ত হবে না। তাই রোজা রাখার বিষয়টি অন্তরের দৃঢ় সংকল্পে থাকতে হবে।
হযরত হাফসা রাদিয়াল্লাহ আনহা বর্ণনা করেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না, তার রোজা হবে না।” (আবু দাউদ)
অনেক ইসলামী স্কলারদের মতে, দিনের দ্বিপ্রহরের আগে রোজার নিয়ত না করা হলে সে রোজা বিশুদ্ধ হবে না। এর পরও রোযাহীন অবস্থায় দিনের বাকি সময়ে পানাহার করা রমজানুল মোবারকের সম্মানের বিরোধী বলে তা জায়েজ নয়। (ফাতাওয়া দারুল উলূম)
রোজার সময় যে কাজগুলো জায়েজ :
রোজার সময় হলো- সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। কাজেই সুবহে সাদিক না হওয়া পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী সহবাস সবকিছু করা জায়েজ। অনুরূপ সূর্যাস্তের পরও উপরক্ত কাজগুলো জায়েজ।
রোযার সময় যে কাজ গুলো না জায়েয :
শেষ রাতে সেহেরী খাওয়া এবং রোজার নিয়ত করে নেওয়ার পর সুবহে সাদিক হলে পানাহার বা স্ত্রী সহবাস করা না- জায়েয । তাই কেউ যদি সুবহে সাদিকের পর সেহরি খাওয়া হয়েছে বলে মনে করেন, তাহলে সেই রোজা কাজা করতে হবে। আবার সূর্যাস্ত হয়ে গেছে মনে করে ইফতার করার পর যদি দেখা যায় যে, মূলত সূর্যাস্ত হয়নি; এ অবস্থায় বাকি সময়টুকু রোজা অবস্থায় কাটাতে হবে এবং ওই রোজার কাজা আদায় করতে হবে।
এছাড়া রোজা রাখা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস, হস্তমৈথুন, পানাহার, শিঙ্গা লাগানো ও ইচ্ছাকৃত ভাবে বমি করা ইত্যাদি কাজ সমূহ করা না জায়েজ। এর মধ্যে সব থেকে বড় রোজা নষ্টকারী বিষয় হচ্ছে সহবাস করা। যে ব্যক্তি দিনের বেলায় সেচ্ছায় স্ত্রী সহবাস করবে, তার রোজা বাতিল হয়ে যাবে। এর জন্য তাকে অবশ্যই পরবর্তীতে এই দিনের কাযা রোজা ও কাফফারা আদায় করা ফরয। দলীল হচ্ছে-
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি ধ্বংস হয়েছি। নবি করিম (সা:) বললেন, কিসে তোমাকে ধংস করলো ? সে বললো, আমি রমজানের দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করেছি। তিনি বললেন, তুমি কি একটি ক্রীতদাস আজাদ করতে পারবে ? সে বললো, না। তিনি বললেন তাহলে লাগাতার দুইমাস রোজা রাখতে পারবে ? সে বললো, না । তিনি বললেন, তাহলে ৬০ জন মিসকিন কে খাওয়াতে পারবে ? সে বললো, না। (বুখারী : ১৯৩৬)
ট্যাগ সমূহ : রোজা রাখার নিয়ত,রোজার নিয়ত বাংলা,রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া বাংলা,রোজার নিয়ত ছবি,নফল রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ, |
আরো পড়ুন :