
রোজার উপকারিতা কি
রোজার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এগুলো দু’প্রকার। যথা- ১. দুনিয়াবী তথা ইহকালীন। ২. উখরাবী তথা পরকালীন। নিম্নে এর কতিপয় উল্লেখ করা হলো। যেমন-
১. রোযার দ্বারা প্রবৃত্তির ওপর আকল তথা জ্ঞানের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ এর দ্বারা মানুষের পাশবিক শক্তি অবদমিত হয় এবং রূহানী শক্তি বৃদ্ধি পায়। কেননা ক্ষুধা ও পিপাসার কারণে মানুষের জৈবিক ও পাশবিক ইচ্ছা হ্রাস পায়। এতে মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয় এবং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি কৃতজ্ঞতায় অন্তর বিগলিত হয়।
২. রোযার দ্বারা মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয়-ভীতি এবং তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি হয়। এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- অর্থাৎ, যাতে তোমরা তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে সক্ষম হও।
৩. রোযার দ্বারা মানুষের স্বভাবে নম্রতা ও বিনয় সৃষ্টি হয় এবং মানব মনে আল্লাহর আযমত ও মহানত্বের ধারণা জাগ্রত হয়।
৪. মানুষের দূরদর্শিতা আরো প্রখর হয়।
৫. রোযার দ্বারা মানব মনে এমন এক নূরানী শক্তি সৃষ্টি হয়, যার দ্বারা মানুষ সৃষ্টির এবং বস্তুর গূঢ়রহস্য সম্বন্ধে অবগত হতে সক্ষম হয়।
৬. রোযার বরকতে মানুষ ফেরেশতা চরিত্রের কাছাকাছি পৌঁছুতে পারে।
৭. রোযার বরকতে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধ এবং পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। কেননা যে ব্যক্তি কোনো দিনও ক্ষুধার্ত ও পিপাসিত থাকেনি সে কখনো ক্ষুধার্ত মানুষের দুঃখকষ্ট বুঝতে পারে না। অপরদিকে কোনো ব্যক্তি যখন রোযা রাখে এবং উপবাস থাকে তখন সে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারে যে, যারা অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে, তারা কত দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করছে। আর তখনই অনাহারক্লিষ্ট মানুষের প্রতি তার অন্তরে সহানুভূতির উদ্রেক হয়।
৮. রোযা পালন করা আল্লাহর প্রতি গভীর মহব্বতের অন্যতম নিদর্শন। কেননা কারো প্রতি মহব্বত জন্মিলে, তাকে লাভ করার জন্য প্রয়োজনে প্রেমিক পানাহার বর্জন করে এবং সব কিছুকে ভুলে যায়। ঠিক তেমনিভাবে রোযাদার ব্যক্তিও আল্লাহর মহব্বতে দেওয়ানা হয়ে সবকিছু ছেড়ে দেয়। এমনকি পানাহার পর্যন্ত ভুলে যায়। তাই রোযা হলো, আল্লাহর মহব্বতের অন্যতম নিদর্শন।
৯. রোজা হলো মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ। তাই রোজা মানুষকে শয়তানের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
১০. রোযার দ্বারা মানুষের শারীরিক সুস্থতা হাসিল হয়। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীদের মতে, প্রত্যেক মানুষের জন্য বছরে কয়েক দিন উপবাস থাকা আবশ্যক। তাঁদের মতে, স্বল্প খাদ্যগ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। সুফী সাধকের মতে, হৃদয়ের স্বচ্ছতা হাসিলে স্বল্প খাদ্যগ্রহণের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। রোযা দেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর কারণে শরীরে চর্বি জমতে পারে না। পক্ষান্তরে মাত্রাতিরিক্ত পানাহারের ফলেই শরীরে অধিকাংশ রোগব্যাধি সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ ছাড়াও রোযার মধ্যে বহু উপকারিতা রয়েছে।
১১. ডাক্তারদের মতে, রোযার ফলে মস্তিষ্কের সেরিবেলাম ও লিমরিক সিস্টেমের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ার কারণে মনের অশান্তি ও দুশ্চিন্তা দূর হয়-যা উচ্চ রক্তচাপের জন্য মঙ্গলজনক। বহুমূত্র রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে রোযা খুব উপকারী। ডাক্তারী পরীক্ষায় দেখা গেছে, একাধারে পনেরো দিন রোজা রাখলে বহুমূত্র রোগের অত্যন্ত উপকার হয়।
১২. কিডনী সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা রোযা রাখলে এ সমস্যা আরো বেড়ে যাবে ভেবে রোযা রাখতে চান না। অথচ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, রোযা রাখলে কিডনীতে সঞ্চিত পাথর কণা ও চুন দূরীভূত হয়।
১৩. স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে, রোজা রাখার উপকারিতা হলো , সারা বছর অতিভোজ, অখাদ্য, কুখাদ্য, ভেজাল খাদ্য খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে যে জৈব বিষ জমা হয় তা দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এক মাস রোজা পালনের ফলে তা সহজেই দূরীভূত হয়ে যায়।
১৪. গবেষণায় দেখা গেছে, রোযাদার পেপটিক আলসারের রোগীরা রোযা রাখলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁপানি রোগীদের জন্যও রোযা উপকারী।
১৫. বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী নাষ্টবারনার বলেন, ‘ফুসফুসের কাশি, কঠিন কাশি, সর্দি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা কয়েকদিনের রোযার কারণেই নিরাময় হয়।’
আরো পড়ুন :
থুথু গিলে ফেললে কি রোজা ভেঙ্গে যাবে ?
ভুল করে খেয়ে ফেললে কি রোজা হবে ?
রমজানের রোজা কত হিজরীতে ফরজ হয়েছে ?
রমজান মাসে রাসূল সাঃ কি কি করতেন
ট্যাগ সমূহ : রোজার উপকারিতা,চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার উপকারিতা,রোজার উপকারিতা কি,রোজা রাখার উপকারিতা,রোজা রাখার উপকারিতা ইসলাম,রোজা রাখার উপকারিতা কি কি,রোজা রাখার উপকারিতা কি,rojar upokarita,রোজার উপকারিতা কি, রোজা উপকারিতা, rojar upokarita, রোজার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা,রোজার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা, চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার উপকারিতা, রোজার গুরুত্ব ও উপকারিতা,rojar upokarita |