মানত করা কি জায়েজ

মানত,মানত করা কি জায়েজ,মানত পূরণ না করলে কি হয়,মানত করার নিয়ম, মানতের কাফফারা,মানত কাকে বলে,মসজিদে মানত করা যাবে কি,মানত অর্থ,মানত করা,মানত কি,মানত করা কি,মানতের কোরবানি,মাজারে মানত করা কি জায়েজ, ইসলামে মানত করা কি,মসজিদে মানত করা যাবে কি, মানত করা কি জায়েজ,মানত করা in english,মানত করার নিয়ম,মানত করা কি,মানত করার নিয়ম, মানত করা এর ইংরেজি,মানত করা যাবে,মানত করা ইংরেজি,মানত করা অর্থ,মানত করার হুকুম,মানত করা অর্থ,মানতের হুকুম,মানতের হুকুম আহকাম,মানতের বিধি-বিধান,
মানত

মানত করা কি জায়েজ

মানতের বিধি-বিধান ও হুকুম-আহকাম বিস্তারিত আলোচনা করা হলো- যাতে এ ব্যাপারে মানুষ যেসব ভুল করে অথবা যেসব ভুল ধারণা মানুষের মধ্যে দেখা যায় তা থেকে আত্মরক্ষা করতে এবং এর সঠিক নিয়ম-কানুন অবহিত হতে পারে।

এক. ফিকাহ শাস্ত্রবিদগণের মতে ‘নযর’ বা মানত চার প্রকারের। ক. এক ব্যক্তি আল্লাহর সাথে ওয়াদা করলো যে, সে তাঁর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য অমুক নেক কাজ সম্পাদন করবে। খ. সে মানত করলো যে, আল্লাহ যদি আমার অমুক প্রয়োজন পূরণ করেন তাহলে আমি শুকরিয়া হিসেবে অমুক নেক কাজ করবো। এ দুই প্রকারের মানতকে ফিকাহবিদের পরিভাষায় ‘নযরে তাবাররুর’ বা নেক কাজের মানত বলা হয় এবং এ ব্যাপারে তারা একমত যে, এ নযর পূরণ করা ওয়াজিব।

গ. কোনো ব্যক্তির কোনো নাজায়েয কাজ করার কিংবা কোনো ওয়াজিব কাজ না করার সংকল্প করা। ঘ. কোনো ব্যক্তির কোনো মুবাহ কাজ করা নিজের জন্য ওয়াজিব করে নেয়া অথবা কোনো অবাঞ্ছিত কাজ করার সংকল্প করা। এ দু’প্রকারের মানকে ফিকাহবিদদের পরিভাষায় ‘নযরে লাজাজ” (মূর্খতা, ঝগড়াটেপনা ও হঠকারিতামূলক মানত) বলে । এর মধ্যে তৃতীয় প্রকারের মানত সম্পর্কে সব ফিকাহবিদদের ঐকমত্য হলো, তা মানত হিসেবে পরিগণিত হয় না। চতুর্থ প্রকারের মানত সম্পর্কে ফিকাহবিদগণ ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেছেন।

কোনো কোনো ফিকাহবিদ বলেছেন : এ মানত পূরণ করা কর্তব্য। কেউ কেউ বলেন : শপথ ভংগের কাফফারা দিতে হবে। আবার কেউ কেউ বলেন, ব্যক্তি ইচ্ছা করলে মানত পূরণ করতে পারে কিংবা কাফফারা দিতে পারে। এ ব্যাপারে তার স্বাধীনতা রয়েছে। শাফেয়ী এবং মালেকীদের মতে এ প্রকারের মানতও আদৌ মানত হিসেবে গণ্য হয় না। আর হানাফীদের মতে এ দু’ প্রকারের মানতের জন্য কাফফারা দেয়া আবশ্যিক হয়ে যায়। (উমদাতুল কারী)

দুই. কিছু সংখ্যক হাদীস থেকে জানা যায় যে, কেউ যদি মনে করে মানত দ্বারা ‘তাকদীর’ পরিবর্তিত হয়ে যাবে অথবা যে মানতে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শুকরিয়া হিসেবে নেক কাজ করার পরিবর্তে আল্লাহকে বিনিময় হিসেবে কিছু দেয়ার জন্য এভাবে চিন্তা করে যে, তিনি যদি আমার এ কাজটি করে দেন তাহলে আমি তাঁর জন্য অমুক নেক কাজটি করে দেব। তবে এ ধরনের মানত নিষিদ্ধ।

হাদীসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, أخذ رسول اللہ ﷺ بنهى عن النثر ويقول إنه لابـرد شـبـنـا وإنما يستخرج به من االبخيل ـ مسلم، ابی داؤد “একবার রসূলুল্লাহ সা. মানত মানতে নিষেধ করতে লাগলেন। তিনি বলছিলেন, মানত কোনো কিছু প্রতিরোধ করতে পারে না। তবে এভাবে কৃপণ ব্যক্তির দ্বারা তার কিছু অর্থ ব্যয় করানো হয়।”

হাদীসের শেষ অংশের অর্থ হলো কৃপণ ব্যক্তির নিজের ইচ্ছায় আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করার মত বান্দা নয়। মানতের মাধ্যমে সে এ লোভে কিছু খরচ করে যে, এ বিনিময় গ্রহণ করে আল্লাহ তা’আলা হয়তো তার তাকদীর পরিবর্তন করে দেবেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বর্ণিত আরেকটি হাদীস হলো নবী সা. বলেছেন : النذر لايقدم شيئا ولا يؤخره وانما يستخرج بـه مـن الـبـخـيـل –
“মানত কোনো কাজকে এগিয়ে আনতে কিংবা আশু সংঘটিতব্য কোনো কাজকে পিছিয়ে দিতে পারে না। তবে এভাবে কৃপণ ব্যক্তির কিছু অর্থ-সম্পদ খরচ করানো হয়।” (বুখারী ও মুসলিম)

আরো একটি হাদীসে তিনি বলেছেন : নবী সা. মানত করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন : إنه لا يأتي بخبر وانما يستخرج بـه مـن الـبـخـيـل . “এভাবে কোনো উপকার বা কল্যাণ হয় না। তবে বখীল কর্তৃক তার অর্থ-সম্পদ থেকে কিছু খর করানো হয়।” (বুখারী ও মুসলিম)

ইমাম মুসলিম রা. হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে প্রায় এরূপ বিষয়বস্তু সম্বলিত কিছুসংখ্যক হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। বুখারী ও মুসলিম উভয়ে আরো একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যাতে তারা বলেছেন যে, নবী সা. বলেছেন : إن النذر لا يقرب من ابن آدم شيئا لم يكن الله قدره له ولكن الــدر بـوافـق الـقـدر خرج بذالك من البخيل مالم يكن البخيل يريد أن يخرج
“আল্লাহ তা’আলা কোনো মানুষের তাকদীরে যা নির্ধারিত করেননি, মানত ঐ মানুষকে তার ব্যবস্থা করে দিতে পারে না। তবে মানত তাকদীর অনুসারেই হয়ে থাকে। আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর এভাবে বখীলের কাছ থেকে সেই বস্তু বের করে নেয় যা সে অন্য কোনো কারণে বের করতো না।”

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমার ইবনুল আস রা.-এর বর্ণিত হাদীস এ বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে তোলে। হাদীসটিতে নবী সা. বলেছেন : إنما النذر ما أبتغي به وجه الله “যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করাই মূখ্য উদ্দেশ্য হয় প্রকৃত মানত সেটিই।” (তাহাবী)।

তিন. মানতের ব্যাপারে রসূলুল্লাহু সা. আরো একটি নিয়ম বা ফর্মুলা বলেছেন। তাহলো, যেসব মানত আল্লাহর আনুগত্যের উদ্দেশ্যে হবে কেবল সে সব মানত পূরণ করতে হবে। আল্লাহর নাফরমানীমূলক কোনো মানত কখনো পূরণ করা যাবে না। অনুরূপ কোনো ব্যক্তি যে বস্তুর মালিক নয় | সে বস্তু দিয়ে কোনো মানত করা যায় না। অথবা মানুষের সাধ্যাতীত কোনো কাজ দিয়েও মানত করা যায় না।

হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেছেন যে, নবী সা. বলেছেন : من نذر أن يطيع الله فليطعه ومن نذر أن بعص الله فلا يعصه “কেউ যদি মানত করে, সে আল্লাহর আনুগত্য করবে তাহলে যেন সে তাঁর আনুগত্য করে। আর কেউ যদি মানত করে সে আল্লাহর নাফরমানী করবে তাহলে যেন সে তা না করে।” (বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, তাহাবী

সাবেত ইবনে দাহাক বলেন, নবী সা. বলেছেন : لا وفاء لنذر في معصية الله ولا فيما لا يملك ابن ادم “আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কোনো বিষয়ে কিংবা যে বস্তু ব্যক্তির মালিকানাধীন নয় এমন বস্তুর ক্ষেত্রে মানত পূরণ করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। (আবু দাউদ)

মুসলিম এ একই বিষয় সম্বলিত হাদীস হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন থেকে বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া আবু দাউদে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে আস রা.-এর বর্ণিত হাদীসটি এর চেয়েও ব্যাপক ও বিস্তৃত। এ হাদীসে তিনি নবী সা.-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন এভাবে : لا نذر ولا يمين في ما لا يملك ابن آدم، ولا في معصية الله ولا في قطيعة رحم .
“মানুষের আয়ত্বাধীন বা নাগালের মধ্যে নয় এমন কোনো কাজে কোনো মানত বা শপথ অচল। অনুরূপ আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কিংবা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মত কোনো কাজেও মানত বা শপথ কার্যকর হবে না।”

চার. যে কাজে মূলত কোনো নেকী নেই এবং ব্যক্তি অযথা কোনো অর্থহীন কাজ কিংবা অসহনীয় কঠোর পরিশ্রম অথবা আত্মপীড়নকে নেক কাজ মনে করে তা নিজের জন্য আবশ্যিক করে নিয়েছে তার এরূপ মানত পূরণ না করা উচিত। এ ব্যাপারে নবী সা.-এর নির্দেশ অত্যন্ত স্পষ্ট।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন : একবার নবী সা. খুতবা পেশ করার সময় দেখলেন, এক ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে আছে । তিনি জিজ্ঞেস করলেন, লোকটি কে এবং কেনই বা সে রোদে দাঁড়িয়ে আছে ? তাঁকে বলা হলো, লোকটির নাম আবু ইসরাঈল। সে মানত করেছে যে, সে দাঁড়িয়ে থাকবে, বসবে না, ছায়া গ্রহণ করবে না, কারো সাথে কথাও বলবে না এবং রোযা রাখবে। একথা শুনে নবী সা. বললেন : مروه فليكتم وليستظل وليقعد وليتم صومه “তাকে বলো, সে কথা বলুক, ছায়াতে আশ্রয় গ্রহণ করুক এবং বসুক। তবে রোযা যেন পালন করে।” (বুখারী, আবু দাউদ, ইবনে মাজা, মুয়াত্তা)।

হযরত উকবা ইবনে আমের জুহানী বলেন, আমার বোন খালি পায়ে হেঁটে হজ্জ করার মানত করলো। সে আরো মানত করলো যে, হজ্জের এ সফরে সে মাথায়ও কাপড় দেবে না। নবী সা. বললেন : তাকে বলো, সে যেন বাহনে সওয়ার হয়ে হজ্জে যায় এবং মাথায় কাপড় দেয়। (আবু দাউদ ও মুসলিম এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন, তবে তাতে কিছু শাব্দিক তারতম্য আছে)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. উকবা ইবনে আমেরের বোনের এ ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে নবী সা.-এর যে বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন তার ভাষা হলো, إن الله لغنى عن نذرها مرها فلتركب “তার এ মানতের প্রয়োজন আল্লাহর নেই। তাকে বলো, সে যেন বাহনে সওয়ার হয়ে হজ্জ করতে যায়।” (আবু দাউদ)

আরো একটি হাদীস বর্ণনা প্রসংগে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন ঃ এক ব্যক্তি বললো, আমার বোন পায়ে হেটে হজ্জ করার মানত করেছে। নবী সা. বললেন : إن الله لا يصنع بشقاء أختك شيئا فلتحج راكبةً “তোমার বোনের কঠোর পরিশ্রমে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। তার উচিত সওয়ারীর পিঠে উঠে হজ্জ করা।” (আবু দাউদ)

হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সা. (সম্ভবত হজ্জের সফরে) দেখলেন এক বয়োবৃদ্ধ দুর্বল ব্যক্তিকে তার দুই পুত্র ধরাধরি করে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ব্যাপার কি ? বলা হলো, সে পায়ে হেঁটে হজ্জ করার মানত করেছে। একথা শুনে তিনি বললেন- إن الله لغنى عن تعذيـب هـذا نفسه، وأمره أن يركب “এ ব্যক্তি নিজে নিজেকে কষ্ট দেবে, তাতে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। এরপর তিনি তাকে বাহনে সওয়ার হতে নির্দেশ দিলেন। (বুখারী, মুসলিম, আবদু দাউদ, মুসলিমে হযরত আবু হুরায়রা থেকেও এ একই বিষয়ে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।)

পাঁচ. কোনো মানত পূরণ করা যদি কার্যত অসম্ভব হয় তাহলে তা অন্য কোনোভাবে পূরণ করা যেতে পারে। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন- বিজয়ের দিন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমি এ মর্মে মানত করেছিলাম যে, আল্লাহ যদি আপনার হাতে মক্কা বিজয় দান করেন তাহলে আমি বায়তুল মুকাদ্দাসে দুই রাকআত নামায পড়বো। নবী সা. বললেন, এখানেই পড়ে নাও। সে আবার জিজ্ঞেস করলো। তিনিও পুনরায় একই জবাব দিলেন । সে আবার জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ওর তাহলে এখন তোমার মর্জি।

অন্য একটি হাদীসে আছে নবী সা. বলেছেন : والذي بعث محمدا بالحق، لو صليت ههنا لأجزا عنـك صلوة في بيت المقدس “সে মহান সত্তার শপথ, যিনি মুহাম্মদকে ন্যায় ও সত্য দিয়ে পাঠিয়েছেন ; তুমি যদি এখানে নামায পড়ে নাও, তাহলে তা বায়তুল মাকদাসে নামায পড়ার বিকল্প হিসেবে যথেষ্ট হবে।” (আবু দাউদ)

ছয়. কেউ যদি তার সমস্ত অর্থ-সম্পদ আল্লাহর পথে খরচ করার জন্য মানত করে তাহলে সেক্ষেত্রে ফিকাহবিদগণ ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। ইমাম মালেক র. বলেন, এ ক্ষেত্রে তাকে এক- তৃতীয়াংশ সম্পদ দিয়ে দিতে হবে। মালেকীদের মধ্য থেকে ‘সাহনূনের’ বক্তব্য তাকে এতটা সম্পদ দিয়ে দিতে হবে যতটা দিলে সে কষ্টের মধ্যে পড়বে না। ইমাম শাফেয়ী র. বলেন : এটা যদি তার ‘নযরে তাবাররুর’ (নেকীর উদ্দেশ্যে মানত) হয় তাহলে সমস্ত সম্পদ দিয়ে দিতে হবে। আর যদি ‘নযরে লাজাজ’ (মূর্খতা ও হঠকারিতামূলক মানত) হয় তাহলে সে উক্ত মানত পূরণ করতে পারে কিংবা ‘কসম’ বা শপথের ‘কাফফারাও দিতে পারে। এ ব্যাপারে তার স্বাধীনতা রয়েছে।

ইমাম আবু হানীফা র. বলেন ঃ তাকে যেসব অর্থ-সম্পদের যাকাত দিতে হয় সেসব সম্পদ আল্লাহর পথে দিয়ে দেয়া কর্তব্য। কিন্তু যেসব সম্পদের যাকাত দিতে হয় না, যেমন, বসত বাড়ী এবং অনুরূপ অন্যান্য সম্পদ তার ওপর এ মানত প্রযোজ্য হবে না। হানাফীদের মধ্যে ইমাম যুফার র.-এর বক্তব্য হলো, নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য দুই মাসের প্রয়োজনীয় খরচ রেখে অবশিষ্ট সমস্ত সম্পদ সাদকা করে দিতে হবে। (উমদাতুল কারী, শাহ ওয়ালী উল্লাহ কৃত মুয়াত্তার শরাহ)

এ বিষয়টি সম্পর্কে হাদীসে যা বর্ণিত হয়েছে তাহলো, হযরত কা’ব ইবনে মালেক রা. বলেন, তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার কারণে যে তিরস্কার ও অসন্তোষের শিকার আমি হয়েছিলাম তা ক্ষমা হয়ে গেলে আমি রসূলুল্লাহ সা.-এর খেদমতে আরয করলাম যে, আমার তওবার মধ্যে এ বিষয়টিও অন্তরভুক্ত ছিল যে, আমি আমার সমস্ত সম্পদের মালিকানা স্বত্ব ত্যাগ করে তা আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলের পথে দান করে দেব। নবী সা. বললেনঃ না, এরূপ করো না। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক সম্পদ ? তিনি বললেনঃ না, তাও না। আমি আবার বললাম, তাহলে এক-তৃতীয়ংশ ? তিনি বললেন, হাঁ। (আবু দাউদ)

অন্য একটি হাদীসে আছে। নবী সা. বললেন- তুমি তোমার কিছু সম্পদ যদি নিজের জন্য রেখে দাও তাহলে তা তোমার জন্য সর্বোত্তম হবে। (বুখারী)

ইমাম যুহরী র. বলেন : আমি জানতে পেরেছি যে, হযরত আবু লুবাবা রা. (তাবুক যুদ্ধের ব্যাপারে তিনিও তিরস্কার ও অসন্তোষের শিকার হয়েছিলেন) নবী সা.-কে বললেন ঃ আমি আমার সমস্ত সম্পদের মালিকানা ত্যাগ করে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পথে সাদকা হিসেবে দিয়ে দিতে চাই। জবাবে নবী সা. বললেন, সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ দিয়ে দেয়াই তোমার জন্য যথেষ্ট। (মুয়াত্তা)

সাত. ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কেউ যদি কোনো নেক মানত করে তাহলে ইসলাম গ্রহণের পরে কি তা পূরণ করতে হবে ? এ ব্যাপারে নবী সা.-এর ফতোয়া হলো, তা পূরণ করতে হবে। বুখারী, আবু দাউদ ও তাহাবীতে হযরত ‘উমর সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, তিনি জাহেলী যুগে মানত করেছিলেন যে, মসজিদে হারামে এক রাত (কারো কারো বর্ণনায় একদিন) ই’তিকাফ করবেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি এ ব্যাপারে নবী সা.-কে ফতোয়া জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন- ‘নিজের মানত পূরণ করো।’

কোনো কোনো ফিকাহবিদ নবী সা.-এরর এ নির্দেশের অর্থ করেছেন যে, এরূপ করা ওায়াজিব।
আবার কেউ কেউ অর্থ করেছেন যে, এরূপ করা মুস্তাহাব।

আট. মৃত ব্যক্তির কোনো মানত থাকলে তা পূরণ করা কি ওয়ারিশদের জন্য ওয়াজিব ? এ প্রশ্নে ফিকাহবিদগণ ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। ইমাম আহমাদ, ইসহাক ইবনে রাহাওয়াইয়া, আবু সাওর এবং জাহেরিয়াদের মতে মৃতের দায়িত্বে যদি রোযা বা নামাযের মানত থেকে থাকে তাহলে ওয়ারিশদের জন্য তা পূরণ করা ওয়াজিব।

হানাফীদের মতে মৃত ব্যক্তি যদি শারীরিক ইবাদাতের (নামায বা রোযা) মানত করে থাকে তাহলে তা পূরণ করা ওয়ারিশদের জন্য ওয়াজিব নয়। আর যদি আর্থিক ইবাদাতের মানত করে থাকে এবং মৃত ব্যক্তির আগে তার ওয়ারিশদের তা পূরণ করার অছিয়ত না করে থাকে তাহলে সে মানতও পূরণ করা ওয়াজিব নয়। কিন্তু সে যদি অছিয়ত করে যায়, তাহলে তা পূরণ করা ওয়াজিব। তবে তার পরিত্যক্ত সম্পদের এক-তৃতীয়াংশের অধিক সম্পদ দিয়ে নয়।

এর সাথে মালেকী মাযহাবের মতামতের অনেকটা মিল আছে। শাফেয়ী মাযহাবের মতে, মানত যদি আর্থিক ইবাদাতের না হয়ে অন্য কিছু হয় কিংবা আর্থিক ইবাদাতেরই হয় আর মৃত ব্যক্তি যদি কোনো সম্পদ রেখে না গিয়ে থাকে, তাহলে তার ওয়ারিশদের জন্য আর্থিক ইবাদাতের মানত পূরণ করা ওয়াজিব নয় । তবে মৃত ব্যক্তি যদি সম্পদ রেখে গিয়ে থাকে তাহলে সে অছিয়ত করে থাকুক বা না থাকুক এক্ষেত্রে তার ওয়ারিশদের জন্য আর্থিক ইবাদাতের মানত পূরণ করা ওয়াজিব। (শরহে মুসলিম লিন নববী, বাযলুল মাজহুদ-শরহে আবী দাউদ)

এ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কর্তৃক এ মর্মে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত সা’দ ইবনে উবাদা রা. রসূলূল্লাহ সা.-এর কাছে একটি ফতোয়া জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, আমার মা ইন্তেকাল করেছেন। তিনি একটি মানত করেছিলেন। কিন্তু তা পূরণ করতে পারেননি । নবী সা. বললেন ঃ তুমি তার সে মানত পূরণ করে দাও। (আবু দাউদ, মুসলিম)

ইবনে আব্বাস রা. অন্য একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, এক মহিলা সমুদ্র যাত্রা করার সময় মানত করলো, আমি যদি সহী সালামতে জীবিত ঘরে ফিরে আসতে পারি তাহলে একমাস রোযা রাখবো। ফিরে আসার পরেই সে মারা গেল । তার বোন ও মেয়ে রসূলুল্লাহ সা.-এর কাছে এসে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলো । তিনি বললন ঃ তার পক্ষ থেকে তুমি রোযা রাখো। (আবু দাউদ) আব দাউদ বুরাইদা থেকে অনুরূপ আরো একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, এক মহিলা নবী সা.-কে এ ধরনের মাসয়ালা জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে সে একই জবাব দিলেন যা ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে।

এসব হাদীসে নবী সা.-এর যে নির্দেশ রয়েছে তা ওয়াজিব অর্থে না মুস্তাহাব অর্থে তা যেহেতু পরিষ্কার নয় এবং হযরত সা’দ ইবনে উবাদার মায়ের মানত আর্থিক ইবাদাতের মানত ছিল না শারীরিক ইবাদাতের মানত ছিল তাও স্পষ্ট নয় তাই এ মাসয়ালার ব্যাপারে ফকীহদের মধ্যে মতপার্থক্যের সৃষ্টি হয়েছে।

নয়. ভ্রান্ত ও নাজায়েয প্রকৃতির মানত সম্পর্কে একথা পরিষ্কার যে, তা পূরণ করা ঠিক নয়। তবে এ ধরনের মানতের ক্ষেত্রে কাফফারা দিতে হবে কিনা সে বিষয়ে মতভেদ আছে। এ বিষয়ে হাদীসসমূহের বর্ণনাই যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন তাই ফিকাহবিদগণও ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। এক শ্রেণীর বর্ণনায় আছে যে, এ অবস্থায় নবী সা. কাফফারা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেছেন যে, নবী সা. বলেছেন, “গোনাহের কাজে কোনো মানত করা যায় না। এ ধরনের মানতের কাফফারা হলো শপথ ভঙ্গের কাফফারার মত।” (আবু দাউদ)

‘উকবা ইবনে আমের জুহানীর বোনের ব্যাপারে (ওপরে ৪ এ যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে) নবী সা. নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, “সে যেন তার মানত ভঙ্গ করে এবং তিন দিন রোযা রাখে।” (মুসলিম, আবু দাউদ) আরেকজন মহিলা যে পায়ে হেঁটে হজ্জ করার মানত করেছিল তার ব্যাপারে নবী সা. নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, “সে যেন বাহনে সওয়ার হয়ে হজ্জে যায় এবং শপথ ভঙ্গের কাফফারা আদায় করে।” (আবু দাউদ) ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন যে, নবী সা. বলেছেন :

‘কেউ যদি মানত করে এবং কি মানত করলো তা নির্দিষ্ট না করে তাকে শপথ ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে। কেউ যদি কোনো গোনাহর কাজের মানত করে, তবে তাকে শপথ ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে। কেউ যদি এমন বিষয়ের মানত করে যা পূরণ করার সাধ্য তার নেই তাকে শপথ ভঙ্গের কাফফারা দিতে হবে। আর কেউ যদি এমন জিনিসের মানত করে যা পূরণ করার সামর্থ তার আছে, তাহলে তাকে সে মানত পূরণ করতে হবে।” (আবু দাউদ)

অন্য দিকে আছে সেসব হাদীস যা থেকে জানা যায় যে, এসব অবস্থায় কাফফারা দিতে হবে না। ওপরে ৪-এ যে ব্যক্তির উল্লেখ করা হয়েছে যে, সে রোদে দাঁড়িয়ে থাকার এবং কারো সাথে কথা না বলার মানত করেছিল তার কাহিনী উল্লেখ করার পর ইমাম মালেক র. তাঁর গ্রন্থ মুয়াত্তায় লিখেছেন যে, নবীসা. তাকে মানত ভঙ্গ করার নির্দেশদানের সাথে সাথে কাফফারা আদায় করার নির্দেশও দিয়েছিলেন বলে কোনো সূত্র থেকেই আমি জানতে পারিনি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ

من حلف على يمين فراى غيرها خيرا منها فليدعهـا وليـات الذي هو خير فان تركها كفارتها ۔
“কেউ কোনো বিষয়ে মানত করার পর যদি দেখে যে, অন্য একটি জিনিস তার চেয়ে উত্তম তাহলে সে যেন তা পরিত্যাগ করে এবং যেটি উত্তম সেটি গ্রহণ করে। আর ঐটি ছেড়ে দেয়াই হবে তার কাফফারা।” (আবু দাউদ)

বায়হাকীর মতে এ হাদীসটি এবং হযরত আবু হুরাইয়া রা.-এর রেওয়ায়াতের যে কাজটি উত্তম সেটি করবে আর এরূপ করাই এর কাফফারা’ এ অংশটুকু প্রমাণিত নয়। এসব হাদীস সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম নববী র. শরহে মুসলিমে লিখেছেন, “ইমাম মালেক র. শাফেয়ী র. আবু হানীফা র. দাউদ যাহেরী এবং সংখ্যাগুরু আলেমদের মতে গোনাহের কাজের মানত বাতিল এবং তা পূরণ না করলে কাফফারা দিতে হবে না।’ কিন্তু ইমাম আহমাদ র. এর মতে কাফফারা দিতে হবে।”

(তাফহীমুল কুরআন : সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী রাহ:)

আরো পড়ুন :

গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি ?

নামাজের ফরজ মোট 13 টি

রোজার ফরজ কয়টি ও কি কি ?

ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি ?

ট্যাগ সমূহ : মানত,মানত করা কি জায়েজ,মানত পূরণ না করলে কি হয়,মানত করার নিয়ম, মানতের কাফফারা,মানত কাকে বলে,মসজিদে মানত করা যাবে কি,মানত অর্থ,মানত করা,মানত কি,মানত করা কি,মানতের কোরবানি,মাজারে মানত করা কি জায়েজ, ইসলামে মানত করা কি,মসজিদে মানত করা যাবে কি,
মানত করা কি জায়েজ,মানত করা in english,মানত করার নিয়ম,মানত করা কি,মানত করার নিয়ম, মানত করা এর ইংরেজি,মানত করা যাবে,মানত করা ইংরেজি,মানত করা অর্থ,মানত করার হুকুম,মানত করা অর্থ,মানতের হুকুম,মানতের হুকুম আহকাম,মানতের বিধি-বিধান,মানত,মানত করা কি জায়েজ,মানত পূরণ না করলে কি হয়,মানত করার নিয়ম, মানতের কাফফারা,মানত কাকে বলে,মসজিদে মানত করা যাবে কি,মানত অর্থ,মানত করা,মানত কি,মানত করা কি,মানতের কোরবানি,মাজারে মানত করা কি জায়েজ, ইসলামে মানত করা কি,মসজিদে মানত করা যাবে কি,মানত করা কি জায়েজ,মানত করা কি জায়েজ,মানত করা কি জায়েজ,মানত করা কি জায়েজ,মানত করা in english,মানত করার নিয়ম,মানত করা কি,মানত করার নিয়ম, মানত করা এর ইংরেজি,মানত করা যাবে,মানত করা ইংরেজি,মানত করা অর্থ,মানত করার হুকুম,মানত করা অর্থ,মানতের হুকুম,মানতের হুকুম আহকাম,মানতের বিধি-বিধান,মানত করা কি জায়েজ,মানত পূরণ না করলে কি হয়,মানত করার নিয়ম, মানতের কাফফারা,মানত কাকে বলে,মসজিদে মানত করা যাবে কি,মানত করা কি জায়েজ,মানত পূরণ না করলে কি হয়,মানত করার নিয়ম, মানতের কাফফারা,মানত কাকে বলে,মসজিদে মানত করা যাবে কি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top