মহররম অর্থ কি? এর ফজিলত,আমল,আশুরার রোজা ও ইতিহাস

মহররম অর্থ কি,মহররম মাসের ফজিলত ও আমল,মহররম মাসের কিছু ফজিলত,মহররম মাসের ঘটনা,১০ই মহররমের ইতিহাস,আশুরার তাৎপর্য,মহররম মাসের রোজা কয়টি,আশুরার রোজার সূত্রপাত,মহররম মাসের রোজা রাখার ফজিলত,মহররম মাসে বিয়ে করা যাবে কি,

মহররম অর্থ কি? এবং ফজিলত,আমল,আশুরার রোজা ও ইতিহাস

মহররম হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস, এবং মুসলিমদের কাছে এটি একটি বিশেষ মাস। এই মাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। মহান আল্লাহ তাআলা হিজরি সনের চারটি মাসকে সম্মানিত করেছেন। এই চারটি মাস হলো: মহররম, জিলকদ, জিলহজ ও রজব। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন-

“যেদিন থেকে তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকে নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে গণনা হিসেবের মাস হলো বারোটি। এর মধ্যে চারটি মাস বিশেষ সম্মানিত।” (সুরা তাওবাহ, আয়াত : ৩৬)

মহররম অর্থ কি

মহররম শব্দের অর্থ “সম্মানিত” বা “পবিত্র”। আরবি ভাষায় “হারাম” শব্দের অর্থ “নিষিদ্ধ” বা “অলঙ্ঘনীয়”। মহররম মাসটি ইসলামের চারটি পবিত্র মাসের মধ্যে একটি, যা যুদ্ধ ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া নিষিদ্ধ।

মহররম মাসের ফজিলত ও আমল

মহররম মাস ইসলামের চারটি পবিত্র মাসের মধ্যে একটি, যা “আরবাআতুন হুরুম” (চারটি সম্মানিত মাস) নামে পরিচিত। হাদিসে মহররম মাসকে “শাহরুল্লাহ” (আল্লাহর মাস) বলা হয়েছে।

মহররম মাস শুধুমাত্র রোজা, নামাজ, দান-সদকা, ইস্তেগফার ও দোয়ার মাস নয়, বরং এটি আত্মশুদ্ধি ও নতুন জীবন শুরু করার মাসও বটে। এই মাসে আমাদের উচিত আমাদের গুণাগুলির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, আল্লাহর নিকট থেকে পুরস্কার লাভের আশায় নফল ইবাদত করা এবং হযরত ইমাম হুসায়নের শাহাদতের ঘটনা স্মরণ করা। তবে মহররম মাসে রোজা রাখা সুন্নত। তবে, আশুরার (মহররমের ১০ তারিখ) রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

মহররম মাসের কিছু ফজিলত:

  • হিজরি সনের প্রথম মাস: হিজরি সন গণনার সূচনা এই মাস থেকেই হয়েছিল।
  • রোজার ফজিলত: মহররম মাসে রোজা রাখার অসাধারণ ফজিলত রয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মহররম মাসের ৯ তারিখ ও ১০ তারিখ রোজা রাখবে, সে যেন জীবনের পুরো মাস রোজা রেখেছে।” (তিরমিযি)
  • নফল নামাজের ফজিলত: মহররম মাসে নফল নামাজ পড়ারও অসাধারণ ফজিলত রয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মহররম মাসে নিয়মিত নফল নামাজ পড়বে, সে জান্নাতে যাবে।” (ইবনে মাজাহ)
  • দান-সদকার ফজিলত: মহররম মাসে দান-সদকা করারও অসাধারণ ফজিলত রয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মহররম মাসে দান-সদকা করবে, আল্লাহ তার গুণাগুলি ক্ষমা করে দেবেন।” (আহমদ)
  • ইস্তেগফারের ফজিলত: মহররম মাসে বেশি বেশি ইস্তেগফার করারও অসাধারণ ফজিলত রয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মহররম মাসে বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে, আল্লাহ তার গুণাগুলি ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জান্নাতে নেবেন।” (তিরমিযি)
  • দোয়া করার ফজিলত: মহররম মাসে বেশি বেশি দোয়া করারও অসাধারণ ফজিলত রয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মহররম মাসে বেশি বেশি দোয়া করবে, আল্লাহ তার দোয়া কবুল করবেন।” (আহমদ)

আরো পড়ুন : ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন,মুয়াজ্জিন এর অর্থ, শর্ত ও ফজিলত

মহররম মাসের ঘটনা

মহররম মাস ইসলামের ইতিহাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী। ঐতিহাসিকভাবে, এই মাসে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

১. আদম (আঃ) সৃষ্টি: মহররম মাসের ১০ তারিখে, আল্লাহ তায়ালা প্রথম মানব আদম (আঃ) সৃষ্টি করেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, “আল্লাহ তায়ালা জমিন ও আকাশ সৃষ্টির পর ১০ মহররম সৃষ্টি করেন।” (তিরমিযি)

২. নূহ (আঃ) এর নৌকা: মহররম মাসের ১০ তারিখে, নূহ (আঃ) এর নৌকা জুদি পর্বতের উপর ভেসে ওঠে। হাদিসে বর্ণিত আছে, “আল্লাহ তায়ালা ১০ মহররম নূহ (আঃ) এর নৌকা ভেসে উঠতে নির্দেশ দেন।” (ইবনে মাজাহ)

৩. ইব্রাহীম (আঃ) জন্ম: মহররম মাসের ১০ তারিখে, নবী ইব্রাহীম (আঃ) জন্মগ্রহণ করেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, “আল্লাহ তায়ালা ১০ মহররম নবী ইব্রাহীম (আঃ) জন্ম দান করেন।” (আহমদ)

৪. মূসা (আঃ) ও ফেরাউন: মহররম মাসের ১০ তারিখে, নবী মূসা (আঃ) ও তার অনুসারীরা ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি পায়। হাদিসে বর্ণিত আছে, “আল্লাহ তায়ালা ১০ মহররম নবী মূসা (আঃ) ও তার অনুসারীদের ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি দান করেন।” (তিরমিযি)

৫. আশুরার শোক: মহররম মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো হযরত ইমাম হুসায়ন (রাঃ) ও তার অনুসারীদের কারবালার শোকাবহ ঘটনা। ৬১ হিজরির ১০ মহররম, ফিরাউনের বংশধর ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়ার সৈন্যদের সাথে লড়াইয়ে হযরত ইমাম হুসায়ন (রাঃ) ও তার অনুসারীরা শাহাদত বরণ করেন। এই ঘটনা শুধুমাত্র ইতিহাসের একটি ঘটনা নয়, বরং এটি সত্যের বিরুদ্ধে অসত্যের লড়াই, ন্যায়বিচারের বিরুদ্ধে অন্যায়ের লড়াই এবং আত্মত্যাগের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

৬. আকাশ, জমিন, পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি: ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, আকাশ, জমিন, পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি হয়েছিল মহররম মাসের ১ তারিখে।

৭. হজরত মূসা (আ.)-এর ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি: হজরত মূসা (আ.)-কে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল মহররম মাসের ১০ তারিখে।

. হজরত ঈসা (আ.)-এর পৃথিবীতে আগমন এবং জীবিতাবস্থায় আসমানে উত্তোলন: হজরত ঈসা (আ.)-এর পৃথিবীতে আগমন এবং জীবিতাবস্থায় আসমানে উত্তোলন ঘটেছিল মহররম মাসের ১০ তারিখে।

৯. হজরত ইদ্রিস (আ.)-কে আসমানে উত্তোলন: হজরত ইদ্রিস (আ.)-কে আসমানে উত্তোলন করা হয়েছিল মহররম মাসের ১০ তারিখে।

১০. হজরত দাউদ (আ.)-কে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা: হজরত দাউদ (আ.)-কে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল মহররম মাসের ১০ তারিখে।

তবে কারো কারো মতে, নবী মূসা ও ফিরাউনের ঘটনা এবং ইমাম হুসাইনের ঘটনা ছাড়া অন্যগুলো এই দিনে ঘটেছিল বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়নি।

১১. কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা: ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক ও করুণাত্মক ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কারবালার যুদ্ধ। এই যুদ্ধ ৬১ হিজরির ১০ মহররম তারিখে ইরাকের কারবালা প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধে হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ), নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর নাতি, এবং তার সঙ্গীরা উমাইয়া খলিফা প্রথম ইয়াজিদের বিশাল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।

ইয়াজিদ ছিলেন একজন অত্যাচারী ও নীতিহীন শাসক। হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ) ইয়াজিদের অত্যাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন ইসলামের নীতি ও মূল্যবোধ রক্ষার জন্য লড়াই করেছিলেন।

যুদ্ধের পরিণাম: হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ) এবং তার সকল সঙ্গী নির্মমভাবে শহীদ হয়েছিলেন। হযরত ইমাম হোসাইনের পরিবারের নারী ও শিশুদের বন্দি করা হয়েছিল।

কারবালার ঘটনা: ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে কারবালা যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যেখানে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নাতি হজরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) এবং তাঁর পরিবার উমাইয়া শাসক ইয়াজিদের বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হন। কারবালা শুধু একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয় বরং এটি সত্যের বিরুদ্ধে অসত্যের লড়াই ন্যায়বিচারের বিরুদ্ধে অন্যায়ের লড়াই এবং আত্মত্যাগের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কারবালার ঘটনা শুধু মুসলিমদের জন্যই নয় বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা। কারবালার ঘটনা মুসলিমদের একতা ও সাহস ন্যায়বিচার ও সত্যের পক্ষে লড়াই করার প্রেরণা এবং জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর শিক্ষা দিয়ে থাকে।

কারবালা কোথায় অবস্থিত?

কারবালা ইতিহাসের একটি তাৎপর্যপূর্ণ শহর। কারবালা, যা কারবালা আল-মুকাদ্দাসা নামেও পরিচিত, ইরাকের একটি পবিত্র শহর। এটি বাগদাদের ১০০ কিলোমিটার (৬২ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এবং কারবালা প্রদেশের রাজধানী হিসেবে কাজ করে।

১০ই মহররমের ইতিহাস

ইসলামী বর্ষপঞ্জির মহররম মাসের ১০ই তারিখ আশুরা নামে পরিচিত। এই দিনটি মুসলিম উম্মাহের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও করুণ স্মরণে ভরা।

৬৮০ সালের ১০ই মহররম, ইরাকের কারবালা মরুভূমিতে হযরত ইমাম হোসাইন (আ.), নবী মুহাম্মদ (সা.) এর প্রিয় নাতি, তাঁর পরিবার ও অনুসারীদের সাথে উমাইয়া শাসক ইয়াজিদ-এর সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হন। এই ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে “কারবালার যুদ্ধ” নামে পরিচিত।

আশুরার তাৎপর্য

  • সত্যের বিরুদ্ধে অসত্যের লড়াই: ইমাম হোসাইন (আ.) ন্যায়বিচার, সত্য ও নীতির পথে ইয়াজিদের জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।
  • আত্মত্যাগ: ইমাম হোসাইন (আ.) ও তাঁর অনুসারীরা প্রাণ দিয়ে ইসলামের মূলনীতি রক্ষা করেছিলেন।
  • ধৈর্য ও সহ্যশীলতা: তীব্র তৃষ্ণার্ত অবস্থায়ও ইমাম হোসাইন (আ.) ধৈর্য ধরেছিলেন এবং আল্লাহর উপর তাঁর বিশ্বাস অটুট রেখেছিলেন।
  • শোক ও স্মরণ: আশুরা মুসলমানদের জন্য শোক ও স্মরণের দিন। এই দিনে তারা ইমাম হোসাইন (আ.) ও তাঁর শহীদ সঙ্গীদের স্মরণ করে এবং তাদের নীতি অনুসরণের প্রতিজ্ঞা করে।

উপসংহার: ১০ই মহররম শুধু একটি শোকের দিন নয়, বরং এটি সত্য, ন্যায়বিচার, সাহস ও আত্মত্যাগের শিক্ষা দেয়। এই দিন মুসলমানদের আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও তাঁর ইচ্ছার প্রতি সমর্পণ স্মরণ করিয়ে দেয়।

মহররম মাসের রোজা কয়টি

সহীহ মুসলিম এর ১১৩৪ নং হাদিস থেকে জানা যায় যে আশুরার রোজা তিনটি রাখতে হবে। যেমন-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী (সাঃ) যখন আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দেন, তখন সাহাবিরা অবাক হয়ে বলেন, “হে আল্লাহর রসুল, বিধর্মীরা তো এই দিনটিকে বড় দিন মনে করে। এই দিনে তারাও রোজা পালন করে। আমরা যদি এই দিনে রোজা রাখি তাহলে তো এদের সঙ্গে সামঞ্জস্য হবে।” এই প্রশ্নের জবাবে নবী (সাঃ) বলেন: “তারা যেহেতু এদিন একটি রোজা পালন করে, আগামী বছর ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখ মিলিয়ে দুই দিন রোজা পালন করব, ইনশাআল্লাহ।” (মুসলিম: ১১৩৪)।

নবী (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখো, তবে এ ক্ষেত্রে ইহুদিদের সঙ্গে মিল না হওয়ার জন্য ১০ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন আরও একটি রোজা রেখে নিও।” (মুসনাদে আহমদ: ২১৫৪)

আবার উক্ত হাদিস থেকে জানা যায় যে, আশুরার রোজা দুটি রাখতে হবে। মহররমের ১০ তারিখ একটি- আর এর আগে ৯ তারিখ অথবা পরে ১১ তারিখ আরও একটি।

আশুরার রোজার সূত্রপাত:

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাঃ) হিজরত করে মদিনায় পৌঁছে দেখলেন যে, মদিনার ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করছে। নবী (সাঃ) তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “এই দিনে কী ঘটেছে যে তোমরা রোজা রাখছো?” ইহুদিরা বলল, “এই দিনটি বড় দিন। এই দিনে মহান আল্লাহ মুসা (আঃ) ও তার সঙ্গীদের ফিরাউন থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং ফিরাউন ও তার বাহিনীকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মুসা (আঃ) এই দিনে রোজা রাখতেন। তাই আমরাও আশুরার রোজা পালন করে থাকি।”

ইহুদিদের জবাব শুনে নবী (সাঃ) বললেন, “মুসা (আঃ) এর কৃতজ্ঞতার অনুসরণে আমরা তাদের চেয়ে বেশি যত্নশীল হওয়ার অধিকারী।” এরপর নবী (সাঃ) নিজেও আশুরার রোজা রাখলেন এবং মুসলমানদেরও তা পালন করার নির্দেশ প্রদান করলেন। হাদিসের সূত্র: [সহীহ বুখারী: ৩৩৯৭, সহীহ মুসলিম: ১১৩৯]

আলোচনা: এই হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি যে, আশুরার দিন রোজা পালন করা একটি মহৎ নেক আমল। নবী (সাঃ) নিজেও এই দিন রোজা রাখতেন এবং মুসলমানদেরও তা পালন করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। এছাড়াও আশুরার রোজা পালনের পাশাপাশি নবী (সাঃ) আরও দুই দিন রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

মহররম মাসের রোজা রাখার ফজিলত:

১. নবম তারিখের রোজা: হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মহররম মাসের নবম তারিখ রোজা রাখবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রত্যেক রোজার পরিবর্তে ৩০ দিন রোজা রাখার সমান ছওয়াব দিবেন।” (সুনানে তিরমিজি)

হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আশুরার রোজা জান্নাতের দরজা খোলার চাবিকাঠি।” (মুসনাদে আহমদ)

২. আশুরা ও তার আগের দিনের রোজা: হজরত আবু বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আশুরা ও তার আগের দিন রোজা রাখলে আল্লাহ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী এক বছরের পাপ মোচন করে দেন।” (ইবনে মাজাহ)

৩. মহররমের যেকোনো দিনের রোজা: হজরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখে, তার মহররমের ৯, ১০ ও ১১ তারিখ রোজা রাখলে তার তিনটি রোজা পূর্ণ হয়ে যাবে।” (সুনানে আবু দাউদ)

আগে আশুরার রোজা রাখার বিধান কি ছিল

আগে মুসলমানদের জন্য আশুরার রোজা ওয়াজিব ছিল। দ্বিতীয় হিজরিতে শাবান মাসে রমজানের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজা সুন্নত হয়ে যায়। তবে সুন্নত রোজার মধ্যে আশুরার রোজা সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ।  (আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ) 

অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “রমজানের পর সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ রোজা হলো (আল্লাহর মাস) মহররমের রোজা।” (তিরমিজি)

আশুরাকে ‘কারবালা দিবস’ মনে না করা

আশুরা মানেই কারবালা নয়। আশুরার মর্যাদা ও ঐতিহ্য ইসলামপূর্ব যুগ থেকেই স্বীকৃত। ১০ মহররম কারবালার প্রান্তরে নবীজি (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হুসাইন (রা.) ও তাঁর পরিবারের মর্মান্তিক শাহাদাতের ঘটনাটি তাৎপর্যপূর্ণ আশুরার সঙ্গে মিলে যাওয়া কাকতালীয়। হৃদয়বিদারক এ ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে একশ্রেণির লোকের শোক প্রকাশের অযৌক্তিক নানা আয়োজনের কারণে আশুরা ও কারবালাকে একাকার মনে করে থাকে অনেকে। অথচ জাহেলি যুগেও আশুরার রোজার প্রচলন ছিল। 

মহররম মাসে বিয়ে করা যাবে কি

ইসলামে কোন মাসই অশুভ নয়। তাই মহররম মাসে বিয়ে করা যাবে। বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন এবং ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।বিবাহের সময়ইসলামী শরীয়তের নিয়ম-কানুনমেনে চলাঅপরিহার্য।মহররম মাস শোকের মাস হিসেবে পরিচিত। তাই বিবাহ অনুষ্ঠানসাধারণ ও শোকময় পরিবেশেপালন করা উচিত। অতিরিক্ত খরচ ও আয়োজনএড়িয়ে চলা উচিত।

কিছু হাদিস:

  • সহীহ বুখারী (৫২৩৮) অনুযায়ী, নবী (সাঃ) বলেছেন, “ইসলামে কোন মাস অশুভ নয়।”
  • সহীহ মুসলিম (২০৬৮) অনুযায়ী, নবী (সাঃ) বলেছেন, “বিবাহ একটি সুন্নত। তাই যারা সামর্থ্য রাখে তারা বিবাহ করুন।”

কিছু বিষয় মনে রাখা উচিত:

  • বিবাহ একটি সামাজিক অনুষ্ঠান। তাই বিবাহের সময় সমাজের রীতিনীতি ও পরিবারের মতামত গুরুত্ব দিতে হবে।
  • মহররম মাস শোকের মাস হিসেবে পরিচিত। তাই বিবাহ অনুষ্ঠান সাধারণ ও শোকময় পরিবেশে পালন করা উচিত। অতিরিক্ত খরচ ও আয়োজন এড়িয়ে চলা উচিত।
  • বিবাহের সময় ইসলামী শরীয়তের নিয়ম-কানুন মেনে চলা অপরিহার্য।

আরো পড়ুন : ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন,মুয়াজ্জিন এর অর্থ, শর্ত ও ফজিলত

ট্যাগ: মহররম অর্থ কি,মহররম মাসের ফজিলত ও আমল,মহররম মাসের কিছু ফজিলত,মহররম মাসের ঘটনা,১০ই মহররমের ইতিহাস,আশুরার তাৎপর্য,মহররম মাসের রোজা কয়টি,আশুরার রোজার সূত্রপাত,মহররম মাসের রোজা রাখার ফজিলত,মহররম মাসে বিয়ে করা যাবে কি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top