নামাজ ভঙ্গের কারণ
আমরা প্রতিনিয়ত নামাজ আদায় করি। কিন্তু নামাজ সঠিক ভাবে আদায় হচ্ছে কিনা সেই দিকে আমরা বেখবর।আমাদের নামাজ বিভিন্ন কারণে নামাজ নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু আমরা বলতে পারি না। আজ নামাজ নষ্ট হওয়ার কারণ গুলো নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
যেসব কারণে নামায নষ্ট হয় বা নামাজ ভঙ্গের কারণ চৌদ্দটি । নামায রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তা স্মরণ রাখা জরুরী। নিচে নামাজ ভঙ্গের কারণ দেওয়া হলো –
১. নামাযে কথা বলা। অল্প হোক বা বেশী হোক নামায নষ্ট হবে এবং পুনরায় পড়তে হবে । কথা বলার পাঁচটি অবস্থা হতে পারে :-
● প্রথম অবস্থা : কোনো লোকের সাথে স্বয়ং কথা বলা অথবা কারো কথার জবাব দেয়া । নিজের ভাষায় হোক, অন্য কোনো ভাষায় অথবা স্বয়ং কুরআনের ভাষায় হোক সকল অবস্থায় নামায নষ্ট হবে। মোট কথা কোনো প্রকারেই যদি কোনো লোকের সাথে কেউ কথা বলে কিংবা কোনো কিছুর জবাবে কিছু বলে তাহলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে ।
● দ্বিতীয় অবস্থা : কোনো পশুর দিকে দৃষ্টি দিয়ে কিছু বলা । যেমন নামায পড়ার সময় নযর পড়লো যে, মুরগী অথবা বিড়াল খাবার জিনিসের ওপর মুখ দিচ্ছে এবং তাকে তাড়াবার জন্য কিছু কথা বলা, এ অবস্থায় নামায নষ্ট হবে ।
● তৃতীয় অবস্থা : স্বগতঃ নিজের থেকে কিছু কথা বলা তা ভাষায় হোক বা আরবী ভাষায় তাতে নামায নষ্ট হবে । হাঁ যদি কোনো এমন কথা হয় যা কুরআনে আছে তাহলে নামায নষ্ট হবে না। যদি সে কথা তার মুদ্রাদোষ হয় তাহলে তা কুরআনের শব্দ হলেও নামায নষ্ট হবে। যেমন ‘হাঁ (نعم) কারো মুদ্রাদোষ হয় যদিও তা কুরআনে আছে, তথাপি নামায নষ্ট হবে ।
● চতুর্থ অবস্থা : দোয়া ও যিকির করা। দোয়া নিজের ভাষায় হোক অথবা আরবী ভাষায়- নামায নষ্ট হবে। আর যদি কুরআন ও হাদীসের দোয়া এবং যিকিরের মধ্যে থেকে কোনোটা হঠাৎ মুখ থেকে বেরিয়ে আসে তাহলে নামায নষ্ট হবে না । তার অর্থ এই যে, হঠাৎ ঘটনাক্রমে যদি এমন ভুল হয়ে যায় এবং অভ্যাস হয়ে পড়ে যে রুকূ’, সিজদা বা বৈঠকে যা খুশী তাই কিছুতেই বলা যাবে না। তারপর যা মানুষের কাছে চাওয়া যায় তা যদি নামাযের মধ্যে চাওয়া হয়, তা আরবী ভাষায় হোক না কেন, তাতে নামায নষ্ট হবে।
● পঞ্চম অবস্থা : কেউ নামায পড়া অবস্থায় দেখলো যে, আর একজন কুরআন ভুল পড়ছে, তখন লোকমা দিল, তা সে নামাযে ভুল পড়ুক অথবা নামাযের বাইরে পড়ুক, নামায নষ্ট হয়ে যাবে। তবে ভুল পাঠকারী যদি তার ইমাম হয় তাহলে নামায নষ্ট হবে না। আর যদি মুক্তাদী কুরআন দেখে লোকমা দেয় অথবা অন্য কারো নিকটে সহীহ কুরআন শুনে আপন ইমামকে লোকমা দেয় তাহলে তার নামায নষ্ট হবে । আর ইমাম যদি তার লোকমা গ্রহণ করে তাহলেও নামায নষ্ট হয়ে যাবে ।
২. নামাযে কুরআন দেখে পড়লে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।
৩. নামাযের শর্তগুলোর মধ্যে কোনো একটি যদি বাদ পড়ে যায়, তা নামায সহীহ হওয়ার শর্ত হোক অথবা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত উভয় অবস্থায় নামায নষ্ট হবে। যেমন, তাহারাত রইলো না, অযু নষ্ট হলো অথবা গোসলের দরকার হলো অথবা হায়েযের রক্ত এলো, কাপড় নাপাক হলো, জায়নামায নাপাক হলো, অথবা বিনা কারণে কেবলার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল, অথবা সতর খুলে গেল এবং এতটা সময় পর্যন্ত খোলা রাখলো যে সময়ে রুকূ’ বা সিজদা করা যায়, অথবা অন্য কোনো কারণে জ্ঞান হারিয়ে গেল অথবা পাগল হয়ে গেল, মোট কথা কোনো একটি শর্ত বাদ পড়ে গেলে নামায নষ্ট হবে।
৪. নামাযের ফরযসমূহের মধ্যে কোনো একটি যদি ছুটে যায়, ভুল বশত ছুটে যাক অথবা ইচ্ছা করে কোনোটা ছেড়ে দেয়া হোক নামায নষ্ট হবে । যেমন, কিয়াম কেউ করলো না। অথবা সিজদা ছেড়ে দিল, অথবা কিরাত মোটেই পড়লো না, ভুলবশত: এমন হোক বা ইচ্ছা করে, নামায নষ্ট হবে।
৫. নামাযের ওয়াজিবগুলোর মধ্যে কোনোটা অথবা সবগুলো ইচ্ছা করে ছেড়ে দিলে।
৬. নামাযের ওয়াজিব ভুলে ছুটে গেলে এবং সিজদা সাহু না দিলে নামায পুনরায় আদায় করতে হবে।
৭. বিনা ওযরে এবং ন্যায়সংগত প্রয়োজন ব্যতিরেকে কাশি দেয়া। তবে যদি রোগের কারণে আপনা আপনি কাশি আসে অথবা গলা সাফ করার জন্য কাশি দেয় অথবা ইমামের ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য কাশি দেয়া হয় যাতে ইমাম বুঝতে পারে যে, সে ভুল পড়ছে, তাহলে এসব অবস্থায় নামায নষ্ট হবে না । এসব কারণ ব্যতীত বিনা কারণে কাশি দিলে নামায নষ্ট হবে।
৮. কোনো দুঃখ-কষ্ট, শোক বা কঠিন বিপদে পড়ে আহ্! উহ্! করলে অথবা কোনো বেদনাদায়ক আওয়ায বা আর্তনাদ করলে নামায নষ্ট হবে। তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি কখনো কোনো শব্দ মুখ থেকে বেরিয়ে আসে অথবা আল্লাহর ভয়ে কেউ কেঁদে ফেলে অথবা তেলাওয়াতে অভিভূত হয়ে কাঁদে অথবা আহ্! ডহ্! শব্দ বের হয়, তাহলে এসব অবস্থায় নামায নষ্ট হবে না।
৯. নামায অবস্থায় ইচ্ছা করে হোক কিংবা ভুলে যদি কেউ কিছু খেয়ে ফেলে অথবা পান করে, যেমন পকেটে কিছু খাবার জিনিস ছিল, বেখেয়ালে অথবা ইচ্ছা করে খেয়ে ফেললো তাহলে নামায নষ্ট হবে । হাঁ তবে যদি দাঁতের মধ্য থেকে ছোলার পরিমাণ ছোট কোনো কিছু বের হলো এবং নামাযী তা খেয়ে ফেললো, তাহলে নামায নষ্ট হবে না। তবে ইচ্ছা করে এমন করাও ঠিক নয় । নামাযী ভালো করে মুখ সাফ করে নামাযে দাঁড়াবে।
১০. বিনা ওযরে নামাযে কয়েক কদম চলাফেরা করা । এতেও নামায নষ্ট হয়ে যাবে।
১১. আমলে কাসীর করা । অর্থাৎ এমন কাজ করা যা দেখলে লোক মনে করবে যে, সে ব্যক্তি নামায পড়ছে না । যেমন কেউ দু’ হাতে কাপড় ঠিক করছে অথবা কোনো মেয়েলোক নামাযের মধ্যে চুলের ঝুটি বাঁধছে অথবা নামায অবস্থায় বাচ্চা দুধ খাচ্ছে তাহলে এসব অবস্থায় নামায নষ্ট হবে।
১২. কুরআন পাক তেলাওয়াতে বড় রকমের ভুল করা যার দ্বারা অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়, অথবা তাকবীরের মধ্যে আল্লাহর আলিফকে খুব টেনে পড়লো, তাহলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।
১৩. বালেগ মানুষের অট্টহাসি দেয়া ।
১৪. দেয়ালে কিছু লেখা ছিলো অথবা পোষ্টার ছিল অথবা পত্রের ওপর নযর পড়লো এবং তা পড়ে ফেললো তাহলে নামায নষ্ট হবে । কিন্তু না পড়ে অর্থ বুঝে ফেললে নামায নষ্ট হবে না।
১৫. পুরুষের নিকটে মেয়েলোকের দাঁড়িয়ে থাকা এমন সময় পর্যন্ত যতোক্ষণে এক সিজদা অথবা রুকূ’ করা যায়, এমন অবস্থায় নামায নষ্ট হবে। তবে যদি কোনো অল্প বয়স্কা বালিকা দাঁড়ায় যার প্রতি কোনো যৌন আকর্ষণ হবে না, অথবা মেয়েলোকই দাঁড়ালো কিন্তু মাঝখানে পর্দা রইলো, তাহলে নামায নষ্ট হবে না।
আরো পড়ুন :
ট্যাগ সমূহ : নামাজ ভঙ্গের কারণ,নামাজ নষ্ট হওয়ার কারণ,নামাজ ভঙ্গের কারণ,নামাজ ভঙ্গের কারণ,নামাজ নষ্ট হওয়ার কারণ,নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯টি কি কি,নামাজ না হওয়ার কারণ,মহিলাদের নামাজ ভঙ্গের কারণ,নামাজ ভঙ্গের কারন, নামাজ ভঙ্গের কারণ,নামাজ না হওয়ার কারণ গুলো কি কি, নামাজ নষ্ট হয় কি করলে,নামাজ যে কারণে নষ্ট হয়,নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯টি,নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯ টি,নামাজ ভঙ্গের কারণ 19 টি,নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি,নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯,নামাজ ভঙ্গের কারণ দলিল সহ,নামাজ ভঙ্গের কারণ,নামাজ ভঙ্গের কারণ,নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯টি,নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯ টি,নামাজ ভঙ্গের কারণ 19 টি,নামাজ ভঙ্গের কারণ কয়টি,নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯ |