আবু মাহযুরা রাঃ এর জীবনী
ইলমে হাদীস পর্যালোচনায় যে সকল সাহাবায়ে কেরামের নাম বিশেষভাবে আলোচিত তন্মধ্যে আবু মাহযুরা (রা) অন্যতম। তাঁর জীবনচরিত নিম্নে উপস্থাপন করা হলো-
১. নাম ও পরিচয় :
তাঁর মূল নাম নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, তাঁর নাম আউস। কেউ বলেন, সামুরা। আবার কেউ কেউ বলেন, সালমান। উপনাম আবু মাহযুরা। পিতার নাম মুয়ীর ইবনে লাউযান।
২. বংশ পরম্পরা :
তাঁর বংশ পরম্পরা হলো আউস ইবনে মুয়ীর ইবনে লাউযান ইবনে রবীয়া ইবনে আরীয ইবনে সাদ ইবনে হাময আল কুরাশী আল জুমাহী।
৩. ইসলাম গ্রহণ :
তিনি হিজরী অষ্টম সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি নিম্নরূপ-
হিজরী অষ্টম সালে হোনাইন অভিযান শেষে মদিনা ফেরার পথে নামাযের সময় হয়ে গেলে রাসূল (স) একজনকে আযান দিতে বলেন। এমতাবস্থায় আবু মাহযুরা কতিপয় সাথিসহ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা আযানের শব্দগুলোকে মুয়াযযিনের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে ব্যঙ্গ করতে থাকেন । আবু মাহযুরা (রা)-এর কণ্ঠ ছিল অন্যান্য বালকদের তুলনায় অনেক সুন্দর । রাসূল (স) তাকে কাছে ডেকে বার বার আযানের বাক্যগুলো শিখাতে থাকেন। ইতোমধ্যে তার অন্যসব সঙ্গী চলে যায়। আবু মাহযুরা মুখে اشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ উচ্চারণকালে হৃদয়ে একপ্রকার আকর্ষণ ও স্বাদ অনুভব করলেন। ফলে তিনি মুসলমান হয়ে গেলেন।
৪. ইমামতির দায়িত্ব পালন :
মুসলমান হওয়ার পর রাসূল (স) তাঁকে তাঁর গোত্রের ইমাম করে প্রেরণ করেন। ইমামতি করার সময় জামার অভাবে ভালোভাবে সতর ঢাকতে পারতেন না। তখন মহিলা নামাযীরা অপরাপর মুসল্লীদেরকে বললেন, তোমরা কি তোমাদের ইমামকে আমাদের থেকে পর্দা করাবে না? তখন সকলে চাঁদা আদায় করে আবু মাহযুরা (রা)-এর জন্য একটি জামা ক্রয় করলেন । আবু মাহযুরা (রা) বলেন, এ জামা পেয়ে আমি যেরূপ খুশি হয়েছি জীবনে আর কখনো এরূপ খুশি হইনি।
৫. মুয়াযযিনের দায়িত্ব পালন :
হযরত আবু মাহযুরা (রা) ঈমান আনয়নের পর রাসূল (স) তাঁকে মসজিদে হারামের মুয়াযযিনের দায়িত্ব অর্পণ করেন । তিনি হিজরত করেননি; ইন্তেকাল পর্যন্ত মক্কাতেই অবস্থান করেন।
৬. হাদীস বর্ণনা :
হযরত আবু মাহযুরা (রা) রাসূল (স) থেকে অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর কাছ থেকে অনেক সাহাবী ও তাবেয়ী হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনাকারীদের মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়েকজন হলেন— স্বীয় পুত্র আবদুল মালেক, তাঁর নাতি আবদুল আযীয ইবনে আবদুল মালেক, তাঁর স্ত্রী উম্মে আবদুল মালেক, আবদুল্লাহ ইবনে মুহাইরিস, আসওয়াদ ইবনে ইয়াযিদ আন নাখয়ী, সায়েব আল মাক্কী প্রমুখ।
৭. গুণাবলি :
হযরত আবু মাহযুরা (রা) ছিলেন সহজ সরল, আত্মত্যাগী, পরোপকারী ও খোদাভীরু একজন জলীলুল কদর সাহাবী। তিনি সুললিত কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে হযরত যোবায়ের (রা) বলেন- كَانَ اَحْسَنُ النَّاسِ أَذَانَا وَأَنْدَاهُمْ صَوْتًا অর্থাৎ, তিনি মানুষের মধ্যে মধুর আযানদাতা ও সুমিষ্ট আওয়াজের অধিকারী ছিলেন।
৮. ইন্তেকাল :
হযরত আবু মাহযুরা (রা) হিজরী ৫৯ সালে হযরত মুয়াবিয়া (রা)-এর শাসনামলে মক্কায় ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের সময় তিনি আবদুল মালেক নামে এক পুত্র সন্তান রেখে যান।
আরো পড়ুন :
মুয়াজ ইবনে জাবাল রাঃ এর জীবনী
হযরত আবু যর গিফারী রাঃ এর জীবনী
হযরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ (রা) এর জীবনী
হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব রাঃ এর জীবনী
হযরত জাবের ইবনে আতীক রাঃ এর জীবনী
হযরত জোবায়ের ইবনে মুতয়িম রাঃ এর জীবনী
হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ আল জুহানী রাঃ এর জীবনী
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাঃ এর জীবনী
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর জীবনী
হযরত আবু মুসা আশয়ারী রাঃ এর জীবনী
হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাঃ এর জীবনী
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর জীবনী
হযরত সাহল ইবনে হানযালা রাঃ এর জীবনী
হযরত হাকেম ইবনে হাযম রাঃ এর জীবনী
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রাঃ এর জীবনী
হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব রাঃ এর জীবনী
হযরত ওকবা ইবনে হারেস রাঃ এর জীবনী
হযরত রাফে ইবনে খাদীজ (রা) এর জীবনী
সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাঃ এর জীবনী
হযরত বারা ইবনে আযেব রাঃ এর জীবনী
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রাঃ এর জীবনী
হযরত সাহল ইবনে সাদ রাঃ এর জীবনী
ট্যাগ সমূহ : হযরত আবু মাহযুরা (রা),হযরত আবু মাহযুরা ,আবু মাহযুরা,আবু মাহযুরা রাঃ এর জীবনী, |