৮৫.সূরা বুরুজ سورة البروج Surah Al Buruj এর তাফসির ও শানে নুযুল

সূরা বুরুজ অর্থ সহ, সূরা বুরুজ এর তাফসীর,সূরা বুরুজ এর শানে নুযুল, সূরা বুরুজ আয়াত ১২, সূরা বুরুজ বাংলা উচ্চারণ, সূরা বুরুজ তেলাওয়াত, سورة البروج, সূরা বুরুজ তাফসীর, সূরা বুরুজ এর শানে নুযূল,সূরা বুরুজ এর ঘটনা, সূরা বুরুজ আয়াত ১০, সূরা বুরুজ আয়াত ১৪,সূরা আল বুরুজ, সূরা বুরুজ, সূরা আল বুরুজ বাংলা উচ্চারণ, সূরা আল বুরুজ আয়াত ১২, সূরা আল বুরুজ কখন নাযিল হয়, ৮৫ নং সূরা, সূরা আল বুরুজ এ কয়টি বিষয়ে শপথ করা হয়েছে, surah al buruj, surah al buruj transliteration, surah al burooj pdf, surah al buruj in english, surah al buruj bangla,সূরা বুরুজের ঘটনা, সূরা বুরুজ, সূরা বুরুজের তাফসীর, সূরা বুরুজ এর ঘটনা, সূরা বুরুজ বাংলা উচ্চারণ, সূরা বুরুজ বাংলায়, সূরা বুরুজ আয়াত ১৪,سوره البروج, حل درس سورة البروج للصف الرابع, تفسير سورة البروج للاطفال,
৮৫ নং সূরা

সূরার পরিচয় :

সূরার নাম : সূরা আল বুরুজ।সূরার অর্থ : নক্ষত্রপুঞ্জ।
সূরা নং : ৮৫রুকু সংখ্যা : ১
আয়াত সংখ্যা : ২২সিজদা সংখ্যা : ০
শব্দ সংখ্যা : ১০৯পারার সংখ্যা : ৩০
অক্ষর সংখ্যা : ৪৬৫শ্রেণী : মাক্কী।

সূরা বুরুজ سورة البروج Surah Al Buruj এর তাফসির ও শানে নুযুল


بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

শুরু করছি আল্লাহ তা’আলার নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

(١) وَٱلسَّمَآءِ ذَاتِ ٱلْبُرُوجِ

(১) শপথ কক্ষপথ শোভিত আকাশের

(٢) وَٱلْيَوْمِ ٱلْمَوْعُودِ

(২) এবং প্রতিশ্রুত দিবসের,

(٣) وَشَاهِدٍ وَمَشْهُودٍ

(৩) এবং সেই দিবসের; যে উপস্থিত হয় ও যাতে উপস্থিত হয়।

(٤) قُتِلَ أَصْحَٰبُ ٱلْأُخْدُودِ

(৪) অভিশপ্ত হয়েছে গর্তওয়ালারা, অর্থাৎ

(٥) ٱلنَّارِ ذَاتِ ٱلْوَقُودِ

(৫) অনেক ইন্ধনের অগ্নিসংযোগকারীরা;

(٦) إِذْ هُمْ عَلَيْهَا قُعُودٌ

(৬) যখন তারা তার কিনারায় বসেছিল।

(٧) وَهُمْ عَلَىٰ مَا يَفْعَلُونَ بِٱلْمُؤْمِنِينَ شُهُودٌ

(৭) এবং তারা মুমিনদের সাথে যা করেছিল, তা স্বচক্ষে দেখছিল।

(٨) وَ مَا نَقَمُوا۟ مِنْهُمْ إِلَّآ أَن يُؤْمِنُوا۟ بِٱ للَّهِ ٱلْعَزِيزِ ٱلْحَمِيدِ

(৮) তারা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিল শুধু এ কারণে যে, তারা প্রশংসিত এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল,

(٩) ٱلَّذِى لَهُۥ مُلْكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَ ٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ شَهِيدٌ

(৯) যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের ক্ষমতার মালিক, আল্লাহর সামনে রয়েছে সব কিছু।

إِنَّ ٱلَّذِينَ فَتَنُوا۟ ٱلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَٰتِ – ثُمَّ لَمْ يَتُوبُوا۟ فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ ٱلْحَرِيقِ- (١٠)


(১০) যারা মুমিন পুরুষ ও নারীকে নিপীড়ন করেছে; অতঃপর তওবা করেনি, তাদের জন্য আছে জাহান্নামের শাস্তি আর দহন যন্ত্রণা,

إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ لَهُمْ جَنَّٰتٌ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَٰرُ ذَٰلِكَ ٱلْفَوْزُ ٱلْكَبِيرُ (١١)

(১১) যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য আছে জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত।

(١٢) إِنَّ بَطْشَ رَبِّكَ لَشَدِيدٌ

(১২) নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তার পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন।

(١٣) إِنَّهُۥ هُوَ يُبْدِئُ وَيُعِيدُ

(১৩) তিনিই প্রথমবার অস্তিত্ব দান করেন এবং পুনরায় জীবিত করেন।

(١٤) وَهُوَ ٱلْغَفُورُ ٱلْوَدُودُ

(১৪) তিনি ক্ষমাশীল, প্রেমময়;

(١٥) ذُو ٱلْعَرْشِ ٱلْمَجِيدُ

(১৫) মহান আরশের অধিকারী।

(١٦) فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيدُ

(১৬) তিনি যা চান, তা-ই করেন।

(١٧) هَلْ أَتَىٰكَ حَدِيثُ ٱلْجُنُودِ

(১৭) আপনার কাছে সৈন্যবাহিনীর সংবাদ পৌঁছেছে কি?

(١٨) فِرْعَوْنَ وَثَمُودَ

(১৮) ফেরাউনের এবং সামুদের?

(١٩) بَلِ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ فِى تَكْذِيبٍ


(১৯) বরং যারা কাফের, তারা মিথ্যারোপে রত আছে।

(٢٠) وَٱللَّهُ مِن وَرَآئِهِم مُّحِيطٌۢ

(২০) আল্লাহ তাদেরকে চতুর্দিক থেকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন।

(٢١) بَلْ هُوَ قُرْءَانٌ مَّجِيدٌ

(২১) বরং এটা মহান কুরআন,

(٢٢) فِى لَوْحٍ مَّحْفُوظٍۭ

(২২) লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ।


সূরার আলোচ্য বিষয় :

সূরা বুরূজের মূল বিষয়বস্তু হলো, কাফেররা মুসলিমদের ওপর যে অত্যাচার ও নিপীড়ন চালাচ্ছিল, তার নির্মম পরিণতি সম্পর্কে তাদের সতর্ক করা এবং সেই সঙ্গে মুসলিমদের এই সান্ত্বনা দেওয়া যে, তারা যদি এই নিপীড়ন ও নিষ্পেষণের মুখেও নিজেদের ঈমান ও আদর্শের ওপর অটল থাকতে পারে তাহলে তাদেরকে উত্তম প্রতিফল দেওয়া হবে। আর ওই জালিমদের ওপর আল্লাহ তা’আলা প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন।

সূরা বুরুজ এর শানে নুযুল :

সূরাটি রাসূলুল্লাহ স.-এর মক্কীজীবনে নাযিলকৃত সূরাগুলোর মধ্যে একটি। যখন মক্কার কাফেররা মুসলিমদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার ও জুলুম-নির্যাতন করে তাদেরকে ঈমান হতে ফিরিয়ে রাখার চেষ্টা করছিল ঠিক ওই সময় এই সূরাটি নাযিল হয়।

সূরা বুরুজ এর তাফসীর

আয়াত-১.
শপথ গ্রহ-নক্ষত্র শোভিত আকাশের। بُرُوجِ শব্দটি برجِ এর বহুবচন। ‘বুরূজ’ দ্বারা বড় বড় গ্রহ-নক্ষত্র উদ্দেশ্য, যা দৃশ্যত আকাশের সাথে সংযুক্ত বলে মনে হয়। কয়েকজন তাফসীরবিদ এ স্থলে অর্থ নিয়েছেন ‘বড় প্রাসাদ’ । অর্থাৎ যেসব গৃহ, যা আকাশে প্রহরী ও তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতাদের জন্য নির্ধারিত।

আয়াত-৩.
এবং প্রতিশ্রুত দিবসের এবং সেই দিবসের, যা উপস্থিত হয় ও যাতে উপস্থিত হয়। তিরমিযীর হাদীসের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে যে, وَٱلْيَوْمِ ٱلْمَوْعُودِ প্রতিশ্রুত দিনের অর্থ কিয়ামতের দিন وَشَاهِدٍ وَمَشْهُودٍ ‘শাহেদ’-এর অর্থ শুক্রবার দিন এবং ‘মাশহূদ’-এর অর্থ আরাফার দিন। (তিরমিযী শরীফ, ৫/৪০৬, হা. ৩৩৩৯, হাসান)

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা চারটি বস্তুর শপথ করেছেন।

এক. বুরূজবিশিষ্ট গ্রহ-নক্ষত্র আসমানের,

দুই. কিয়ামত দিবসের,

তিন. শুক্রবারের এবং

চার. আরাফার দিনের।

এসব শপথের সম্পর্ক এই যে, এগুলো আল্লাহ তা’আলার পরিপূর্ণ শক্তি, কিয়ামতের হিসাব-নিকাশ এবং শাস্তি ও প্রতিদানের দলিল। শুক্রবার ও আরাফার দিন মুসলমানদের জন্য পরকালের পুঁজি সংগ্রহের পবিত্র দিন। অতঃপর শপথের প্রতিউত্তরে সেই কাফেরদের অভিশাপ করা হয়েছে, যারা মুসলমানদেরকে ঈমানের কারণে অগ্নিতে পুড়িয়ে মেরেছে। এরপর মুমিনদের পরকালীন মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে।

আয়াত-৪. ৫.
ইন্ধনযুক্ত অগ্নির অধিকারীরা। অর্থাৎ যারা বড় বড় গর্ত খনন করে সেগুলোকে আগুন দ্বারা পূর্ণ করেছে এবং অনেক জ্বালানি নিক্ষেপ করে সে আগুনকে আরো প্রজ্বালিত করেছে, তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র ও অভিশপ্ত হয়েছে।

সূরা বুরুজ এর ঘটনা :

أَصْحَٰبُ ٱلْأُخْدُودِ ‘লম্বা গর্তের মালিকরা’ বলে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে, তাফসীরকারকগণ সে বিষয়ে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। সহীহ মুসলিম, জামে তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ ইত্যাদি হাদীসের কিতাবে এ প্রসঙ্গে যে ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়েছে তার সারকথা হলো,

অতীতকালে এক কাফের বাদশাহ ছিল। তার দরবারে থাকত এক জাদুকর। জাদুকরের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলে সে বাদশাহর নিকট আবেদন জানায়, আমাকে একজন বিচক্ষণ ছেলে দিন, তাকে আমি আমার শিক্ষা দিয়ে যাব, যাতে আমার পর এ বিদ্যা বিলীন হয়ে না যায় । কথানুযায়ী একটি ছেলে নির্ধারণ করা হলো। সে প্রতিদিন জাদুকরের কাছে গিয়ে জাদুবিদ্যা শিক্ষা করত। পথে এক খ্রিস্টান পাদ্রির বাড়ি ছিল। তখনকার সময় হিসেবে পাদ্রির ধর্মই সত্য ছিল । বালকটি তাঁর কাছেও আসা-যাওয়া শুরু করত। একদিন গোপনে সে পাদ্রির হাতে ঈমানদার হয়ে যায় এবং তাঁর সাহচর্যের ফলে আল্লাহর নৈকট্য ও অলৌকিকতার স্তরে উন্নীত হয়।

একদিন বালকটি দেখল, একটি বিরাট আকারের জন্তু (সিংহ বা অন্য কিছু) পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে আছে। যার ফলে মানুষ অস্থির। সে এক খণ্ড পাথর হাতে নিয়ে দোয়া করল, ‘হে আল্লাহ! পাদ্রির ধর্ম যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে জন্তুটি যেন আমার পাথরের আঘাতে মারা যায়।’ এই বলে সে পাথর নিক্ষেপ করে। আর এতেই জন্তুটি মারা যায়। চারদিকে হৈচৈ পড়ে যায় যে, ছেলেটি অদ্ভুত জ্ঞানের অধিকারী। একজন অন্ধ লোক তার কাছে আবেদন করে, আমার চক্ষু দুটি ভালো করে দাও। ছেলেটি বলল, ভালো করার ক্ষমতা আমার হাতে নেই। ভালো করার মালিক হলেন এক আল্লাহ । তবে হ্যাঁ, তুমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলে আমি দোয়া করব। আশা করা যায়, তিনি তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেবেন। বাস্তবে তা-ই হলো।

ধীরে ধীরে এসব ঘটনা বাদশাহর কানে পৌঁছে যায়। বাদশাহ ক্রুদ্ধ হয়ে পাদ্রি বালকটিকে তলব করে এবং সামান্য কথা-কাটাকাটির পর পাদ্রি ও অন্ধকে হত্যা করে । আর ছেলেটিকে একটি উঁচু পাহাড় থেকে নিক্ষেপ করে হত্যা করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু আল্লাহর কুদরতের খেলা, যারা তাকে পাহাড় থেকে নিক্ষেপ করার জন্য নিয়ে গেল, তারাই মারা গেল । ছেলেটির কিছুই হলো না। সে নিরাপদে ফিরে এলো।

তারপর বাদশাহ তাকে নদীতে ডুবিয়ে মারার নির্দেশ দেয়, কিন্তু সেখানেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো। যারা তাকে ডুবিয়ে মারার জন্য নিয়ে তারা সবাই ডুবে মারা গেল, আর ছেলেটি নিরাপদে ফিরে এলো। শেষ পর্যায়ে বালকটি বাদশাহকে বলল, আমাকে কীভাবে মারা যাবে তার উপায় অন্ধসহ আমি নিজেই বলে দিচ্ছি। আপনি সমস্ত মানুষকে একটি মাঠে একত্রিত করুন। সকলের সামনে আমাকে শূলিতে চড়ান এবং এই বলে আমার ওপর তীর নিক্ষেপ করুন “ بسم الله رب الغلام (বালকের পালনকর্তা আল্লাহর নামে) বাদশাহ তা-ই করল। এতে বালকটি তার প্রতিপালকের জন্য উৎসর্গ হয়ে গেল ।

এ অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করে উপস্থিত সকলে তৎক্ষণাৎ বলে উঠল, “”امنا برب الغلام” (আমরা বালকের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আনলাম)। লোকজন বাদশাহকে বলল, দেখলেন তো? যা ঠেকাতে চেয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত তা-ই ঘটল । আগে তো দু-একজন মুসলমান হতো। এখন বিপুলসংখ্যক লোক ইসলাম গ্রহণ করে ফেলেছে। বাদশাহ ক্রুদ্ধ হয়ে বড় বড় গর্ত খনন করে সেগুলোতে ভালোভাবে আগুন জ্বালিয়ে ঘোষণা দিল, ‘যারা ইসলাম ত্যাগ করবে না, তাদেরকে এ জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হবে।

শেষ পর্যায়ে সবাইকে আগুনে নিক্ষেপ করা হলো, কিন্তু কেউ ইসলাম ত্যাগ করতে সম্মত হয়নি। একজন মুসলমান মহিলাকে ধরে আনা হলো। তার কোলে দুগ্ধপোষ্য শিশু ছিল। সম্ভবত বাচ্চাটির কারণে মহিলাটি আগুনে নিক্ষিপ্ত হতে ইতস্ত করে। কিন্তু আল্লাহর হুকুমে শিশুটি চিৎকার করে বলে ওঠে, “”اماه ! إصبرى ، فإنك على الحق” অর্থাৎ আম্মাজান! ধৈর্য ধারণ করুন, আপনি সত্যের ওপর রয়েছেন। (সহীহ মুসলিম, ৪/২২৯৯, হা. ৩০০৫, মুসনাদে আহমাদ, ৩৯/৩৫১, হা. ২৩৯৩১)

আয়াত-৬. ৯.
যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের ক্ষমতার মালিক। আর আল্লাহ প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে নিশ্চিত সংবাদ প্রদানকারী। ওই মুসলমানদের অপরাধ শুধু এতটুকুই ছিল যে, তারা কুফরীর অন্ধকার থেকে বের হয়ে সর্বশক্তিমান ও সব ধরনের প্রশংসার অধিকারী এক আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল । আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সামান্য অংশও যাঁর ক্ষমতার বহির্ভূত নয় । আর তিনি প্রত্যেক বস্তুর ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র অংশ সম্পর্কেও অবগত। এমন আল্লাহর ইবাদতকারীদের যদি শুধু এ অপরাধে অগুনে পুড়িয়ে মারা হয় যে, তারা কেন শুধু তাঁরই ইবাদত করে, তখন কি এমন ধারণা করা যায় যে, এসব জুলুম ও নির্যাতনের কোনো জবাব দেওয়া হবে না? মহাপরাক্রমশালী সত্তা জালিমদের এমনিতেই ছেড়ে দেবেন?

আয়াত-১০.
লম্বা গর্তের মালিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং যারাই ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদের নিপীড়ন করেছে, তারপর (এ অপরাধের জন্য) তাওবা করেনি, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি এবং দহন যন্ত্রণা। কাফেরদের জাহান্নামের আজাব ও দহন যন্ত্রণার খবর দেওয়ার সাথে সাথে কুরআন বলেছে, ‘এই আজাব তাদের ওপর পতিত হবে, যারা এই গর্হিত কর্মের দরুন অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করেনি।’ এতে তাদেরকে তাওবার দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। হযরত হাসান বসরী রহ. বলেন, বাস্তবিকই আল্লাহর অনুগ্রহ ও কৃপার পারাপার নেই। তারা তো আল্লাহর ওলীগণকে জীবিত দগ্ধ করে তামাশা দেখেছে, আল্লাহ তা’আলা এর পরও তাদেরকে তাওবা ও মাগফেরাতের দাওয়াত দিচ্ছেন। (ইবনে কাসীর)

আয়াত-১১.
অবশ্যই যারা ঈমান এনেছে ও নেক আমল করেছে, তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত,যার তলদেশে প্রবাহিত হয় নদী-নহর। উহাই বড় সফলতা। অর্থাৎ দুনিয়ার জুলুম-নির্যাতন ও কষ্ট-ক্লেশে ঘাবড়ানো উচিত নয়, বরং চূড়ান্ত সফলতা ঈমানদারদের জন্যই । আর তা এমন সফলতা, যার তুলনায় দুনিয়ার আরাম-আয়েশ বা কষ্ট- ক্লেশ সবই তুচ্ছ।

আয়াত-১২.
নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তার পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন। এ কারণেই তিনি জালিম ও অপরাধীদের পাকড়াও করে কঠোর শাস্তি দেন।

আয়াত-১৩.
তিনিই প্রথমবার (সৃষ্টি) করেন এবং পুনরায় সৃষ্টি করেন। প্রথমবার তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেন এবং মৃত্যুর পর পুনরায় তিনিই সৃষ্টি করবেন। অতএব অপরাধীরা যেন এ ধোঁকায় না পড়ে যে, মৃত্যু যখন আমাদের নাম-নিশানাই মুছে ফেলবে, তখন আর কীভাবে আমাদের পাকড়াও করা হবে?

আয়াত-১৪.
আর তিনি অতি ক্ষমাশীল অত্যন্ত স্নেহপরায়ণ। তিনি একদিকে যেমন অতি কঠোর, অন্যদিকে তাঁর ক্ষমা ও ভালোবাসাও অসীম। তিনি তাঁর অনুগত বান্দাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করেন। তাদের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখেন এবং সব ধরনের দয়া-অনুগ্রহ ও স্নেহ-মমতায় তাদেরকে ধন্য করেন।

আয়াত-১৫ ১৬
যা চান, তা-ই করে ছাড়েন। নিজ জ্ঞান ও হিকমত অনুযায়ী তিনি যা করার ইচ্ছা করেন, তাতে আদৌ কোনো বিলম্ব হয় না। তাঁকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতাও কারো নেই । মোটকথা, তাঁর অনুগ্রহ লাভ করে গর্বিত হওয়া বা তাঁর প্রতিশোধ সম্পর্কে নির্ভয়ে থাকা কারো জন্য উচিত নয়। সর্বদা ‘ভয়ে’র সাথে ‘আশা’ এবং ‘আশা’র সাথে ‘ভয়’ মনে বদ্ধমূল রাখা জরুরি। উল্লিখিত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা’আলার মহাশক্তি ও ক্ষমতার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেছেন, তিনি যা ইচ্ছা তা-ই তিনি করতে পারেন। অতএব তাঁর বিরুদ্ধাচরণ যারা করে তাদের শিক্ষা নেওয়া দরকার। অতীতে মহান প্রভু খোদাদ্রোহীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ ফেরাউন ও নমরুদের ঘটনা উল্লেখ করেছেন।

আয়াত-১৭. ১৮. ১৯
ফেরাউন ও সামুদের? বরং কাফেররা মিথ্যারোপে রত আছে। তারা কীভাবে কুফরী করেছে এবং কীভাবে আজাবে গ্রেফতার হয়েছে? এতে কাফেরদের ভীত হওয়া উচিত ছিল । কিন্তু তারা মোটেই ভীত হয়নি। কাফেররা এসব ঘটনা দ্বারা কোনো শিক্ষা গ্রহণ করে না। আল্লাহর আজাবকে সামান্যও ভয় করে না। অধিকন্তু সেসব ঘটনা ও কুরআনকে অস্বীকার করার মধ্যে লিপ্ত রয়েছে।

আয়াত-২০.
আর আল্লাহ তাদেরকে চতুর্দিক থেকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। অস্বীকার করার মধ্যে কোনো লাভ নেই । এই অস্বীকারের শাস্তি তাদের ভোগ করতে হবে। আল্লাহর শাস্তি থেকে তারা রেহাই পাবে না।

আয়াত-২১.
বরং তা সম্মানিত কুরআন। কুরআনকে অস্বীকার করা নিছক বোকামি। কুরআন অস্বীকার করার মতো কোনো পুস্তক নয়। তা ছাড়া কয়েকজন বোকা মানুষের অস্বীকার করার দ্বারা তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বও হ্রাস পাবে না। কুরআন অস্বীকার করার কোনো উপায় না থাকার বড় কারণ পরের আয়াতে উল্লেখ করেন।

আয়াত-২২.
যেখানে কোনো ধরনের কুরআন এক সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ রয়েছে। পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয় না। তারপর সেখান থেকে নিতান্ত হেফাজত ও গুরুত্ব সহকারে নবীর নিকট পৌঁছানো হয়। আর দুনিয়াতেও আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সংরক্ষণের এমন ব্যবস্থা রয়েছে, কোনো অপশক্তি যাতে কোনো ফাটল ধরাতে সক্ষম না হয়।
অতঃপর আয়াতে মহান প্রভু বলেন, ‘আমি স্বয়ং এই উপদেশ গ্রন্থ অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।’ সূরা হিজর-৯

যেকোনো ধরনের পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও শয়তানের ছোঁয়া থেকে আল্লাহ তা’আলা এই পবিত্র গ্রন্থকে সংরক্ষণ করবেন। আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন তাকে এই সংরক্ষণ কাজে সুযোগ দেবেন। প্রতিটি মুসলমানের তা কর্তব্য কাজ। লক্ষ লক্ষ মানবের বুকে মহান প্রভু এই কুরআন গেঁথে দিয়েছেন। আর লাওহে মাহফুজে তো চিরন্তন সংরক্ষণ আছেই। এই লাওহে মাহফুজ আল্লাহর আরশের ওপরে অথবা ডানে। যার দৈর্ঘ্য ভূমি থেকে আকাশ ও প্রস্থ পূর্ব থেকে পশ্চিম সমতুল্য। আল্লাহর কুদতের মহিমায় তা সব ধরনের অপবিত্র হস্তক্ষেপ হতে সংরক্ষিত।

নির্দেশনা :

১. জীবন চলার পথে যেকোনো ধরনের বিপদ-আপদের সম্মুখীন হলে তা ধৈর্যের মাধ্যমে সমাধান করা। এতে আল্লাহ পাক খুশি হয়ে তাকে সাওয়াব দান করবেন।
২. মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন হতে নিজেকে বিরত রাখা। আল্লাহ তা’আলা জালিমদের ছাড় দেন না।
৩. সব ধরনের অপকর্ম থেকে বেঁচে আল্লাহর ইবাদত বেশি বেশি করে তাঁর নৈকট্য অর্জন করা জরুরি বিষয়। কারণ আল্লাহ তা’আলা সৎকর্ম সম্পাদনকারীদের ভালোবাসেন।
৪. আল্লাহর বাণী কুরআন সন্দেহাতীত গ্রন্থ । আল্লাহ স্বয়ং এর সংরক্ষক।

আরো পড়ুন :

৮৬.সূরা তারিক سورة الطارق Surah Tariq এর তাফসির ও শানে নুযুল

৮৭.সূরা আল আলা سورة الاعلى Surah Al A’la এর তাফসির ও শানে নুযুল

৮৮.সূরা আল গাশিয়াহ سورة الغاشية Surah Al Ghashiyah এর তাফসির ও শানে নুযুল

ট্যাগ সমূহ : সূরা বুরুজ অর্থ সহ, সূরা বুরুজ এর তাফসীর,সূরা বুরুজ এর শানে নুযুল, সূরা বুরুজ আয়াত ১২, সূরা বুরুজ বাংলা উচ্চারণ, সূরা বুরুজ তেলাওয়াত, سورة البروج, সূরা বুরুজ তাফসীর, সূরা বুরুজ এর শানে নুযূল,সূরা বুরুজ এর ঘটনা, সূরা বুরুজ আয়াত ১০, সূরা বুরুজ আয়াত ১৪,সূরা আল বুরুজ, সূরা বুরুজ, সূরা আল বুরুজ বাংলা উচ্চারণ, সূরা আল বুরুজ আয়াত ১২, সূরা আল বুরুজ কখন নাযিল হয়, ৮৫ নং সূরা, সূরা আল বুরুজ এ কয়টি বিষয়ে শপথ করা হয়েছে, surah al buruj, surah al buruj transliteration, surah al burooj pdf, surah al buruj in english, surah al buruj bangla,সূরা বুরুজের ঘটনা, সূরা বুরুজ, সূরা বুরুজের তাফসীর, সূরা বুরুজ এর ঘটনা, সূরা বুরুজ বাংলা উচ্চারণ, সূরা বুরুজ বাংলায়, সূরা বুরুজ আয়াত ১৪,سوره البروج, حل درس سورة البروج للصف الرابع, تفسير سورة البروج للاطفال, সূরা বুরুজ অর্থ সহ, সূরা বুরুজ এর তাফসীর,সূরা বুরুজ এর শানে নুযুল, সূরা বুরুজ আয়াত ১২, সূরা বুরুজ বাংলা উচ্চারণ, সূরা বুরুজ তেলাওয়াত, سورة البروج, সূরা বুরুজ তাফসীর, সূরা বুরুজ এর শানে নুযূল,সূরা বুরুজ এর ঘটনা, সূরা বুরুজ আয়াত ১০, সূরা বুরুজ আয়াত ১৪,সূরা আল বুরুজ, সূরা বুরুজ, সূরা আল বুরুজ বাংলা উচ্চারণ, সূরা আল বুরুজ আয়াত ১২, সূরা আল বুরুজ কখন নাযিল হয়, ৮৫ নং সূরা, সূরা আল বুরুজ এ কয়টি বিষয়ে শপথ করা হয়েছে, surah al buruj, surah al buruj transliteration, surah al burooj pdf, surah al buruj in english, surah al buruj bangla,সূরা বুরুজের ঘটনা, সূরা বুরুজ, সূরা বুরুজের তাফসীর, সূরা বুরুজ এর ঘটনা, সূরা বুরুজ বাংলা উচ্চারণ, সূরা বুরুজ বাংলায়, সূরা বুরুজ আয়াত ১৪,سوره البروج, حل درس سورة البروج للصف الرابع, تفسير سورة البروج للاطفال,

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top