আজানের নিয়ম,দোয়া,বাংলা উচ্চারণ ও ফজিলত

আজানের নিয়ম,দোয়া,বাংলা উচ্চারণ ও ফজিলত

আজানের নিয়ম, দোয়া, বাংলা উচ্চারণ ও ফজিলত

আজান শব্দটি আরবি ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ “শুনানো” বা “আহ্বান করা”। ইসলামে, আজান হলো মুসলমানদের নামাজের জন্য বিশেষ আহ্বান। দিনের নির্ধারিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য মুয়াজ্জিন মসজিদের মিনার থেকে উচ্চস্বরে আযান দেন। যিনি আজান দেন তাকেই মুয়াজ্জিন বলা হয়। নামাজের যেমন গুরুত্ব রয়েছে, ঠিক তেমনি আজানেও গুরুত্ব রয়েছে। নিচে আজানের নিয়ম, আজানের ফযিলত, আজানের জবাব,দোয়া ও আজানের বাংলা উচ্চারণ দেওয়া হলো-

আজানের নিয়ম

আজান হলো মুসলিমদের নামাজের জন্য ডাকা। মুসলিমদের নামাজের সময় হলে মসজিদের মিনার থেকে মুয়াজ্জিন আজান দেন। হাদিসে রয়েছে, “যখন আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান পালিয়ে যায় এবং যতক্ষণ আযান শেষ না হয় ততক্ষণ সে ফিরে আসে না।” (বুখারী)। তাই আজানের নিয়ম মেনে আজান দেওয়া উত্তম।

আজান দেওয়ার নিয়ম:

  • আজানের পূর্বে ওযু করা সুন্নত। তবে ওযু ছাড়াও আযান দেওয়া জায়েয।
  • মুয়াজ্জিনের উচিত কাবা শরীফের দিকে মুখ করে দাঁড়ানো।
  • আজানের সময় উঁচু স্থানে দাঁড়ানো উত্তম।
  • আউয়াল ওয়াক্তে আযান দেবে, দেরি করবে না।
  • প্রতিটি বাক্য ধীর ও শান্তভাবে, স্পষ্টভাবে এবং জোরে উচ্চারণ করবে।
  • ‘হাইয়্যা আলাস-সালাহ’ বলার সময় মুখমণ্ডল ডান দিকে এবং ‘হাইয়্যা আলফালাহ’ বলার সময় মুখমণ্ডল বামদিকে ঘুরাবে, তবে দেহ ঘুরাবে না।

আজানের ফজিলত ও গুরুত্ব

আযান কেবল মুসলমানদের নামাজের জন্য ডাক নয়, বরং এটি একটি মহান ইবাদতও বটে। আযানের বহু ফজিলত রয়েছে এবং প্রতিটি মুসলমানের উচিত নিয়মিতভাবে আযানের জবাব দেওয়া এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত থাকা। যার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ফজিলত হলো-

১. আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন-

لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النَّدَاءِ وَالصَّفِ الْأَوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلَّا أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوا

অর্থ: মানুষ যদি জানতো আযান দেওয়া এবং প্রথম কাতারে নামায আদায়ের ফযিলতকী, তাহলে অবশ্যই তারা এটি করার মতো সুযোগ পেতে লটারি দিত। সহিহ বুখারি: ৬১৫; সহিহ মুসলিম: ৪৩৭, সুনানে নাসাঈ ২/২৩

২. আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন,

إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ أَدْبَرَ الشَّيْطَانُ وَلَهُ ضُرَاط ، حَتَّى لَا يَسْمَعَ التَّأْذِينَ

অর্থ: যখন আযান দেয়া হয় তখন শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পলায়ন করে, যে পর্যন্ত আযান শোনা না যায়। সহিহ বুখারি: ৬০৮; সহিহ মুসলিমঃ ৩৮৯, মুয়াত্তা মালেক ১/৬৯-৭০, সুনানে আবু নাউসঃ ৫১৬, সুনানে নাসাঈ ২/২১-২২।

৩. হযরত মুআবিয়া রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন-

الْمُؤَذِّنُونَ أَطْوَالُ النَّاسِ أَعْنَاقَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ .

অর্থ: কেয়ামতের দিন সকল মানুষের চেয়ে মুআজ্জিনের গর্দান সবচেয়ে লম্বা হবে। অর্থাৎ তাদের মর্যাদা হবে অনেক বেশি। সহিহ মুসলিম: ৩৮৭, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৭২৫।

৮. হযরত আবু সাঈদ খুদরি রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন-

لَا يَسْمَعُ مَدَى صَوْتِ الْمُؤَذِنِ جِنَّ وَلَا إِنَّسُ وَلَا شَيْءٌ إِلَّا شَهِدَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

অর্থ: মুআজ্জিনের আওয়াজ মানুষ, জিন ও জীব-জন্তু যতদূর পর্যন্ত শুনতে পাবে, তারা সকলেই কেয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। সহিহ বুখারি: ৬০৯, সুনানে নাসাঈ ২/১২, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৯২৩।

৫. এছাড়াও আযানের ফযিলত প্রসঙ্গে আরো অনেক হাদিস রয়েছে।

আজানের জবাব ও দোয়া

আযানের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো মুসলমানদের নামাজের জন্য আহ্বান করা। নামাজ ইসলামের স্তম্ভ, এবং আযান মুসলমানদের এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করে। মুয়াজ্জিন যখন আজান দেন, তখন আমাদের উচিত তাঁর সাথে সঙ্গতি রেখে আজানের জবাব দেওয়া। এটি একটি সুন্নত এবং এর অনেক ফজিলত রয়েছে।

আজানের জবাব দেওয়ার নিয়ম:

  • আল্লাহু আকবার: যখন মুয়াজ্জিন “আল্লাহু আকবার” বলবেন, তখন আপনিও বলুন “আল্লাহু আকবার”।
  • আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ: যখন মুয়াজ্জিন “আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলবেন, তখন আপনিও বলুন “আশহাদু আনা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”।
  • আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ: যখন মুয়াজ্জিন “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ” বলবেন, তখন আপনিও বলুন “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদা রাসুলুল্লাহ”।
  • হাইয়া আলাস সালাহ: যখন মুয়াজ্জিন “হাইয়া আলাস সালাহ” বলবেন, তখন আপনি বলুন “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা সা’দাইকা ওয়া রিদাইকা”।
  • হাইয়া আলাল ফালাহ: যখন মুয়াজ্জিন “হাইয়া আলাল ফালাহ” বলবেন, তখন আপনি বলুন “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা সা’দাইকা ওয়া রিদাইকা”।
  • আল্লাহু আকবার: যখন মুয়াজ্জিন দ্বিতীয়বার “আল্লাহু আকবার” বলবেন, তখন আপনিও বলুন “আল্লাহু আকবার”।
  • লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ: যখন মুয়াজ্জিন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলবেন, তখন আপনিও বলুন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”।

আজানের পর দোয়া

হাদিসে রয়েছে, “যখন আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান পালিয়ে যায় এবং যতক্ষণ আযান শেষ না হয় ততক্ষণ সে ফিরে আসে না।” (বুখারী) তাই আজানের পর নিম্নলিখিত দোয়া পড়া উত্তম-

اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ الْمُبَارَكَةِ، وَالصَّلَاةِ الْعَامَّةِ، أَعْطِنَا مَا سَأَلْنَا وَزِدْ عَلَيْهِ مِنْ فَضْلِكَ، كَرَمِكَ، وَجُودِكَ، أَحْسَنَ مَا أَنْتَ بِهِ عَالِمٌ، فَإِنَّكَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ.

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহিদ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াছ ছালাতিল ক্বায়িমাহ, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদিলাতা ওয়াদ দারজাতার রফিআতা ওয়াবআসহু মাকামাম মাহমুদানিল্লাজি ওয়াআত্তাহু।

এই দোয়াটির ব্যাখ্যা:

  • এই দোয়াটিতে, আমরা আল্লাহ্‌কে আহ্বান করছি যে তিনি আমাদের আযানের সময় করা প্রার্থনাগুলো কবুল করুন এবং আমাদের যা চেয়েছি তা দান করুন।
  • আমরা আল্লাহ্‌কে আরও অনুরোধ করছি যে তিনি আমাদের অনুরোধের চেয়েও বেশি দান করুন, তাঁর অনুগ্রহ, কৃপা ও উদারতা থেকে।
  • আমরা স্বীকার করছি যে আমরা যা চাই তা সর্বদা আমাদের জন্য সর্বোত্তম নাও হতে পারে। তাই আমরা আল্লাহ্‌কে অনুরোধ করছি যে তিনি আমাদের যা সবচেয়ে ভালো তা দান করুন, আমাদের জ্ঞানের চেয়েও বেশি।
  • শেষে, আমরা আল্লাহ্‌র দয়ার উপর জোর দিচ্ছি এবং তাঁকে সর্বোত্তম দয়ালু হিসেবে স্মরণ করছি।

এই দোয়াটির গুরুত্ব:

  • এই দোয়াটি একটি নবী ﷺ প্রদত্ত দোয়া।
  • এই দোয়াটি আযানের পর পড়ার জন্য একটি বিশেষ ফজিলত রয়েছে।
  • এই দোয়াটিতে, আমরা আল্লাহ্‌র কাছে আমাদের চাহিদা পূরণের জন্য আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করছি।

আজানের জবাব দেওয়ার ফজিলত:

  • আজানের জবাব দেওয়া একটি সুন্নত।
  • আজানের জবাব দেওয়ার ফলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়।
  • আজানের জবাব দেওয়া আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম।
  • আজানের জবাব দেওয়া মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক।
  • হাদিসে রয়েছে, “যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের সাথে আজানের প্রতিটি শব্দ উচ্চারণ করবে, সে জান্নাতে যাবে।” (আবু দাউদ)
  • অন্য হাদিসে রয়েছে, “আজান ও ইকামতের মাঝে যে দোয়া করা হয়, তা ফেরত দেওয়া হয় না।” (মুসনাদে আহমদ)
  • আরও বর্ণিত হয়েছে, “মুয়াজ্জিনের সাথে সঙ্গতি রেখে আজানের জবাব দেওয়া একজন মুসলমানের উপর واجب।” (ইবনে মাজাহ)

আজানের জবাব দেওয়ার সময় কিছু বিষয় মনে রাখা উচিত

  • আজানের জবাব মনোযোগ দিয়ে এবং শ্রদ্ধার সাথে দিতে হবে।
  • আজানের জবাব জোরে এবং স্পষ্টভাবে দিতে হবে।
  • আজানের জবাব দিচ্ছেন তখন অন্য কোন কাজ করা যাবে না।
  • আজানের জবাব দিচ্ছেন তখন হাসি-ঠাট্টা করা যাবে না।

আজানের বাংলা উচ্চারণ

১. আল্লাহু আকবার (৪ বার):

  • উচ্চারণ: আল্লা-হু আক-বার
  • অর্থ: আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ

২. আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (২ বার):

  • উচ্চারণ: আশ-হা-দু আল্লা ইলা-হা ইল্লা-ল্লাহ
  • অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই।

৩. আশহাদু আন্না মোহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ (২ বার):

  • উচ্চারণ: আশ-হা-দু আন্না মো-হাম-মা-দা-র রা-সু-লুল্লাহ
  • অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল।

৪. হাইয়া আলাস সালাহ (২ বার):

  • উচ্চারণ: হাই-য়া আ-লা-স সা-লাহ
  • অর্থ: নামাজের জন্য এসো।

৫. হাইয়া আলাল ফালাহ (২ বার):

  • উচ্চারণ: হাই-য়া আ-লা-ল ফা-লা-হ
  • অর্থ: মুক্তির জন্য এসো।

৬. আল্লাহু আকবার (২ বার):

  • উচ্চারণ: আল্লা-হু আক-বার
  • অর্থ: আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ

৭. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (১ বার):

  • উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লা-ল্লাহ
  • অর্থ: আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই।

বিঃদ্রঃ: ফজরের নামাজের আজানে প্রথম ‘আল্লাহু আকবার’ এর পর ‘আসসালাতু খাইরুম মিনান্নাউম’ (ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম) বলা হয়। আজানের সময় প্রতিটি বাক্য দু’বার করে উচ্চারণ করা হয়। ‘হাইয়া আলাস সালাহ’ ও ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বলার সময় মুয়া’জ্জিন ডান ও বাম দিকে মাথা ঘোরান।

আজান শোনার সময় আমাদের করণীয়:

  • আল্লাহু আকবার শুনলে: ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা।
  • আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ শুনলে: ‘আশহাদু আনা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা।
  • আশহাদু আন্না মোহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ শুনলে: ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদা রাসুলুল্লাহ’ বলা।
  • হাইয়া আলাস সালাহ শুনলে: ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা সা’দাইকা ওয়া রিদাইকা’ বলা এবং নামাজের প্রস্তুতি নেওয়া।
  • হাইয়া আলাল ফালাহ শুনলে: ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা সা’দাইকা ওয়া রিদাইকা’ বলা এবং নামাজের প্রস্তুতি নেওয়া।

আযান ও ইমামতির মাঝে কোনটি বেশি ফযিলতের

আযান ও ইমামতির মাঝে কোনটি বেশি ফযিলতের- এ ব্যাপারে চারটি উক্তি রয়েছে:
২. ইমামতি করা উত্তম।
১. আযান দেয়া উত্তম।
৩. উভয়টি সমান।
৪. যদি ইমামতির হক সম্পর্কে ভালো করে নিজে জানে এবং তার মধ্যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য থাকে, তাহলে ইমামতি করা উত্তম। অন্যথায়, আযান দেয়াই উত্তম।

আযানের পদ্ধতি

আযানের শব্দমালা আমরা সকলে জানি। ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর মাযহাব অনুযায়ী আযানের মধ্যে (তারজি’) উত্তম। তারজি’ বলা হয়- উঁচু আওয়াজে চার বার আল্লাহু আকবার বলার পর নিজে ও পাশের ব্যক্তি শুনতে পায় এভাবে নিচু আওয়াজে (আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) দুইবার এবং (আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ) দুইবার বলার পর আবার পিছনে ফিরে গিয়ে আস্তে বলা উক্ত চারটি বাক্যকে উঁচু আওয়াজে বলবে। হানাফিদের মতে, এটি সুন্নাত নয়। (হেদায়া: ১/৮৭)

হানাফিদের মতে, আল্লাহর রাসুল সাঃ -এর মুজাজিন বিশাল রাখি, তারজি করতেন না। এছাড়াও আজান সম্পর্কে প্রসিদ্ধ হাদিসসমূহে তারজি’র কথা নেই। বরং আযানের বাক্যগুলো দুইবার করে বলার কথা আছে। সুনানে তিরমিয়িতে (১৯৪)

আবদুল্লাহ বিন যায়েদ রাযি. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাঃ -এর আযান ও ইকামত ছিলো জোড়া জোড়া শব্দে। বর্তমানে দুনিয়ার কোথাও কেউই তারজি করে না। আজানের মধ্যে تثويب (তাসভিব)ও সুন্নাত। তাসভিব হলো- ফযরের আজানে (হাইয়্যা আলাল ফালাহ এর পর দুইবার (আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম) ‘ঘুম থেকে নামায উত্তম’ বলা । তারজি’ ও তাসভিবের ব্যাপারে অনেক প্রসিদ্ধ হাদিস রয়েছে। তারজি’ ও তাসভিব ছেড়ে দিলে আযান শুদ্ধ হবে। তবে এরূপ করা অনুত্তম।

যাদের আযান সহিহ নয়

অবুঝ শিশু, মহিলা ও কাফেরের আযান শুদ্ধ হবে না। বুঝমান বালকের আযান শুদ্ধ হবে। যদি কোনো কাফের আযান দেয় এবং “আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” ও “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” বলে, তাহলে সঠিক মাজহাব অনুযায়ী এর মাধ্যমে সে মুসলমান হয়ে যাবে। আমাদের কোনো কোনো উলামায়ে কেরামের মতে, মুসলমান হবে না। অবশ্য তার আযান কারো মতেই সহিহ হবে না।

কারণ, আজানের শুরুটা ইসলাম গ্রহণের আগে ছিলো । প্রথমে তাকে মুসলমান হতে হবে এরপর আযান দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে ফিকহের কিতাবে আরো অনেক মাসআলা-মাসায়েল বর্ণিত আছে। সেগুলো আলোচনার স্থান এটি নয়।

আজানের শর্তসমূহ

ইসলামে, আযানের সহীহতা নির্ধারণের জন্য কিছু শর্ত পূরণ করা আবশ্যক। যদি কোন ব্যক্তি এই শর্তগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার আযান সহিহ হবে না।

আযানের সহীহতার শর্তাবলী:

  1. মুসলিম হওয়া: আযান দেওয়ার জন্য অবশ্যই মুসলিম হতে হবে।
  2. বুঝতে পারা: আযানের অর্থ বুঝতে হবে এবং শব্দগুলো সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে হবে।
  3. স্বচ্ছ উচ্চারণ: আযানের শব্দগুলো স্পষ্ট ও স্বচ্ছভাবে উচ্চারণ করতে হবে।
  4. সুর: আযানের সুর মধুর ও আকর্ষণীয় হতে হবে।
  5. সময়:নির্ধারিত সময়ে আযান দিতে হবে।
  6. মনোযোগ: আযান দেওয়ার সময় পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে এবং অন্য কোন কাজে মনোযোগ দেওয়া যাবে না।
  7. উচ্চ স্থান:উঁচু স্থান থেকে আযান দেওয়া উত্তম।
  8. ওযু: আযান দেওয়ার আগে ওযু করা সুন্নত।

যদি কোন ব্যক্তি এই শর্তগুলোর মধ্যে কোনটি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার আযান সহিহ হবে না। তবে, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, আযানের সহীহতা নির্ধারণের বিষয়টি শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন। আমাদের উচিত আযান দেওয়ার সময় সর্বোচ্চ চেষ্টা করা যাতে সব শর্ত পূরণ হয় এবং আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।

কিছু বিষয় মনে রাখা উচিত:

  • কোন ব্যক্তির আযান সহিহ নয় বলে মনে করলে তার বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া বা তাকে হেয় করা ঠিক নয়।
  • বরং, তাকে ভুল শুধরে দেওয়া এবং সঠিকভাবে আযান দিতে শেখানো উচিত।
  • আযান শোনার সময় আমাদের মনোযোগ দিয়ে শুনা উচিত এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।

আরো পড়ুন : জিকিরের ফজিলত ও গুরুত্ব

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top