
হজ্জ কাকে বলে
হজ্জ মুসলিম উম্মাহর মাঝে ঐক্যের সেতুবন্ধন রচনায় একটি তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয। হজ্জ ইসলামের অন্যতম রুকন ও ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। এটি একটি ফরয ইবাদত। যা সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের উপর ফরয। এর গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমনি ফযীলতও সীমাহীন। পৃথিবীতে যত নেক আমল রয়েছে তন্মধ্যে হজ্জ শ্রেষ্ঠতম। রাসূল (ছাঃ) অন্য সকল আমলের উপর হজ্জের মর্যাদাকে পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তের দূরত্বের সাথে তুলনা করেছেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ্জ পালনকারীকে গুনাহমুক্ত নবজাতকের ন্যায় বলা হয়েছে। কবুল হজ্জের পুরস্কার জান্নাত। হজ্জের প্রতিটি কর্ম সম্পাদনের জন্য রয়েছে পৃথক ফযীলত ও মর্যাদা।
হজ্জ এর পরিচয় :
হজ্জ–এর আভিধানিক অর্থ :
১. সংকল্প করা।
২. ইচ্ছা করা।
৩. সাক্ষাৎ করা।
৪. মহৎ জিনিসের প্রতি ইচ্ছা করা।
হজ্জ-এর শরয়ী সংজ্ঞা :
অর্থাৎ, নির্দিষ্ট কার্যাবলির দ্বারা সম্মানের সাথে বায়তুল্লাহ যেয়ারতের ইচ্ছা করাকেই হজ্জ্ব বলে।
এহইয়াউল উলুম গ্রন্থকার বলেন- অর্থাৎ, মহান আল্লাহর নৈকট্যলাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কার্যাবলির মাধ্যমে সম্মানিত বায়তুল্লাহ যেয়ারতের সংকল্প করার নামই হজ্জ্ব।
হজ্জ ফরয হওয়ার সময়কাল :
হজ্জ্ব ফরজ হওয়ার সময়কালের ব্যাপারে আলেমদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। যেমন-
১. ইমামুল হারামাইন, ইবনুল জুয়ী ও জমহুর ওলামার মতে, হজ্জ নবম হিজরীতে ফরয করা হয়েছে।
২. আল্লামা রাফেয়ীর মতে, হজ্জ ষষ্ঠ হিজরীতে ফরয হয়।
৩. আল্লামা ওয়াকেদী বলেন, হজ্জ পঞ্চম হিজরীতে ফরয হয়েছে। কেননা হযরত দিমাম ইবনে সালাবা পঞ্চম হিজরীতে মদিনায় এসে হজ্জের কথা বলেছেন।
৪. আল্লামা মাওয়ারদী (র) বলেন, অষ্টম হিজরীতে হজ্জ্ব ফরজ হয়েছে।
৫. কতিপয় মুহাদ্দিসগনের মতে, হজ্জ্ব সপ্তম হিজরীতে ফরজ হয়।
৬. কিছু আলেমের মতে, হজ্জ্ব হিজরতের পূর্বে মক্কায় ফরজ হয়েছে।
উল্লেখ্য, যে সকল মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিক ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম এবং নবম হিজরীকে হজ্জ ফরয হওয়ার সময়কাল মনে করেন, তাঁরা اتِمُّوا الحَجِّ وَالْعُمْرَةَ لِلّهِ আয়াতটি অবতীর্ণের প্রেক্ষাপটকে দলীল হিসেবে পেশ করেন।
সিদ্ধান্ত : নবম হিজরীর শেষদিকে হজ্জ ফরয হয়। কেননা, পবিত্র কুরআনের আয়াত- وَلِلّهِ عَلَى النَّاسِ حِةُ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً অবতীর্ণ হয় নবম হিজরীর শেষের দিকে। সে বছর রাসূল (স) হযরত আবু বকরকে আমীরুল হজ্জ মনোনীত করে হজ্জব্রত পালনের জন্য পাঠান এবং পরবর্তী বছর তথা দশম হিজরীতে তিনি হজ্জ আদায় করেন।
হজ্জ কি প্রত্যেক বছর পালন করতে হবে
না প্রত্যেক বছর পালন করতে হবে না। হাদিসে এসেছে-
হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (স) আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। ভাষণে তিনি বললেন, হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের ওপর হজ্জ ফরয করা হয়েছে। অতএব তোমরা হজ্জ পালন কর। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি প্রত্যেক বছর পালন করতে হবে? রাসূল (স) চুপ থাকলেন। এমনকি লোকটি একই বিষয়ে তিন বার জিজ্ঞেস করল। অতঃপর রাসূল (স) বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তবে প্রতিবছর হজ্জ পালন করা য়াজিব হয়ে যেত, যা পালন করা তোমাদের পক্ষে সম্ভব হতো না।
অতঃপর তিনি বললেন, আমি তোমাদের ক্ষেত্রে যা কিছু ছেড়ে দেই তা বলা হতে আমাকে বিরত রাখ (এ নিয়ে অনাবশ্যক প্রশ্ন করো না)। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের নবীদের অধিক প্রশ্ন করা এবং তাঁদের সাথে মতবিরোধ করার কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে।অতএব আমি যখন তোমাদেরকে কোনো বিষয় নির্দেশ দেই তখন তোমরা তা সাধ্যমতো পালন করবে, আর যখন কোনো বিষয় থেকে নিষেধ করি তখন তা হতে তোমরা বিরত থাকবে। (মুসলিম)
মহান আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (স)-এর প্রদর্শিত আদেশ ও নিষেধাবলি বিনাবাক্যে মাথা পেতে নেয়াই প্রকৃত মুমিনের কাজ। আর অধিক প্রশ্ন ও অনর্থক বাড়াবাড়ি কষ্ট এবং ধ্বংসের কারণ।
আরো পড়ুন :
থুথু গিলে ফেললে কি রোজা ভেঙ্গে যাবে ?
ভুল করে খেয়ে ফেললে কি রোজা হবে ?
রমজানের রোজা কত হিজরীতে ফরজ হয়েছে ?
রমজান মাসে রাসূল সাঃ কি কি করতেন
যাদের উপর যাকাত ফরজ তার বিস্তারিত বর্ণনা
ট্যাগ সমূহ : হজ্জ কাকে বলে,হজ্জ অর্থ কি,হজ্জ কি প্রত্যেক বছর পালন করতে হবে,হজ্জ ফরয হওয়ার সময়কাল,হজ্জ এর পরিচয়,হজ্জ কি,হজ্জ শব্দের অর্থ কি,হজ্জ কাকে বলে,হজ্জ অর্থ কি,হজ্জ কি প্রত্যেক বছর পালন করতে হবে,হজ্জ ফরয হওয়ার সময়কাল,হজ্জ এর পরিচয়,হজ্জ কি,হজ্জ শব্দের অর্থ কি |