সূরার পরিচয় :
সূরার নাম : সূরা ফীল | সূরার অর্থ : হস্তি বা হাতি |
সূরা নং : ১০৫ | রুকু সংখ্যা : ১ |
আয়াত সংখ্যা : ৫ | সিজদা সংখ্যা : ০ |
শব্দ সংখ্যা : ২৩ | শ্রেণী : মাক্কী |
বর্ণ সংখ্যা : ৯৬ | পারার সংখ্যা : ৩০ |
সূরা ফীল سورة الفيل Sura fil এর তাফসির ও শানে নুযুল
بسم الله الرحمن الرحيم ”শুরু করছি আল্লাহ তা’আলার নামে; যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।” |
(١)- أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِأَ صْحَٰبِ ٱلْفِيلِ (১) আপনি কি দেখেননি আপনার রব হস্তিবাহিনীর সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন? |
(٢)-أَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِى تَضْلِيلٍ (২) তিনি কি তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেননি? |
(٣)-وَأَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا أَبَابِيلَ (৩) তিনি তাদের ওপর প্রেরণ করেছেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। |
(٤)- تَرْمِيهِم بِحِجَارَةٍ مِّن سِجِّيلٍ (৪) যারা তাদের ওপর পাথরের কংকর নিক্ষেপ করছিল । |
(٥)-فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّأْكُولٍۭ (৫) অতঃপর, তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণসদৃশ করে দেন। |
শাব্দিক বিশ্লেষণ
أَلَمْ تَرَ : শব্দটির মূল হলো راى (দেখা, দেখতে পাওয়া, উপলব্ধি করা) ক্রিয়া, বর্তমানকাল, মধ্যম পুরুষ, পুংলিঙ্গ, একবচন। تَرَ অর্থ: আপনি দেখেছেন। أَلَمْ تَرَ অর্থ: আপনি কি দেখননি।
فَعَلَ : শব্দটির মূল হলো فعل (করা, কোনো কাজ করা) অর্থ: সে করেছে। ক্রিয়া, অতীতকাল, প্রথম পুরুষ, পুংলিঙ্গ, একবচন। كَيْفَ فَعَلَ অর্থ: তিনি কেমন ব্যবহার করেছেন।
يَجْعَلْ : শব্দটির মূল হলো جعل (করা, বানানো, তৈরি করা, সৃষ্টি করা) يَجْعَلْ অর্থ: তিনি করেন। ক্রিয়া, প্রথম পুরুষ, পুংলিঙ্গ, একবচন। أَلَمْ يَجْعَلْ অর্থ: তিনি কি করেননি?
كَيْدَهُمْ : كَيْدَ (কৌশল, ষড়যন্ত্র, প্রতারণা) বিশেষ্য এবং বাক্যে কর্ম হিসেবে ব্যবহৃত كَيْدَهُمْ অর্থ: তাদের ষড়যন্ত্র ।
أَرْسَلَ : শব্দটির মূল হলো ارسال (পাঠানো, প্রেরণ করা) أَرْسَلَ (তিনি পাঠালেন) ক্রিয়া, অতীতকাল, প্রথম পুরুষ, পুংলিঙ্গ, একবচন।
تَرْمِيهِم : শব্দটির মূল হলো رهى (নিক্ষেপ করা, ছুড়ে মারা) ترهى (সে নিক্ষেপ করে) ক্রিয়া,
প্রথম পুরুষ, স্ত্রীলিঙ্গ, একবচন। تَرْمِيهِم অর্থ: সে তাদের ওপর নিক্ষেপ করে।
بِحِجَارَةٍ : বিশেষ্য, বহুবচন অর্থ: পাথরসমূহ। একবচন হলো حجر আর بِحِجَارَةٍ অর্থ: পাথর (সমূহ) কে।
سِجِّيلٍ : বিশেষ্য, অর্থ: ভেজা মাটি আগুনে পুড়ে তৈরি করা কংকর। مِّن سِجِّيلٍ অর্থ: কংকরের।
كَعَصْفٍ : শব্দটি বিশেষ্য, كَعَصْفٍ অর্থ: ভুসি। অর্থ: ভুসির মতো।
مَّأْكُولٍۭ : শব্দটি কর্ম-বিশেষ্য, অর্থ: ভক্ষণকৃত, যা খাওয়া হয়েছে, ভক্ষিত, খাদ্য। كَعَصْفٍ مَّأْكُولٍۭ অৰ্থ: ভক্ষণকৃত তৃণ ভুসির মতো।
আলোচ্য বিষয়
সূরা ফীলে সংক্ষেপে ইয়েমেনের বাদশাহ আবরাহা কাবা ঘরে আক্রমণ এবং আবরাহার ধ্বংসের ঘটনা আলোচিত হয়েছে। সমগ্র আরববাসীর প্রবল বিশ্বাস ছিল যে, আবরাহার আক্রমণ থেকে কাবা ঘরের হেফাজতের কাজটি কোনো দেব-দেবী কর্তৃক হয়নি। এটা আল্লাহ তা’আলারই অবদান। এ কারণে কুরাইশরা মুগ্ধ ও প্রভাবিত হয়ে বেশ কয়েক বছর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করেনি।
এ ঘটনার উল্লেখ করে আরববাসীকে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, হযরত মুহাম্মদ স. যে দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছেন তা অন্যান্য সব মাবুদকে পরিত্যাগ করার দ্বীন এবং একমাত্র লা-শরীক আল্লাহর বন্দেগী ছাড়া আর কিছুই নয়। সাথে সাথে এদিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, হযরত মুহাম্মদ স.-এর প্রচারিত এ সত্য দ্বীনকে যদি তারা দমন করতে চেষ্টা করে তাহলে যে আল্লাহ হস্তী বাহিনীকে ধ্বংস করেছিলেন তারা সেই আল্লাহর ক্রোধের শিকার হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।
সূরা ফীল এর শানে নুযুল
সেই হস্তী বাহিনী যারা বাদশাহ আবরাহার নেতৃত্বে পবিত্র কাবা ঘরকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য হাতি নিয়ে এসেছিল এবং ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষুদ্র পাখির প্রস্তরাঘাতে যারা ধ্বংস হয়ে যায়। তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ দুঃসাহসিকতা ও ভয়াবহ পরিণতি স্মরণ করানোর জন্যই এই সূরাটি অবতীর্ণ হয়।
সূরা ফীল এর তাফসির
আয়াত-১
আপনি কি দেখেননি; আপনার রব হস্তী বাহিনীর সাথে কিরূপ আচরন করেছেন? এ আয়াতে أَلَمْ تَرَ ‘আপনি কি দেখেননি বলা হয়েছে। অথচ এটা রাসূলুল্লাহ স.-এর জন্মের কিছুদিন পূর্বেকার ঘটনা। কাজেই তিনি এ ঘটনা দেখার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু যে ঘটনা এরূপ নিশ্চিত যে, তা ব্যাপকভাবে প্রত্যক্ষ করা হয়, সে ঘটনার জ্ঞানকেও ‘দেখা’ বলে ব্যক্ত করা হয়। যেন এটা চাক্ষুস ঘটনা।
আয়াত-২
তিনি কি তাদের (কাবাগৃহ ধ্বংস করার) কৌশল ব্যর্থ করে দেননি? আবরাহা তার হস্তী বাহিনী নিয়ে আল্লাহর ঘর কাবাকে ধ্বংস করে নিজেদের কৃত্রিম কাবা আবাদ করতে চেয়েছিল । আল্লাহ তাদের সব কৌশল ও চক্রান্তসহ তাদেরকে ধ্বংস করে দেন।
আয়াত-৩. ৪.
এবং তিনি তাদের ওপর طَيْرًا أَبَابِيلَ (ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি) পাঠিয়ে দেন। যারা তাদের ওপর পাথর নিক্ষেপ করেছিল ।
أَبَابِيلَ শব্দটি বহুবচন। অর্থ পাখির ঝাঁক। কোনো বিশেষ পাখির নাম নয়। এই পাখি আকারে কবুতর অপেক্ষা সামান্য ছোট ছিল। এজাতীয় পাখি পূর্বে কখনো দেখা যায়নি।
সূরা ফীল এর ঘটনার বিবরণ
ইয়েমেনে আবরাহা নামের একজন শাসক ছিল । সে দেখল সবাই হজ করতে কাবা ঘরের দিকে যায়। তাই সে প্রত্যক্ষ করল যেহেতু মক্কাবাসী কাবা ঘরের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য, সম্মান, প্রভাব-প্রতিপত্তির দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আবরাহা চিন্তা করল, নিজে যদি আরেকটি কাবা তৈরি করে তাহলে লোকেরা তার ঘরকে পরিদর্শন করতে আসবে। সেও সম্মানিত হবে। আর তার ব্যবসাও ভালো হবে। তাই সে অনেক অর্থ খরচ করে ঘর তৈরি করল। চারদিকে প্রচার করল তার নবনির্মিত কাবায় সকলকে হজ করতে আসার জন্য। কিন্তু কেউ তার ডাকে সাড়া দেয়নি। তাই সে অপমানিত বোধ করল এবং প্রতিশোধের নেশায় বিরাট সৈন্যবাহিনী গঠন করে। মক্কা অভিমুখে যাত্রা করল, খানায়ে কাবাকে ধ্বংস করার জন্য।
মক্কায় কাবা ঘরের দেখাশোনা করে কুরাইশ বংশ। তাদের নেতা এবং কাবা ঘরের মুতাওয়াল্লি ছিলেন মহানবী স.-এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব । আবরাহার সৈন্যরা তাঁর নির্দেশে আব্দুল মুত্তালিবের উটগুলো ধরে নিয়ে যায়। যাতে কুরাইশরা প্রথমে হামলা করে। কিন্তু আব্দুল মুত্তালিব তাদের কাছে যান একা এবং নিজের উটগুলো ফেরত চান। আবরাহা এ কথা শুনে অট্টহাসি ফেটে পড়ে আর বলে, তুমি নিজের উট ফিরিয়ে নিতে এসেছো অথচ একটু পরে আমি তোমাদের কাবা ঘর ধ্বংস করে ফেলব। জবাবে আব্দুল মুত্তালিব বললেন, আমি উটের মালিক তাই উট নিতে এসেছি, যিনি কাবার মালিক তিনি তাঁর কাবা নিজেই রক্ষা করবেন। তারপর তিনি তাঁর উট নিয়ে চলে গেলেন।
কোনো বাধা ছাড়াই কাবা ঘর ধ্বংস করা যাবে ভেবে আবরাহা নিশ্চিন্তে বিশাল বাহিনী নিয়ে কাবার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। ঠিক ওই মুহূর্তে ঝাঁকে ঝাঁকে অসংখ্য ছোট ছোট পাখি দুই পায়ে দুটি এবং মুখে একটি করে পাথর নিয়ে আবরাহার বাহিনীকে হামলা করে এবং আজব এই পরিস্থিতিতে আবরাহাসহ তার পুরো বাহিনী ধ্বংস হয়ে যায় । তাদের পরিস্থিতি পরবর্তী আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।
আয়াত-৫
তারপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত ভুসিতে পরিণত করেছেন। পশু যেভাবে কোনো কিছু চিবিয়ে শেষ পর্যায়ে যখন ফেলে দেয়, তাকে ভক্ষিত ভুসি বলা হয়। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ভক্ষিত ভুসি ও তৃণসদৃশ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন, চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
নির্দেশনা
১. জালিম ও খোদাদ্রোহী শক্তিগুলো যত বড় অস্ত্র শক্তি আর লোকবলের অধিকারী হোক না কেন মহান আল্লাহর অশেষ শক্তির কাছে তারা অক্ষম এবং অসহায় ।
২. সত্যের দাওয়াত যদি কেউ বল প্রয়োগের মাধ্যমে দমন করতে চায় তাহলে যে আল্লাহ হস্তী বাহিনীকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন তাঁরই ক্রোধের শিকার হবে ইহকালে অথবা পরকালে।
ট্যাগ সমূহ : সূরা ফীল, sura fil,سورة الفيل,سورة الفيل للاطفال,سوره الفيل,সূরা ফীল এর বাংলা উচ্চারণ সহ, সূরা ফীল এর শানে নুযুল,সূরা ফীল এর বাংলা উচ্চারণ,সূরা ফীল এর তাফসির, সূরা ফীল এর অর্থ,সূরা ফীল এর ঘটনা, সূরা ফীল এর অর্থ সহ,সূরা ফীল এর শিক্ষা,সূরা ফীল তাফসির,সূরা ফীল এর দারস,সূরা ফীল কোথায় অবতীর্ণ হয়, সূরা ফীল এর শিক্ষণীয় দিক, sura fil, sura fil bangla,sura fil bangla uccharon, sura fil bangla tafsir,تفسير سورة الفيل,সূরা ফীল, sura fil,سورة الفيل,سورة الفيل للاطفال,سوره الفيل,সূরা ফীল এর বাংলা উচ্চারণ সহ, সূরা ফীল এর শানে নুযুল,সূরা ফীল এর বাংলা উচ্চারণ,সূরা ফীল এর তাফসির,সূরা ফীল এর ঘটনা, সূরা ফীল এর অর্থ সহ,সূরা ফীল এর শিক্ষা,sura fil, sura fil bangla,sura fil bangla uccharon, sura fil bangla tafsir,تفسير سورة الفيل |
আরো পড়ুন :
১০৬.সূরা কুরাইশ سورة قريش Surah quraysh এর তাফসির ও শানে নুযুল
১০৭.সূরা মাউন سورة الماعؤن Sura maun এর তাফসীর ও শানে নুযুল
১০৮.সূরা কাউসার سورة الكوثر Sura kawsar এর তাফসির ও শানে নুযুল
১০৯.সূরা কাফিরুন سورة الكافرون sura kafirun এর তাফসীর ও শানে নুযুল