নামাজ পড়ার নিয়ম ও বিস্তারিত নির্দেশিকা

নামাজ পড়ার নিয়ম,
নামাজ পড়ার নিয়ম ও বিস্তারিত নির্দেশিকা,
নামাজ অর্থ কি,
নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি,
নামাজের ফরজের গুরুত্ব,
নামাজের সুন্নাত কয়টি কি কি,
নামাজে দাঁড়ানোর সময়ের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুন্নত,
রুকুর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুন্নত,
সিজদার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুন্নত,
নামাজে বসার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুন্নত,
নামাযের রুকন কয়টি ,
নামাজের রুকন কেন গুরুত্বপূর্ণ,
নামাজের রুকন কী কী,
নামাযের ওয়াজিব কয়টি ,
নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে বলা,
নিয়ত কী,
নিয়ত নিয়ে ভুল ধারণা,
নামাজের কাতারে দাঁড়ানোর নিয়ম,
কাতারে দাঁড়ানোর সময় যে দুআ পড়বে,
নামাযে দাঁড়ানোর সময়ের দুআ,
ইকামতের সময়ের দুআ,
তাকবিরে তাহরিমা,
ইমাম সাহেব উঁচু আওয়াজে তাকবির বলবে শিক্ষা,
নামাযে তাকবিরের পরিমাণ,
তাকবিরে তাহরিমার পরের দুআ,
প্রথমে সানা পড়বে এরপর আউযুবিল্লাহ পড়বে,
নামাযে আউযুবিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব,
প্রথম রাকাতে আউযুবিল্লাহ না পড়লে,
আউযুবিল্লাহ পড়ার পরে কিরাত পড়া,
প্রতি রাকাতে রুকু একটি এবং সেজদা দুইটি ফরজ হওয়ার কারণ কি,
রুকু ও সিজদার হাকীকত,
রুকু ও সিজদার পদ্ধতি,
রুকুর দুআ,
আল্লাহু আকবার মদ বা লম্বা করে পড়বে কি না,
রুকু-সিজদায় কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরুহ,
রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় এবং সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সময় যে দুআ পড়বে,
সিজদার দুআ,
সংযোজন  সেজদা করার দোয়াসমূহ,
নামাযে দীর্ঘ কিয়াম উত্তম নাকি রাকাত বেশি পড়া উত্তম,
সিজদা থেকে মাথা ওঠানোর সময় এবং সিজদার মাঝে যে দুআ পড়তে হয়,
দ্বিতীয় সিজদাতেও প্রথম সিজদার ন্যায় দুআ করবে,
দ্বিতীয় সিজদা থেকে তাকবির বলে মাথা ওঠাবে নাকি আগে বসবে,
সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ বসা সুন্নাত,
দ্বিতীয় রাকাতের যিকির,
সালাম ফেরানোর বিভিন্ন পদ্ধতি,

নামাজ পড়ার নিয়ম ও বিস্তারিত নির্দেশিকা

নামাজ ইসলামের একটি মূলস্তম্ভ এবং প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ ইবাদত। নামাজ সঠিকভাবে আদায় করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা জরুরি। নিচে বিস্তারিত নির্দেশিকা দেওয়া হলো-

সুচিপত্র:

নামাজ অর্থ কি

নামাজ বা নামায (ফার্সি: نماز) শব্দ আর সালাত বা সালাহ (আরবি: صَلاة স্বলাহ্, স্বলাত্, আরবি: الصلاة আস-সালাত) শব্দটি ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতকে নির্দেশ করে। এর আভিধানিক অর্থ হলো দোয়া, রহমত বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। অর্থাৎ, আল্লাহর কাছে নিজের ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাওয়া, তার দয়া ও রহমত কামনা করা এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।

আরবি ভাষায় নামাজকে সালাত বলা হয়। এর আভিধানিক অর্থ হলো দোয়া, রহমত, ক্ষমা প্রার্থনা করা ইত্যাদি। কোরআনে ইসলামী আনুষ্ঠানিক প্রার্থনা হিসেবে সালাত শব্দটিকেই ব্যবহার করা হয়েছে।

নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি

নামাজের ফরজ মোট ১৩টি। এই ১৩টি ফরজই নামাজকে বৈধ করে তোলে। এই ফরজগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

  • নামাজের আহকাম: এইগুলো হলো নামাজের বাহিরের ফরজ কাজগুলো।
  • নামাজের আরকান: এইগুলো হলো নামাজের ভিতরের ফরজ কাজগুলো।

নামাজের আহকাম (৭টি): আহকাম শব্দটি বহুবচন, একবচনে হুকুম। এগুলো হলো সালাতের বাইরের ফরয সালাতের শর্তসমূহকে আহকাম বা আরকান বলা হয়ে থাকে। সালাতের আহকাম ৭টি। নামাজের আহকাম (৭টি) হলো নামাজ আদায়ের জন্য কিছু শর্ত বা বিধি। এই বিধিগুলো পালন না করলে নামাজ বৈধ হবে না।

১. শরীর পাক (অর্থাৎ সালাতের আগে ওযু করে পবিত্র হতে হবে, আর গোসল ফরয হলে আগে গোসল করে নিতে হবে),
২. পোশাক পাক,
৩. জায়গা পাক,
৪. সময় হওয়া,
৫. সতর ঢাকা,
৬. কিবলামুখী হওয়া,
৭. নিয়ত করা।

অপরদিকে সালাত ফরয হওয়ার জন্য বিজ্ঞ ফকীহগণ আরও ৩টি শর্ত যোগ করেছেন। আর তা হলো- (ক) ইসলাম গ্রহণ (খ) হুঁশ-জ্ঞান থাকা ও (গ) প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।

দলীল: (এক) বুখারী: ১৩৫, ইফা ১৩৭, আধুনিক: ১৩২, (দুই) আবু দাউদ ৩৭৮-৩৭৯, (তিন) বুখারী: ২২০, ইফা ২২০, আধুনিক ২১৪, (চার) সূরা নিসা: ১০৩, (পাঁচ) সূরা আ’রাফ: ৩১, আহমদ: ২/১৮৭, (ছয়) সূরা বাকারা ১৪৪, মুসলিম: ৩৯৭, (সাত) বুখারী: ১। উপরে বর্ণিত যেকোন একটা হুকুম বা শর্ত জেনে-শুনে বাদ দিলে সালাত আদায় হবে না। তবে ভুলে কোনটা বাদ গেলে সালাত আদায় হয়ে যাবে।

নামাজের আরকান (৬টি): নামাজের আরকান (৬টি) হলো নামাজের ভিতরের অংশগুলো, যা ছাড়া নামাজ বৈধ হবে না। এই আরকানগুলো হলো: নামাজের ভেতরে ৬টি কাজ ফরজ। এগুলোকে আরকান বলা হয়। নিচে দেওয়া হলো-

১. তাকবিরে তাহরিমা অর্থাৎ শুরুতে আল্লাহু আকবার বলা। সূত্র : সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত : ৩। বুখারি ১/১০১, হাদিস : ৮৩৩, মুসলিম ১/১৭৬, হাদিস : ৪১১, ৪১২, তিরমিজি ১/৫৫, হাদিস : ২৩৮
২. দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া। সূত্র : সুরা বাকারা, আয়াত : ২৩৮। বুখারি ১/১৫০, হাদিস : ১১১৭, তিরমিজি ১/৬৬, হাদিস : ৩০৪ (হাদিসটি সহিহ)
৩. কিরাত পড়া সূত্র : সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ২০। বুখারি ২/৯২৪, হাদিস : ৬২৫১, তিরমিজি ১/৬৬, ৬৭, হাদিস : ৩০২, ৩০৩ (হাদিসটি সহিহ)]


৪. রুকু করা। সূত্র : সুরা হজ, আয়াত : ৭৭। বুখারি ১/১৫০, হাদিস : ১১১৩, ১১১৪, মুসলিম ১/১৭৭, হাদিস : ৪১২
৫. দুই সিজদা করা। সূত্র : সুরা হজ, আয়াত : ৭৭। বুখারি ১/১০১, হাদিস : ৭৩৩, মুসলিম ১/১৭৬, হাদিস : ৪১১
৬. শেষ বৈঠক (নামাজের শেষে তাশাহহুদ পরিমাণ বসা) সূত্র : আবু দাউদ : ১/১৩৯, হাদিস : ৯৭০ (সহিহ)

বি.দ্র. : নামাজি ব্যক্তির নিজস্ব কোনো কাজের মাধ্যমে (যেমন, সালাম ফেরানো ইত্যাদি) নামাজ থেকে বের হওয়াও একটা ফরজ।

    নামাজের ফরজের গুরুত্ব:

    • নামাজের ফরজগুলো ছাড়া নামাজ বৈধ হবে না।
    • ফরজগুলো সঠিকভাবে আদায় না করা হলে নামাজ কবুল হবে না।
    • ফরজগুলো আদায় করার মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর আদেশ পালন করে।
    • নামাজের কোনো ফরজ বাদ পড়লে নামাজ বাতিল হয়ে যায়। সাহু সিজদা করলেও নামাজ সহিহ হয় না।

    নামাজের সুন্নাত কয়টি কি কি

    রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে যেভাবে নামাজ আদায় করতেন, সেভাবে নামাজ আদায় করা আমাদের জন্য সুন্নত। তিনি যেসব কাজ নামাজে করতেন, সেগুলোর প্রতি ফরজ ও ওয়াজিবের মতো গুরুত্ব দিতেন। তবে, এগুলো ফরজ বা ওয়াজিব নয়, বরং সুন্নাত।

    নামাজে দাঁড়ানোর সময়ের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুন্নত

    (১) উভয় পায়ের আঙুল কিবলামুখী করে রাখা এবং উভয় পায়ের মাঝখানে চার আঙুল, ঊর্ধ্বে এক বিঘত পরিমাণ ফাঁক রাখা।

    (২) তাকবিরে তাহরিমার সময় চেহারা কিবলার দিকে রেখে নজর সিজদার জায়গায় রাখা এবং হাত ওঠানোর সময় মাথা না ঝুঁকানো। (৩) উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা কানের লতি পর্যন্ত ওঠানো। (৪) হাত ওঠানোর সময় আঙুলগুলো ও হাতের তালু কিবলামুখী রাখা। (৫) আঙুলগুলো স্বাভাবিক রাখা।

    অর্থাৎ একেবারে মিলিয়ে না রাখা, আবার বেশি ফাঁক ফাঁক করেও না রাখা। (৬) ইমামের তাকবিরে তাহরিমা বলার সঙ্গে সঙ্গে মোক্তাদির তাকবিরে তাহরিমা বলা। তবে লক্ষ রাখতে হবে, যেন ইমামের তাকবিরে তাহরিমার আগে মোক্তাদির তাকবিরে তাহরিমা বলা শেষ না হয়।
    এরূপ হলে মোক্তাদির নামাজ হবে না।

    (৭) হাত বাঁধার সময় ডান হাতের তালু বাঁ হাতের পিঠের (পাতার) ওপর রাখা। (৮) ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা গোলাকার বৃত্ত বানিয়ে বাঁ হাতের কবজি ধরা। (৯) অবশিষ্ট তিন আঙুল বাঁ হাতের ওপর স্বাভাবিকভাবে বিছিয়ে রাখা। (১০) নাভির নিচে হাত বাঁধা। (১১) ছানা পড়া।

    (বুখারি, হাদিস : ৭৩৪, ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/৭৩, তিরমিজি, হাদিস : ৩০৪, ২৫২ নাসায়ি, হাদিস : ৮৯২, মুস্তাদরাক : ১৭৬১, ৮৫৬, মুসলিম, হাদিস : ৩৯১, আবু দাউদ, হাদিস : ৭২৬, ৭৫৬, ৭৭৫, ফাতহুল কাদির : ১/২৫০)

    নামাজের কেরাতের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুন্নত

    (১) প্রথম রাকাতে ছানা পড়ার পর পূর্ণ আউজুবিল্লাহ পড়া। (২) প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা ও সুরা মেলানোর আগে পূর্ণ বিসমিল্লাহ পড়া। (৩) সুরা ফাতিহার পর সবার জন্য নীরবে ‘আমিন’ বলা। (৪) ফরজ নামাজের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে শুধু সুরা ফাতিহা পড়া। (বুখারি, হাদিস : ৭৭৬, ৭৮০, মুসলিম, হাদিস : ৭৩৩, আবু দাউদ, হাদিস : ৭৬৪)

    রুকুর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুন্নত

    (১) তাকবির বলা অবস্থায় রুকুতে যাওয়া। (২) উভয় হাত দ্বারা হাঁটু ধরা। (৩) হাতের আঙুলগুলো ফাঁক করে ছড়িয়ে রাখা। (৪) উভয় হাত সম্পূর্ণ সোজা রাখা, কনুই বাঁকা না করা। (৫) পায়ের গোছা, হাঁটু ও ঊরু সম্পূর্ণ সোজা রাখা। হাঁটু সামনের দিকে বাঁকা না করা। (৬) মাথা, পিঠ ও কোমর সমান রাখা এবং পায়ের দিকে নজর রাখা। (৭) রুকুতে কমপক্ষে তিনবার রুকুর তাসবিহ পড়া। (৮) রুকু থেকে ওঠার সময় ইমামের ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’, মোক্তাদির ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ এবং একাকী নামাজ আদায়কারীর উভয়টি বলা। (বুখারি, হাদিস : ৭৮৯, ৭৯০, ৮২৮, আবু দাউদ, হাদিস : ৭৩১, ৭৩৪, ৮৬৩, ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/১২)

    সিজদার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুন্নত

    (১) তাকবির বলা অবস্থায় সিজদায় যাওয়া। (২) হাঁটু থেকে আনুমানিক এক হাত দূরে উভয় হাত রাখা এবং হাতের আঙুলগুলো কিবলামুখী করে সম্পূর্ণরূপে মিলিয়ে রাখা। (৩) উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা বরাবর নাক রাখা। (৪) দুই হাতের মাঝে সিজদা করা এবং দৃষ্টি নাকের অগ্রভাগের দিকে রাখা। (৫) সিজদায় পেট ঊরু থেকে এবং উভয় বাহু পাঁজর থেকে পৃথক রাখা। (৬) কনুই মাটি ও হাঁটু থেকে পৃথক রাখা। (৭) সিজদায় কমপক্ষে তিনবার সিজদার তাসবিহ পড়া। (৮) তাকবির বলা অবস্থায় সিজদা থেকে ওঠা। [বুখারি, হাদিস : ৮০৩, ৮০৭, ৮২২, ৮২৫, মুসলিম, হাদিস : ৪০১, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৬৬২, ১৮৮৮২, ১৮৮৮০]

    আরো পড়ুন: কসর নামাজের নিয়ম ও কসর নামাজের বিধান

    নামাজে বসার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুন্নত

    (১) বাঁ পা বিছিয়ে তার ওপর বসা। ডান পা সোজাভাবে খাড়া রাখা। উভয় পায়ের আঙুলগুলো সাধ্যমতো কিবলার দিকে মুড়িয়ে রাখা। (২) উভয় হাত রানের ওপর হাঁটু বরাবর রাখা এবং দৃষ্টি দুই হাঁটুর মাঝ বরাবর রাখা। (৩) ‘আশহাদু’ বলার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা একসঙ্গে মিলিয়ে গোলাকার বৃত্ত বানানো এবং অনামিকা ও কনিষ্ঠাঙ্গুলিদ্বয় মুড়িয়ে রাখা এবং ‘লা ইলাহা’ বলার সময় শাহাদাত আঙুল সামান্য উঁচু করে ইশারা করা। অতঃপর ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় আঙুলের মাথা সামান্য ঝুঁকানো। হাঁটুর সঙ্গে না লাগানো।

    (৪) আখেরি বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়ার পর দরুদ শরিফ ও দোয়া মাছুরা পড়া। (৫) উভয় সালাম কিবলার দিক থেকে শুরু করা এবং সালামের সময় দৃষ্টি কাঁধের দিকে রাখা। (৬) ইমামের উভয় সালামে মোক্তাদি, ফেরেশতা ও নামাজি জিনদের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা। (৭) মোক্তাদিদের উভয় সালামে ইমাম, অন্যান্য মুসল্লি, ফেরেশতা ও নামাজি জিনদের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা।

    (৮) একাকী নামাজি ব্যক্তি শুধু ফেরেশতাদের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা। (৯) মোক্তাদিদের ইমামের সালাম ফেরানোর পরপরই সালাম ফেরানো। (১০) ইমামের দ্বিতীয় সালাম ফেরানো শেষ হলে মাসবুকের ছুটে যাওয়া নামাজ আদায়ের জন্য দাঁড়ানো। (বুখারি, হাদিস : ৮৩৪, ৮৩৮, মুসলিম, হাদিস : ৫৮২, ৪৩১, নাসায়ি, হাদিস : ১১৫৮, আবু দাউদ, হাদিস : ৭২৬, তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৭, মুসান্নাফ, হাদিস : ৩১৪৯, ৩১৪০, ৩১৫৬)

    নামাযের রুকন কয়টি ?

    নামাজের রুকনের সংখ্যা নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতে বিজ্ঞ ফকীহগণের মতে, সালাতের রুকন ১০টি।

    নামাজের রুকন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

    নামাজের রুকন হলো নামাজের ভিত্তি। এই রুকনগুলো ছাড়া নামাজ বৈধ হবে না। অর্থাৎ, এই রুকনগুলো যদি কোনোভাবে বাদ পড়ে যায়, তাহলে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে।

    নামাজের রুকন কী কী?

    নামাজের রুকন ১০টি হলো:

    1. দাঁড়িয়ে সালাত আদায়: ফরজ সালাতে সক্ষম অবস্থায় দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা।
    2. তাকবীরে তাহরীমা: প্রথম তাকবীর।
    3. সূরা ফাতিহা পাঠ: প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা।
    4. রুকু করা এবং রুকু থেকে উঠা।
    5. সিজদা এবং সিজদা থেকে উঠা।
    6. দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠক।
    7. শেষ বৈঠক ও তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়া।
    8. রুকনগুলো ধীরস্থিরভাবে আদায় করা।
    9. রুকন আদায়ে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা (অর্থাৎ ক্রমধারা অনুযায়ী একের পর এক রুকনগুলো আদায় করা )
    10. সালাম ফেরানো (ডানে ও বামে)।

    এর কোন একটা ফরজ ইচ্ছায় বা ভুলে বাদ পড়লে সালাত বাতিল হয়ে যাবে।

    নামাযের ওয়াজিব কয়টি ?

    নামাজের ওয়াজিব হলো নামাজের এমন কিছু অংশ যেগুলো বাদ দিলে নামাজ বাতিল হয়ে যায় না, তবে নামাজের কামালত (পূর্ণতা) নষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ, ওয়াজিবগুলো আদায় করলে নামাজ আরও কামিল হবে। নামাজের ওয়াজিবগুলো দেওয়া হলো:

    নামাযের ওয়াজিব আটটি, সেগুলো হচ্ছে-
    ১। তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অন্য তাকবীরগুলো বলা।
    ২। ইমাম ও একাকী নামায আদায়কারীর ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদা’ (যারা আল্লাহর প্রশংসা করেছেন আল্লাহ তাদের প্রশংসা শুনেছেন) বলা।
    ৩। ‘রাব্বা-না লাকাল হামদ’ (হে আমাদের রব্ব! প্রশংসা আপনারই জন্য) বলা।
    ৪। রুকুতে গিয়ে ‘সুবহানা রাব্বিআল আযিম’ (পবিত্রতা আমার সুমহান রব্বের জন্য) বলা।
    ৫। সেজদাতে গিয়ে ‘সুবহানা রাব্বিআল আ’লা’ (পবিত্রতা আমার সুউচ্চ রব্বের জন্য) বলা।
    ৬। দুই সেজদার মাঝখানে ‘রাব্বিগ ফির লি’ (হে আমার রব্ব! আমাকে ক্ষমা করুন) বলা।
    ৭। প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ পড়া।
    ৮। প্রথম বৈঠক।

    নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে বলা

    নামাজের নিয়ত নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে। কেউ কেউ মনে করেন, নিয়ত অবশ্যই জোরে বলতে হবে। আবার কেউ মনে করেন, মনে মনে নিয়ত করলেই হবে। আসুন বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করে দেখি।

    নিয়ত কী?

    নিয়ত আরবি শব্দ। যার অর্থ হলো- ইচ্ছা বা সংকল্প। আর ইচ্ছার স্থান হচ্ছে অন্তর। তা মুখে উচ্চারণ করার বাধ্যবাধকতা নেই। অন্তরের দৃঢ় সংকল্প ও ইচ্ছা করার নামই হলো নিয়ত।

    প্রত্যেক ইবাদত শুদ্ধ হওয়ার জন্যই নিয়ত শর্ত। নামাজের ন্যায় মহান ইবাদতের শুরুতেও নিয়ত আবশ্যক। আর নিয়ত হলো অন্তরে কোনো কাজের সংকল্প করা। আর তা শুধু অন্তরের কাজ, তাই যেকোনো ইবাদতের নিয়তের ক্ষেত্রেই আরবি বাংলা শব্দ উচ্চারণ নিষ্প্রয়োজন।

    নিয়ত নিয়ে ভুল ধারণা:

    • আরবি নিয়ত বাধ্যতামূলক নয়: অনেকে মনে করেন, নিয়ত অবশ্যই আরবি ভাষায় বলতে হবে। এটি ভুল ধারণা। নিয়ত যে কোন ভাষায় করা যাবে।
    • মুখে উচ্চারণ বাধ্যতামূলক নয়: নিয়ত মনে মনে করলেও হবে। মুখে উচ্চারণ করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
    • নির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহার: নিয়ত করার জন্য কোন নির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। উদ্দেশ্য পরিষ্কার থাকলেই চলবে।

    নামাজের নিয়ত একটি সহজ বিষয়। মনে মনে বা জোরে, যে কোন ভাষায় সহজ সরল ভাষায় উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে নিয়ত করা যাবে। নিয়ত করার জন্য কোন জটিল নিয়ম কানুন নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইখলাস বা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নামাজ আদায় করা।

    নামাজ পড়ার নিয়ম ও বিস্তারিত নির্দেশিকা

    নামাজের কাতারে দাঁড়ানোর নিয়ম

    নামাজের জামাতে দাঁড়ানোর সময় মুসল্লিদের তিনটি বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। ১. কাতার সোজা করে দাঁড়ানো। মুসল্লিরা যেন কেউ এগিয়ে কেউ পিছিয়ে না দাঁড়ায়। ২. কাতারের মাঝখানে ফাঁকা না রাখা। মুসল্লিরা যেন পরস্পরের সাথে মিলে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়। ৩. দুটি কাতারের মধ্যে অস্বাভাবিক দূরত্ব না রাখা। সেজদা করার জন্য যতটুকু জায়গা প্রয়োজন ততটুকু জায়গা রেখে কাতার তৈরি করা। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন,

    أَقِيْمُوا الصُّفُوْفَ وَ حَاذُوْا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَ سُدُّوْا الْخَلَلَ وَ لِيْنُوْا بِأَيْدِيْ اِخْوَانِكُمْ وَ لَاتَذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشّيْطَانِ وَ مَنْ وَصَلَ صَفّا وَصَلَهُ اللهُ وَ مَنْ قَطَعَ صَفّا قَطَعَهُ اللهُ.

    তোমরা কাতার সোজা কর। কাঁধসমূহকে বরাবর রাখ। ফাঁকা জায়গা পূর্ণ কর। তোমাদের ভাইদের হাতে তোমরা নরম হয়ে যাও এবং শয়তানের জন্য ফাঁকা জায়গা ছেড়ে দিয়ো না। যে কাতার মিলিয়ে দেয় আল্লাহ তাআলাও তাকে মিলিয়ে দেন। যে কাতার বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহ তাআলা তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেন। (সুনানে আবু দাউদ: ৬৬৬)

    আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন,

    اِنّ اللهَ وَ مَلٰئِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى الذِيْنَ يَصِلُوْنَ الصُّفُوْفَ وَ مَنْ سَدّ فُرْجَةً رَفَعَهُ اللهُ بِهَا دَرَجَةً.

    নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এবং ফেরেশতাগণ তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যারা কাতারসমূহকে সংযুক্ত করে। যে ব্যক্তি কাতারের ফাঁকা জায়গা পূর্ণ করে, এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৯৯৫)

    জামাতে কাতার সোজা রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে আরও বেশ কিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসুলের (সা.) বক্তব্য যেমন বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) কীভাবে সাহাবিদের কাতার সোজা করে দিতেন, সে ব্যাপারে সাহাবিদের বক্তব্যও বর্ণিত হয়েছে। এ হাদিসগুলো থেকে নামাজের জামাতে কাতার সোজা ও সংযুক্ত রাখার গুরুত্ব বোঝা যায়। কাতারের মাঝে ফাঁকা রেখে দাঁড়ানো যে অত্যন্ত অপছন্দনীয় তাও স্পষ্ট হয়।

    কাতারে দাঁড়ানোর সময় যে দুআ পড়বে

    হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাযি. থেকে ইবনুস সুন্নির কিতাবে বর্ণিত আছে-

    عَن سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَاص (رضى) أَنَّ رَجُلًا جَاءَ إِلَى الصَّلَاةِ وَرَسُوْلُ اللَّهِ (ﷺ) يُصَلِّي، فَقَالَ حِيْنَ إِنتَهى إِلَى الصَّفِ : اللَّهُمَّ آتِنِي أَفْضَلُ مَا تُونِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ ، فَلَمَّا قَضَى رَسُولُ اللَّهِ (ﷺ) الصَّلَاةَ قَالَ : ” مَنِ الْمُتَكَلِّمُ آنِفًا؟ ” قَالَ : أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ : إِذا يُعْقَرُ جَوَادُكَ وَتُسْتَشْهَدُ في سَبِيلِ اللهِ تَعَالَى

    অর্থ: হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাযি. বলেন জনৈক সাহাবি নামাজ আদায়ের জন্য আসলেন, তখন আল্লাহর রাসূল সাঃ ইমামতি করছিলেন। আগন্তুক সাহাবি নামাযের কাতারে দাঁড়ানোর পর বললেন:

    اللَّهُمَّ تِنِي أَفْضَلَ مَا تُؤْتِي عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ .

    উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আতিনি আফযালা মা তু’তিনি ইবাদাকাস-সালিহিন ।
    অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার নেককার বান্দাদের যে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত দান করে থাকেন, আমাকেও তা দান করুন।

    আল্লাহর রাসূল সাঃ নামায শেষে জিজ্ঞেস করলেন, একটু আগে কে উক্ত দুআ করেছিলো? ঐ সাহাবি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি। আল্লাহর রাসূল সাঃ বললেন, তোমার দ্রুতগামী ঘোড়াটি বধ করা হবে। তুমি আল্লাহর রাস্তায় শহিদ হবে। আমালুল ইয়াউম: ১০৬, ইবনুস সুন্নি, আমালুল ইয়াউম: ৯৩, নাসাঈ, তারিখে কাবির : ৬৯৬, বুখারি।

    নামাযে দাঁড়ানোর সময়ের দুআ

    ইবনুস সুন্নির কিতাবে বর্ণিত আছে—

    عَنْ أُمَّ رَافِعٍ أَنَّهَا قَالَتْ : يَا رَسُوْلَ اللهِ دُلَّتِيْ عَلَى عَمَلٍ يَأْجُرْنِي اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْهِ، قَالَ : يَا أَنَّ رَافِعٍ إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلَاةِ فَسَبِّحِى اللهَ تَعَالَى عَشْرًا، وَهَيْلِيْهِ عَشَرًا، وَاحْمَدِيْهِ عَشَرًا. وَكَبْرِيهِ عَشَرَا، وَاسْتَغْفِرِيْهِ عَشَرًا، فَإِنَّكَ إِذَا سَبِّحْتَ قَالَ : هَذَا لِي، وَإِذَا هَلَلْتَ قَالَ : هَذَا وإِذَا حَمِدَتَ قَالَ : هَذَا لِي وَإِذَا كَبَرْتَ قَالَ : هَذَا لِي وَإِذَا اسْتَغْفَرْتَ قَالَ : قَدْ فَعَلْتُ .

    অর্থ: হযরত উম্মে রাফে রাযি. বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি আমল শিখিয়ে দিন, যার সাওয়াব আল্লাহ তাআলা আমাকে দেবেন। আল্লাহর রাসূল সাঃ বললেন, হে উম্মে রাফে’ তুমি যখন নামাযে দাঁড়ানোর নিয়ত করবে তখন দশবার সুবহানাল্লাহ, দশবার আলহামদুলিল্লাহ, দশবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, দশবার আল্লাহু আকবার এবং দশবার ইস্তেগফার পড়বে। কেননা তুমি যখন সুবহানাল্লাহ বলবে, তখন আল্লাহ বলবেন, এটি আমার প্রাপ্য। যখন আলহামদুলিল্লাহ বলবে, তখন আল্লাহ বলবেন, এটি আমার প্রাপ্য। যখন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তখন আল্লাহ বলবেন, এটি আমার প্রাপ্য। যখন আল্লাহু আকবার বলবে, তখন আল্লাহ বলবেন, এটি আমার প্রাপ্য এবং যখন ইস্তেগফার পড়বে, তখন আল্লাহ বলবেন, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। আমালুল: ১০৭

    ইকামতের সময়ের দুআ

    ইমাম শাফেয়ী রহ., তাঁর ‘আল-উম্ম’ নামক কিভাবে নিজ সনদে একটি মুরসাল হাদিস বর্ণনা করেন যে,

    قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : أَطْلُبُوا اسْتِجَابَةَ الدُّعَاءِ عِنْدَ الْتِقَاءِ الْجُيُوشِ وَإِقَامَةِ الصَّلَاةِ وَنُرْوُولِ الْغَيْثِ

    অর্থ: আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন, তোমরা যুদ্ধের সময়, ইকামতের সময়, বৃষ্টি বর্ষণের সময় দুআ কর। এ সময়গুলোতে দুআ কবুল হয়। ইমাম শাফেরি রহ. বলেন, আমি একাধিক ব্যক্তি থেকে শুনেছি যে, ইকামত ও বৃষ্টির সময় দুআ কবুল হয়ে থাকে। কিতাবুল উম্ম ১/২২৩, ইমাম শাফেরি।

    তাকবিরে তাহরিমা

    তাকবিরে তাহরিমা বলা হয়- যে তাকবীরের মাধ্যমে নামায শুরু করা হয়। তাই এ তাকবীর ব্যতীত কোনো নামাযই সহিহ হবে না। কেউ যদি এ তাকবীর না বলেই নামায শেষ করে ফেলে, তাহলে তার পূর্ণ নামাযটাই বাতিল বলে গণ্য হবে। তাকবিরে তাহরিমা ইমাম শাফেয়ি রহ. সহ অনেকের মতে নামাযের অংশ ও রোকন। আবু হানিফা রহ. এর মতে এটা রোকন নয়। নামাযের শর্ত । তাকবিরে তাহরিমার শব্দ হলো اَللهُ أَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার) অথবা اللهُ الْأَكْبَرُ (আল্লাহুল আকবার) এই দুই শব্দ ইমাম শাফেয়ি রহ., আবু হানিফা রহ. ও অন্যান্য ইমামগণের মতে জায়েয। ইমাম মালেক রহ.-এর মতে দ্বিতীয় শব্দটির মাধ্যমে নামায শুদ্ধ হবে না।

    অতএব, সব ধরনের মতপার্থক্য থেকে اَللهُ أَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার) বলে নামায শুরু করাই উত্তম। কারণ এর দ্বারা নামায সহিহ হওয়ার ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই। এই শব্দ ছাড়া যেমন- (আল্লাহুল আজিম), (আল্লাহুল মুতাআলি), (আল্লাহু আ’জামু), (আল্লাহু আআযজু) (আল্লাহু আজাল্লু) অথবা, এ জাতীয় অন্য কোনো শব্দ দ্বারা নামায শুরু করলে, ইমাম শাফেয়ি রহ, সহ আরো অনেকের মতে নামায সহিহ হবে না।

    পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেন, নামায সহিহ হয়ে যাবে। আর যদি টা اَللهُ أَكْبَرُ(আকবার আল্লাহু) বলে এক্ষেত্রে শাফেরি মাজহাবের সঠিক বর্ণনা মতে সহিহ হবে না। তবে কেউ কেউ বলেন, সহিহ হবে। যেমন সঠিক বর্ণনা মতে, কেউ যদি নামাযের শেষে عَلَيْكُمُ السَّلَامُ(আলাইকুমুস সালাম) বলে, তাহলে সেটি সঠিক হবে।

    তাকবিরে তাহরিমা ও অন্যান্য যিকির এতটুকু উঁচু আওয়াজে পড়তে হবে যেন সে নিজে শুনতে পায়। নিজে শুনতে পায় না এরূপ আওয়াজে পড়লে নামায সহিহ হবে না। অবশ্য কথা বলতে না পারা বা এ জাতীয় কোনো সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির বিষয়টি ভিন্ন। এ বিষয়ে আলোচনা পূর্বে চলে গেছে।

    আরবি ভাষায় তাকবিরে তাহরিমা বলতে সক্ষম ব্যক্তি অন্যভাষায় তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে নামায আদায় করলে নামায শুদ্ধ হবে না। পক্ষান্তরে আরবীতে বলতে অক্ষম ব্যক্তির নামায সহিহ হবে। তবে তার জন্য আরবি ভাষা শিখে নেওয়া জরুরি। যদি শেখার ব্যাপারে অলসতা করে তাহলে তার নামায শুদ্ধ হবে না। আর যত দিন আরবি শেখার ক্ষেত্রে অনাগ্রহী থাকবে ততদিনের নামায পুনরায় পড়তে হবে।

    তাকবিরে তাহরিমা বলতে হবে কিছুটা দ্রুত। এটিই স্বীকৃত ও সঠিক মাযহাব। তবে কেউ কেউ টেনে বলার কথা বলেছেন। প্রথম মতটিই বিশুদ্ধ। বাকি তাকবিরের ক্ষেত্রে সঠিক মাযহাব মতে, মুস্তাহাব হলো পরবর্তী রোকনে যাওয়ার আগ পর্যন্ত টানা। কেউ কেউ বলেছেন, একদম না টানা। যেখানে টানার বিধান নেই সেখানে যদি কেউ টেনে তাকবির বলে বা টানার স্থানে যদি না টানে তাহলে নামায নষ্ট হবে না; তবে নামাযের ফযিলত কমে যাবে। (আল্লাহ) শব্দের লামের পরে টানার স্থান। এছাড়া তাকবিরের অন্য কোথাও না টানা।

    ইমাম সাহেব উঁচু আওয়াজে তাকবির বলবে শিক্ষা

    তাকবিরে তাহরিমা ও অন্যান্য তাকবির ইমাম সাহেব উঁচু আওয়াজে বলবে যেন মুক্তাদিরা শুনতে পায়। আর মুক্তাদিরা এতটুকু নিচু আওয়াজে বলবে যাতে নিজে শুনতে পায়। অবশ্য ইমাম যদি আস্তে বলে আর মুক্তাদিরা জোরে বলে তাহলে নামায বাতিল হবে না তাকবিরগুলো সহিহ-শুদ্ধভাবে শিখতে হবে। যেখানে টান নেই সেখানে টেনে বলবে না। যদি اَللهُ (আল্লাহ) শব্দের হামযা বার্তা أَكْبَرُ (আকবার) এর ‘বা’ টেনে বলে, তাহলে নামায অশুদ্ধ হবে।

    নামাযে তাকবিরের পরিমাণ

    দুই রাকাতবিশিষ্ট নামাযে ১১ বার তাকবির বলার বিধান রয়েছে। তিন রাকাতবিশিষ্ট নামাযে ১৭ বার তাকবির বলার বিধান রয়েছে। চার রাকাতবিশিষ্ট নামাযে ২২ বার তাকবির বলার বিধান রয়েছে। কেননা প্রতি রাকাতে পাঁচবার তাকবির বলতে হয়। যেমন রুকুর তাকবির, দুই সেজদা এবং সেজদা থেকে উঠার সময় চার তাকবির, তাকবিরে তাহরিমা, তাশাহ্হুদ পড়ে উঠার সময় তাকবির। তাকবিরে তাহরিমা ছাড়া বাকি তাকবিরগুলো সুন্নাত। যদি কেউ ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ছেড়ে দেয় তাহলে নামায নষ্ট হবে না। এর জন্য সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না। আর তাকবিরে তাহরিমা ফরয। এটা ছাড়া নামায সহিহ হবে না। এ ব্যাপারে কোনো মতবিরোধনেই। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।

    আরো পড়ুন: ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম

    তাকবিরে তাহরিমার পরের দুআ

    এ প্রসঙ্গে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সকল হাদিসের সমন্বয়ে নিচের দুআগুলো পড়া-

    اللهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا، وَسُبْحَانَ اللهِ بُكْرَةً وَأَصِيلًا وَجَهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ، إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَاتِ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، لَا شَرِيكَ لَهُ، وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ اللَّهُمَّ أَنتَ الْمَلِكُ لا إِلَهَ لِي إِلَّا أَنتَ. أَنْتَ رَبِّي وَأَنا عَبْدُكَ، فَلَمْتُ نَفْسِي، وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي ذُنُونِ جَمِيعًا إِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنتَ. وَاهْدِنِي لِأَحْسَنِ الْأَخْلَاقِ، لَا يَهْدِي لِأَحْسَنِهَا إِلَّا أنتَ. وَاصْرِفْ عَنِى سَيْئَهَا لا يَصْرِفُ سَيْتَهَا إِلَّا أَنتَ لبيك وَسَعْدَيْكَ، وَالْخَيْرُ كُله في يديك، وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ ، أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ ، تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ .

    উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল হামদুলিল্লাহি কাসিরা, ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতান ওয়া আসিলা। ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফান মুসলিমান ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা-শারিকা লাহু ওয়া বিযালিকা উমিরতু ওয়া আনা আউওয়ালুল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা আনতাল মালিকু, লা ইলাহা ইল্লা আনতা রাব্বি ওয়া আনা আবদুক।

    যালামতু নাফসি ওয়া’তারাফতু বি-যাম্বি, ফাগফিরলি যুনুবি জামিআন, লা ইয়াগফিরুযযুনুবা ইল্লা আনতা। ওয়াহদিনি লি- আহসানিল আখলাক, লা ইয়াহদি লি-আহসানিহা ইল্লা আনতা। ওয়াসরিফ আন্নি সাইয়িআহা, লা ইয়াসরিফু সাইয়িআহা ইল্লা আনতা। লাব্বাইকা ওয়া সা’দাইকা ওয়াল খাইরু কুল্লুহু ফি ইয়াদাইকা ওয়াশ শাররু লাইসা ইলাইকা। আনা বিকা ওয়া ইলাইকা, তাবারাকতা ওয়া তাআলাইতা, আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা ।

    অর্থ: আল্লাহ মহান, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি। আমি নিজেকে আসমান-যমিনের সৃষ্টিকর্তার দিকে তাওয়াজ্জুহ করলাম, একনিষ্ঠ ও অনুগত হয়ে। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয় আমার নামায, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু বিশ্বজাহানের প্রভু আল্লাহ তাআলার জন্য উৎসর্গিত। তার কোনো শরীক নেই। এটাই আমাকে (মানতে) নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে আর আমি মুসলমান। হে আল্লাহ! আপনিই সকল ক্ষমতার মালিক, আপনি ব্যতীত আর কোনো মাবুদ নেই।

    আপনি আমার প্রতিপালক এবং আমি আপনার বান্দা। আমি নিজের ওপর জুলুম করে ফেলেছি, নিজের গুনাহের কথা স্বীকার করছি। অতএব, আমার সমস্ত পাপ মাফ করে দিন। আপনি ব্যতীত আর কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। আমাকে উত্তম চরিত্র দান করুন, নিশ্চয় উত্তম চরিত্র আপনি ছাড়া আর কেউ দিতে পারে না। আমার থেকে বদআখলাকি দূর করুন, আপনি ছাড়া অন্য কেউ এটা দূর করতে পারে না। বান্দা হাজির, বান্দা এখানেই। সকল কল্যাণের চাবিকাঠি আপনার হাতে।

    আপনার দিকে মন্দের সম্বন্ধ হয় না। আমি আপনার তওফিকের মুখাপেক্ষী এবং আমার সব আশা-ভরসা আপনার কাছে। আপনি মহিমান্বিত ও মহান। আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি ও তাওবা করি ।

    এই দুআও পড়বে—

    اَللّهُمَّ بَاعِدُ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اَللّهُمَّ نَقِنِي مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اَللّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ.

    উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বায়িদ বাইনি ওয়া বাইনা খাতাইয়ায়া কামা বাআদতা বাইনাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিব। আল্লাহুম্মা নাক্কিনি মিনাল খাতাইয়া কামা ইয়ুনাক্কাস সাউবুল আবয়াদু মিনাদ্দানাস। আল্লাহুম্মাগ সিলনি মিন খাতাইয়ায়া বিস্সালজি ওয়াল মায়ি ওয়াল বারদি।

    অর্থ: হে আল্লাহ! আমার এবং আমার পাপের মধ্যখানে পূর্ব-পশ্চিমের মতো দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন। হে আল্লাহ! আমাকে পাপ থেকে পবিত্র করুন, যেভাবে সাদা জামাকে দাগমুক্ত করা হয়। হে আল্লাহ! আমাকে আমার পাপ থেকে বরফ, পানি ও শিশির দিয়ে ধুয়ে দিন। আবু দাউদ: ৪৪৬; তিরমিযী: ২৪৩; ইবনে মাযাহ: ৮০৬।

    উল্লিখিত সকল দুআই আল্লাহর রাসূল সাঃ থেকে সহিহ হাদিসে এসেছে। এছাড়াও এ ব্যাপারে আরো অনেক হাদিস রয়েছে। উল্লিখিত হাদিসে اَلشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ (আশশাররু লাইসা ইলাইকা) বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে, যার শাব্দিক অর্থ হলো : আল্লাহর থেকে অকল্যাণ আসে না। অথচ আহলে হক সকল উলামায়ে কেরামের মতে, ভালো-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে । হাদিসে বর্ণিত উক্ত কথাটির ব্যাখ্যা প্রয়োজন। উলামায়ে কেরাম এর কয়েকটি ব্যাখ্যা করেছেন—

    ১. وَالشَّرُّ لَا يَتَقَرَّبُ بِهِ إِلَيْكَ অর্থাৎ, মন্দ কাজ দ্বারা তোমার নৈকট্য লাভ করা যাবে না। এ ব্যাখ্যাটিই অধিক প্রসিদ্ধ। নজর ইবনে শুমাই ও পরবর্তী উলামায়ে কেরাম এটিকেই নিজের অভিমত বলে মত প্রকাশ করেছেন।
    ২. মন্দ তোমার দিকে উঠে না; বরং উত্তম কথাই তোমার কাছে উঠে।
    ৩. মন্দকে তোমার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে বলা হয় না, সম্মানের জন্য।
    ৪. আল্লাহর হিকমতের বিবেচনায় এটি মন্দ নয়। কারণ, তিনি কোনো কিছু অনর্থক সৃষ্টি করেননি ।

    উল্লিখিত দুআগুলো একাকী নামাযি ব্যক্তি ও ইমাম সবার জন্যই পড়া মুস্তাহাব। মুসল্লিরা বিরক্ত হলে ইমাম শুধু وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ থেকে وَجَهْتُ وَجْهِيَ পর্যন্ত পড়বে। অনুরূপভাবে একাকী নামাজি ব্যক্তি দ্রুত নামায পড়লে উক্ত দুআটি পড়বে। হানাফি মাজহাব মতে, আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত দুআটি পড়া উত্তম। (হেদায়া: ১/১০২):

    سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ

    উক্ত দুআগুলো ফরয ও নফল সব নামাযে পড়া মুস্তাহাব। প্রথম রাকাতে যদি ইচ্ছাকৃত বা ভুলবশত না পড়ে তাহলে পরবর্তীতে পড়বে না। যদি পড়ে তাহলে মাকরুহ হবে। তবে নামায নষ্ট হবে না। এমনিভাবে যদি তাকবিরে তাহরিমার পর সানা না পড়ে কিরাত শুরু করে দেয় এবং আউযুবিল্লাহ পড়ে ফেলে তাহলেও পড়বে না। মাসবুক ব্যক্তি নামায শুরু করার পর পড়ে নেবে। যদি এগুলো পড়তে গেলে সুরা ফাতিহা ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে দুআ না পড়ে সুরা ফাতিহা পড়বে। কারণ, সুরা ফাতিহা ওয়াজিব আর এটি পড়া সুন্নাত। আর যদি মাসবূক দাঁড়ানো ছাড়া অন্য কোন রোকনে জামাতে শরিক হয় তাহলে এ দুআগুলো পড়বে না। বরং ঐ রোকনের দুআই পড়বে।

    [ হানাফি মাজহাব মতে, মাসবুক ব্যক্তি এ দুআ ইমামের সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই পড়বে না। বরং ইমাম সালাম ফেরানোর পর মাসবুক ব্যক্তি নিজের ছুটে যাওয়া নামাজ আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে প্রথমে এ দুআ পড়ে নেবে, এর পর সুরা ফাতিহা ইত্যাদি পড়বে। (হেদায়া ১/১০২)]

    হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাঃ যখন নামায আরম্ভ করতেন তখন এই দুআটি পড়তেন-

    سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ .

    উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
    অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার পবিত্রতার গুণগান করি, আপনার নাম বরকতময় এবং আপনার বড়ত্ব সুউচ্চ। আর আপনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। [সুনানে আৰু সাউদ ৭৭৬, সুনানে তিরমিয়ি: ২৪৩, সুনানে ইবনে মাজাহ ৮০৬]

    ইমাম বাইহাকি রহ. বলেন, এ ব্যাপারে সহিহ সনদে উমর ইবনে খাত্তাব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি তাকবিরে তাহরিমার পর এ দুআটি পড়তেন—

    سُبْحَانَكَ اللهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ .

    উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
    অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার পবিত্রতার গুণগান করি, আপনার নাম বরকতময় এবং আপনার বড়ত্ব সুউচ্চ। আর আপনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। সহিহ মুসলিম: ৩৯৯

    হযরত আলি রাযি. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাঃ যখন নামায আরম্ভ করতেনতখন এ দুআটি পড়তেন-

    لا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ ، فَلَمْتُ نَفْسِي ، وَعَمِلْتُ سُوءًا فَاغْفِرْلِي إِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنتَ. وَجَهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ. صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، لَا شَرِيكَ لَهُ، وَبِذلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ، اللهُمَّ أَنتَ الْمَلِكُ لَا إِلَهَ لِي إِلَّا أَنْتَ، أَنْتَ رَبِّي وَأَنَا عَبْدُكَ، ظَلَمْتُ نَفْسِي. وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي جَمِيعًا ، إِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، وَاهْدِنِي لِأَحْسَنِ الْأَخْلَاقِ، لَا يَهْدِى لِأَحْسَنِهَا إِلَّا أَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّى سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ سَيِّئَهَا إِلَّا أَنتَ. لبيك وَسَعْدَيكَ، وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي يَدَيْكَ، وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ، أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ، تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ.

    উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা, যালামতু নাফসি, ওয়া আমিলতু সুআন, ফাগফিরলি ইন্নাহু লা ইয়াগফিরু্যুনুবা ইল্লা আনতা। ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফান মুসলিমান ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা-শারিকা লাহু ওয়া বিযালিকা উমিরতু ওয়া আনা আউওয়ালুল
    মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা আনতাল মালিকু, লা ইলাহা লি ইল্লা আনতা, আনতা রাব্বি ওয়া আনা আবদুক।

    যালামতু নাফসি ওয়া’তারাফতু বি-যাম্বি, ফাগফিরলি যুনুবি জামিআন, ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা। ওয়াহদিনি লি-আহসানিল আখলাক, লা ইয়াহদি লি-আহসানিহা ইল্লা আনতা। ওয়াসরিফ আন্নি সাইয়িআহা, লা ইয়াসরিফু সাইয়িআহা ইল্লা আনতা। লাব্বাইকা ওয়া সাদাইকা ওয়াল খাইরু কুল্লুহু ফি ইয়াদাইকা ওয়াশ শাররু লাইসা ইলাইকা। আনা বিকা ওয়া ইলাইকা, তাবারাকতা ওয়া তাআলাইতা, আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা । সুনানে বাইহাকি ২/৩৩।

    হাদিসের মান : হারেস নামক একজন দুর্বল রাবীর কারণে হাদিসটি দুর্বল। ইমাম শাবি বলতেন, হারেস একজন মিথ্যুক। আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।

    প্রথমে সানা পড়বে এরপর আউযুবিল্লাহ পড়বে

    নামায শুরুর করার পর প্রথমে সানা এরপর আউযুবিল্লাহ পড়া সর্বসম্মতিক্রমে সুন্নাত। এটি কিরাতের সূচনা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে—

    فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطنِ الرَّجِيمِ

    অর্থ: যখন তুমি কুরআন পড়বে তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। [সুরা নাহল: ১৮]

    অধিকাংশ আলেমের মতে এর অর্থ- আপনি যখন কুরআন তিলাওয়াতের ইচ্ছে করবেন তখন আউযুবিল্লাহ পাঠ করুন। [তিলাওয়াতের পূর্বে আউযুবিল্লাহ পাঠ করার দর্শন হচ্ছে- যে ব্যক্তি উপলব্ধিসহকারে তিলাওয়াত করে, তাকে শয়তান ভ্রষ্ট করতে এবং তার চিন্তা ও উপলব্ধিকে ভুল পথে পরিচালিত করার চূড়ান্ত সাধনা করে থাকে। এজন্য আল্লাহর আশ্রয় কামনা করা অপরিহার্য। যাতে আল্লাহ তাআলা তার ফিকির এবং উপলব্ধিকে বিচ্যুতি থেকে রক্ষা করেন এবং শয়তানি কুমন্ত্রণা থেকে সংরক্ষণ করেন। যদি কুরআনের পাঠক এমন করে থাকে, তাহলে আশা করা যায় যে, সে কুরআনের কথাগুলো বিশুদ্ধভাবে বুঝতে সক্ষম হবে। অন্যথায় সন্দেহ ও সংশয়ে লিপ্ত হতে পারে।-]

    মনে রাখতে হবে যে, আশ্রয় কামনার সবচে’ পছন্দনীয় শব্দ হলো-

    أَعُوْذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ .

    উচ্চারণ: আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম ।
    অর্থ: বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় কামনা করছি।

    এছাড়া আরেক রেওয়ায়েতে এসেছে-

    أَعُوذُ بِاللهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ .

    উচ্চারণ: আউযু বিল্লাহিস সামিইল আলিমি মিনাশ শায়তানির রাজিম।
    অর্থ: আল্লাহর আশ্রয় কামনা করছি বিতাড়িত শয়তান থেকে! যিনি অধিক শ্রবণকারী ও জ্ঞাত। এটাকেও আউযুবিল্লাহ বলা হয়। তবে প্রথমটিই বেশি প্রসিদ্ধ ।

    আল্লাহর রাসূল সাঃ নামাযে কিরাত শুরু করার আগে পড়তেন:

    أَعُوذُ باللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ .

    উচ্চারণ: আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম মিন হামযিহি ওয়া নাফখিহি ও নাফাসিহি ।
    অর্থ: হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে বিতাড়িত শয়তানের মাতলামি, দাম্ভিকতা ও
    কাব্যিকতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। [সুনানে আবু দাউদঃ ৭৬৪, ৭৭৫, সুনানে তিরমিযি: ২৪২, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৮০৭]

    নামাযে আউযুবিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব

    নামাযে আউযুবিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয়। কেউ যদি ইচ্ছা করেই ছেড়ে দেয় কিংবা অনিচ্ছায় ছুটে যায়, তাহলেও সে গুনাহগার হবে না। নামাযও নষ্ট হবে না। সিজদায়ে সাহুও দিতে হবে না। নফল, ফরযসহ সকল নামাযেই এটি মুস্তাহাব। জানাযার নামাযেও মুস্তাহাব। হানাফি মাজহাব মতে, জানাযার নামাজে মুস্তাহাব নয়। (হেদায়া ১/১৮০)

    নামাযের বাইরে কুরআন তিলাওয়াতকারীর জন্য সর্বসম্মতিক্রমে সর্বদা আউযুবিল্লাহ পড়ে শুরু করা মুস্তাহাব। সকলের মতে, প্রথম রাকাতে আউযুবিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব । যদি প্রথম রাকাতে না পড়ে থাকে তাহলে দ্বিতীয় রাকাতে পড়বে, তাও না হলে পরবর্তী কোন রাকাতে পড়ে নিবে।

    আরো পড়ুন: নামাজের নিষিদ্ধ সময়

    প্রথম রাকাতে আউযুবিল্লাহ না পড়লে

    প্রথম রাকাতে পড়লে দ্বিতীয় রাকাতে পড়তে হবে কি-না? এ ব্যাপারে উলামায়ে শাওয়াফে’ থেকে দু’টি অভিমত পাওয়া যায়। তবে সঠিক
    মতানুযায়ী দ্বিতীয় রাকাতে পড়াটাই মুস্তাহাব। কিন্তু দ্বিতীয় রাকাতের তুলনায় প্রথম রাকাতে পড়ার গুরুত্ব বেশি। যেসব নামাযে কেরাম আস্তে আস্তে পড়তে হয়, সেসব নামাযে আউযুবিল্লাহ আস্তে পড়বে। পক্ষান্তরে যেসব নামাযে কেরাত উঁচু আওয়াজে পড়তে সেসব নামাযে আউযুবিল্লাহ আস্তে পড়বে নাকি জোরে পড়বে এ বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে।

    শাফেয়ি মাযহাবের কতিপয় উলামায়ে কেরাম বলেন, সেসব নামাযেও আউযুবিল্লাহ আস্তে পড়বে। আর অধিকাংশ শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, ইমাম শাফেয়ি রহ. এর এ মাসআলায় দুটি মত পাওয়া যায়। এক বক্তব্য অনুযায়ী আস্তে পড়া ও জোরে পড়া উভয়টিরই অধিকার রয়েছে। অন্য বক্তব্য অনুযায়ী জোরে পড়া সুন্নাত ।

    আবার কেউ কেউ বলেন, এ ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর দুটি বক্তব্য হলো, এক. আস্তে পড়া। দুই. জোরে পড়া। তবে শাফেয়ী মাযহাব অনুযায়ী জোরে পড়াই মুস্তাহাব। শায়খ ইসফারায়িনি ও তাঁর শাগরেদ মুহামিলি ও অন্যরা এটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। সাহাবি আবু হুরাইরা রাযি. এমনটিই করতেন। তবে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. আস্তে পড়তেন। জোরে পড়াটাই শাফেয়ী মাযহাবের উলামাদের মতে প্রণিধাযোগ্য ও পছন্দনীয়। [হানাফিদের মতে, আউযুবিল্লাহ আস্তে পড়বে। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি. বলেন, নামাজে চারটি জিনিস ইমাম আস্তে বলবে। সেগুলোর মাঝে রয়েছে: আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ ও আমিন। (হেদায়া ১/১০৩)]

    আউযুবিল্লাহ পড়ার পরে কিরাত পড়া

    কুরআন-হাদিসের স্পষ্ট দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত যে, নামাযের কিরাত পড়া ওয়াজিব। এটিই শাফেয়িসহ সকল উলামায়ে কেরামের মাযহাব । যে ব্যক্তি কিরাত পড়তে সক্ষম তার জন্য কিরাত ছাড়া নামায সহিহ হবে না। এ ব্যাপারে হাদিস নিম্নরূপঃ আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন—

    لَا تَجْزِئُ صَلَاةٌ لَا يُقْرَأُ فِيْهَا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ.

    অর্থ: সুরা ফাতেহা ছাড়া নামায হবে না। সহিহ ইবনে খুজাইমা ১/২৪৮, সহিহ ইবনে হিব্বান: ১৭৮৯। সহিহ বুখারি ও মুসলিম শরিফে বর্ণিত আছে—

    لا صَلَاةَ إِلَّا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ

    অর্থ: সুরা ফাতেহা ছাড়া নামায হবে না। [বুখারি শরিফ: ৭৫৬, মুসলিম শরিফ: ৩৪-৩৭, সুনানে আবু দাউদ: ৮২২, সুনানে তিরমিযি: ২৪৭, সুনানে নাসাঈ ১৩৭, সুনানে ইবন মাজাহ: ৮৩৭]

    টিকা : উল্লেখ্য, হানাফি মাযহাব মতে মুক্তাদি কিরাত পড়বে না। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে—

    وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآن فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَانَصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ .

    অর্থ:“যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করো এবং চুপ থাকো । যাতে তোমাদের ওপর দয়া করা হয়।” উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, এটি ফরয নামাযের ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে।- [তাফসিরে ইবনে কাসির ২/২৮]

    প্রতি রাকাতে রুকু একটি এবং সেজদা দুইটি ফরজ হওয়ার কারণ কি?

    প্রথম কারণ : নামাযে যেহেতু রুকু মূল লক্ষ্য নয় বরং এটা সিজদার মাধ্যম, এজন্য এর মধ্যে পুনরাবৃত্তি নেই। আর সিজদা যেহেতু মূল লক্ষ্য এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বোচ্চ মাধ্যম, এজন্য এর মধ্যে পুনরাবৃত্তি রয়েছে।

    দ্বিতীয় কারণ : প্রথম সিজদার মধ্যে ইঙ্গিত হচ্ছে- مِنْهَا خَلَقْتُكُمْ এর দিকে, দ্বিতীয় সিজদার মধ্যে ইঙ্গিত হচ্ছে- وَفِيهَا نُعِيدُ كُمْ এর দিকে আর সিজদা থেকে উঠার মধ্য ইঙ্গিত রয়েছে وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرى এর দিকে। এজন্য সিজদা দুইবার করতে হয়।

    তৃতীয় কারণ : যখন বনী আদম এবং শয়তানকে সিজদা করার হুকুম দেওয়া হল, তখন মানবজাতি সিজদা করল এবং শয়তান সিজদা করল না। যার কারণে সে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হল। তাই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বনী আদমকে আরেকবার সিজদা করার নির্দেশ দেওয়া হল ।

    রুকু ও সিজদার হাকীকত

    ১। গভীরভাবে চিন্তা করলে এটা প্রতীয়মান হবে যে, প্রার্থনা করার সময় ও প্রার্থনা মঞ্জুরের শুভ সংবাদ শ্রবণের সময় একজন পরিপূর্ণ আনুগত্যশীল বান্দার মধ্যে যে অবস্থা সৃষ্টি হওয়া উচিত, রুকু ও সিজদার মধ্যে সে দু’টি অবস্থারই বাস্তবরূপ ফুটে
    উঠে।

    ২। আহকামুল হাকিমীনের শাহী ফরমান কুরআনুল করীম পাঠ করার পর তার নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করার জন্য ঝুঁকে যাওয়া এবং সিজদা করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে, কেননা এটা আনুগত্য ও বাধ্যগত হওয়ার প্রমাণ। যেমন, বাদশাহর পক্ষ হতে প্রজার প্রতি কোন নির্দেশ আসলে যখন তা পাঠ করে শোনানো হয়, তখন উক্ত নির্দেশনামা প্রাপ্তি ও এর আনুগত্যের একটি প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়। তেমনি কুরআন
    শরীফ তিলাওয়াত করে শোনানোর পর রুকু ও সিজদা করা আল্লাহর এই নির্দেশের প্রতি আনুগত্যের নিদর্শন বহন করে ।

    ৩। আল্লাহ তাআলার শ্রেষ্ঠত্ব চিন্তা করার পর অন্তরে স্বীয় ক্ষুদ্রতার যে অবস্থা অনুভূত হওয়া উচিত, বস্তুজগতে যদি এর কোন প্রতিচ্ছবি ও বাহ্যিকরূপ থাকে, তাহলে এটা হলো মস্তক অবনত করে দেয়া। ইসলামের পরিভাষায় যাকে রুক বলা হয়। আর আল্লাহর সীমাহীন মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাস স্থাপনের পর অন্তরে স্বীয় হীনতার যে অবস্থার উদ্ভব হয়, যদি এ অবস্থার কোন প্রতিবিম্ব ও দৃশ্যমান আকৃতি ও দৈহিক অঙ্গভঙ্গি ও ক্রিয়া-কর্মের দ্বারা প্রকাশ করা যায়, তবে এটা হলো, নিজের যে অঙ্গটি সবচেয়ে বেশি সম্মানিত মনে করা হয়, সেই মস্তক ও মুখমন্ডলকে মাটিতে লুটিয়ে দেয়া এবং নাককে ঐ দরবারের ধূলিকণায় ঘর্ষণ করা। ইসলামে এটাকেই সিজ্‌দা বলা হয় ।

    ৪। নামাযে মানুষকে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হয়। আর কিয়াম বা দণ্ডায়মান হয়ে থাকা খাদেম ও গোলামদের ভক্তি প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। এটা হলো নামাযের প্রথম অংশ। দ্বিতীয় অংশ হলো রুকু। রুকু প্রমাণ করে যে, আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে সে কী পরিমাণ মস্তক অবনত করতে পারে। নামাযের তৃতীয় অংশ হলো সিজদা ৷ সিজদার মাধ্যমে পূর্ণ আদব ও চরম হীনতা প্রকাশ পায়। মূলত: এটাই ইবাদতের মূখ্য উদ্দেশ্য। সিজ্দা প্রমাণ করে, আদব এক ভিন্ন বিষয়। আল্লাহ্ তাআলা স্মারক হিসেবে এবং দেহকে আভ্যন্তরীণ অবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য এটা নির্ধারণ করেছেন।

    রুকু ও সিজদার পদ্ধতি

    রুকু ও সিজদাতে পিঠ এমনভাবে সমান্তরাল রাখবে যেন রুকুতে কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত এবং সিজদাতে কোমর থেকে ঘাড় পর্যন্ত একটি সরল রেখার ন্যায় দেখায়। ফকীহগণ উদাহরণস্বরূপ বলেছেন, যাতে পানিপূর্ণ একটি পাত্র পিঠের উপর রাখলে পাত্রটি পড়ে না যায় এবং পানিও না পড়ে।

    মোটকথা, যথাসম্ভব আগে পিছে সমান রাখতে চেষ্টা করতে হবে। অনেক লোককে দেখা যায় রুকুতে মাথা খুব বেশি নিচু করে ফেলে এবং আবার অনেকেই সিজদায় নিতম্বের দিকটাকে খুব বেশি উপরে তুলে রাখে। কাজেই উভয়টির মধ্যবর্তী একটি অবস্থা অবলম্বন করাই শরিয়তের নির্দেশ ।

    রুকুর দুআ

    সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহর রাসূল সামারা রুকুতে যাওয়ার সময় তাকবির বলতেন। যদি কেউ তা ছেড়ে দেয় তাহলে মাকরূহে তানযিহি। নামায নষ্ট হবে না এবং সেজদায়ে সাহু দিতে হবে না। নামাযের অন্যান্য তাকবিরের ক্ষেত্রেও একই হুকুম প্রযোজ্য। তবে তাকবিরে তাহরিমা ব্যতিক্রম। কেননা এটা নামাযের রুকন, এটা ছাড়া নামায হবে না। পূর্বে নামাযে তাকবিরের সংখ্যার আলোচনা গেছে । ইমাম আহমদ রহ. এর অভিমত রয়েছে যে, নামাযের সকল তাকবির ওয়াজিব।

    আল্লাহু আকবার মদ বা লম্বা করে পড়বে কি না?

    আল্লাহু আকবার মদ বা লম্বা করে পড়বে কি না এ ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ির দুটি মত পাওয়া যায়। তবে প্রসিদ্ধ মত হলো, রুকুতে যাওয়া পর্যন্ত তাকবির টেনে বলবে। যেন নামাযের কোনো অংশ যিকির থেকে মুক্ত না থাকে। পক্ষান্তরে তাকবিরে তাহরিমা টেনে বলবে না। সেক্ষেত্রে না টেনে বলাই মুস্তাহাব। রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবিহ পড়বে। কমপক্ষে তিনবার বলবে:

    سُبْحَانَ رَبِّي العَظِيمِ .

    উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম।
    অর্থ: আমার রবের মহত্ত্ব ঘোষণা করছি।

    হযরত হুজায়ফা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- আল্লাহর রাসূল সাঃ তাঁর দীর্ঘ রুকুতে বলতেন, যা ছিল সুরা বাকারা, আলে ইমরান ও নিসা পড়ার সমপরিমাণ। তিনি এ দীর্ঘ রুকুতে سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ (সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম) বলতেন। অর্থাৎ তিনি سُبْحَانَ رَبِّ الْعَظِيمِ বার বার পড়তেন। [সহিহ মুসলিমঃ ৭৭২, সুনানে আবু দাউদ: ৮, : ৮৭১, সুনানে নাসাই 3/226]
    সুনানের কিতাবসমূহে আছে—

    له ﷺ قَالَ : إِذَا رَكَعَ أَحَدُكُمْ فَقَالَ فِي رُكُوعِهِ : سُبْحَانَ رَبِّ الْعَظِيْمِ ، ثَلَاثًا، فَقَدْ تَمَّ

    অর্থ: আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেন, তোমাদের কেউ যখন রুকু করবে এবং তাতে তিনবার سُبْحَانَ رَبِّ الْعَظِيمِ (সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম) বলবে তখন তার রুকু পূর্ণ হয়ে যাবে। [সুনানে তিরমিযি: ২৬১, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৮৯০]

    হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন- রাজারা রুকু ও সিজদায় এ দুআটি পড়তেন:

    كان النبي ﷺ يَقُولُ فِي رُكُوعِهِ وَسُجُودِهِ : سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ. اللَّهُمَّ اغْفِرْلِي.

    অর্থ: আল্লাহর রাসূল ﷺ রুকু ও সিজদায়ে এই দুআ টি পড়তেন-

    سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْلِ.

    উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলি ।
    অর্থ: হে আমার পালনকর্তা আল্লাহ, আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি। হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করুন। [সহিহ বুখারি: ৭৯৪, সহিহ মুসলিম: ৪৮৪, সুনানে আবু দাউদঃ ৮৭৭]

    মুসলিম শরিফে হযরত আলি রাযি. থেকে একটি রেওয়ায়েত পাওয়া যায় যে, আল্লাহর রাসূল সাঃ রুকুতে এই দুআ পড়তেন—

    اللهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، خَشَعَ لَكَ سَبْعِي وَبَصَرِي، وَمُنِي وَعَصَبِي.

    উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা রাকাতু, ওয়াবিকা আমানতু, ওয়ালাকা আসলামতু, খাশাআ লাকা সাময়ি ওয়া বাসারি, ওয়া মুখখি, ওয়া আযমি ওয়া আসাবি।
    অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার সামনে রুকু করলাম, আপনার প্রতিই ঈমান রাখি এবং আপনার প্রতি সমর্পিত হলাম। আমার চক্ষু-কর্ণ, অস্থি-মজ্জা, শিরা-স্নায়ু আপনার সামনে বিনয়াবত হলো। [সহিহ মুসলিমঃ ৭৭১]

    সুনানের কিতাবসমূহে এ দুআটি পড়ার কথাও বর্ণিত হয়েছে—

    خَشَعَ سَبْعِي وَبَصَرِى وَمُنِي وعَظينَ، وَمَا اسْتَقَلَّتْ بِهِ قَدَمِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ .

    উচ্চারণ: খাশাআ সাময়ি ওয়া বাসারি, ওয়া মুখখি, ওয়া আযমি। ওয়ামাস্তাকাল্লাত বিহি কাদামি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।

    অর্থ: আমার চক্ষু-কর্ণ, অস্থি-মজ্জা ও কদম বিশ্বজাহানের মালিক আল্লাহর সামনে বিনয়াবনত হলো।

    হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাঃ রুকু-সিজদায় এ দুআটি পড়তেন:

    سبوح قدوس رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ .

    উচ্চারণ: সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্দুল মালায়িকাতি ওয়াররুহ।
    অর্থ: মহামহিম পবিত্র সত্ত্বা। ফেরেশতা ও জিবরিলের পালনকর্তা। [সহিহ মুসলিম: ৪৮৭, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭২, সুনানে নাসাঈ ২/২২৪]

    হযরত আউফ ইবনে মালেক রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-

    قُمْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ لَيْلَةٌ فَقَامَ فَقَرَأَ سُوْرَةَ الْبَقَرَةِ لَا يَمُرُّ بِآيَةٍ رَحْمَةٍ إِلَّا وَقَفَ فَسَأَلَ، وَلَا يَمُرُّ بِآيَةٍ عَذَابٍ إِلَّا وَقَفَ فَتَعَوَّذَ قَالَ : ثُمَّ رَكَعَ بِقَدْرِ قِيَامِهِ، يَقُولُ فِي رُكُوعِهِ: سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوتِ وَالْمَلَكُوتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ” ثُمَّ سَجَدَ بِقَدْرِ قِيَامِهِ، ثُمَّ قَالَ فِي سُجُودِهِ مِثْلَ ذلِكَ .

    অর্থ: আমি একরাতে আল্লাহর রাসূল সাঃ -এর সাথে নামায আদায় করেছি। তিনি সূরা বাকারা পড়তে শুরু করলেন, যখন রহমতের আয়াত পড়তেন তখন থেমে যেতেন এবং আল্লাহর কাছে রহমত চাইতেন। আযাবের আয়াত পড়লে থেমে যেতেন। আযাব থেকে পানাহ চাইতেন। এরপর কিরাত সমপরিমাণ সময় রুকু করতেন। রুকুতে এ দুআটি পড়তেন:

    سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوتِ وَالْمَلَكُوَتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ .

    উচ্চারণ: সুবহানা যিল জাবারুতি ওয়াল মালাকুত ওয়াল কিবরিয়া ওয়াল আযামাহ।
    অর্থ: শক্তিমত্তা, রাজত্ব, বড়ত্ব ও ও মহত্ত্বের একচ্ছত্র মালিক আল্লাহর পবিত্রতার ঘোষণা করছি। আল্লাহর রাসূল সাঃ সিজদাতেও উল্লিখিত দুআ পড়তেন। [সুনানে নাসাঈ ২/১৯১, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৩]

    আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন-

    فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظِمُوا فِيهِ الرَّبَّ عَزَّ وَجَلَّ .

    অর্থ: তোমরা রুকুতে আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা করো। [সহিহ মুসলিম: ৪৭৯, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৬]

    মনে রাখবেন যে, শেষোক্ত হাদিসটিই এ পরিচ্ছেদের মূলকথা। অর্থাৎ যেকোনো শব্দেই হোক, রুকুতে আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব প্রকাশ করা। তবে উত্তম হলো উপযুক্ত সবগুলো দুআ (সম্ভব হলে, যাতে করে অন্যদের উপর কষ্টকর না হয়) পাঠ করা। তাসবিহ সম্বলিত দুআগুলো আগে পড়া। আর যদি সংক্ষেপ করতে চায়, তাহলে কেবল তাসবিহ পড়া মুস্তাহাব। সর্বনিম্ন তিনবার পড়া। একবার পড়লেও মূল তাসবিহ আদায় হয়ে যাবে। তবে মাঝে মাঝে ভিন্ন ভিন্ন তাসবিহ পাঠ করা মুস্তাহাব। যাতে করে সবগুলো তাসবিহই পাঠ হয়ে যায়। অনুরূপ বক্ষ্যমান কিতাবে উল্লেখিত দুআগুলোর ক্ষেত্রেও এমনটি করা উচিত।

    রুকুতে তাসবিহ পড়া সুন্নাত। যদি তা ইচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে ছেড়ে দেয় তাহলেও নামায নষ্ট হবে না। গুনাহগারও হবে না। সেজদায়ে সাহুও করা লাগবে না। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর মতে তা ওয়াজিব ।

    অতএব, নামাজি ব্যক্তির তাসবিহ বলা উচিত। কারণ, বিভিন্ন সহিহ হাদিসে তা পড়ার নির্দেশ এসেছে। যেমন—

    فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظْمُوا فِيهِ الرَّبِّ عَزَّوَجَلَّ .

    এই হাদিসটি পূর্বে গেছে। উলামায়ে কেরামের ইখতেলাফ থেকে বাঁচার জন্য তাসবিহ বলা চাই । আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।

    আরো পড়ুন: ফরজ নামাজের পর দোয়া ও জিকির সমূহ

    রুকু-সিজদায় কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরুহ

    রুকু সেজদাতে কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরুহ। যদি সুরা ফাতেহা ছাড়া অন্য কোনো সুরা পড়ে তাহলে নামায নষ্ট হবে না। সুরা ফাতেহা পড়লেও নামায নষ্ট হবে না। বিশুদ্ধ মত এটাই। তবে শাফেয়ী মাযহাবের কেউ কেউ বলেছেন: নামায নষ্ট হয়ে যাবে।

    হযরত আলি রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাঃ আমাকে রুকু ও সিজদারত অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করেছেন। [সহিহ মুসলিম: ৪৮০, সুনানে আবু দাউদ: ৪০৪৪]

    হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন—

    أَلَا وَإِنّى نُهِيْتُ أَنْ أَقْرَأَ الْقُرْآنَ رَاكِعًا أَوْ سَاجِدًا.

    অর্থ: আমাকে রুকু ও সিজদারত অবস্থায় কুরআন পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। [সহিহ মুসলিম: ৪৮০]

    রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় এবং সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সময় যে দুআ পড়বে

    রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় : سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ) যে আল্লাহর প্রশংসা করেছে, আল্লাহ তা কবুল করুন, বলবে। আর যদিمن حَمِدَ اللَّهَ سَمِعَ لَهُ বলে তাও হবে। ‘কিতাবুল উম্মে’ ইমাম শাফেয়ি রহ. এ ব্যাপারে বলেছেন। রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এ দুআ পড়বে-

    رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ حَمْداً كَثِيرًا طَيْبًا مُبَارَكًا فِيهِ مِلاً السَّمَاوَاتِ وَمِلاَ الْأَرْضِ وَمِلاً مَا بَيْنَهُما وَمِلاً مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ أَهْلَ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ، أَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ . وَكُلُّنَا لَكَ عَبْدٌ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِ مِنْكَ الْجَدُّ .

    উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদু হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকান ফিহ। মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু। আহলাস সানায়ি ওয়াল মাজদি, আহাক্কু মা কালাল আবদু। ওয়া কুল্লুনা লাকা আবদুন। লা মানিআ লিমা আতাইতা, ওয়া লা মুতিয়া লিমা মানাতা, ওয়া লা ইয়ানফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু ।

    অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! অনেক অনেক উত্তম ও বরকতপূর্ণ প্রশংসা, আপনার প্রশংসা, যা আপনার নেয়ামতের মতোই পর্যাপ্ত-প্রচুর। এই প্রশংসা প্রদর্শনেচ্ছামুক্ত এবং বড় বরকতময়। আসমান-যমিন-পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ। ওহে পূর্ণ প্রশংসা ও চূড়ান্ত সম্মানের মালিক! বান্দার মিনতি কবুলকারী এবং আমরা সবাই আপনারই বান্দা। কেউ আপনার দান রোধ করতে পারে না এবং আপনি বন্ধ করলে কেউ তা দিতে পারে না। স্বচ্ছল ব্যক্তির স্বচ্ছলতা আপনার মোকাবেলায় কিছু করতে পারে না। [সহিহ মুসলিম: ৪১১, ৭৯৯]

    হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাঃ যখন রুকু থেকে কোমর সোজা করে দাঁড়াতেন, তখন বলতেন—

    سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ

    উচ্চারণ: সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ ।
    অর্থ: আল্লাহর প্রশংসাকারীদের প্রশংসা আল্লাহ কবুল করুন।
    এরপর দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বলতেন— رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ
    উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদ ।
    অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। [সহিহ বুখারি: ৭৮৪, সহিহ মুসলিম: ৩৯২]
    কোনো কোনো রেওয়ায়েতে আছে- وَلَكَ الْحَمْدُ, (ওয়া লাকাল হামদ) ‘ওয়াও’ হরফের সাথে। উভয়টিই উত্তম।

    হযরত আলি এবং ইবনে আবি আওফা রাযি. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাঃ যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখন এ দুআ পড়তেন—

    سَعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلاً السَّمَاوَاتِ وَمِلأُ الْأَرْضِ وَمِلاً مَاشِئتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ .

    উচ্চারণ: সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ। রাব্বানা লাকাল হামদ। মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু।
    অর্থ: আল্লাহর প্রশংসাকারীদের প্রশংসা আল্লাহ কবুল করুন। হে আমাদের রব! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। আসমান-যমিন পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ। [সহিহ মুসলিমঃ ৪৭৬, সুনানে আবু দাউদঃ ৮৪৬]

    হযরত আবু সাঈদ খুদরি রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাঃ রুকু থেকে মাথা ওঠানোর সময় বলতেন-

    رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلاَ السَّمَاوَاتِ وَمِلأُ الْأَرْضِ وَمِلأَ مَا بَيْنَهُمَا وَمِلاً مَا اثْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ. أَهْلَ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ، أَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ ، وَكُنَالَكَ عَبْدٌ ، لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطَى لِمَا منَعْت ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدّ مِنكَ الجَد .

    উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদু মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু। আহলাস সানায়ি ওয়াল মাজদি, আহাকু মা কালাল আবদু। ওয়া কুল্লুনা লাকা আবদুন। লা মানিআ লিমা আতাইতা, ওয়া লা মুতিয়া লিমা মানাতা, ওয়া লা ইয়ানফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।

    অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা। আসমান-যমিন-পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ। ওহে পূর্ণ প্রশংসা ও চূড়ান্ত সম্মানের অধিকারী! বান্দার মিনতি কবুলকারী এবং আমরা সবাই আপনারই বান্দা। কেউ আপনার দান আটকাতে পারে না এবং আপনি বন্ধ করলে কেউ তা দিতে পারে না। স্বচ্ছল ব্যক্তির স্বচ্ছলতা আপনার মোকাবেলায় কিছু করতে পারে না। [সহিহ মুসলিম: ৪৭৭, সুনানে আবু দাউদ: ৮৪৭, সুনানে নাসাঈ ১/১৯৮-১৯৯]

    হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ দুআর কথা বর্ণিত আছে-

    ربَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلاَ السَّمَاوَاتِ وَمِلأُ الْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمِلأَ مَا دِنتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ .

    উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদু মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া নিপথ না বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু।

    অর্থ: হে আমাদের প্রভু!, আসমান-যমিন-পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ। [সহিহ মুসলিম: ৪৭৮, সুনানে নাসাঈ ২/১৯৮]

    হযরত রিফাআ ইবনে রাফে যারকি রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

    لنا يَوْمًا نَصَل وَرَاءَ النبي ، فَلَمَّا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرَّكْعَةِ قَالَ: “سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ قَالَ رَجُلٌ وَرَاءَهُ : رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْداً كَثِيرًا طَيْبًا مُبَارَكًا فِيْهِ فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ : مَن المُتَكَلِمُ قَالَ : أَنَا. قَالَ : رَأَيْتُ بِضْعَةٌ وَثَلَاثِينَ مَلَكًا يَبْتَدِرُوْنَهَا أَيُّهُمْ يَكْتُبُهَا أَول.

    অর্থ: একবার আমরা আল্লাহর রাসূল সাঃ এর সাথে নামায আদায় করছিলাম। তিনি রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় বললেন:سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ) তখন তার পেছনে এক ব্যক্তি এ দুআ পড়লেন:

    رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْداً كَثِيرًا طَيْبًا مُبَارَكًا فِيهِ.

    উচ্চারণঃ রাব্বানা লাকাল হামদু হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকান ফিহ।
    অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আপনার প্রশংসা, যা আপনার নেয়ামতের মতোই পর্যাপ্ত-প্রচুর। এই প্রশংসা প্রদর্শনেচ্ছামুক্ত এবং বড় বরকতময়।

    নামায শেষে আল্লাহর রাসূল সাঃ বললেন, দুআটি কে বলেছে? ঐ ব্যক্তি বলল, আমি। আল্লাহর রাসূল সাঃ বললেন, আমি ৩০ জনের বেশি ফেরেশতাকে এর সওয়াব লেখার জন্য প্রতিযোগিতা করতে দেখেছি। [সহিহ বুখারি ৭৯৯, সুনানে আবু দাউদ: ৭৭০, ১/১২৭, সুনানে নাসাই ২/১৯৬/]

    রুকু থেকে উঠার সময় পূর্বোল্লেখিত সকল দুআ পড়া মুস্তাহাব, যেমনটি পূর্বের দুআর ক্ষেত্রে গেছে। যদি কোনো একটি দুআ পড়তে হয়, তাহলে নিচের দুআটি পড়বে-

    سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلاً السَّمَاوَاتِ وَمِلاً الْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمِلاً ما هنت مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ .

    উচ্চারণ: সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ। রাব্বানা লাকাল হামদু মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু।

    অর্থ: আল্লাহর প্রশংসাকারীদের প্রশংসা আল্লাহ কবুল করুন। হে আমাদের রব! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। আসমান-যমিন-পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ ।

    আর যদি এরচেও বেশি সংক্ষেপ করতে চায় তাহলে سمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ (সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ রাব্বানা লাকাল হামদ) বলবে। এরচে আর কম কোনো দুআ নেই।

    মনে রাখবেন, উল্লিখিত দুআসমূহ ইমাম, মুক্তাদি, একাকী নামায আদায়কারীর জন্য মুস্তাহাব। তবে ইমাম সাহেব সকল দুআ পড়বে না। অবশ্য ইমাম যদি জানে যে, দীর্ঘায়িত হলে মুক্তাদিদের কষ্ট হবে না। তারা এটি পছন্দ করে তাহলে কোনো সমস্যা নেই।

    মনে রাখতে হবে যে, উক্ত দুআসমূহ সুন্নাত, ওয়াজিব নয়। এগুলো ছেড়ে দিলে মাকরুহ তানযীহী হবে। এর জন্য সেজদায়ে সাহু দিতে হবে না।

    সোজা হয়ে দাঁড়িয়েও কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করা মাকরুহ। যেমন রুকু, সিজদা অবস্থায় মাকরুহ । আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।

    সিজদার দুআ

    রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুআ পড়ে সিজদার জন্য তাকবির বলবে। আর মাটিতে কপাল রাখা পর্যন্ত তাকবির লম্বা করবে। এই তাকবির হলো সুন্নাত । ছেড়ে দিলে নামায নষ্ট হবে না। সিজদায়ে সাহুও দিতে হবে না। সিজদার অনেক দুআ রয়েছে যেমন- আল্লাহর রাসূল সা. সেজদায় سُبْحَانَ رَبِّى الأغلى (সুবহানা রাব্বিয়াল আলা) পড়েছেন। তিনি সিজদা করেছেন কিয়াম সমপরিমাণ। [সহিহ মুসলিমঃ ৭৭২]

    আরো পড়ুন: কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম

    সংযোজন : সেজদা করার দোয়াসমূহ

    ১. সেজদায় গিয়ে কমপক্ষে তিনবার : سُبْحَانَ رَبِّى الأغلى (সুবহানা রাব্বিয়াল আলা) (আমার মহান প্রতিপালক পবিত্র যিনি সর্বোচ্চতর) পড়ার পর এই দোয়া পাঠ করবে :

    اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْكَ لَا أُحْصِيَ ثناء عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ

    অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আপনার অসন্তুষ্টি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং আপনার আযাব থেকে আপনার ক্ষমার ওসীলায় আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং আপনার ক্রোধানল থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আপনার যথার্থ প্রশংসা করতে সক্ষম নই । যেমন আপনি নিজেই প্রশংসা করেছেন।

    ২. অথবা এ দোয়া পাঠ করবে :

    اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ وَأَنْتَ رَبِّي سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ وَصَوْرَهُ وَشَقِّ سَبْعَه وبَصَرَهُ تَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ

    অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্য সেজদা করেছি এবং আপনার উপর ঈমান নেছি এবং আপনার আনুগত্য প্রকাশ করেছি। আমার মুখ-মণ্ডল সে সত্তার জন্য সেজদা করেছে, যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে গঠন করেছেন ও উত্তমরূপে গঠন করেছেন, আর চোখ ও কানকে কোনো কিছু দেখা ও শোনার উপযোগী করার লক্ষ্যে বিদীর্ণ করেছেন । মহান রাব্বুল আলামিন বরকতময় উত্তম সৃষ্টিকর্তা।

    ৩. অথবা এ দোয়া পাঠ করবে :

    خَشَعَ سَبْعِي وَبَصَرِي وَلَحْيِي وَعَظِيْ وَعَصَبِى وَمَا اسْتَقَلَّتْ بِهِ قَدَعَى لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

    অর্থ : আমার কর্ণ, চক্ষু, গোশত, অস্থি, শিরা এবং আমার পা যা কিছু বহন করে, মহান রাব্বুল আলামিনের জন্য বিনয়াবনত আছে।

    আর এ দোয়া পাঠ করবে :

    سبوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ

    অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি অতি পাক ও পবিত্র, এবং ফেরেশতা ও রুহুল আমীন তথা জিব্রাঈল-এর পালনকর্তা ।
    ৪. অথবা এটাও পাঠ করবে :

    سُبْحَانَكَ اللهُم رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ

    অর্থ : হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি।
    ৫. আর এ দোয়া পাঠ করবে :

    اللهم المغربي ذنبي كُلَّهُ دِقَهُ، وَجِلَّهُ أَوَلَهُ وَاخِرَهُ، سِرَّهُ وَعَلَانِيَّتَهُ

    অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার ছোট বড় পূর্বেরকৃত পরের প্রকাশ্য ও গোপন (সকল) গুনাহ মাফ করে দিন ।
    ৬. আর এ দোয়া পাঠ করবে :

    اللهُمَّ سَجَدَ لَكَ سَوَادِي وَخَيَالِي وَبِكَ امَن فُؤَادِي أَبُوْهُ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَهُذَا مَاجَنَيْتُ عَلَى نَفْسِي يَا عَظِيمُ يَا عَظِيمُ اغْفِرْنِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوتِ الْعَظِيمَةَ إِلَّا الرَّبِّ الْعَظِيمُ

    অর্থ : হে আল্লাহ! আমার শরীর ও ধ্যান-ধারণা আপনার তরে সেজদায় অবনত। আমার হৃদয় আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। নিজের উপর আপনার অনুদান স্বীকার করছি এবং যা কিছু আমি নিজের উপর অত্যাচার করেছি সেটারও স্বীকারোক্তি করছি। হে মহান প্রভু! আমাকে মাফ করে দিন। কেননা, মহান প্রভু ছাড়া বিশাল গুনাহ আর কেউ ক্ষমা করতে পারে না।
    ৭. আর এ দোয়া পাঠ করবে :

    سُبْحَانَ الَّذِى الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحَانَ ذِي الْعَرْشِ وَالْجَبَرُوتِ سُبْحَانَ الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ أَعُوذُ بِعَفْوِكَ مِنْ عِقَابِكَ وَأَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ جَلَّ وَجْهَكَ

    অর্থ : আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি রাজত্ব ও হুকুমের মালিক আল্লাহ তাআলার। পবিত্রতা বর্ণনা করছি সম্মান ও ক্ষমতার অধিকারী মহান রাব্বুল আলামিনের। পবিত্রতা বর্ণনা করছি এমন চিরঞ্জীবের যিনি কখনো মৃত্যু বরণ করেন না। আপনার ক্ষমার ওসীলায় আপনার আযাব থেকে আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আপনার ক্রোধ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আর আপনার ক্রোধানল থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, অতি মহান ও সম্মানিত আপনার সত্তা।

    ৮. অথবা এ দোয়া পাঠ করবে :

    رَنِ أَعْطِ نَفْسِي تَقْوَاهَا زَيْهَا أَنتَ خَيْرٌ مَنْ زَكَاهَا أَنتَ وَلِيُّهَا اللَّهُمَّ اغْفِرَ لِي مَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ

    অর্থ : হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমার অন্তরে খোদাভীরুতা দান করুন। আপনিই তাকে পবিত্র করুন। আপনিই শ্রেষ্ঠ পবিত্রকারী এবং আপনি তার অভিভাবক। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ও প্রকাশ্য গুনাহ ক্ষমা করে দিন।
    ৯. আর এ দোয়া পাঠ করবে :

    اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا وَاجْعَلْ فِي سَبْعِي نُورًا وَاجْعَلْ فِي بَصَرِي نُورًا وَاجْعَلْ أَمَا مِي نُورًا وَاجْعَلْ خَلْفِي نُورًا وَاجْعَلْ مِنْ تَحْتِى نُورًا وَأَعْظِمْ فِي نُورًا

    অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরকে আলোকিত করে দিন এবং আমার কর্ণে নূর দান করুন এবং আমার চক্ষুতে আলো দান করুন এবং আমার সম্মুখে আলো দান করুন আর আমার পশ্চাতে আলো দান করুন এবং আমার উপরে ও নিচে আলো দান করুন এবং আমাকে বড় আলো দান করুন।

    হযরত আয়েশা রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাঃ রুকু ও সিজদায় এ দুআ খুব বেশি পড়তেন-

    سُبْحَانَكَ اللهُم رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللهُمَّ اغْفِرْلي انت لا تعد مينة

    উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলি।
    অর্থ: হে আমাদের প্রভু আল্লাহ, আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করি। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করো। ]সহিহ বুখারি: ৭৯৪, মুসলিম: ৪৮৪]

    হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাঃ রুকু-সিজদায় এ দুআটি পড়তেন-

    سُبُوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ .

    উচ্চারণ: সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়াররুহ।
    অর্থ: মহামহিম পবিত্র সত্তা। ফেরেশতা ও জিবরিলের প্রভু। সহিহ মুসলিম: ৪৮৭।

    হযরত আলি রাযি. বলেন, আল্লাহর রাসুল সাঃ যখন সিজদা করতেন তখন এ দুআ পড়তেন-

    اللهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ، وَبِكَ امَنتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ، وَصَوَّرَهُ، وَشَقٌ سَبْعَهُ وَبَصَرَةُ، تَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ.

    উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু, ওয়া বিকা আমানতু, ওয়া লাকা আসলামতু। সাজাদা ওয়াজহি লিল্লাযি খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহু । তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিকিন

    অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার জন্য সাজদা করলাম, আপনার ওপরই ঈমান আনলাম, আপনার সামনেই সমর্পিত হলাম। আমার চেহারা সেই সত্তাকে সাজদা করল, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, আকৃতি দান করেছেন এবং বিদীর্ণ করে চোখ-কান বের করেছেন। আল্লাহ তাআলা মহিমাময় সর্বোত্তম স্রষ্টা। [সহিহ মুসলিমঃ ৭৭১, সুনানে আবু দাউদ: ৭৬০]

    হযরত আউফ ইবনে মালেক রাযি. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাঃ দীর্ঘ রুকু করলে এ দুআ বলতেন। সেজদাতেও এমনটি করতেন—

    سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوتِ وَالْمَلَكُوتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ .

    উচ্চারণ: সুবহানা যিল জাবারুতি ওয়াল মালাকুতি ওয়াল কিবরিয়াই ওয়াল আযমাতি।
    অর্থ: পবিত্র সেই আল্লাহ, যিনি সব রাজত্ব, মহান ক্ষমতা এবং বড়ত্ব ও মহত্বের মালিক । তিনি সিজদাতেও উল্লিখিত দুআ পড়তেন। [নাসাঈ ২/১৯১, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৩]

    হাদিসের কিতাবসমূহে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ যখন সিজদা করে-

    القينا المال سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى.

    উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিয়াল আলা ৷
    অর্থ: আমি আমার মহা মহীয়ান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। [সুনানে আবু দাউদ: ৮৮৬, সুনানে তিরমিযি: ২৬]
    তখন সে যেন তিনবার উক্ত দুআটি পড়ে।

    হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমি এক রাতে আল্লাহর রাসূল সাঃ-কে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই এঁকে খুঁজতে লাগলাম, হঠাৎ দেখলাম যে, তিনি রুকু বা সিজদারত অবস্থায় আছেন। তিনি তখন এ দুআটি পাঠ করছিলেন—

    سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنتَ .

    উচ্চারণ: সুবহানাকা ওয়াবি হামদিকা লা ইলাহা ইল্লা আনতা ।
    অর্থ: আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই ।
    সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে- হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, আমার হাত তার পায়ে লাগল, তিনি নামাযের স্থানে ছিলেন এবং উভয় পা দণ্ডায়মান ছিল । তিনি তখন এ দুআ পড়ছিলেন-

    اَللّهُمَّ أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ. وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ ، لَا أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ، أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ .

    উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আউযু বিরিযাকা মিন সাখাতিকা, ওয়াবি মুআফাতিকা মিন উকুবাতিকা। ওয়া আউজু বিকা মিনকা, লা উহসি সানাআন আলাইকা, আনতা কামা আসনাইতা আলা নাফসিক ।

    অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার সন্তুষ্টি কামনা করছি। ক্রোধ থেকে মুক্তি চাই। আজাব। থেকে মুক্তি চাই। আপনার কাছে আশ্রয় চাই। আমি আপনার প্রশংসা করে শেষ করতে পারবো না। আপনি তেমনই মহিমান্বিত যেমন আপনি নিজের প্রশংসা করেছেন। [সহিহ মুসলিম: ৪৮৬, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৯, মুয়াত্তা মালেক ১/২১৪, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৯, সুনানে তিরমিযি: ৩৪৯১, সুনানে নাসাঈ ২/২২৫, ২২৩ ]

    হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন—

    فَأَمَّا الرُّكُو فَعَظَمُوا فِيهِ الرَّبِّ، وَأَمَّا السُّجُودُ فَاجْتَهِدُوا فِي الدُّعَاءِ ، فَقَمِنٌ أَن يُسْتَجَابَ لَكُمْ .

    অর্থ: তোমরা রুকুতে গিয়ে প্রভুর মহিমা বর্ণনা কর। বড়ত্ব প্রকাশ কর। আর সিজদায় বেশি বেশি দুআ করো । কেননা, সিজদারত অবস্থায় দুআ বেশি কবুল হয়। [সহিহ মুসলিম: ৪৭৯, সুনানে আবু দাউদঃ ৮৭৬, সুনানে নাসাঈ ২/১৮৯]

    হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন—

    أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ .

    অর্থ: সেজদার সময় বান্দা আল্লাহ তাআলার অধিক নিকটে থাকে । অতএব, তোমরা সিজদারত অবস্থায় বেশি বেশি দুআ করো। সহিহ মুসলিম: ৪৮২।

    হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সিজদায় এ দুআ পড়তেন—

    اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ، دِقَهُ وَجِلَهُ، وَأَوَلَهُ وَاخِرَهُ، وَعَلَانِيَتَهُ وَسِرَّهُ.

    উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফিরলি যাম্বি কুল্লাহু, দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু, ওয়া আলানিয়াতাহু ওয়াসিররাহু।
    অর্থ: হে আল্লাহ! আমার সকল পাপরাশী ক্ষমা করে দিন, ছোট-বড়, শুরু-শেষ, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল পাপ মাফ করে দিন। [সহিহ মুসলিম: ৪৮৩, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৮]

    উপর্যুক্ত দুআসমূহ সিজদায় পড়া মুস্তাহাব। এক সময়ে না পড়তে পারলে বিভিন্ন সময়ে পড়বে। যেমনটি পূর্বের আলোচনায় গেছে। অন্যান্য দুআ পড়তে না পারলে সিজদার তাসবিহ পড়বে ও কিছু দুআ পড়বে। সিজদায়ও রুকুর মত কুরআনের আয়াত পড়া মাকরুহ। অন্যান্য বিষয়ও পূর্বোল্লেখিত রুকুর মতই।

    আরো পড়ুন: জুমার নামাজের ফজিলত

    নামাযে দীর্ঘ কিয়াম উত্তম নাকি রাকাত বেশি পড়া উত্তম

    নামাযে দীর্ঘ কিয়াম উত্তম নাকি রাকাত বেশি পড়া উত্তম। এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম শাফেয়ি রহ. ও তার অনুসারীদের মতে নামাযে অধিক রাকাত পড়ার চেয়ে দীর্ঘ কিয়াম করা উত্তম। কেননা হাদিসে আছে,أَفْضَلُ الصَّلَاةِ طُولُ الْقُنُوتِ তথা উত্তম নামায যাতে কিয়াম দীর্ঘ হয়। [সহিহ মুসলিম: ০৪]

    হাদীসের এ বাক্য দ্বারা বুঝা যায়, কিয়াম উত্তম। তাছাড়া নামাযে কিয়াম দীর্ঘ হলে তাতে কুরআন বেশি পড়া হয়ে থাকে। আর সিজদা দীর্ঘ হলে তাসবিহ বেশি পড়া হয়ে থাকে। আর কুরআন শ্রেষ্ঠ। তাই দীর্ঘ কিয়ামও শ্রেষ্ঠ হবে। তবে কেউ কেউ বলেছেন, দীর্ঘ কিয়ামের তুলনায় অধিক রাকাত পড়া উত্তম। কেননা হাদিসে আছে-

    أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ .

    অর্থ: সিজদার সময় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে। [সহিহ মুসলিম: ৪৮২]

    ইমাম তিরমিযি রহ. সুনানে তিরমিযিতে উল্লেখ করেন, উলামায়ে কেরাম উক্ত বিষয়ে মতবিরোধ করেছেন। কেউ কেউ দীর্ঘ কিয়ামকে উত্তম বলেছেন আর কেউ কেউ বেশি রাকাতকে উত্তম বলেছেন।

    নামাযের সিজদায় যা পড়বে, তিলাওয়াতের সিজদাতেও তাই পড়া মুস্তাহাব। সেগুলোর সঙ্গে এ দুআটি পড়াও উত্তম-

    اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا فِي عِنْدَكَ ذُخْرًا، وَأَعْظِمْ لِي بِهَا أَجْرًا، وَضَعُ عَنِّى بِهَا وِزْرًا، وَتَقَبَّلُهَا مِنِّي كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ.ا

    উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ আলহা ইনদাকা যুখরা, ওয়া আদিম লি বিহা আজরা, ওয়া দা’ আন্নি বিহা বিরা, ওয়া তাকাব্বালহা মিন্নি কামা তাকাব্বালতাহা মিন আবদিকা দাউদ আলাইহিস সালাম ।

    অর্থ: হে আল্লাহ! একে আমার জন্য আপনার কাছে জমা করে রাখো, এর পরিবর্তে আমাকে মহাপ্রতিদান দান করুন। এর মাধ্যমে আমার পাপ মার্জনা করে দিন। এটি আমার পক্ষ থেকে কবুল করুন যেমনটা কবুল করেছিলেন দাউদ আলাইহিস সালাম থেকে । [সুনানে আবু দাউদ: ১৪১৪, সুনানে তিরমিযি: ৫৮০, সুনানে নাসাঈ ২/২২২, মুসতাদরাকে হাকেম ১/২২০]

    নিচের আয়াতটি পড়াও মুস্তাহাব –

    سُبْحَنَ رَبِّنَا إِن كَانَ وَعْدُ رَبَّنَا لَمَفْعُولًا .

    অর্থ: আমাদের পালনকর্তা পবিত্র মহান। নিঃসন্দেহে আমাদের পালনকর্তার অঙ্গিকার অবশ্যই পূর্ণ হবে।

    হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাঃ তিলাওয়াতের সিজদায় এ দুআটি পড়তেন-

    سَجَدَ وَجْهِي لِلَّذِي خَلَقَهُ وَصَوَّرَهُ، وَشَقَ سَبْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوتِه .

    উচ্চারণ: সাজাদা ওয়াজহি লিল্লাযি খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহ। বিহাওলিহি ওয়া কুওয়্যাতিহ।
    অর্থ: আমার চেহারা সেই সত্ত্বাকে সিজদা করল, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, আকৃতি দান করেছেন এবং নিজ কুদরত ও শক্তিতে বিদীর্ণ করে চোখ-কান বের করেছেন। [সুনানে তিরমিযিঃ ৫৮০, সুনানে আবু দাউদ: ১৪১৪, সুনানে নাসাঈ ২/২২২]

    হাদিসের মান : ইমাম তিরমিযি রহ. বলেন, হাদিসটি সহিহ।
    হাকেম রহ. উক্ত দুআর সঙ্গে فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ (ফাতাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিকিন) ‘আল্লাহ পাক মহিমাময় সর্বোত্তম স্রষ্টা’ ও বৃদ্ধি করেছেন। মুসতাদরাকে হাকেম ১/১২০।
    হাদিসের মান : ইমাম তিরমিযি বলেন, ইমাম হাকেম রহ. কর্তৃক বৃদ্ধিকরণ এটা সহিহাইনের শর্ত সাপেক্ষে হয়েছে।

    আরো পড়ুন: ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম

    সিজদা থেকে মাথা ওঠানোর সময় এবং সিজদার মাঝে যে দুআ পড়তে হয়

    সুন্নাত হলো, সেজদা থেকে মাথা ওঠানোর সময়ই তাকবির দেওয়া শুরু করা এবং সোজা হয়ে বসা পর্যন্ত তাকবির টেনে পড়া। পূর্বে তাকবিরের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। তাকবির লম্বা করা প্রসঙ্গে মতানৈক্যও পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তাকবির শেষ করে সোজা হয়ে বসবে। এ সময় যেসব দুআ পড়বে।

    হযরত হুজায়ফা রাযি. থেকে যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যেখানে আল্লাহর রাসুল সাঃ শুধু দীর্ঘ কিয়াম করেছিলেন। সেই হাদিসের বিবরণে আছে যে, আল্লাহর রাসূল সাঃ দুই সেজদার মাঝখানে বলছিলেন। দুই সিজদার মাঝে তিনি সিজদার সমপরিমাণ বসেও ছিলেন। দুআটি এই:

    رَبِّ اغْفِرْ لِي رَبِّ اغْفِرْ لِي.

    উচ্চারণ: রাব্বিগ ফিরলি, রাব্বিগ ফিরলি।
    অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে ক্ষমা করুন। [সহিহ মুসলিমঃ ৭৭২, সুনানে আবু দাউদ ৮৭, সুনানে নাসাঈ ৩/২২৬]

    হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যে রাতে তিনি তার খালা মাইমুনা রাযি.-এর ঘরে ঘুমালেন। আল্লাহর রাসুল সাঃ -এর রাতের নামাযের বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাঃ যখন সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন তখন তিনি নিচের দুআটি পড়তেন—

    اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي، وَاجْبُرْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي .

    উচ্চারণ: রাব্বিগ ফিরলি, ওয়ার হামনি ওয়াজ বুরনি, ওয়ার যুকনি, ওয়াহ দিনি।
    অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, দয়া করুন, আমার সম্মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করুন, আমাকে রিযিক দান করুন এবং হেদায়াত দিন।

    সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় وَعَافِنِى, (ওয়াআ ফিনি) ‘আমাকে যাবতীয় বিপদাপদ থেকে নিরাপদ রাখুন’ অতিরিক্ত এসেছে। [সুনানে বাইহাকি ২/১২২, সুনানে আবু দাউদ: ৮৫০, সুনানে তিরমিযি: ২৮৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৮৯৮]

    দ্বিতীয় সিজদাতেও প্রথম সিজদার ন্যায় দুআ করবে

    দ্বিতীয় সিজদাতেও প্রথম সিজদার ন্যায় দুআ করবে।

    দ্বিতীয় সিজদা থেকে তাকবির বলে মাথা ওঠাবে নাকি আগে বসবে

    দ্বিতীয় সিজদা থেকে তাকবির বলে মাথা ওঠাবে নাকি আগে বসবে এরপর তাকবীর দিয়ে দাঁড়াবে? এ ব্যাপারে উলামায়ে শাওয়াফে দের মাঝে একাধিক অভিমত পাওয়া যায়। যথা—

    ১. দ্বিতীয় সিজদা থেকে তাকবির বলে মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ আরাম করে বসবে। এরপর সেজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় যে তাকবির বলেছিলো সেটি সোজা হয়ে দাঁড়ানো পর্যন্ত লম্বা করবে। এটাই শাফেয়ি উলামায়ে কেরামের প্রসিদ্ধ মত।
    ২. তাকবির বলা ছাড়াই বসবে। এরপর উঠার সময় তাকবির বলে উঠে দাঁড়াবে।
    ৩. তাকবির বলে সেজদা থেকে উঠে বসবে। এরপর উঠে দাঁড়াবে তাকবির ছাড়া। তবে সকলের মতে, এক তাকবির বলবে। দুই তাকবিরের কথা কেউ বলেন না। শাফেয়ীগণ প্রথম পদ্ধতিটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন, যেন নামাযের কোনো সময় যিকির
    থেকে খালি না থাকে।

    টিকা : হানাফি উলামায়ে কেরামের মতে, দ্বিতীয় তাকবিরের পরে সামান্য বসবে না; বরং সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। সুতরাং তাদের নিকট এসব এখতেলাফ নেই। বরং সেজদা থেকে উঠার সময়ের তাকবিরকে দীর্ঘ করেই সোজা দাড়িয়ে যাবে। (হেদায়া ১/১১০)

    সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ বসা সুন্নাত

    আল্লাহর রাসুল (সা.) সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ বসতেন বলে বুখারি শরিফসহ অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত আছে। শাফেয়ী মাজহাবে তা মুস্তাহাব। এটা প্রতি রাকাতে দ্বিতীয় সিজদার পর করতে হয়। সিজদায়ে তিলাওয়াতে উক্ত বৈঠক নেই। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন। হানাফি মাজহাবে উক্ত বৈঠক সুন্নাত নয়। (হেদায়া ১/১১০)।

    দ্বিতীয় রাকাতের যিকির

    ফরয নামায হোক বা নফল হোক প্রথম রাকাতের সেসব দুআ পড়ার কথা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্বিতীয় রাকাতেও তাই পড়বে। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আছে।

    ১. প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমা আছে, দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে তাকবিরে তাহরীমা নেই। দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে যে তাকবির বলা হয়ে থাকে, সেটি সেজদা থেকে উঠার তাকবির। আর সেটি সুন্নাত ।
    ২. দ্বিতীয় রাকাতে শুরুর দুআ তথা সানা নেই। প্রথম রাকাতে সানা আছে।
    ৩. প্রথম রাকাতে আউযুবিল্লাহ পড়তে হয়। এ বিষয়ে কোনো মতপার্থক্য নেই। কিন্তু দ্বিতীয় রাকাতে আউযুবিল্লাহ পড়তে হবে কিনা তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। প্রসিদ্ধ মত হলো আউযুবিল্লাহ পড়তে হবে ।
    ৪. নির্ভরযোগ্য অভিমত হলো দ্বিতীয় রাকাতের কিরাত প্রথম রাকাত অপেক্ষা ছোট হবে। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন ।

    সালাম ফেরানোর বিভিন্ন পদ্ধতি

    নামাজ সম্পন্ন করার জন্য সালাম ফেরানো ওয়াজিব। তবে সাধারণত লোকদের তিনভাবে সালাম ফিরাতে দেখা যায়। নিম্নে উল্লেখিত কোন পদ্ধতিটি সঠিক?

    এক. সামনের দিকে চেহারা রেখে আসসালামু আলাইকুম (السّلَامُ عَلَيْكُمْ) বলে। আর ওয়া রাহমাতুল্লাহ (وَرَحْمَةُ اللهِ) বলার সময় চেহারা ডানে-বামে ফেরায়। অথবা পুরা সালামই চেহারা সামনের দিকে রেখে বলে। এরপর চেহারা ডানে-বামে ফিরায়।

    দুই. সালামের পুরা বাক্যই ডানে বা বামে চেহারা ফিরিয়ে বলে। অর্থাৎ চেহারা ডান বা বাম দিকে ফেরানোর পর (السّلَامُ عَلَيْكُمْ) বলা শুরু করে।

    তিন. সামনে থেকে সালাম শুরু করে। সালাম বলতে বলতে ডানে বা বামে চেহারা ফেরায়। যাতে ডানে বা বাম দিকে পূর্ণ চেহারা ফিরানোর সাথে সাথে সালামও শেষ হয়ে যায়।

    তাহলে জানার বিষয় হলো- এই তিন পদ্ধতির মধ্যে কোন্ পদ্ধতিটি শুদ্ধ? সঠিক সমাধান প্রদানের আবেদন করছি।

    এর উত্তর হলো- সালাম ফেরানোর সঠিক পদ্ধতি হলো, চেহারা কেবলা দিকে থাকা অবস্থায় সালামের শব্দ বলা শুরু করবে এবং সালাম বলতে বলতে চেহারা ডানে ফেরাবে। অনুরূপ দ্বিতীয় সালাম ফেরানোর সময়ও কিবলার দিক থেকে সালাম বলা শুরু করবে এবং সালাম বলতে বলতে চেহারা বাম দিকে ফেরাবে।

    প্রখ্যাত ফকিহ মাওলানা রশদ আহমাদ গাঙ্গুহি (রহ.) বলেন, ‘চেহারা সামনে থাকা অবস্থায় সালাম শুরু করবে, এরপর ডান দিকে চেহারা নিতে নিতে সালাম শেষ করবে।’ (আল-কাউকাবুদ্ দুররি : ১/২৮৯-২৯০)

    বিখ্যাত হাদিসবিশারদ ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘কেবলার দিকে চেহারা থাকা অবস্থায় সালাম শুরু করবে এবং চেহারা ঘুরানো অবস্থায় সালাম সম্পন্ন করতে থাকবে। যাতে চেহারা ঘুরানো শেষ হওয়ার সাথে সালামও শেষ হয়ে যায়। (আলমাজমু শরহুল মুহাজ্জাব : ৩/৪৫৮)

    তথ্যসূত্র : ইলালুল হাদিস, আবু হাতিম, বর্ণনা ৪১৪; তানকিহুত তাহকিক, জাহাবি : ১/১৭৭; খুলাসাতুল আহকাম, নববি : ১/৪৪৫; নাজমুল মুতানাছির, কাত্তানি : পৃষ্ঠা ৯৮) বাদায়িউস সানায়ি : ১/৪৫৪; ফাতহুল কাদির : ১/২৭৮; শরহুল মুনইয়া, পৃষ্ঠা : ৩৩৭; আল-বাহরুর রায়েক : ১/৩৩২; আদ্দুররুল মুখতার : ১/৪৬৮; আলকাউকাবুদ দুররি : ১/২৮৯; মাআরিফুস সুনান : ৩/১১০

    আরো পড়ুন: ফরজ নামাজের পর দোয়া ও জিকির সমূহ

    ট্যাগ সমূহ :  নামাজ পড়ার নিয়ম,নামাজ পড়ার নিয়ম,নামাজ অর্থ কি,নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি,নামাজের ফরজের গুরুত্ব,নামাজের সুন্নাত কয়টি কি কি,নামাজে দাঁড়ানোর সময়ের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুন্নত,রুকুর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুন্নত,সিজদার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুন্নত,নামাজে বসার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুন্নত,নামাযের রুকন কয়টি ?,নামাজের রুকন কেন গুরুত্বপূর্ণ?,নামাজের রুকন কী কী?,নামাযের ওয়াজিব কয়টি ?,নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে বলা,নিয়ত কী?

    Leave a Comment

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Scroll to Top