জিকিরের ফজিলত
জিকিরের ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে বহু আলোচনা রয়েছে। যিকিরের ফজিলত ও গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে অনেক। যেমন- কুরআনে কারীমে আল্লাহ তা‘আলা বলেন—
وَلَذِكْرُ اللهِ أَكْبَرُ
অর্থ : নিশ্চয় আল্লাহর যিকিরই সবচেয়ে বড়। [সুরা আনকাবুত: ৫৪]
আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল কারীমের আরেক স্থানে বলেন-
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرُكُمْ.
অর্থ: তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। [সুরা বাকারা: ১৫২]
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমের আরেক স্থানে বলেন-
فَلَوْلَا أَنَّهُ كَانَ مِنَ الْمُسَبِّحِينَ لَلَبِثَ فِي بَطْنِهِ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ.
অর্থ: তিনি (হযরত ইউনুস আ.) যদি আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা না করতেন, তাহলে তাঁকে কিয়ামত পর্যন্ত মাছের পেটেই থাকতে হত। [সুরা সাফফাত: ১৪৩-১৪৪]
কুরআনে কারীমের অন্যত্র আল্লাহ তা’আলা বলেন-
يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ.
অর্থ: তারা রাতদিন আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করে। কোনো প্রকার অলসতা করে না। [সুরা আম্বিয়া:২০]
জিকিরের ফজিলত ও গুরুত্ব
হযর আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাঃ -কে বলতে শুনেছি- জেনে রাখো, দুনিয়া ও তার মধ্যকার সব কিছুই অভিশপ্ত। কিন্তু আল্লাহ তাআলার যিকির ও তিনি যা পছন্দ করেন এবং জ্ঞানী ও জ্ঞানার্জনকারী (অভিশপ্ত নয়)।
জিকিরের ফজিলত :
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম জাওযী রহ. ‘ওয়াবেলুস সাইয়্যেব’ নামক গ্রন্থে যিকিরের একশতের অধিক ফায়েদা লিখেছেন। নিম্নে তার কিছু উল্লেখ করা হলো—
১. যিকির আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ।
২. যিকরের কারণে অন্তর থেকে চিন্তা দূর হয়ে যায়।
৩. হৃদয়ে প্রশান্তি আসে।
৪. অন্তরে ও শরীরে শক্তি আনয়ন করে।
৫. হৃদয় ও চেহারা উজ্জ্বল করে।
৬. যিকির আকর্ষণ করে।
৭. অন্তর প্রশস্ত করে।
৮. যিকিরকারীকে দেখলে লোকেরা ভয় করে ও ভালোবাসে।
৯. যিকির দ্বারা আল্লাহর মহব্বত পয়দা হয় এবং এ মুহব্বতই হচ্ছে ইসলামের রূহ এবং দ্বীনের মারকাজ এবং সৌভাগ্য ও নাজাতের ভিত্তি। যে আল্লাহর প্রেমে আবদ্ধ হতে চায় সে যেন বেশি বেশি যিকির করে। সর্বদা অধ্যয়ন যেমন বিদ্যার সোপান অনুরূপ সর্বদা বেশি বেশি যিকির করা আল্লাহর মুহাব্বতের সোপান।
১০. যিকিরের উসিলায় মুরাকাবা বা আল্লাহর গভীর ধ্যান অর্জন হয় যা বান্দাকে ক্রমান্বয়ে ইহসানের মাকামে পৌঁছিয়ে দেয়। এই মাকামে পৌছানো মাকামে মুশাহাদা বা আল্লাহকে দেখার মাকাম অর্জন হয়। আর এ মাকাম হচ্ছে সুফীদের চরম উদ্দেশ্য।
১১. যিকির দ্বারা বান্দা আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়। পর্যায়ক্রমে একমাত্র আল্লাহই তার ভরসাস্থল হয়ে যায়। যাবতীয় বিপদাপদে আলাহর দিকেই তার দৃষ্টি নিপতিত হয়। তখন তার কোনো পেরেশানি থাকে না।
১২. যিকির দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়। যিকির যতই বৃদ্ধি পাবে আল্লাহর নৈকট্যও ততো বৃদ্ধি পাবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি যিকির থেকে যত বেশি গাফিল হবে সে আল্লাহর মারিফত থেকে ততো বেশি দূরে থাকবে।
১৩. যিকির আল্লাহর মারিফাতের দরজা খুলে দেয় ৷
আরো পড়ুন : ফরজ নামাজের পর দোয়া ও জিকির সমূহ
১৪. যিকির দ্বারা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব হৃদয়ে বদ্ধমূল হয় এবং তার সাথে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়।
১৫. যিকিরকারীর আলোচনা আল্লাহর দরবারে হতে থাকে। ইরশাদ হচ্ছে – আমাকে স্মরণ কর আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। হাদীসে আছে যে আমাকে মনে মনে স্মরণ করবে আমিও তাকে মনে মনে স্মরণ করব।
১৬. যিকির হৃদয়ের খোরাক। খাদ্য না পেলে শরীরের যে অবস্থা হয় তদ্রুপ যিকিরনা করলে হৃদয়ের সে অবস্থা হয়।
১৭. যিকির দিলকে যিন্দা করে। ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন যিকির হৃদয়ের জন্য ঐরূপ, মাছের জন্য পানি যেইরূপ।
১৮. যিকির অন্তরকে মরিচা থেকে পরিষ্কার করে দেয়। হাদীসে আছে প্রত্যেক বস্তুতে মরিচা ও ময়লা পড়ে। অন্তরের মরিচা ও ময়লা হচ্ছে খাহেশ ও গাফলত আর যিকির হলো এর জন্য রেতস্বরূপ ।
১৯. যিকির দ্বারা পদস্খলন, ভূল-ভ্রান্তি বিদূরিত হয়।
২০. গাফেলের অন্তরে আল্লাহ পাকের সঙ্গে যে অসম্পর্কের ভাব, যিকির দ্বারা তা দূর হয়ে যায়।
২১. বান্দার যিকির আরশের চতুর্দিকে চক্কর দিতে থাকে ।
২২. সুখের অবস্থায় আল্লাহর যিকির করলে বিপদের মুহূর্তে আল্লাহ তার সাহায্য করেন।
২৩. যিকির আল্লাহর আযাব ও গজব থেকে নাজাতের অসীলা।
২৪. সাকীনা ও রহমত নাযিল হয় এবং ফেরেশতা যিকিরকারীকে ঘিরে রাখে।
২৫. যিকিরকারী গীবত পরনিন্দা মিথ্যা অহেতুক কার্যকলাপ থেকে হিফাজতে থাকে ।
২৬. যিকিরের মজলিস ফেরেশতাদের মজলিস আর বাজে কথার মজলিস হলো শয়তানের মজলিস ।
২৭. যিকিরকারী নেকবখত বা সৌভাগ্যবান হয় এবং তার কাছে যে বসে সেও সৌভাগ্যবান হয় । পক্ষান্তরে গাফিল ব্যক্তি নিজে বদবখত বা দুর্ভাগা তার কাছে যে বসে সেও দুর্ভাগা।
২৮. যিকির কিয়ামতের দিন অনুতাপ থেকে রক্ষা করবে। যে মজলিসে যিকির হয় না কিয়ামতের দিন ঐ মজলিস অনুতাপের কারণ হবে।
২৯. যে ব্যক্তি যিকিরের সাথে নির্জনে ক্রন্দন করবে, কিয়ামতের ভীষণ রৌদ্রে যখন মানুষ দিশাহারা হবে, তখন সে আরশের নিচে ছায়া পাবে।
৩০. আল্লাহর কাছে চাইলে যা পাওয়া যায় যিকিরকারী না চেয়ে তার থেকে বেশিপ্রাপ্ত হবে। যেমন হাদীসে কুদসীতে আছে, যে ব্যক্তি যিকরের কারণে কিছু চাইতে পারলো না। আমি তাকে প্রার্থণাকারী থেকে অধিক দিয়ে থাকি।
৩১. যিকির সব থেকে সহজ ইবাদত হওয়া সত্ত্বেও সব ইবাদত থেকে উত্তম । কেননা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নড়া চড়া করা থেকে শুধু জিহ্বা নড়া চড়া করা খুবই সহজ।
৩২. যিকির বেহেশতের চারা গাছের সমতুল্য।
৩৩. যিকিরের ব্যাপারে যত বেশি সাহায্য ও নিয়ামতের ওয়াদা করা হয়েছে অন্য কোনো ইবাদত এত বেশি ওয়াদা করা হয়নি।
৩৪. সর্বদা যিকিরকারী ব্যক্তি নিজ সত্তাকে ভুলে না। যে নিজ সত্তাকে ভুলে যায় সে আল্লাহকে ভুলে যায়। পবিত্র কুরআনের ইরশাদ হচ্ছে— “যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে তোমরা তাদের মত হয়ো না। মূলত আল্লাহ তাআলা তাদের নফস বা সত্তাকে ভুলিয়ে দিয়েছেন এরাই ফাসিক।’ (সুরা হাশর)
বস্তুত : মানুষ নিজের সত্তাকে ভুলে গেলে তা তার ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন কোনো ব্যক্তি বাগান বা ক্ষেত খামার করে একে ভুলে যায়। অর্থাৎ এর রক্ষণাবেক্ষণ করে না, তাহলে নিশ্চয় তা বিনাশ হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকির দ্বারা স্বীয় জিহ্বাকে সিক্ত রাখবে, সে আত্মবিনাশ থেকে রক্ষা পাবে। ভীষণ পিপাসার সময় ঠান্ডা পানি যেমন প্রিয়, ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য খাদ্য যেমন প্রিয়, তীব্র গরম ও শীতের সময় ঘর-বাড়ী এবং পোষাক-পরিচ্ছদ যেমন প্রিয়, আলাহর যিকির তদ্রুপ বরং তার চেয়েও অধিক প্রিয় হতে হবে। কেননা ঐ সব বস্তু না হলে শুধু নশ্বর শরীর ধ্বংস হওয়ার আশংকা অথচ রূহ বা আত্মা বল হওয়ার তুলনায় তা অতি তুচ্ছ।
৩৫. মানুষ যে অবস্থায় থাকুক না কেন, ঘরে বাহিরে সুস্থতায়-অসুস্থতায়, সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় যিকির মানুষের কল্যাণ সাধন করে। অন্য কোনো আমল সর্বাবস্থায় কল্যাণ সাধন করতে পারে না। এমনকি যার হৃদয় যিকিরের নূরে আলোকিত, ঘুমন্ত অবস্থায়ও সে গাফিল রাত্রি জাগরণকারী থেকে উত্তম।
৩৬. যিকিরের নূর দুনিয়াতেও সঙ্গে থাকে, কবরেও সঙ্গে থাকে। পুলসিরাত পার হবার সময়ও আগে আগে থাকবে।
৩৭. যিকির মারিফাতের মূলনীতি। সকল সিলসিলার সুফিয়ায়ে কেরামের তরিকায় প্রচলিত। যার জন্য যিকিরের দরজা খোলা হয়েছে সে যা চায় পেয়ে যায়। যেহেতু আল্লাহর দরবারে কোনো জিনিসেরই অভাব নেই।
৩৮. মানুষের হৃদয়ের মনিকোঠায় এমন একটি বিশেষ স্থান আছে, যা যিকির ব্যতীত অন্য কোনো জিনিস দ্বারা পূর্ণ হয় না। আর যিকির যখন হৃদয়ে বদ্ধমূল হয়ে যায়, তখন যিকিরকারী ব্যক্তি ধন সম্পদ ছাড়াই ধনী হয়ে যায়। যিকরের কারণে সে স্বগোত্রীয় লোকজন ছাড়া অন্য লোকদের কাছেও সম্মানিত হয় ৷ রাজত্ব ব্যতীত তাঁকে বাদশাহ বানিয়ে দেয়া হয়। পক্ষান্তরে যে যিকির থেকে গাফেল থাকে, সে উচ্চ বংশ ধন-সম্পদ এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মালিক হওয়া সত্ত্বেও লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয় ।
৩৯. যিকির বিক্ষিপ্ত বস্তুসমূহকে একত্রিত করে আর একত্রিত বস্তুকে বিক্ষিপ্ত করে দেয়। বিক্ষিপ্তকে একত্র করার অর্থ হলো- মানুষের হৃদয়ে সব আজে-বাজে চিন্তা এসে মানুষকে পেরেশানি করে বা অস্থির করে তোলে, যিকির সেগুলো দূর করে একাগ্রতা আনয়ন করে ও প্রশান্তি সৃষ্টি করে। আর একত্রিত বস্তুকে বিক্ষিপ্ত করার অর্থ হলো- মানুষের অন্তরে যে সব পাপরাশি পুঞ্জিভূত হয়ে থাকে। যিকির সেগুলোকে দূর করে দেয়। তদ্রুপ যিকির শয়তানের বাহিনীকে অন্তর থেকে তাড়িয়ে দেয়। যিকির নিকটবর্তী অর্থাৎ দুনিয়াকে দুরবর্তী করে দেয়। এবং দূরবর্তী অর্থাৎ আখিরাতকে নিকটবর্তী করে দেয়।
৪০. যিকির মানুষের অন্তরকে নিদ্রা থেকে জাগ্রত এবং গাফলত থেকে সতর্ক করে। মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত অসতর্ক থাকে আপন কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হতে থাকে।
৪১. যিকির একটি বৃক্ষ যেখানে মারিফতের ফল ফলে থাকে। সুফীবাদের পরিভাষায় তাকে মাকাম বা হাল বলে। যিকির যত বেশি হবে এই বৃক্ষের শিকড়ও ততো বেশি মজবুত হবে। আর শিকড় যত মজবুত হবে বৃক্ষে ততো বেশি ফল হবে।
৪২. যিকির দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য ও সঙ্গলাভ হয়। ইরশাদ হচ্ছে আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন।
হাদীস শরীফে আছে বান্দা যতক্ষণ আমার যিকির করতে থাকে ততক্ষণ আমি বান্দার সাথে থাকি। অর্থাৎ আল্লাহর রহমত থাকবে। এক রেওয়ায়েতে আছে- যে যিকির করে সে আমারই লোক। তাকে আমি স্বীয় রহমত থেকে দূরে রাখি না। সে যদি গুনাহ করে থাকে তাহলে আমি তার বন্ধু। আর যদি তওবা না করে তাহলে আমি তার চিকিৎসক অর্থাৎ তাকে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রকারের মসিবতে লিপ্ত করিয়ে পাপ থেকে পবিত্র করে নিই ।
যিকিরের দ্বারা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের যে স্বাদ বা আনন্দ অর্জন হয় তা কেবল সালিক বা আল্লাহর ধ্যানমগ্ন সাধকরাই বুঝতে পারেন। হে আল্লাহ! তুমি অধমকে এ দৌলত দ্বারা পূর্ণ হওয়ার তৌফিক দান কর৷
৪৩. যিকির গোলাম আযাদ করা, অগণিত মাল খরচ করা এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার সমতুল্য।
৪৪. যিকির কৃতজ্ঞতার মূল। অতএব যে ব্যক্তি যিকির করল না সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করলো না৷
হাদীসে আছে যে, হযরত মূসা আ. আরজ করলেন, হে আল্লাহ! আমার উপর তোমার অফুরন্ত দয়া সুতরাং তুমি আমাকে বিশেষ একটি জিনিস দান করো, যার দ্বারা আমি তোমার বেশি বেশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি। ইরশাদ হলো- হে মূসা! তুমি আমার যত বেশি বেশি যিকির করবে, ততো বেশি আমার কৃতজ্ঞতা আদায় করবে৷
অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে, হযরত মূসা আ. বললেন- হে আল্লাহ! তোমার যথাযথ কৃতজ্ঞতা কিভাবে আদায় হতে পারে? জবাব আসলো- তোমার জবানকে সর্বদা যিকির দ্বারা তরতাজা রাখ।
৪৫. পরহেজগার ব্যক্তিদের মধ্য থেকে ঐ ব্যক্তি আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় যে সর্বদা আল্লাহর যিকিরে মগ্ন থাকে। কেননা পরহেজগারীর পরিণাম হচ্ছে বেহেশত। আর যিকরের পরিণাম হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভ ৷
৪৬. অন্তরের মধ্যে বিশেষ একটি কঠোরতা থাকে তা যিকির ব্যতীত অন্য কোনো জিনিস দ্বারা নরম হয় না ৷
৪৭. যিকির হলো দিলের যাবতীয় রোগের চিকিৎসা।
৪৮. যিকির হলো আল্লাহর সাথে বন্ধুত্বের শিকড়। আর যিকির থেকে বিমুখ থাকা হলো তার সাথে শত্রুতার শিকড়।
৪৯. যিকির নেয়ামত সমূহের আকর্ষণকারী। আল্লাহর আজাব থেকে হিফাজতকারী। আল্লাহর যিকিরের সমতুল্য অন্য কোনো বস্তু নেই।
৫০. যিকিরকারীদের উপর আল্লাহর রহমত এবং ফেরেশতাদের দুআ আসতে থাকে ।
৫১. যে ব্যক্তি চায়, যে দুনিয়াতে অবস্থান করে বেহেশতের বাগানে বিচরণ করবে, সে যেন যিকিরের মজলিসে বসে। কেননা তা হচ্ছে বেহেশতের বাগান ৫২. যিকিরের মজলিস হলো ফেরেশতাদের মজলিস।
৫৩. আল্লাহ তাআলা যিকিরকারীদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে থাকেন।
৫৪. যারা সর্বদা যিকিরে মগ্ন থাকবে তারা হাসতে হাসতে বেহেশতে যাবে।
৫৫. সকল আমল আল্লাহর যিকির অর্থাৎ স্মরণের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে ‘ আমল শ্রেষ্ঠ যার মধ্যে বেশি বেশি যিকির করা হয়। রোযার মধ্য থেকে ঐ রোযাই উত্তম যাতে বেশি পরিমাণ যিকির হয়। তদ্রুপ হজ্জের মধ্যে ঐ হজ্জই উত্তম যার মধ্যে বেশি পরিমাণে যিকির হয়। জিহাদ ও অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রেও অনুরূপ হুকুম।
৫৭. যিকির নফল ইবাদতের সমকক্ষ।
হাদীস শরীফে আছে গরীব সাহাবীদের একটি দল আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর কাছে অভিযোগ করলো যে, ধনী লোকেরা উচ্চ মর্যাদা লাভ করে যাচ্ছে। কেননা তারা নামায রোযায় আমাদের শরীক। কিন্তু হজ্জ ওমরা এবং জিহাদে তারা মাল খরচ করে আমাদের থেকে উচ্চ মর্যাদা লাভ করে যাচ্ছে। আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন: আমি তোমাদেরকে এমন একটি আমল বলে দিব কি? যার দ্বারা তোমাদের সমকক্ষ হতে পারবে শুধু তারাই যারা তোমাদের মত আমল করবে। তারপর আল্লাহর রাসূল (সা.) তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের পর সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, ও আল্লাহু আকবার পাঠের তালিম দিলেন। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এ হাদীসে যিকিরকে হজ্জ ওমরা এবং জিহাদের সমতুল্য সাব্যস্ত করেছেন।
৫৮. যিকির অন্যান্য ইবাদতে সাহায্য করে। বেশি বেশি যিকিরের ফলে কোনো ইবাদতেই কষ্ট অনুভব হয় না ।
৫৯. যিকিরের কারণে যে কোনো কষ্ট আসান হয়ে যায় যে কোনো কঠিন কাজও সহজ হয়ে যায়। যাবতীয় বিপদ কেটে যায় ৷
৬০. যিকিরের ওসীলায় অন্তর থেকে ভয়-ভীতি দূর হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। যত বেশি যিকির করবে ততো বেশি ভয়-ভীতি দূর হয়ে হৃদয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
৬১. যিকিরের কারণে পরিশ্রমের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। যেমন হযরত ফাতেমা রাযি. নিজ হাতে কঠিন কঠিন কাজ আঞ্জাম দেয়ার কারণে ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর বাতলানো তাসবীহে ফাতেমা রাযি.-এর আমলের কারণে ক্লান্তি লাঘব হতে লাগলো ।
৬২. পরকালের জন্য সঞ্চয়কারীগণ সকলেই দৌড়াচ্ছে। তন্মধ্যে যিকির কারীদের জামাত অগ্রগামী। বর্ণিত আছে— কিয়ামতের দিন যখন সকলেই নিজ নিজ আমলের বদলা পেতে থাকবে তখন অনেকে এ বলে অনুতাপ করবে যে, হায় আফসোস! আমরা সহজতর আমল যিকিরের প্রতি কোনো গুরুত্ব করতাম না। অন্য হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেন, মুফরিদ লোক অনেক অগ্রসর হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
মুফরিদ কারা? উত্তর দিলেন যারা প্রাণ ভরে যিকির করে, যিকির তাদেরযাবতীয় বোঝা হালকা করে দেয়।
৬৩. মহান আল্লাহ যিকিরকারীদেরকে সত্যবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন। মহান আল্লাহ নিজে যাকে সত্যবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, তাদের হাশর মিথ্যাবাদীদের সাথে হতে পারে না। পবিত্র হাদীসে আছে বান্দা যখন বলে লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ তখন আল্লাহ বলেন আমার বান্দা সত্য বলেছে। আমি ছাড়াকোনো মাবুদ নেই । আমি সবচেয়ে বড়।
৬৪. যিকিরের বদৌলতে বেহেশতে বালাখানা তৈরী হতে থাকে। বান্দা যিকির থেকে বিরত হলে ফেরেশতাগণও নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেন। বন্ধের কারণ জিজ্ঞেস ভাত করা হলে ফেরেশতাগণ বলেন, নির্মাণের খবর এখনও এসে পৌঁছেনি।
৬৫. এক হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী সুবহানাল্লাহিল আযীম’ সাতবার পাঠ করবে বেহেশতে তার জন্য একটি গম্বুজ নির্মিত হবে।
৬৬. যিকির জাহান্নামের জন্য একটি বড় বেড়া স্বরূপ। কেউ বদ আমলের কারণে জাহান্নামের উপযুক্ত হলেও যিকির মাঝখানে এসে প্রাচীরের মত দাঁড়ায়। সুতরাং যিকির যত বেশি হবে বেড়া ততো বেশি শক্ত ও মজবুত হবে।
৬৭. যিকিরকারীদের জন্য ফেরেশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করেন। হযরত আমর ইবনে আস রাযি. বলেন, বান্দা যখন ‘ সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী অথবা ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ বলে তখন ফেরেশতাগণ দুআ করেন, হে আল্লাহ! তাঁকে ক্ষমা করে দাও।
৬৮. যে পাহাড় অথবা ময়দানে আল্লাহর যিকির করা হয় সে অন্যের উপর গর্ব করে থাকে।
হাদীসে বর্ণিত আছে, এক পাহাড় অন্য পাহাড়কে ডেকে বলে আজ তোমার উপর দিয়ে কোনো যিকিরকারী অতিক্রম করেছে কি? হ্যাঁ সূচক উত্তর শুনলে খুব খুশি হয়।
৬৯. বেশি বেশি করে যিকির করা মুনাফিকী হতে মুক্ত থাকার মদদস্বরূপ। কারণ আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের পরিচয় এ আয়াতে এভাবে দিয়েছেন- ‘তারা আল্লাহর যিকির খুব কমই করে থাকে ‘ হযরত কা’ব ইবনে আহবার রাযি. বলেন, যে ব্যক্তি অধিক পরিমাণে যিকির করে সে নিফাক হতে মুক্ত।
৭০. সকল নেক আমলের তুলনায় যিকিরের মধ্যে বিশেষ ধরনের একটি স্বাদ রয়েছে। হযরত মালেক ইবনে দীনার রহ. বলেন, স্বাদ হাসিলকারীদের জন্য যিকিরের চেয়ে স্বাদের আর কোনো জিনিস নেই ।
৭১. যে ব্যক্তি পথে-ঘাটে, ঘরে-বাহিরে, দেশে-বিদেশে বেশি বেশি করে যিকির করতে থাকবে, কিয়ামতের দিন তার জন্য ততো বেশি সাক্ষ্যদাতা হবে।
৭২. জিহ্বা যতক্ষণ আল্লাহর যিকিরে থাকবে ততক্ষণ গীবত, শেকায়েত পরনিন্দা অহেতুক কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকবে। কেননা জিহ্বা কখনোও চুপ থাকে না। যিকিরে রত না থাকলে বাজে কথায় রত থাকবে। অন্তরের অবস্থায়ও তদ্রুপ, যদি আল্লাহর প্রেমে লিপ্ত থাকে তাহলে কোনো মাখলুকের প্রেমে লিপ্ত থাকবে না।
৭৩. শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। চতুর্দিক থেকে তাকে চক্রান্তের বেড়াজালে ঘিরে রাখে। শয়তানের এ সব কুচক্রী বাহিনীকে হটাবার জন্য যিকিরের মত হাতিয়ার আর কিছুই নেই। এ জন্যই শয়তানের চক্রান্ত থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন হাদীসে বিভিন্ন দুআ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। যা পাঠ করলে শয়তান কাছে আসতে পারে না এবং শয়নকালে পাঠ করলে সারা রাত্র নিরাপদে থাকা যায়। মহান রাব্বুল আলামীন যাকে তাওফীক দিবেন তার জন্য যা বর্ণিত হয়েছে তাই। যথেষ্ঠ হবে। আর যাকে তাওফীক দেয়া হবে না তার জন্য হাজার ফযীলত বর্ণনা করলেও কোনো কাজে আসবে না। হে দয়াময়! আপনি আমাদেরকে ইখলাসের সাথে সর্বদা বেশি বেশি যিকির করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
আরো পড়ুন :
দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ সহ অর্থ
দোয়ায়ে মাসুরা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
কুরআন ও হাদীসের আলোকে মুনাফিকের আলামত কয়টি
ট্যাগ সমূহ : জিকিরের ফজিলত,জিকিরের ফজিলত ও গুরুত্ব,জিকিরের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস,জিকিরের দোয়া,জিকিরের মজলিসের ফজিলত,জিকিরের ছবি,জিকিরের দলিল,জিকিরের বই pdf,জিকিরের নিয়ম,জিকিরের আয়াত সমূহ,জিকিরের ফজিলত,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ জিকিরের ফজিলত,জিকিরের ফজিলত pdf,সর্বদা জিকিরের ফজিলত,আল্লাহ নামের জিকিরের ফজিলত,জিকিরের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস,আল বাসিতু জিকিরের ফজিলত,আল্লাহর জিকিরের ফজিলত,আন নূর জিকিরের ফজিলত,জিকিরের ফজিলত হাদিস,জিকিরের ফজিলত আল কাউসার,আল্লাহ জিকিরের ফজিলত,আল্লাহু আকবার জিকিরের ফজিলত,জিকিরের ফজিলত pdf,জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত,আল্লাহর জিকিরের ফজিলত,আলহামদুলিল্লাহ জিকিরের ফজিলত,জিকিরের ফজিলত ও গুরুত্ব,আল্লাহু জিকিরের ফজিলত,জিকিরের ফজিলত ও উপকারিতা,বিভিন্ন জিকিরের ফজিলত,কোন জিকিরের কি ফজিলত,জিকির এর ফজিলত,জিকির করার ফজিলত,ফজরের জিকির,যিকিরের ফজিলত,জিকিরের ফজিলত,জিকিরের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস,জিকিরের দোয়া,জিকিরের মজলিসের ফজিলত,জিকিরের ছবি,জিকিরের দলিল,জিকিরের বই pdf,জিকিরের নিয়ম,জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত,জিকিরের ফজিলত,জিকিরের ফজিলত ও গুরুত্ব,জিকিরের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস,জিকিরের দোয়া,জিকিরের মজলিসের ফজিলত,জিকিরের ছবি,জিকিরের দলিল,জিকিরের বই pdf,জিকিরের নিয়ম,জিকিরের আয়াত সমূহ,জিকিরের ফজিলত,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ জিকিরের ফজিলত |