🔹কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম🔹
কাজা নামায আদায় করার অনুমতি শরিয়ত দিলেও ইচ্ছাকৃত নামাজ কাজা করা কবিরা গোনাহ। সুতরাং কোনো কারণে সময় মতো নামাজ আদায় করতে না পারলে তা কাজা করে নেয়া জরুরি। কাযা আদায়ের হুকুম তুলে ধরা হলো-
🔹কাযা নামাজ কাকে বলে🔹
কোনো ফরয অথবা ওয়াজিব নামায সময় মতো যদি পড়া না হয় এবং সময় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পড়া হলে তাকে কাযা নামাজ পড়া বলে । ওয়াক্তের ভেতরেই পড়লে তাকে আদা’ বলে ।
🔹কাযা নামাযের হুকুম🔹
🔹🔹 ফরয নামাযের কাযা ফরয এবং ওয়াজিব নামাযের ওয়াজিব । (বিতর) কাযা মানত করা নামাযের কাযাও ওয়াজিব।
🔹🔹 নফল নামায শুরু করার পর ওয়াজিব হয়ে যায়। কোনো কারণে নফল নামায নষ্ট হলে অথবা শুরু করার পর কোনো কারণে যদি ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে তার কাযা করা ওয়াজিব হবে।
🔹🔹 সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এবং নফলের কাযা নেই । অবশ্য ফজরের সুন্নাত যেহেতু খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং হাদীসে তার খুব তাকীদ রয়েছে, সেজন্য যদি ফজরের ফরয এবং সুন্নাত উভয়ই কাযা হয়ে যায় তাহলে দুপুরের আগে উভয়েরই কাযা পড়তে হবে। দুপুরের পর হলে শুধু ফরয কাযা পড়তে হবে। সুন্নাতের কাযা পড়তে হবে না। আর যদি ফজরের ফরয ওয়াক্তের মধ্যে পড়া হয় এবং সুন্নাত রয়ে যায় তাহলে বেলা উঠার পর থেকে দুপুরের আগে পর্যন্ত পড়া যায় । বেলা গড়ার পরে নয়। এছাড়া অন্য কোনো সুন্নাত বা নফল ওয়াক্তের মধ্যে পড়তে না পারলে তার কাযা ওয়াজিব হবে না।
🔹🔹 যোহরের ফরযের আগে যে চার রাকায়াত সুন্নাত তা যদি কোনো কারণে পড়া না হয় তাহলে ফরযের পর পড়া যায় । ফরযের পর যে দু’রাকায়াত যোহরের সুন্নাত আছে তার আগেও পড়া যায় এবং পরেও পড়া যায় । তবে যোহরের ওয়াক্ত চলে গেলে কাযা ওয়াজিব হবে না।
🔹কাযা নামাযের মাসয়ালা ও কাযা নামাজের বিধান🔹
🔹🔹 বিনা কারণে ও বিনা ওযরে নামায কাযা করা বড় গুনাহ। তার জন্য হাদীসে কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। যদি অবহেলার জন্য এমন ভুল হয় তাহলে খাঁটি দিলে তওবা করা উচিত এবং ভবিষ্যতে সংশোধনের জন্য দৃঢ় সংকল্প করতে হবে ।
🔹🔹 কোনো ন্যায়সংগত ওযর বা অক্ষমতার জন্য নামায কাযা হলে তার গড়িমসি করা ঠিক নয় । যতো শীঘ্র সম্ভব কাযা আদায় করা উচিত । বিনা কারণে বিলম্ব করা গুনাহ । তারপর জীবনেরও তো কোনো ভরসা নেই, সুযোগ নাও মিলতে পারে এবং এমন অবস্থায় মানুষ আল্লাহর কাছে হাযির হবে যে, সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও সে বিলম্ব করে কাযা নামায পড়তে পারেনি ।
🔹🔹 যদি কোনো সময়ে কয়েকজনের নামায কাযা হয়ে যায় যেমন এক সাথে সফর করার সময় ওয়াক্তের মধ্যে নামায আদায় করা যায়নি অথবা কোনো মহল্লায় কোনো দুর্ঘটনা হওয়ার কারণে সকলের নামায কাযা হয়ে গেল অথবা কয়েকজন ঘুমিয়ে রইলো এবং সকলের নামায কাযা হলো, অবস্থায় জামায়াতের সাথে কাযা আদায় করতে হবে। যদি সেররী নামায কাযা হয় তো কাযা জামায়াতের সেররী কেরায়াত করতে হবে। জাহেরী হলে জাহেরী কেরায়াত।
🔹🔹 কোনো এক ব্যক্তির নামায যদি কখনো কাযা হয়, তাহলে চুপে চুপে ঘরে কাযা পড়ে নেয়া ভালো । যদি অবহেলায় এ কাযা হয়ে থাকে তাহলে এ গুনাহ লোকের মধ্যে প্রকাশ করাও গুনাহ । কোনো অক্ষমতায় কাযা হয়ে গেলেও তা মানুষের কাছে প্রকাশ করা দোষণীয় এবং মাকরূহ। যদি মসজিদেও কাযা পড়া হয় তবুও মানুষকে জানতে দেয়া ঠিক নয় ।
🔹🔹 কাজা নামাজ পড়ার সময় : কাযা নামায পড়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। যখনই স্মরণ হবে এবং সুযোগ হবে পড়ে নিতে হবে। তবে নিষিদ্ধ সময়গুলোতে মনে পড়লে অপেক্ষা করতে হবে। সে সময় উত্তীর্ণ হলে পড়তে হবে। যদি এক সাথে কয়েক ওয়াক্তের নামায কাযা হয়, তাহলে কাযা আদায় করতে বিলম্ব করা উচিত নয়। যত শীঘ্র সম্ভব কাযা পড়ে নিতে হবে। সম্ভব হলে একই ওয়াক্তে সমস্ত কাযা পড়ে নিতে হবে। এটা জরুরী নয় যে, যোহরের কাযা যোহরের সময় আসরের কাযা আসরের সময় বরং একই সময় সব কাযা পড়ে নেয়া উচিত ।
🔹🔹 কেউ অবহেলা করে দীর্ঘ দিন নামায পড়েনি। এভাবে মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর নামায না পড়ে কাটিয়েছে। তারপর আল্লাহ তাকে তওবা করার সুযোগ দিলেন তখন ঐ সমস্ত নামাযের কাযা তার ওপর ওয়াজিব হবে। তওবা করলে আশা করা যায় নামায না পড়ার গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু যে নামায পড়া হয়নি তা মাফ হবে না। সে জন্য সব কাযা পড়তে হবে।
🔹🔹 কারো যদি কয়েক মাস এবং কয়েক বছর নামায কাযা হয়ে যায়, তাহলে তার উচিত কাযা নামায একটা অনুমান করে নিয়ে কাযা পড়া শুরু করবে। এ অবস্থায় কাযা পড়ার নিয়ম এই যে, সে যে ওয়াক্তের কাযা পড়তে চাইবে সে ওয়াক্তের নাম নিয়ে বলবে যে, অমুক ওয়াক্তের সবচেয়ে প্রথম বা শেষ নামায পড়ছি। যেমন কাযা হওয়া নামাযের মধ্যে ফজরের নামাযের কাযা পড়তে চায়, তাহলে বলবে, ফজরের সবচেয়ে প্রথম অথবা শেষ নামায পড়ছি । এভাবে পড়তে থাকবে যাতে সকল কাযা নামায পুরা হয়ে যায়। সফরে যে নামায কাযা হবে তা মুকীম হয়ে পড়তে গেলে কসর পড়বে। তেমনি মুকীম অবস্থায় কাযা হলে সফরে তা পুরা পড়তে হবে।
🔹🔹 শুধু বিতরের নামায কাযা হয়েছে এবং আর কোনো কাযা নেই । তাহলে বিরের কাযা পড়া ব্যতীত ফজরের নামায পড়া ঠিক হবে না । যদি বিরের কাযা স্মরণ রাখা সত্ত্বেও প্রথমে ফজরের নামায পড়ে তারপর বিত্র পড়ে তাহলে বিরের পর পুনরায় ফজরের নামায পড়তে হবে।
🔹🔹 যদি কোনো রোগ শয্যায় ইশারা করে নামায পড়া যেতো কিন্তু কিছু নামায কাযা হয়ে গেল । তাহলে এমন ব্যক্তির উচিত হবে যে, সে যেন তার ওয়ারিশদেরকে অসিয়ত করে যায় তার এক তৃতীয়াংশ মাল থেকে কাযা নামাযের ফিদিয়া আদায় করে। এক কাযা নামাযের ফিদিয়া সোয়া সের গম অথবা আড়াই সের যব। এ সবের মূল্য দিলেও হবে।
🔹🔹 কোনো রোগী যদি এতটা দুর্বল হয়ে পড়ে যে, ইশারায় নামায পড়ারও শক্তি নেই অথবা বেহুঁশ হয়ে পড়লো এবং এভাবে ছয় ওয়াক্ত নামায কাযা হয়ে গেল। তাহলে তার কাযা পুরা করা ওয়াজিব হবে না। তবে পাচ ওয়াক্তের পর যদি হুঁশ হয় তাহলে সব নামায কাযা করতে হবে।
🔹🔹 যারা অজ্ঞাত কারণে জীবনের একটা অংশ অবহেলায় কাটিয়েছে এবং অসংখ্য নামায কাযা হয়েছে। তারপর তার যদি তওবার তৌফিক হয় তাহলে তার ছুটে যাওয়া নামাযগুলোর কাযা পড়ার সহজ পন্থা এই যে, পাঁচ ওয়াক্তের নামাযের ফরয আদায় করার সাথে যেসব সুন্নাত এবং নফল সাধারণত পড়া হয়ে থাকে সেগুলো সুন্নাত নফলের নিয়তে পড়ার পরিবর্তে ছুটে যাওয়া ফরয নামাযের কাযা হিসেবে পড়তে থাকবে । যতোক্ষণ না তার এ প্রবল ধারণা জন্মে যে, সব নামাযের কাযা পড়া হয়েছে ততোদিন পড়তে থাকবে ।
এটা খুবই ভুল যে, মানুষ পাঁচ ওয়াক্তের আদা ফরযের সাথে সুন্নাত নফল পড়বে কিন্তু ছুটে যাওয়া নামাযের কাযা করা অবহেলা করবে । ছুটে যাওয়া নামায কর্জের ন্যায় । এটা একেবারে অর্থহীন যে কর্জ পরিশোধ করার কথা নেই, এদিকে দান খয়রাত চলছে। তবে ছুটে যাওয়া ফরয নামাযের কাযা পড়ার পুরাপুরি ব্যবস্থার সাথে সাথে যদি পাঁচ ওয়াক্তের নামাযের সুন্নাত-নফল পড়ে, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তা’আলা কবুল করবেন।
🔹🔹 জুমার নামাযে কাযা নেই । জুমা পড়তে না পারলে চার রাকায়াত যোহর কাযা পড়তে হবে।
🔹🔹 কোনো ব্যক্তি ঈদের নামাযে ইমামের সাথে শরীক হলো । তারপর কোনো কারণে তার নামায নষ্ট হয়ে গেল। এখন সে আর ঐ নামাযের কাযা পড়তে পারে না। কারণ ঈদের নামাযের কাযা নেই। ওয়াক্তের মধ্যে একাও আদায় করতে পারে না। এ জন্য যে, ঈদের নামাযের জন্য জামায়াত শর্ত ।
🔹🔹 যদি ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার নামায কোনো কারণে প্রথম দিন পড়তে পারা না যায়, তাহলে ঈদুল ফিতরের নামায পর দিন এবং ঈদুল আযহার নামায বারো তারিখ পর্যন্ত কাযা পড়া যায় ।
🔹সাহেবে তরতীব এবং তার কাযা নামায🔹
বালেগ হওয়ার পর যে মু’মিন বান্দাহর কোনো নামায কাযা হয়নি, অথবা জীবনে প্রথম এক বা দু’নামায কাযা হয়েছে, ক্রমাগত হোক অথবা মাঝে মাঝে হোক অথবা প্রথমে কাযা হয়ে থাকলে তার কাযা পড়া হয়েছে এবং এখন তার এক, দুই বা ঊর্ধে পাঁচ ওয়াক্তের নামায কাযা আছে, এমন ব্যক্তিকে শরীয়তের পরিভাষায় ‘সাহেবে তরতীব’ বলে। সাহেবে তরতীবের কাযা পড়ার ব্যাপারে দু’টি বিষয়ের লক্ষ্য রাখা জরুরী।
প্রথম এই যে, যতোক্ষণ পর্যন্ত ছুটে যাওয়া নামাযের কাযা না পড়বে, সামনে ওয়াক্তের আদা নামায পড়তে পারবে না। যেমন কারো ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব এবং এশা অর্থাৎ রাতের নামায কাযা হলো । এখন যতোক্ষণ না সে এ পাঁচ ওয়াক্তের কাযা পড়বে, ততোক্ষণ সামনের দিনের ফজর নামায পড়া তার জন্য দুরস্ত হবে না। যদি জেনে বুঝেও পড়ে ফেলে, তাহলে তা আদায় হবে না। কাযা নামায আদায়ের পর ফজরের নামায তাকে পড়তে হবে। তবে যা সাহেবে তরতীবের কাযা নামায পড়তে মনে না থাকে এবং ওয়াক্তের নামায পড়ে ফেলে তাহলে তার নামায পুনরায় পড়ার দরকার হবে না। বিরে কাযারও তাই হুকুম অন্যান্য নামাযের মতো।
দ্বিতীয় কথা এই যে, কাযা হওয়া নামাযগুলো ক্রম অনুসারে পড়তে হবে। অর্থাৎ প্রথমে ফজরের নামায, তারপর যোহরের, তারপর আসরের, তারপর মাগরিবের এবং তারপর এশার। যদি সে ফজরের নামাযের আগে যোহর পড়ে ফেলে, তাহলে ফজরের নামায পড়ার পর যোহরের কাযা আবার পড়তে হবে। এমনি যোহরের নামাযের কাযা পড়ার আগে যদি আসর বা মাগরিবের কাযা পড়া হয়, তাহলে যোহরের কাযা পড়ার পর আবার আসর মাগরিব পড়তে হবে। যার পাঁচ ওয়াক্তের বেশী নামায কাযা হয়, সে সাহেবে তরতীব নয়।
কাযা নামায পড়ার জন্য তার ক্রম অনুসারে পড়া ওয়াজিব হবে না । যখন সুযোগ পাবে এবং যে ওয়াক্তের নামায কাযা পড়তে চাইবে তা পড়তে পারবে। কাযা নামায পড়ার আগে আদা নামায পড়াও জায়েয। ক্রম অনুসারে পড়াও বাধ্যবাধকতা শুধু সাহেবে তরতীবের জন্য ।
আরো পড়ুন :
ট্যাগ সমূহ : কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম,কাযা নামাজের বিধান,কাযা নামাজ,ফজরের কাযা নামাজ পড়ার নিয়ম,কাযা নামাজের নিয়ত,কাযা নামাজের নিয়ত,ফজরের কাযা নামাজের নিয়ত,কাযা নামাজ পড়ার নিয়ম,কাযা নামাজের নিয়্যত,বিতরের কাযা নামাজ পড়ার নিয়ম,কাযা নামাজের নিয়ম,বিতরের কাযা নামাজ পড়ার নিয়ত,আসরের পর কাযা নামাজ,কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম,কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম,কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম,কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম,কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম,কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম, কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম,কাজা নামাজ পড়ার সময়,কাজা নামাজরে নিয়ত,কাজা নামাজ জামাতে পড়া যায় কি,কাজা নামাজ কাকে বলে,কাজা নামাজ কয় রাকাত,কাজা নামাজ কি,কাজা নামাজ কখন পড়া যাবে না,নামাজ সম্পর্কে হাদিস, কাযা নামাজ কাকে বলে,কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম,কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম,কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম,কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম,কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম, ফজরের কাযা নামাজ কয় রাকাত,কাযা নামাজ আদায় করার নিয়ম,ফজরের কাযা নামাজ,আসরের নামাজের পর কাযা নামাজ পড়া যাবে কি,কাযা নামাজ নিযাত,কাযা নামাজ পড়ার নিয়ম,কাযা নামাজের হাদিস,যোহরের কাযা নামাজের নিয়ত,উমরী কাযা নামাজ,উমরি কাযা নামাজের নিয়ত,ফজরের কাযা নামাজ কখন পড়তে হয়,ফজরের কাযা নামাজের সময়,কাযা নামাজের নিয়ম,কাযা নামাজ পড়ার বিবরণ,কাযা নামাযের হুকুম,কাযা নামাজের বিধান,কাযা নামাজের বিধান,কাজা নামাজ পড়ার সময়,কাজা নামাজ পড়ার সময়,কাজা নামাজ পড়ার সময় |