ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নবী যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় এলেন, তখন তিনি দেখলেন যে, লোকেরা বছরে দু’টি নির্দিষ্ট দিনে খেলাধূলা ও আনন্দ উপভোগ করে। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এ দু’টি দিন কেমন? তারা বলেন, আমরা ইসলামে আগমনের পূর্বে এ দু’টি দিনে খেল- তামাশা ও আনন্দ উপভোগ করতাম । নবী (সাঃ) বলেন, আল্লাহ এ দু’টি দিনের পরিবর্তে দুটি উৎকৃষ্টতর দিন নির্ধারিত করে দিয়েছেন। একটি ঈদুল ফিতরের দিন এবং অন্যটি ঈদুল আযহার দিন।
ঈদুল ফিতরের মর্ম
শাওয়াল মাসের প্রথম দিন মুসলমানগণ ঈদুল ফিতর উৎসব পালন করেন। আল্লাহ তা’আলা বান্দাহদের উপরে রমযান মাসের রোযা, তারাবীহ, কুরআন তেলাওয়াত, দান খয়রাত প্রভৃতি যেসব ইবাদাত নির্ধারিত করে দিয়েছেন, বান্দাহগণ তা ভালোভাবে আদায় করার তাওফীক তাঁর কাছ থেকে লাভ করে সফলতা লাভ করেছে। তারই জন্য সত্যিকার আনন্দ প্রকাশের জন্যই এই ঈদুল ফিতরের উৎসব পালন করা হয়।
ঈদুল ফিতরের সুন্নত সমূহ
১. নিজের সাজ পোশাকের ব্যবস্থা করা।
২. ফজরের নামাযের পর ঈদের নামাযের জন্য গোসল করা।
৩. মিসওয়াক করা।
৪. সাধ্যমত নতুন বা পরিচ্ছন্ন কাপড় পরে সুগন্ধি ব্যবহার করা ।
৫. খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা।
৬. সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া ।
৭. ঈদগাহে যাবার আগে সদকা ফিতরা দিয়ে দেয়া ।
৮. ঈদগাহে যাবার আগে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া ।
৯. ঈদগাহে ঈদের নামায আদায় করা। ঈদগাহে নামায পড়ার জন্য যাওয়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। নবী ঈদের নামায ঈদগাহে পড়তেন যদিও মসজিদে নববীতে নামায পড়ার অসাধারণ ফযীলত। একবার মাত্র বৃষ্টির জন্য মসজিদে নববীতে তিনি নামায পড়েন। (আবু দাউদ)
১০. পথের এক পাশ দিয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং পথের অন্য পাশ দিয়ে আসা।
১১. রাস্তায় ধীরে ধীরে নিম্নের তাকবীর বলা- الله اكبر الله أكبر لا إله إلا الله و الله اكبر الله اكبر وله الحمد –
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত
বর্তমান সময়ে নামাজের মধ্যে মুখে উচ্চারণ করে যে নিয়ত টি পাঠ করা হয়; সেটা কোন সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। নিয়ত হচ্ছে অন্তরের বিষয়। নিয়ত করতে হয়, নিয়ত পড়াটা জরুরী নয়। তাই প্রচলিত নিয়ত টি না পড়াই ভালো।
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম
ঈদের নামাযের নিয়ত করে আল্লাহু আকবার বলতে বলতে কানের গোড়া পর্যন্ত হাত উঠাবে। তারপর হাত বেঁধে সানা পড়তে হবে। তারপর তিনবার আল্লাহু আকবার বলতে হবে এবং প্রত্যেক বার কানের গোড়া পর্যন্ত হাত উঠাতে হবে। প্রত্যেক তাকবীরের পর তিনবার সুবহানাল্লাহ পড়ার পরিমাণ সময় থামতে হবে। তৃতীয় তাকবীরের পর হাত ঝুলিয়ে না রেখে বাঁধতে হবে। তারপর তায়াউয, তাসমিয়া, সূরা ফাতেহা এবং অন্য সূরা তার সাথে মিলাবে। তারপর নিয়ম মত রুকূ’ সিজদার পর দ্বিতীয় রাকায়াতে সূরা ফাতিহা এবং তার সাথে অন্য সূরা পড়বে। তারপর রুকূতে যাওয়ার পূর্বে তিন তাকবীর বলে হাত ঝুলিয়ে দেবে। অতপর চতুর্থ তাকবীর বলে রুকূতে যাবে।
ঈদের নামাযের সময়
সূর্য ভালোভাবে উঠার পর যখন উজ্জ্বল আলো ছড়িয়ে পড়বে তখন ঈদের নামাযের সময় শুরু হবে এবং দুপুর পর্যন্ত বাকী থাকে। কিন্তু ঈদের নামায বিলম্বে না পড়া মুস্তাহাব। তবে মাসনূন এই যে, ঈদুল আযহার নামায একটু তাড়াতাড়ি পড়তে হবে এবং ঈদুল ফিতরের নামায তার কিছু পরে।
ঈদের নামাযের মাসয়ালা
১. যদি কেউ ঈদের নামায না পায় তাহলে সে একাকী ঈদের নামায পড়তে পারে না। এ জন্য যে, ঈদের নামাযের জামায়াত শর্ত। এমনিভাবে কেউ ঈদের নামাযে শরীক হলো বটে কিন্তু তার নামায কোনো কারণে নষ্ট হয়ে গেল, তাহলে সে আর কাযা পড়তে পারবে না, তার ওপর কাযা ওয়াজিব ও হবে না। কিন্তু অন্য লোক তার সাথে শরীক হলে নামায পড়তে পারে ।
২. কোনো কারণে ঈদুল ফিতরের নামায ঈদের দিন পড়া গেল না, তাহলে দ্বিতীয় দিনে পড়া যায়। আর এ অবস্থায় যদি ঈদুল আযহার সময় হয়, তাহলে ১২ই যিলহজ্জ পর্যন্ত পড়া যায়।
৩. বিনা ওযরে ঈদুল আযহার নামায ১২ তারিখ পর্যন্ত পড়া যায় কিন্তু তা মাকরূহ হবে। ঈদুল ফিতরের নামায বিনা ওযরে বিলম্বিত করা একেবারে জায়েয নয়।
৪. ঈদের নামাযের জন্য আযানও নেই ইকামাতও নেই।
৫. মেয়েদের জন্য এবং যে ব্যক্তি কোনো কারণে ঈদের নামায পড়লো না। তাদের জন্যে ঈদের নামাযের পূর্বে নফল নামায পড়া মাকরূহ।
৬. কোনো ব্যক্তি এমন সময়ে ঈদের নামাযে শরীক হলো যখন ইমাম তাকবীর বলে কেরায়াত শুরু করেছেন তখন সে নিয়ত বেঁধে প্রথমে তাকবীর বলবে। যদি সে রুকূ’তে শরীক হয়, তাহলে নিয়ত বেঁধে তাসবিহ বলার পরিবর্তে তাকবীর বলবে কিন্তু হাত উঠাবে না । পুরা তাকবীর বলার পূর্বে যদি ইমাম রুকূ’ থেকে ওঠে পড়েন, তাহলে সেও ইমামের সাথে দাঁড়াবে। এ অবস্থায় যে তাকবীর ছুটে যাবে তা মাফ ।
৭. ইমাম যদি ঈদের নামাযে অতিরিক্ত তাকবীর বলতে ভুলে যান এবং রুকূ’তে গিয়ে মনে হয়, তাহলে রুকূ’ অবস্থাতেই তাকবীর বলবেন কেরায়াত করতে যাবেন না। কেয়াম করার জন্য রুকূ’ থেকে উঠলেও নামায নষ্ট হবে না।
৮. ঈদগাহে বা যেখানে ঈদের নামায পড়া হচ্ছে সেখানে অন্য নামায মাকরূহ। ঈদের নামাযের পূর্বেও এবং পরেও।
৯. কেউ ঈদের নামায না পেলে কাযা পড়তে হবে না। কারণ ঈদের নামাযে কাযা নেই।
১০. শহরে কয়েক স্থানে ঈদের নামায সর্ব সম্মতিক্রমে জায়েয। যারা ঈদগাহে যেতে পারে না তাদের জন্য শহরে নামাযের ব্যবস্থা করা উচিত যাতে করে তারা ঈদের নামায আদায় করতে পারে।
১১. ঈদের নামাযে উচ্চস্বরে কেরায়াত পড়তে হবে। যেসব সূরা নবী পড়তেন তা পড়া ভালো। তিনি কখনো সূরা ‘আ’লা’ এবং ‘গাশিয়া’ পড়তেন-(আহমদ, তিরমিযী) এবং কখনো সূরা ‘কাফ’ এবং ‘ক্বামার’ পড়তেন। -(তিরমিযী, আবু দাউদ)
ঈদের খুতবার মাসয়ালা
১. ঈদের খুতবা সুন্নাত এবং শুনা ওয়াজিব।
২. ঈদের খুতবা নামাযের পর পড়া সুন্নাত । হযরত আবু সাঈদ রাদিয়ালাহ আনহু বলেন, নবী (সাঃ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে ঈদগাহে যেতেন। সেখানে সর্বপ্রথম তিনি নামায আদায় করতেন। তারপর জনসমাবেশের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন। লোক নিজ নিজ কাতারে বসে থাকতো। তিনি তখন তাদের সামনে ওয়াজ করতেন, দ্বীনের হুকুম-আহকাম বলে দিতেন । কোনো দিকে সেনাবাহিনী পাঠাতে হলে অথবা কোনো বিশেষ হেদায়াত দিতে হলে তা দিতেন । তারপর বাড়ী ফিরে আসতেন । -(বুখারী, মুসলিম)
৩. দুই খুতবা পড়া এবং উভয়ের মধ্যে এতটুকু বসা, যেমন জুমার খুতবায় বসা হয়— সুন্নাত ।
৪. ঈদের খুতবায় তাকবীর বলতে হবে। প্রথম খুতবায় নয়বার এবং দ্বিতীয় খুতবায় সাতবার ।
৫. ঈদুল ফিতরের খুতবায় সাদকায়ে ফিতর সম্পর্কে এবং ঈদুল আযহার খুতবায় কুরবানী এবং তাকবীরে তাশরীক সম্পর্কে মাসয়ালা-মাসায়েল বলতে হবে।
আরো পড়ুন :
ট্যাগ সমূহ : ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম,ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত,ঈদুল ফিতরের ফজিলত.ঈদুল ফিতর নামাজের নিয়ত,ঈদুল ফিতরের সুন্নত সমূহ,ঈদুল ফিতর নামাজের নিয়ম,ঈদুল ফিতর |