প্রশ্ন: বৈশ্বিক উষ্ণায়নে উন্নত দেশসমূহ অধিক দায়ী আলোচনা কর। (Developed countries are more responsible for global warming Discuss.)

বৈশ্বিক উষ্ণায়নে উন্নত দেশসমূহ অধিক দায়ী , (Developed countries are more responsible for global warming Discuss.)
বৈশ্বিক উষ্ণায়নে উন্নত দেশসমূহ অধিক দায়ী

প্রশ্ন: বৈশ্বিক উষ্ণায়নে উন্নত দেশসমূহ অধিক দায়ী আলোচনা কর।

উত্তর : বায়ুমণ্ডলের গ্রিন হাউজ গ্যাসের ঘনত্ব বৃদ্ধির দরুণ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধির ঘটনাকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলে।

CO2 সহ বিভিন্ন গ্রিন হাউজ গ্যাস। যেমন- CH4 N2O, O3, H2O, CFC ইত্যাদি বিশ্ব উষ্ণায়নের মূল কারণ। অবশ্য বর্তমানে CO2 র অস্বাভাবিক ঘনত্ব বৃদ্ধিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গবেষকদের মতে, শিল্পোন্নত বা উন্নত বৈশ্বিক উষ্ণায়নে উন্নত দেশসমূহ অধিক দায়ী। আবার অনেক গবেষকের মতে, শুধু উন্নত রাষ্ট্রই নয় বরং বৈশ্বিক উষ্ণায়নে উন্নত দেশসমূহ অধিক দায়ী। এর কারণ হলো শিল্পোন্নত দেশ তথা উন্নত দেশগুলোর অতিমাত্রায় শিল্পদ্রব্য ব্যবহার এবং একই সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোর দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ।

IPCC এর গবেষণা অনুসারে (২০১৩ সাল), বিশ্বের জলবায়ু যে ক্রমাগত উষ্ণ হয়ে উঠছে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সে উষ্ণায়নের জন্য পৃথিবীর সকল মানুষ মোটেই দায়ী নয়, দায়ী মুষ্ঠিমেয় মানুষ। অর্থাৎ গরীব দেশগুলো দায়ী নয়, শিল্পোন্নত বা বৈশ্বিক উষ্ণায়নে উন্নত দেশসমূহ অধিক দায়ী এবং সকল মানুষ ভুক্তভোগী বলা যায়। কেননা জলবায়ুর উষ্ণায়নের জন্য যে কার্বন-ডাই অক্সাইড দায়ী তা অধিক মাত্রা নিঃসরণ ঘটায় উন্নত দেশগুলো। কিন্তু উন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যা পৃথিবীর মোট ভুক্তভোগী জনসংখ্যার সামান্য অংশমাত্র। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ মাত্র। কিন্তু এই যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর খনিজ জ্বালানির ২৫ শতাংশ ব্যবহার করছে এবং বায়ুমণ্ডলে মোট কার্বন-ডাই অক্সাইডের ২২ শতাংশ ছাড়ছে।

এদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা । পৃথিবীর জনসংখ্যার ৭৮ শতাংশ এবং তারা জ্বালানির ১৮ শতাংশ ব্যবহার করছে। বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমণ করছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। এর পরিমাণ হলো শতকরা ৫০ ভাগ। এরপর রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা। ১৯৫০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত শিল্পোন্নত দেশগুলোর কারণে পৃথিবীর মোট কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৭২ শতাংশ। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাস তৈরিতেও উন্নত দেশগুলোর ভূমিকা বেশি। এসব তথ্য থেকে প্রতীয়মান হয়, উন্নয়নশীল দেশগুলো যেসব জটিল পরিবেশগত সমস্যার সম্মুখীন তার অধিকাংশের বৈশ্বিক উষ্ণায়নে উন্নত দেশসমূহ অধিক দায়ী।

অন্যদিকে বাংলাদেশ নির্গমণ করছে সবচেয়ে কম কার্বন। মাত্র দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বিগত কয়েক বছর ধরে জার্মান ওয়াচ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন জলবায়ুর ঝুঁকির সূচক প্রকাশ করে আসছে। এ সূচকে ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচ এর ২০১০ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ। আবার আগামী ৩০ বছরে যে ১৬টি দেশ সবচেয়ে বেশি বিপন্ন বলে চিহ্নিত হয়েছে, তাদের মধ্যেও বাংলাদেশ এক নম্বরে রয়েছে। এক কথায় জলবায়ু বিপন্নতার সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ সবচেয়ে বিপন্ন। এর কারণ হলোঁ বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক ভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠের মাত্র ১০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এ দেশের শতকরা ৮৮ শতাংশ জমি সমতল। এ অঞ্চলের ১৩ শতাংশ বৃষ্টির পানি বাংলাদেশ ভূখণ্ডের উপর দিয়ে সমুদ্রে যায়।

বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আগামী ১০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বাড়লে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যাবে। উন্মুক্ত হবে প্রায় দুই কোটি মানুষ। তাদের আশ্রয় দেওয়ার মতো জায়গা থাকবে না। উপকূলীয় এলাকার জনগণের একটি বিরাট অংশ জালবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হয় । অতএব বৈশ্বিক উষ্ণায়নে উন্নত দেশসমূহ অধিক দায়ী।

আরো পড়ুন : পরিবেশের উপর ধাতু পার্টিকুলেটসমূহের প্রভাব লেখ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top