প্রশ্ন: মাটি দূষণের উৎস, প্রভাব ও প্রতিকারের উপায়গুলো সংক্ষেপে লিখ।

মাটি দূষণের উৎস, প্রভাব ও প্রতিকারের উপায়গুলো সংক্ষেপে লিখ

মাটি দূষণের উৎস প্রভাব ও প্রতিকারের উপায়গুলো সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, মাটি দূষণের উৎস, প্রভাব ও এর প্রতিকারের উপায়গুলো লিখ

উত্তর : মাটি দূষণ হলো মাটির সাথে যেসব বস্তুর সংমিশ্রণে মাটির স্বাভাবিক ধর্ম ও গুণাগুণের পরিবর্তন ঘটিয়ে মাটির স্বাভাবিক অবস্থার অবনতি ঘটায়, যা জীবজগতের জন্য ক্ষতিকর। নিচে মাটি দূষণের উৎস, প্রভাব ও প্রতিকারের উপায় দেওয়া হলো :

মাটি দূষণের উৎস : কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় দূষক দ্বারা মাটি দুষিত হয়। মাটি দূষণের উৎসগুলো হলো:
১. অধিক লবণাক্ততা; ২. দীর্ঘস্থায়ী খরা; ৩. অত্যধিক বৃষ্টিপাত; ৪. বন্যা; ৫. অগ্ন্যুৎপাত; ৬. কৃষিজ আবর্জনা; কীটনাশক; ৮. জৈব পদার্থ; ৯. ছাই; ১০. এসিড বৃষ্টি; ১১. তেজস্ক্রিয় পদার্থ; ১২. অজৈব পদার্থ; ১৩, পশু-পাখির মলমূত্র; তৈল জাতীয় বর্জ্য ইত্যাদি ।

মাটি দূষণের প্রভাব : মাটি দূষণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষসহ অন্যান্য জীব ও তার পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। নিচে মাটি দূষণের প্রভাবসমূহ দেওয়া হলো :

১.মাটিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততা ফসলের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
২. অত্যধিক বৃষ্টিপাতের প্রভাবে মাটির স্বাভাবিক ও রাসায়নিক গুণাগুণের পরিবর্তন ঘটে। ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়।

৩. অগ্ন্যুৎপাত ও তুষারপাতের ফলে মাটির স্বাভাবিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে যা উৎপাদন হ্রাস পায়।
৪. বিভিন্ন আবর্জনা মাটিতে পচানো হয়। এগুলো মাটিকে দূষিত করে মাটির উর্বরতা হ্রাস করে।
৫.কঠিন বর্জ্য পদার্থ মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং গাছপালা ও ফসলাদি জন্মাতে বাধার সৃষ্টি করে।

৬. বিভিন্ন রাসায়নিক সার প্রয়োগে মাটির অম্লতা বৃদ্ধি পায় এবং মাটিতে বায়ু চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
৭. মাটি দূষণে বনাঞ্চল ধ্বংস হবার ফলে পরিবেশে CO2 এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়।

৮.এসিড বৃষ্টির ফলে মাটির অম্লতা অত্যধিক বৃদ্ধি পায় যা উদ্ভিদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
৯.মাটিতে স্তূপীকৃত ময়লা আবর্জনা প্রাকৃতিক পরিবেশকে অসুন্দর করে।

মাটি দূষণের প্রতিকারের উপায় : মাটি দূষণ প্রতিকারের উপায়সমূহ নিচে দেওয়া হলো :
১. নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন করে শিল্প আবর্জনা পুনঃব্যবহার করে মাটি দূষণ হ্রাস করা যায়।
২. জমিতে ব্যবহারের জন্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের বিকল্প ব্যবস্থা উদ্ভাবন করে মাটি দূষণ হ্রাস করা যায়।

৩. বনায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করে মাটি দূষণ হ্রাস করা যায়।
৪. বিভিন্ন আবর্জনা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুনরাবর্তনের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করে মাটি দূষণ কমানো যায়।
৫. উৎস থেকে কঠিন বর্জ্য পদার্থ উৎপাদন হ্রাস করার জন্য আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করে মাটি দূষণ হ্রাস করা যায়।

৬. আইন প্রয়োগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানায় মলমূত্র ত্যাগ করে মাটি দূষণ রোধ করা যায়।
৭. রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার কমিয়ে মাটি দূষণ হ্রাস করা যায়।
৮. কৃষি ও গৃহস্থালি আবর্জনা ও গৃহপালিত পশু-পাখির মলমূত্র ও মৃতদেহ নির্দিষ্ট জায়গায় গর্ত করে মাটিতে পুঁতে মাটি দূষণ হ্রাস করা সম্ভব।
৯. কঠিন বর্জ্য পদার্থ যত্রতত্র স্তূপ করে রাখা নিষিদ্ধ করে মাটি দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
১০. মাটি দূষণের ক্ষতিকর দিক গণমাধ্যমে তুলে ধরে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে মাটি দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

আরো পড়ুন: ট্রেস মৌলের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top