প্রশ্ন: এসিড বৃষ্টি কি? ও এসিড বৃষ্টির ক্ষতিকর প্রভাব আলোচনা কর।

 এসিড বৃষ্টি কি,এসিড বৃষ্টির ক্ষতিকর প্রভাব আলোচনা কর।

এসিড বৃষ্টি কি?

উত্তর : 1.8 থেকে 5.5 পর্যন্ত pH মানবিশিষ্ট বৃষ্টির পানিকে এসিড বৃষ্টি (Acid rain) বলে। স্বাভাবিক বৃষ্টির পানির pH মান হচ্ছে 5.6 থেকে 6.2; বৃষ্টি, শিশির এবং তুষার যেকোনো ধরনের অধঃক্ষেপণে এসিডের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হলেই এই অধঃক্ষেপণকে এসিড বৃষ্টি বলে।

বৃষ্টির পানি কিছুটা এসিডীয় প্রকৃতি সম্পন্ন হয়ে থাকে। কেননা, এতে সর্বদাই সামান্য পরিমাণ CO2 দ্রবীভূত থাকে যা পানির সাথে বিক্রিয়া করে দুর্বল এসিড, H2CO3 গঠন করে।
H2O + CO2 → H2CO3 (কার্বনিক এসিড)
কার্বনিক এসিডের বিয়োজনে উৎপন্ন হাইড্রোজেন আয়নের (H+) উপস্থিতিতে স্বাভাবিক বৃষ্টির পানি ঈষৎ এসিডীয় প্রকৃতি সম্পন্ন হয়। অধঃক্ষেপণে বৃষ্টির পানির pH মান 5.0 এর কম হলেই সেই অধঃক্ষেপণকে এসিড বৃষ্টি বলা হয়।

এসিড বৃষ্টির ক্ষতিকর প্রভাব আলোচনা কর।

উত্তর : বৃষ্টির পানিতে যখন দ্রবীভূত অবস্থায় অ্যাসিড থাকে তখন তাকে অ্যাসিড বৃষ্টি বলে। অম্লবৃষ্টি পানি, মাছ, উদ্ভিদ, পাথর, ইস্পাত, পেইন্ট এবং সর্বোপরি মানুষের উপর নিম্নরূপ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
১. অম্লবৃষ্টির কারণে পুরাতন ভাস্কর্যের অতি মূল্যবান মার্বেল পাথর, চুনাপাথর, স্লেট পাথর ও বালি-পাথর প্রভৃতি অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে ক্ষয় এবং সাথে সাথে যান্ত্রিক শক্তি হারিয়ে ফেলতে পারে ।

২. অম্লবৃষ্টির কারণে মাটির অণুজীব ও অন্যান্য প্রাণিকুলের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। ফলে অণুজীব কর্তৃক নাইট্রোজেন স্থিরকরণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে মাটির রাসায়নিক সংযুক্তি পরিবর্তিত হওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।
৩. বীজের অঙ্কুরোদগম হ্রাস পাবে এবং সদ্য অঙ্কুরোদগত উদ্ভিদের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর ফলে সালোকসংশ্লেষণ না করতে পারায় উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটবে না।
৪. অম্লবৃষ্টির কারণে মাটির pH হ্রাস পাবে। ফলে চাষাবাদ ব্যাহত হবে ।
৫. অম্লবৃষ্টির কারণে জলরাশির রাসায়নিক সিস্টেম আক্রান্ত হবে। অম্লতা বৃদ্ধির কারণে পানির ক্ষারকত্ব হ্রাস পায় ফলে ধাতুসমূহের প্রবাহতা কমে যাবে।

৬. জলজ পরিবেশের প্রাণীকূলের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এককোষী ক্ষুদ্র প্রাণী ও উদ্ভিদ জন্মাতে না পারার কারণে মাছের খাদ্যের অভাব দেখা দিবে।
৭. অম্লবৃষ্টির কারণে মানুষের ফুসফুস, ত্বক, চুল প্রভৃতি আক্রান্ত হবে। এ ধরনের বৃষ্টিতে উপস্থিত ভারী ধাতু মানব স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। পানীয় জলে অম্লতা বৃদ্ধি পাবে এবং ভারী ধাতুর মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে
জনস্বাস্থ্য বিঘ্নিত হবে।

পরিশেষে, এসিড বৃষ্টির প্রভাবে অমেরুদণ্ডী প্রাণীর বিস্তার কমে যায়, ফলে এদের বংশ ধ্বংস হয়। এর কারণে মানুষের শ্বাসকষ্ট হয়, মাটির উর্বর শক্তি হ্রাস পায়।

আরো পড়ুন: লিথোস্ফিয়ার কী? (What is lithosphere?)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top