হজ্জে মাথা মুন্ডন সম্পর্কে মাসআলা

হজ্জে মাথা মুন্ডন,হজ্জে মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাটার মাসায়েল,মাথা মুন্ডন সম্পর্কে হাদিস,হজের সময় মাথা মুড়ানো কী,মাথা মুন্ডানো,হজ্জে মাথা মুন্ডন সম্পর্কে মাসআলা

হজ্জে মাথা মুন্ডন সম্পর্কে মাসআলা

হজ্জে মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাটার মাসায়েল
মাথা মুণ্ডানো অথবা চুল ছাঁটা হজ্জের আমলসমূহের একটি অপরিহার্য আমল । আল্লাহর এরশাদ হচ্ছে,
لَتَدْخُلُنَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ إِنْ شَاءَ اللهُ آمِنِينَ مُحَلَقِينَ رَهُ وَسَكُم ومقصرين لا تَخَافُونَ – – (الفتح : (٢٧)
অর্খ : “তোমরা ইনশাআল্লাহ মসজিদুল হারামে মাথা মুণ্ডন করে অথবা চুল ছেঁটে নিরাপদে প্রবেশ করবে। আর তোমাদের কোনো প্রকারের ভয় ভীতি থাকবে না।”-(সূরা ফাতাহ : ২৭)

আসলে মাথা মোড়ানো বা চুল ছাঁটা ইহরামের অবস্থা থেকে বাইরে আসার এবং হালাল হওয়ার একটা নির্ধারিত শরীয়াতের পন্থা। এর তাৎপর্য সম্পর্কে অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে শাহ অলীউল্লাহ (র) বলেন, মাথা মোড়ানোর তাৎপর্য এই যে, এ ইহরামের অবস্থা থেকে বাইরে আসার এক বিশেষ নির্ধারিত পদ্ধতি। এমন পদ্ধতি যদি নির্ধারিত করা হতো যা মর্যাদার পরিপন্থী, তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন ইচ্ছামতো তার ইহরাম খতম করতো এবং পৃথক পৃথক পদ্ধতি প্রবর্তন করতো।-(হুজ্জাতুল্লাহেল বালেগা)

হজ্জে মাথা মুন্ডন সম্পর্কে মাসআলা
১. দশই যুলহজ্জ কুরবানীর দিন জুমরায়ে ওকবায় রামী করার পর মাথা মোড়ানো বা চুল ছাঁটা ওয়াজিব।
২. পুরুষরা সমস্ত মাথার চুলের এক আঙ্গুল পরিমাণ কেটে ফেললে তা জায়েয হবে এবং এক-চতুর্থাংশ চুলের কিছু ছেঁটে ফেলাও জায়েয। মেয়েদের জন্যে তাদের চুলের অগ্রভাগ কিছুটা ছেঁটে ফেললেই যথেষ্ট হবে।
৩. কারো মাথায় যদি চুল মোটেই গজায়নি অথবা টাক থাকে, তাহলে মাথার ওপরে শুধু ক্ষুর বুলালেই যথেষ্ট হবে।
৪. চুল সাফ করার কোনো ওষুধ দ্বারা যদি কেউ চুল সাফ করে তাহলে তাও জায়েয হবে।

৫. পুরুষদের জন্যে মাথা মোড়ানো অথবা চুল ছাঁটা উভয়ই জায়েয। তবে মস্তক মুণ্ডানোর ফযীলত বেশী। এজন্যে যে, নবী (স) মস্তক মুণ্ডনকারীদের জন্য দু’বার মাগফেরাতের দোয়া করেছেন এবং যারা চুল ছাঁটে তাদের জন্যে একবার মাগফেরাতের দোয়া করছেন।-(আবু দাউদ, জামাউল ফাওয়ায়েদ)

৬. মেয়েলোকদের কিছুটা চুল কেটে ফেলা উচিত। তাদের জন্যে মস্তক মুণ্ডন জায়েয নয়। হযরত আলী (রা) বলেন, নবী (স) মেয়েদের মস্তক মুণ্ডন করতে নিষেধ করেছেন।
৭. মস্তক মুণ্ডন বা চুল ছাঁটার পর ইহরামের অবস্থার অবসান হয় এবং তারপর তার জন্যে ওসব কাজ হালাল হয়ে যায়, যা ইহরাম অবস্থায় হারাম ছিল। তবে স্ত্রী সহবাস তখনও জায়েয হবে না যতোক্ষণ না তাওয়াফে যিয়ারত শেষ করা হয়েছে।

মাথার চুল ছাঁটানোর গুরুত্ব
হজ্জ ও ওমরার মধ্যে মাথার চুল মুণ্ডান বা কর্তন উভয়টি জায়েয আছে। এর যেকোনো একটির মাধ্যমে ইহরামের নিষেধাজ্ঞাসমূহ শেষ হয়ে যায়। তবে নবী করিম (সা.) কখনও কখনও মাথার চুল কাটার মাধ্যমে হালাল হয়েছেন। তাই হজ্জ বা ওমরাহ পালনকারীরা মাথার চুল ছাঁটানোর মাধ্যমেও ইহরাম খুলে ফেলতে পারবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ও তার কতিপয় সাহাবি বিদায় হজে মাথা মুণ্ডন করেছিলেন, আর কেউ কেউ কর্তন করেছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৪৪৫৫)

হাদিসে আরও আছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমাকে আমিরে মুয়াবিয়া (রা.) বলেছেন, আমি কাঁচি দ্বারা নবী করিম (সা.)-এর মাথা ছাঁটিয়ে ছিলাম মারওয়ার নিকটে। (মুসলিম, হাদিস : ৩০৮১)

মাথা ডান দিক থেকে মুণ্ডন সুন্নত
মাথা মুণ্ডানোর ক্ষেত্রে শুধু মুণ্ডন করলেই সওয়াবের পরিপূর্ণতা লাভ করবে না। এতে সুন্নত তরিকার অবলম্বন করতে হবে। ডান দিক থেকে মাথা মুণ্ডান সুন্নত। তাই হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য উচিত ডান দিক থেকে মাথা মুণ্ডান শুরু করা। এভাবেই নবী করিম (সা.) হজে স্বীয় মাথা মোবারক মুণ্ডন করতেন।

হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মিনায় পৌঁছে প্রথমে জামরাতে গেলেন এবং তাতে কঙ্কর মারলেন। অতঃপর মিনায় অবস্থিত তার ডেরায় গেলেন এবং কোরবানির পশুগুলো জবেহ করলেন, তৎপর নাপিত ডাকলেন এবং তাকে আপন মাথার ডান দিক বাড়িয়ে দিলেন। সে তা মুণ্ডন করল। তিনি আবু তালহা আনসারিকে ডেকে কেশগুচ্ছ দিলেন। অতঃপর নাপিতকে মাথার বাম দিক বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, মুণ্ডাও; সে মুণ্ডাল। আর তিনি তা সেই আবু তালহাকে দিয়ে বললেন, যাও মানুষের মধ্যে বণ্টন করে দাও।’ (মুসলিম, হাদিস নং : ৩২১৫)

স্ত্রী লোকের জন্য শুধু মাথার চুল ছাঁটানো জায়েয
ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে মাথার চুল মুণ্ডন বা কর্তন করা উভয়টি জায়েজ। কিন্তু হজ বা ওমরা পালনকারী নারীর ক্ষেত্রে শুধু মাথার চুল কর্তন জায়েয, মুণ্ডন জায়েয নেই। নবী করিম (সা.) হজ্জ বা ওমরা পালনাবস্থায় নারীদের জন্য মাথার চুল মুণ্ডকে নিষেধ করেছেন। তাই নারী হাজীরা শুধু মাথার চুল কর্তন করে ইহরাম খুলে ফেলবেন। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘স্ত্রীলোকের প্রতি মাথা মুণ্ডন নেই। স্ত্রীলোকের প্রতি রয়েছে মাথা ছাঁটানো।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং : ১৯৮৬)

আরো পড়ুন :

হজ্জ কাকে বলে

হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী

হজ্জ সহীহ হওয়ার শর্ত কয়টি

হজ্জের মিকাত কয়টি ও কি কি

ইহরাম কি ও ইহরাম বাধার নিয়ম

বাংলাদেশের মীকাত কি

হজ্জের ফরজ কয়টি ও কি কি

হজ্জ কি প্রত্যেক বছর পালন করতে হবে

হজ্জ কত হিজরীতে ফরজ হয়েছে ?

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত

হজ্জে মাবরুর কাকে বলে

ট্যাগ সমূহ : হজ্জে মাথা মুন্ডন,হজ্জে মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাটার মাসায়েল,মাথা মুন্ডন সম্পর্কে হাদিস,হজের সময় মাথা মুড়ানো কী,মাথা মুন্ডানো,হজ্জে মাথা মুন্ডন সম্পর্কে মাসআলা,হজ্জে মাথা মুন্ডন,হজ্জে মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাটার মাসায়েল,মাথা মুন্ডন সম্পর্কে হাদিস,হজের সময় মাথা মুড়ানো কী,মাথা মুন্ডানো,হজ্জে মাথা মুন্ডন সম্পর্কে মাসআলা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top