আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি এর জীবনী

আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি এর জন্ম,আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি এর ইন্তেকাল,আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি এর শিক্ষাজীবন,আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি এর নাম ও বংশ পরিচয়,আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি,আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি এর জীবনী,জালালুদ্দিন সুয়ুতি,
আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি

নাম ও বংশ পরিচয়

আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (র)-এর প্রকৃত নাম আবদুর রহমান, উপাধি জালালুদ্দীন, কুনিয়াত বা উপনাম আবুল ফজল । তাঁর বংশক্রম হলো- আবদুর রহমান জালানুদ্দীন ইবনে আবু বকর মুহাম্মদ কামালুদ্দীন ইবনে সাবেকুদ্দীন ইবনে ওসমান ফখরুদ্দীন ইবনে মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ নাযেরুদ্দীন ইবনে সাইফুদ্দীন খিমর ইবনে আবী আস সালাহ আইয়ুব নাজিমুদ্দীন ইবনে মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন ইবনে শায়খ হুমামুদ্দীন আস সুয়ূতী (র)।

সুয়ূতী নামকরণ

সুয়ূত হচ্ছে মিসরের একটি শহরের নাম। এটি নীল নদের পশ্চিম তীরে অবস্থিত ! এ শহরের অধিবাসী হওয়ায় তাঁকে সুয়ূতী নামে ভূষিত করা হয়েছে।

জন্ম

আল্লামা জালালুদ্দীন (র) নীল নদের তীরবর্তী ‘সুয়ুত’ শহরের ‘খিযর’ নামক মহল্লায় (যা ‘খিযর বাজার’ নামে প্রসিদ্ধ) ৮৪৯ হিজরী সনের ১লা রজব বাদ মাগরিব জন্মগ্রহণ করেন ।

আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি এর শিক্ষাজীবন

আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (র) মাত্র পাঁচ বছর সাত মাস বয়সে পিতৃহারা হন। অতঃপর তাঁর পিতার অসিয়ত অনুযায়ী তৎকালীন কয়েকজন বুযুর্গের সাহচর্য গ্রহণ করেন। তন্মধ্যে শায়খ কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম হানাফী (র)-এর তত্ত্বাবধানে বালক জালালুদ্দীন সূতী (র) ৮ বছর বয়সে পবিত্র কুরআন মাজীদ হেফ্য শেষ করেন। অতঃপর তিনি উমদাহ, মিনহাজ, উসূল ও ইবনে মালেক প্রভৃতি কিতাব হেফয করেন। তাছাড়া তিনি শায়খ শামস সায়রামী ও শায়খ শামস মিরযামানী হানাফী (র)-এর নিকট পাঠ্য কিতাব ও অন্যান্য বহু কিতাব অধ্যয়ন করেন।

তিনি শায়খ শিহাবুদ্দীন (র)-এর নিকট ইলমে ফারায়েয শিক্ষালাভ করেন। অতঃপর শায়খুল ইসলাম আলামুদ্দীন আল্লামা বালকিনী, আল্লামা শরফুদ্দীন আল মানাবী এবং মিসরের বিখ্যাত মুহাক্কিক সাইফুদ্দীন আল মানাবী ও সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ আল হানাফী প্রমুখ আলেম ও বিদ্বান ব্যক্তির দরস হতেও কিছুকাল ইলম অর্জন করেন। তৎপর আল্লামা মহিউদ্দীন কানিজী (র)-এর খেদমতে চৌদ্দ বছর বয়স পর্যন্ত সময়কাল অতিবাহিত করেন । আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (র)-এর নিজ মতানুযায়ী তাঁর শিক্ষক মহোদয়দের সংখ্যা ১৫১ জন।

কর্মজীবন

শিক্ষাজীবন শেষ করে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (র) ৮৭১ হিজরী সন হতে মাত্র ষোলো বছর বয়সে ফতোয়া প্রদান আরম্ভ করেন । তিনি ৮৭২ হিজরী সনে হাদীস সংকলনে আত্মনিয়োগ করেন। অবশ্য তিনি ৮৬৬ হিজরী সনেই আরবি ভাষা শিক্ষাদানের সনদপ্রাপ্ত হন। আল্লামা সুয়ূতী (র) তাঁর গ্রন্থে লিখেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা আমাকে তাফসীর, হাদীস, ফিকহ, ইলমে নাহু, ইলমুল মায়ানী, ইলমুল বায়ান, ইলমুল বাদী তথা ইলমে দ্বীনের এ সাতটি বিষয়ে বিশেষ ব্যুৎপত্তি দান করেছেন। তিনি ইলমে হাদীসে তাঁর সমসাময়িকদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মুহাদ্দিস ছিলেন।

তাঁর নিজ বর্ণনা মতে তিনি দু’লক্ষ হাদীসের হাফেয ছিলেন। তিনি ৪০ বছর বয়সে শিক্ষাদান, ফতোয়া প্রদান ও অন্যান্য পার্থিব কার্যক্রম থেকে অবসর গ্রহণ করে নির্জনে ইবাদত ও রিয়াযতে আত্মনিয়োগ করেন। পার্থিব জগতের প্রতি তিনি নিরাসক্ত ছিলেন। তিনি সমসাময়িক আমীর এবং বড় বড় ধনীদের প্রদত্ত উপহারসামগ্রী সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করতেন। নবী করীম (স) তাঁকে স্বপ্নের মধ্যে বলে সম্বোধন করেছেন। তিনি নবী করীম (স)-কে সত্তরবার স্বপ্নে দেখেছেন বলে কিতাবে বর্ণিত আছে।

গ্রন্থ রচনা

আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (র) ৫০০-এর অধিক গ্রন্থ রচনা করেন। এ সকল গ্রন্থ তাঁর সংস্কারমূলক দৃষ্টিভঙ্গি, অধ্যয়নের এবং জ্ঞানের প্রসারতার বাস্তব প্রমাণ বহন করে। ইমাম নবুবী (র)-এর বর্ণনা মতে, আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (র)-এর জীবনে লেখনীর প্রতিদিন ১৬ পৃষ্ঠার অধিক। প্রতিটি বিষয়ে তাঁর রচনাকৃত গ্রন্থাবলি রয়েছে। তাঁর রচনাকৃত গ্রন্থাবলির মধ্যে একটি সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ । আল্লামা জালালুদ্দীন মহল্লী (র)-এর ইন্তেকালের ৬ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর মাত্র ৪০ দিনে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (র) জালালাইনের প্রথমার্ধ সংকলন সম্পন্ন করেন।

ইন্তেকাল

ইলমে তাফসীরের এ মহান খাদেম আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (র) ৯১১ হিজরী সনের ২৯ জমাদিউল আউয়াল শুক্রবার দিন ৬২ বছর বয়সে পার্থিব জগতের মোহ-মায়া ত্যাগ করে অনন্ত জীবনের পথে পাড়ি জমান।

তাফসীরশাস্ত্রে জালালাইন গ্রন্থের স্থান

জালালাইন গ্রন্থখানা প্রাচ্যে ও প্রতীচ্যে তাফসীরশাস্ত্রের একখানা সুপ্রসিদ্ধ ও ঘর্মবহুল উপাদেয় গ্রন্থ। এটি কুরআন মাজীদের একটি সংক্ষিপ্ত তাফসীর । গ্রন্থাখানা মূলত কুরআন মাজীদের এক প্রকার আরবি অনুবাদ বললেও তেমন অযুক্তিক হবে না। এতে রয়েছে কঠিন শব্দসমূহ এবং কঠিন বাক্য প্রক্রিয়ার সরল ও সহজ সমাধান। আয়াতসমূহের পাশাপাশি লাখ্যামূলক বাক্য সংযোজন করে আয়াতগুলোকে সহজবোধ্য ও সাবলীল করা হয়েছে। কোথাও কোথাও সংক্ষিপ্ত কাহিনী বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।

এ গ্রন্থটি পাঠ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত করার কারণ হলো, যাতে শিক্ষার্থীরা এ গ্রন্থটি অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে অন্যান্য কঠিন গ্রন্থ উস্তাদের সাহায্য ছাড়া নিজেরাই আয়ত্ব করতে পারে। এ গ্রন্থের সম্মানিত লেখকদ্বয় গ্রন্থটি রচনাকালে ‘জামেউস সাগীর’ জামেউল কাবীর’ ‘বায়যাবী’ ও ইবনে কাসীরসহ অন্যান্য তাফসীরগ্রন্থের সহায়তা গ্রহণ করেছেন । সুতরাং বলা যায়, যুগ যুগ ধরে তাফসীর গ্রন্থাবলির মধ্যে তাফসীরে জালালাইনের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মর্যাদা ও সুনাম অব্যাহত রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ।

আরো পড়ুন :

আদ জাতির ইতিহাস

সামুদ জাতির ধ্বংসের ইতিহাস

ফেরাউন এর ঘটনা

ট্যাগ সমূহ : আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি এর জন্ম,আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি এর ইন্তেকাল,আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি এর শিক্ষাজীবন,আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি এর নাম ও বংশ পরিচয়,আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি,আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি এর জীবনী,জালালুদ্দিন সুয়ুতি,আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি,আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি,আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি,

1 thought on “আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি এর জীবনী”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top