হযরত শাহজালাল (রহ) এর জীবনী
ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম মনীষীগণের তালিকায় এক অবিস্মরণীয় নাম হযরত শাহজালাল ইয়েমেনী (রঃ)। ইসলামের দুর্জয় ঘাঁটি বাংলার মাটিতে ইসলাম কায়েম করে ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির অপসারণে হযরত শাহজালাল (র)-এর বিশেষ অবদান রয়েছে। নিম্নে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হলো।
হযরত শাহজালাল (রহ) এর জীবনী
১. নাম ও পরিচয় :
তাঁর প্রকৃত নাম সম্পর্কে মতভেদ আছে। কারো মতে তাঁর নাম শাহজালাল, কারো মতে শায়খ জালাল, কারো মতে জালালুদ্দীন তাবরীজী, কারো মতে জালালুদ্দীন সিরাজী। সিলেটের আম্বরখানা এলাকায় হোসেন শাহী আমলের প্রাপ্ত শিলালিপিতে লেখা রয়েছে শায়খ জালাল। তাঁর পিতার নাম সুহাইল ইয়ামান। তাওয়ারিখে জালালীতে উল্লেখ রয়েছে, তাঁর পিতার নাম শায়খুশ ওযুখ মাহমুদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবরাহীম। ইবনে বতুতার বর্ণনা অনুসারে তিনি ৫৯৬ হিজরীতে, ড. শহীদুল্লাহর মতে ৫৯৮ হিজরীতে এবং ড. মেহেদী হাসানের মতে ৫৯৭ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন।
২. জন্মস্থান :
হযরত শাহজালালের জন্মস্থান সম্পর্কে মতভেদ আছে। ড. সগীর হাসানের মতে, তাঁর জন্মস্থান বুখারা। মুনসিফ নাসির উদ্দীন বলেন, তাঁর জন্মস্থান ইয়েমেন, গুলজারই আবরার গ্রন্থে বলা হয়েছে, তাঁর জন্ম তুর্কিস্তানে।
আরো পড়ুন : ইমাম আবু হানীফা রহ এর জীবনী
৩. শৈশব
হযরত শাহজালাল (র) ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বেই তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন। জন্মের মাত্র তিন মাস পরেই তাঁর মাতাও ইন্তেকাল করেন। শিশু শাহজালালের এ চরম দুর্দিনে তাঁর মামা সৈয়দ আহমদ কবীর (র) তাঁর লালনপালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
৪. শিক্ষাজীবন
হযরত শাহজালাল (র) তাঁর মামা আহমদ কবীরের তত্ত্বাবধানে বাল্যশিক্ষা গ্রহণ করেন। আহমদ কবীর (র) ছিলেন মক্কার বিশিষ্ট আলেম। তাঁর তত্ত্বাবধানে শাহজালাল মাত্র সাত বছর বয়সে কুরআনের হাফেয হন। অতঃপর অল্প সময়ের মধ্যে কুরআন, হাদীস, ফিকহ ইত্যাদি বিষয়ে অসাধারণ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। মাত্র ষোলো বছর বয়সে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে গভীর পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।
৫. ইলমে তাসাউফে ব্যুৎপত্তি অর্জন
বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়নের পাশাপাশি মামা তাঁকে ইলমে তাসাউফ ও মারেফতের দরস প্রদান করেন। এভাবে তিনি মারেফত ও তাসাউফ শিক্ষালাভ করে আধ্যাত্মিক বিদ্যায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন এবং মহান আল্লাহর একজন একনিষ্ঠ প্রেমিক হিসেবে গড়ে ওঠেন।
৬. ভারতীয় উপমহাদেশে আগমন
শিক্ষা সমাপ্তির পর তিনি দীন প্রচারের লক্ষ্যে বাইরে বের হওয়ার পরিকল্পনাগ্রহণ করেন। এসময় তাঁর মামা তাঁকে এক মুঠো মাটি দিয়ে বলেন, সঠিকভাবে এ বর্ণ, গন্ধ ও বৈশিষ্ট্যের মাটি যেখানে পাবে, তুমি সেখানে অবস্থান করে দীন প্রচার করবে। অতঃপর তিনি ৩০ বছর বয়সে ৭০০ জন সঙ্গীসহ হিন্দুস্তানের দিকে যাত্রা করেন। এসময় দিল্লিতে প্রখ্যাত সাধক ও দীন প্রচারক হযরত নিয়ানুদ্দীন আউলিয়া (র) অবস্থান করছিলেন। হযরত শাহজালাল (র) তাঁর সান্নিধ্যগ্রহণ করেন। হযরত নিযামুদ্দীন (র) তাঁকে স্বাগত জানান এবং একজোড়া কবুতর উপহার দেন। সিলেটের বর্তমান ‘জালালী কবুতর’ এ কবুতর জোড়ারই বংশধর।
বাংলা ও আসামে ইসলাম প্রচারে শাহজালাল (র)-এর অবদান
১. বাংলাদেশে আগমন
দিল্লিতে কিছুদিন অবস্থানের পর তিনি বিহারের মধ্য দিয়ে বর্তমান বাংলাদেশের সিলেটের সপ্তগ্রামে উপস্থিত হন। সেসময় আসাম ও বাংলার সন্ধিস্থলে বর্তমান সিলেট জেলা অবস্থিত ছিল। সিলেটের নিকটবর্তী সপ্তগ্রামে অবস্থান গ্রহণ করে তিনি প্রাথমিকভাবে ইসলাম প্রচার শুরু করেন।
২. শাহজালাল (র)-এর নেতৃত্বে সিলেট অভিযান
গৌরগোবিন্দের মুসলিম নির্যাতনের বিষয়ে জানতে পেরে বাংলার তৎকালীন সুলতান ফিরোজ শাহ গৌরগোবিন্দের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন; কিন্তু প্রথম অভিযানে ব্যর্থ হয়ে ফিরোজ শাহ সিকান্দার শাহের সহযোগিতা নিয়ে নাসিরউদ্দীন নামের একজন সেনাপতিকে তাঁর বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। এ সময় হযরত শাহজালাল (র) তাঁর সেনাবাহিনীসহ সোনারগাঁয়ে অবস্থান করছিলেন। এতদুভয় বাহিনী হযরত শাহজালালের নেতৃত্বে গৌরগোবিন্দের বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়।
৩. অলৌকিক কারামত প্রকাশ
সিলেটের পথে অগ্রসর হয়ে পথিমধ্যে বারাক নদীর তীরে উপনীত হন হযরত শাহজালালের নেতৃত্বাধীন বাহিনী। সেসময় নদী পার হওয়ার জন্য কোনো নৌযানের ব্যবস্থা না হলে হযরত শাহজালাল (র) চামড়ার তৈরি জায়নামায নদীতে বিছিয়ে তাতে আরোহণ করে সমগ্র সেনাবাহিনীকে নদী পার করান।
৪. সিলেট বিজয়
হযরত শাহজালালের অলৌকিক ক্ষমতার খবরে গৌরগোবিন্দ ভীত হয়ে পড়েন এবং প্রাণ রক্ষার্থে পলায়ন করেন। ফলে এক প্রকার বিনাযুদ্ধে সিলেট মুসলমানগণের দখলে আসে। ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির কবল হতে মুক্ত সিলেটে ধ্বনিত হতে থাকে আল্লাহু আকবার ধ্বনি।
৫. সিলেটে ইসলামের কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত
হযরত শাহজালাল (র) সিলেটকে কেন্দ্র করে বাংলা ও আসামে ইসলাম প্রচারের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেন। এ নেটওয়ার্ক সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করে বাংলা ও আসামে ইসলামকে একটি প্রতিষ্ঠিত। শক্তি ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকারূপে গড়ে তোলেন।
৬. হযরত শাহজালালের জনপ্রিয়তা অল্প সময়ের ব্যবধানে হযরত শাহজালাল (র) সমগ্র- জনপদে ব্যাপক জনপ্রিয় মনীষী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে। হযরত শাহজালাল (র)-এর অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইসলাম প্রচারে তাঁর অবদানের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে সিলেট, মোমেনশাহী, ত্রিপুরা, নোয়াখালী, আসাম এবং পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন জেলার লক্ষ লক্ষ লোক ইসলামগ্রহণ করেন।
ট্যাগ সমূহ : হযরত শাহজালাল (রহ) এর জীবনী,হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর জীবনী,হযরত শাহজালাল রাঃ এর জীবনী,হযরত শাহজালাল (র)-এর জীবনী,শাহজালাল রহঃ জীবনী,হযরত শাহজালাল,হযরত শাহজালাল কোন দেশের অধিবাসী ছিলেন,হযরত শাহজালালের অলৌকিক ঘটনা,হযরত শাহজালাল রঃ এর জীবনী pdf,হযরত শাহজালাল রাঃ এর জীবনী pdf,হযরত শাহজালাল কোন দেশের অধিবাসী,হযরত শাহজালাল এর জীবনী,হযরত শাহজালাল রঃ জীবনী,হযরত শাহজালাল (র.),হযরত শাহজালাল রহঃ এর জীবনী,হযরত শাহজালাল রহ )- এর পূর্ণাঙ্গ জীবনী,হযরত শাহজালাল (রহ),হযরত শাহজালাল (রহ),হযরত শাহজালাল রাঃ এর জীবনী,হযরত শাহজালাল (র)-এর জীবনী,শাহজালাল রহঃ জীবনী,হযরত শাহজালাল,হযরত শাহজালাল কোন দেশের অধিবাসী ছিলেন,হযরত শাহজালাল রাঃ এর জীবনী,হযরত শাহজালাল (র)-এর জীবনী,শাহজালাল রহঃ জীবনী,হযরত শাহজালাল,হযরত শাহজালাল কোন দেশের অধিবাসী ছিলেন,হযরত শাহজালাল রাঃ এর জীবনী,হযরত শাহজালাল রাঃ এর জীবনী |