হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী

হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী

হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী

ইসলামী ইবাদাত দু’ প্রকারের। এক–দৈহিক ইবাদাত, যেমন নামায, রোযা । দুই—মালের ইবাদাত, যেমন সদকা, যাকাত, দান-খয়রাত প্রভৃতি। কিন্তু হজ্জের বৈশিষ্ট্য এই যে, এ মালেরও ইবাদাত এবং দেহেরও ইবাদাত । অন্যান্য স্থায়ী ইবাদাতগুলোর দ্বারা এখলাস, তাকওয়া, বিনয়, নম্রতা, বন্দেগীর পিপাসা, আনুগত্য, কুরবানী, ত্যাগ ও আত্মসমর্পণ, আল্লাহর নৈকট্য প্রভৃতির যে প্রেরণা ও ভাবাবেগ পৃথক পৃথকভাবে বিকাশ লাভ করে, হজ্জের সার্বিকতা এই যে, এ সকল অনুভূতি মানসিক অবস্থা একই সময়ে এবং একই সাথে তৈরী হয় ও বিকাশ লাভ করে। নিচে হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করা হলো-

হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী
হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্ত দশটি। তার মধ্যে কোনো একটি শর্ত পাওয়া না গেলে হজ্জ ওয়াজিব হবে না।

১. ইসলাম : অমুসলিমের প্রতি হজ্জ ওয়াজিব হতে পারে না।
২. জ্ঞান থাকা : পাগল, মস্তিষ্ক বিকৃত ও অনুভূতিহীন লোকের ওপর হজ্জ ওয়াজিব নয় ।
৩. বালেগ হওয়া : নাবালেগ শিশুদের ওপর হজ্জ ওয়াজিব নয়, কোনো সচ্ছল ব্যক্তি বালেগ হওয়ার পূর্বেই শৈশব অবস্থায় হজ্জ করলে তাতে ফরয আদায় হবে না। বালেগ হওয়ার পর পুনরায় তাকে হজ্জ করতে হবে। শৈশবের হজ্জ নফল হবে।

৪. সামর্থ থাকা: হজ্জকারীকে সচ্ছল হতে হবে। তার কাছে প্রকৃত প্রয়োজন ও ঋণ থেকে নিরাপদ এতোটা অর্থ থাকতে হবে যা সফরের ব্যয়ভার বহনের জন্যে যথেষ্ট হয় এবং হজ্জ্ব থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত তার অধীন পরিবারস্থ লোকের জীবিকা নির্বাহের জন্যে যথেষ্ট অর্থ মওজুদ থাকা, কারণ এসব লোকের ভরণপোষণের দায়িত্ব তার।

৫. স্বাধীনতা : গোলাম ও বাদীর ওপর হজ্জ ওয়াজিব নয় ।
৬. শারীরিক সুস্থতা : এমন অসুস্থ না হওয়া যাতে করে সফর করা সম্ভব নয়।
অতএব ন্যাংড়া, বিকলাংগ, অন্ধ এবং অতিশয় বৃদ্ধ ব্যক্তির স্বয়ং হজ্জ করা ওয়াজিব নয়। অন্যান্য সব শর্তগুলো পাওয়া গেলে অন্যের সাহায্যে হজ্জ করাতে পারে ।

৭. পথ নিরাপদ হওয়া : যদি যুদ্ধ চলছে এমন অবস্থা হয়, পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হচ্ছে, যানবাহন ধ্বংস করা হচ্ছে, পথে চোর-ডাকাতের আশংকা থাকে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জলপথে ভ্রমণ সম্ভব না হয় অথবা যে কোনো প্রকারের আশংকা যদি থাকে, তাহলে এসব অবস্থায় হজ্জ ওয়াজিব হবে না। অবশ্যি এ অবস্থায় এমন লোকের অসিয়ত করে যাওয়া উচিত যে, তার পরে অবস্থা ও পরিস্থিতি অনুকূল হলে তার পক্ষ থেকে অন্য কেউ হজ্জ করবে।

৮. হজ্জের সফরে স্বামী অথবা কোনো মুহাররম ব্যক্তি থাকতে হবে : এর ব্যাখ্যা এই যে, সফর যদি তিন রাত দিনের কম হয় তাহলে মেয়েলোকের স্বামী ছাড়া সফরের অনুমতি আছে। তার বেশী সময়ের সফর হলে স্বামী অথবা মুহাররম পুরুষ ছাড়া হজ্জের সফর জায়েয নয়।

যে মহিলার, স্বামী নেই এবং কোনো মুহাররম পুরুষও নেই, তার ঐসব বন্ধু সফরকারীর সাথে যাওয়া জায়েয যাদের নৈতিক চরিত্রের ওপর নির্ভর করা যেতে পারে। এ হচ্ছে ইমাম শাফেয়ী এবং ইমাম মালেকের অভিমত। নির্ভরযোগ্য বন্ধুবান্ধব-এর ব্যাখ্যা ইমাম শাফেয়ী (র) এভাবে করেছেনঃ কিছুসংখ্যক মেয়েলোক নির্ভরযোগ্য হতে হবে এবং তারা মুহাররম লোকের সাথে হচ্ছে যাচ্ছে। তাহলে এ দলের সাথে স্বামীহীন একজন যেয়েলোক যেতে পারে। অবশ্যি দলে মাত্র একজন মেয়েলোক থাকলে যাওয়া উচিত নয়।

ইমাম শাফেয়ীর এ অভিমত অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ। এতে একজন স্বামীহীন ও মুহাররমহীন মেয়েলোকের হজ্জ আদায় করার সুযোগ রয়েছে এবং এসব ফেতনার আশংকাও নেই যার কারণে কোনো মেয়েলোকের মুহাররম ছাড়া সফর করা নিষিদ্ধ। এটাও জরুরী যে, এ মুহাররম জ্ঞানবান, বালেগ, দীনদার এবং নির্ভরযোগ্য হতে হবে। অবোধ শিশু, ফাসেক এবং অনির্ভরযোগ্য লোকের সাথে সফর জায়েয নয়।
৯. ইদ্দত অবস্থায় না হওয়া : ইদ্দত স্বামীর মৃত্যুর পর হোক অথবা তালাকের হোক, ইদ্দতের সময় হজ্জ ওয়াজিব হবে না।

১০. কোনো যালেম ও স্বৈরাচারী শাসকের পক্ষ থেকে জীবনের কোনো আশংকা না থাকা এবং কারাগারে আবদ্ধ না থাকা।

আরো পড়ুন :

হজ্জ কাকে বলে

হজ্জ কি প্রত্যেক বছর পালন করতে হবে

হজ্জ কত হিজরীতে ফরজ হয়েছে ?

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত

হজ্জে মাবরুর কাকে বলে

জাকাত কি ?

যাকাতের নিসাব কি

যাদের উপর যাকাত ফরজ

যাকাত দেওয়ার নিয়ম কানুন

যাকাতের গুরুত্ব

ছাগলের যাকাতের নিসাব

গরুর যাকাতের নিসাব কয়টি

ট্যাগ সমূহ : হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী,হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী,হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী,হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী,হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী,হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী,হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী,হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী,হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top