হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত,হজ্জের মহত্ব ও গুরুত্ব,হজ্জের ফযীলত ও প্রেরণা,হজ্জের অর্থ,হজ্জ অর্থ কি,হজ্জের ফজিলত,হজ্জের গুরুত্ব ও তাৎপর্য,হজ্জ শব্দের অর্থ কি,হজ্জে মাবরুর কাকে বলে,হজ্জের হিকমত

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত

হজ্জের অর্থ
হজ্জের আভিধানিক অর্থ হলো যিয়ারতের এরাদা করা। শরীয়াতের পরিভাষায় হজ্জের অর্থ হলো সেই সার্বিক ইবাদাত যা একজন বায়তুল্লাহ পৌঁছে করে থাকে। যেহেতু হজ্বে মুসলমান আল্লাহর ঘরের যিয়ারতের এরাদা করে সে জন্যে একে হজ্জ্ব বলা হয়।

হজ্জ ইসলামের পঞ্চম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। হজ্জের একটা ঈমান উদ্দীপনা ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে। এর প্রতি লক্ষ্য না রাখলে হজ্জের মহত্ব, তাৎপর্য ও মূল উদ্দেশ্য অনুধাবন করা সম্ভব নয়। কুফর ও শিরক পরিবেশিত এক শক্তিশালী পরিবেশে এক মুমিন বান্দাহ খালেস তাওহীদের ঘোষণা করেন। তারপর বাতিল যালেম শক্তির চরম বাধা-প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ঈমান, তাকওয়া, ইখলাস, লিল্লাহিয়াত, এশ্ক ও মহব্বত, ত্যাগ ও কুরবানী নির্ভেজাল নিরংকুশ আল্লাহর আনুগত্য ও পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের নজিরবিহিন প্রেরণা ও আমলের দ্বারা ইসলামের পূর্ণাংগ ইতিহাস তৈরী করেন এবং তাওহীদ ও এখলাসের এমন এক কেন্দ্র তৈরী করেন যা দুনিয়ার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার থেকে বিশ্ব মানবতা তাওহীদের পয়গাম পেতে থাকবে।

এ ইতিহাসকে নতুন করে স্মরণ করার জন্যে এবং মানুষের মনে আবেগ উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করার জন্যে প্রতি বছর দূরদূরান্ত থেকে তাওহীদের প্রেম পাগল পতংগসমূহ ঐ কেন্দ্রে জমায়েত হয়ে ঐসব কিছুই করে যা তাদের নেতা ও পথ প্রদর্শক হযরত ইবরাহীম (আ) করেছিলেন। তারা কখনো দু’ খণ্ড কাপড় পরিধান করে আবেগ উচ্ছ্বাসে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে এবং কখনো সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে তাদেরকে দৌঁড়াতে দেখা যায় ।

কখনো আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করে এবং কখনো কুরবানীগাহে পশুর গলায় ছুরি চালিয়ে আল্লাহর সাথে মহব্বতের শপথ গ্রহণ করে । উঠতে বসতে চলতে ফিরতে সকাল সন্ধ্যায় তাদের এ একই ধ্বনিতে হেরেমের গোটা পরিবেশ গুঞ্জরিত হতে থাকে—“আয় আল্লাহ! তোমার দরবারে তোমারগোলাম হাজির আছে। প্রশংসা ও স্তুতি একমাত্র তোমারই, দয়া করা তোমারইকাজ, তোমার প্রভুত্ব কর্তৃত্বে কেউ শরীক নেই।” প্রকৃতপক্ষে এসব অবস্থা সৃষ্টি করার এবং নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর ওপরে সোপর্দ করারই নাম হজ্জ।

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত
হজ্জের এ গুরত্বকে সামনে রেখে নবী (স) বিভিন্নভাবে এর প্রেরণা দান করেছেন। বিভিন্নভাবে এর অসাধারণ ফযীলত বর্ণনা করে এর জন্যে প্রেরণা ও আবেগ সৃষ্টি করেছেন।

১. যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ জিয়ারতের জন্যে এলো, তারপর কোনো অশ্লীল যৌন ক্রিয়া করলো না, আল্লাহর নাফরমানীর কোনো কাজ করলো না, তাহলে সে গোনাহ থেকে এমনভাবে পাক পবিত্র হয়ে প্রত্যাবর্তন করলো, যেমন পাক পবিত্র সে ঐদিন ছিল যেদিন সে তার মায়ের পেট থেকে জন্মগ্রহণ করেছিল। (বুখারী, মুসলিম)

২. হজ ও ওমরাহকারী আল্লাহর মেহমান। সে তার মেঘবান আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তিনি তা কবুল করেন, সে তার কাছে মাগফেরাত চাইে তিনি তাকে মাগফেরাত দান করেন।-(ইবনে মাজাহ)

৩. হজ্জ ও ওমরাহ পর পর করতে থাক। কারণ হজ্জ ও ওমরাহ উভয়ই দারিদ্র ও অভাব এবং গোনাহগুলোকে এমনভাবে দূর করে দেয় যেমন আগুনের ভাটি লোহা ও সোনা চাঁদির ময়লা দূর করে তা বিশুদ্ধ করে দেয়। হজের মাবরুরের প্রতিদান তো একমাত্র জান্নাত।-(তিরমিযি, নাসায়ী)

হজ্জে মাবরুর বলে এমন হজ্জকে যা পরিপূর্ণ এখলাস (নিষ্ঠা) অনুভূতি ও শতাবলীর পালনসহ আদায় করা হয় এবং যার মধ্যে হজ্জকারী আল্লাহর নাফরমানী থেকে বেঁচে থাকার পুরোপুরি ব্যবস্থা করে।

৪. যদি কোনো হেরেম শরীফ যিয়ারতকারীর সাথে তোমাদের সাক্ষাত হয়, তাহলে তার বাড়ী পৌছবার আগেই তাকে সালাম কর, তার সাথে মুসাফা কর এবং তাকে অনুরোধ কর তোমাদের জন্যে আল্লাহর কাছে মাগফেরাতের দোয়া করার। এজন্যে যে, তার গোনাহের মাগফেরাতের ফায়সালা করা হয়ে গেছে।-(মুসনাদে আহমদ)

৫. হযরত হুসাইন (রা) বলেন, এক ব্যক্তি নবী (স:)-এর কাছে এসে বললেন হুজুর, আমার শরীর ও মন উভয়ই দুর্বল। নবী (স:) বললেন, তুমি এমন জেহাদ কর যাতে একটা কাঁটাও গায়ে না লাগে। প্রশ্নকারী বলেন হুজুর, এমন জেহাদ আবার কেমন; যাতে কোনো আঘাত ও দুঃখ-কষ্টের আশংকা নেই? নবী (স:) ইরশাদ করেন, তুমি হজ্জ কর।-(তাবারানী)

৬. হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) বলেন, এক ব্যক্তি আরাফাতের ময়দানে নবী (স)-এর একেবারে নিকটে সওয়ারীর উপরে ছিল এমন ‘সময়ে হঠাৎ সে নীচে পড়ে প্রাণ ত্যাগ করে। নবী (স) বললেন, তাকে গোসল দিয়ে ইহরামের পোশাকসহই দাফন কর। এ কিয়ামতের দিনে ‘তালবিয়া’ পড়া অবস্থায় ওঠবে (তালবিয়ার জন্যে পরিভাষা দ্রষ্টব্য)। তার মাথা ও মুখমণ্ডল খোলা থাকতে দাও।-(বুখারী, মুসলিম)

৭. হযরত আবু যর (রা) বলেন, নবী (স) বলেছেন, আল্লাহর নবী হযরত দাউদ (আ) আল্লাহর কাছে আরয করে বলেন, পরওয়ারদেগার! যে বান্দাহ তোমার ঘর যিয়ারত করতে আসবে তাকে কি প্রতিদান দেয়া হবে । আল্লাহ বলেন, হে দাউদ । সে আমার মেহমান। তার অধিকার হচ্ছে এই যে, দুনিয়াতে আমি তার ভুলত্রুটি মাফ করে দেই এবং আখেরাতে যখন সে আমার সাথে সাক্ষাত করবে, তখন তাকে আমি আমার রহমত দিয়ে ধন্য করি।

হজ্জের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
কুরআন ও সুন্নাতে হজ্জের হিকমত, দীনের মধ্যে হজ্জের মর্যাদা, তার মহত্ব ও গুরুত্বের ওপর বিশদভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। কুরআন বলে- “মানুষের ওপর আল্লাহর এ অধিকার যে, বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছবার শক্তি- সামর্থ যে রাখে সে যেন হজ্জ করে এবং যে এ নির্দেশ অমান্য করে কুফরের আচরণ করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ বিশ্ব প্রকৃতির ওপর অবস্থানকারীদের মুখাপেক্ষী নন।”-(সূরা আল ইমরান আয়াত, ৯৭)

১. হজ্জ বান্দাহর ওপর আল্লাহর হক। যারাই বায়তুল্লাহ পর্যন্ত যাবার শক্তি- সামর্থ রাখে, তাদের জন্যে আল্লাহর হক আদায় করা ফরয। যারা সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ করে না, সেসব যালেম আল্লাহর হক নষ্ট করে। আয়াতের একথার দ্বারা হজ্জ ফরয হওয়া প্রমাণিত হয়। বস্তুত হযরত আলী (রা)-এর বয়ান থেকে সুস্পষ্ট হয় যে, নবী (স)-এর পক্ষ থেকে হজ্জ ফরয হওয়ার ঘোষণা তখনই করা হয় যখন এ আয়াত নাযিল হয়। -(তিরমিযি-কিতাবুল হজ্জ)

এ অর্থে সহীহ্ মুসলিমেও একটি রেওয়ায়েত আছে, যাতে নবী (স) বলেন- হে লোকেরা ! তোমাদের ওপর হজ্জ ফরয করা হয়েছে। অতএব হজ্জ আদায় কর।

২. আর একটি গুরত্বপূর্ণ যে সত্যের প্রতি এ আয়াত দৃষ্টি আকৃষ্ট করে তা হচ্ছে এই যে, সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করা কুফরী আচরণ, যেমন বলা হয়েছে। ঠিক যেভাবে কুরআনে নামায ত্যাগ করাকে এক স্থানে মুশরিকী কার্যকলাপ বলা হয়েছে : واقيموا الصلوة ولا تكونوا من المشركين (روم : ۳۱) “এবং নামায কায়েম কর এবং (নামায ত্যাগ করে) মুশরিকদের মধ্যে শামিল হয়ো না।”

ঠিক তেমনি আলোচ্য আয়াতের এ স্থানে হজ্জ না করাকে কুফরী আচরণ বলা হয়েছে। নবী (স) ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তির কাছে হজ্জের জরুরী খরচের অর্থ সামগ্রী মওজুদ আছে, যানবাহন আছে——যার দ্বারা সে বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে, তারপর সে হজ্জ করে না তাহলে সে ইহুদী হয়ে মরুক অথবা খৃষ্টান হয়ে মরুক তাতে কিছু আসে যায় না। এজন্যে যে আল্লাহ বলেন- ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا

হাদীস বর্ণনাকারীর উদ্দেশ্য এই যে— যারা হজ্জ করে না নবী (স) তাদেরকে ইহুদী নাসারার সমতুল্য বলেছেন। হজ্জ যারা করে না তাদেরকে ইহুদী নাসারার সমতুল্য এবং নামায যারা পড়ে না তাদেরকে মুশরিকদের সমতুল্য ঘোষণা করার মর্ম এই যে, আহলে কিতাব হজ্জ একেবারে পরিত্যাগ করেছিল এবং মুশরিকগণ হজ্জ করলেও নামায পরিত্যাগ করেছিল। এজন্যে নামায পরিত্যাগ করাকে মুশরিকী ক্রিয়াকর্ম এবং হজ্জ পরিত্যাগ করাকে ইহুদী-খৃষ্টানের ক্রিয়াকর্ম বলা হয়েছে।

অতএব এটাও এক মোক্ষম সত্য যে, স্বয়ং কুরআনেও এ ধরনের লোককে এ সতর্কবাণীও শুনিয়ে দেয়া হয়েছে। দৃষ্টান্ত হিসেবে হাদীস বর্ণনাকারী আয়াতের শুধু প্রথম অংশ পাঠ করেছেন । নতুবা যে সতর্কবাণীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে তা আয়াতের এ অংশে রয়েছে। যথা : ومن كفر فإن الله غني عن العلمين-

“যারা অর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ করতে অস্বীকার করার আচরণ দেখাবে তারা যেন জেনে রাখে যে, আল্লাহ তায়ালা সমগ্র বিশ্বজগতের কোনো কিছুরই পরোয়া করেন না।” অর্থাৎ হজ্জ পরিত্যাগকারীর কুফরী আচরণের কোনো পরোয়া তিনি করেন না। তিনি ঐসব লোকের কোনো পরোয়া করেন না যে, তারা কোন্ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করছে। এ হচ্ছে সতর্কবাণীর বড়ো কঠিনতম প্রকাশভঙ্গী । প্রকৃত ব্যাপার এই যে, যে ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ তার অসন্তোষ ও মুখাপেক্ষহীনতার কথা ঘোষণা করেন, সে ঈমান ও হেদায়াত দ্বারা কি করে ভূষিত হতে পারে ?

হযরত হাসান (রা) বলেন, হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রা) বলেছেন, আমার দৃঢ় ইচ্ছা এই যে, যেসব শহর ইসলামী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেসব শহরে কিছু লোক পাঠিয়ে দেব। তারা খোঁজ-খবর নিয়ে দেখবে যে কারা হজ্জ করার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ করছে না। তাদের ওপর আমি জিযিয়া (জিযিয়া এমন এক প্রতিরক্ষা কর যা অমুসলিমদের নিকট থেকে তার জানমালের নিরাপত্তার বিনিময়ে গ্রহণ করা হয়।) নির্ধারিত করে দেব। তারা মুসলমান নয়, তারা মুসলমান নয়।-(আল মুনতাকা)

মুসলিম ঐ ব্যক্তিকে বলে যে পরিপূর্ণরূপে নিজেকে আল্লাহ তায়ালার কাছে সোপর্দ করে দেয়। আর হজ্জের মর্মও এই যে, ব্যক্তি তার নিজেকে পরিপূর্ণরূপে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দেবে। এরা যদি মুসলিম হতো তাহলে কি করে হজ্জের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হতো এবং সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কি করে হজ্জ থেকে উদাসীন থাকতো ?

আরো পড়ুন :

হজ্জ কাকে বলে

হজ্জ কি প্রত্যেক বছর পালন করতে হবে

হজ্জ কত হিজরীতে ফরজ হয়েছে ?

ট্যাগ সমূহ : হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত,হজ্জের মহত্ব ও গুরুত্ব,হজ্জের ফযীলত ও প্রেরণা,হজ্জের অর্থ,হজ্জ অর্থ কি,হজ্জের ফজিলত,হজ্জের গুরুত্ব ও তাৎপর্য,হজ্জ শব্দের অর্থ কি,হজ্জে মাবরুর কাকে বলে,হজ্জের হিকমত,হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত,হজ্জের মহত্ব ও গুরুত্ব,হজ্জের ফযীলত ও প্রেরণা,হজ্জের অর্থ,হজ্জ অর্থ কি,হজ্জের ফজিলত,হজ্জের গুরুত্ব ও তাৎপর্য,হজ্জ শব্দের অর্থ কি,হজ্জে মাবরুর কাকে বলে,হজ্জের হিকমত,হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত,হজ্জের মহত্ব ও গুরুত্ব,হজ্জের ফযীলত ও প্রেরণা,হজ্জের অর্থ,হজ্জ অর্থ কি,হজ্জের ফজিলত,হজ্জের গুরুত্ব ও তাৎপর্য,হজ্জ শব্দের অর্থ কি,হজ্জে মাবরুর কাকে বলে,হজ্জের হিকমত,

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top