সাহু সিজদা কি
সাহু অর্থ ভুলে যাওয়া। ভুলে নামাযের মধ্যে কিছু বেশী-কম হয়ে গেলে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে গেলে তা সংশোধনের জন্য নামাযের শেষ বৈঠকে দু’টি সিজদা করা ওয়াজিব হয় তাকে বলে সিজদায়ে সাহু।
বা নামাযের মধ্যে ভুলবশতঃ যে কম বেশী হয় তাতে যে নামাযের অনিষ্ট হয় তা পূরণের জন্য নামাযের শেষে দুটি সিজদা করা ওয়াজিব হয়ে যায় । তাকে সাহু সিজদা বলে ।
সাহু সিজদার নিয়ম
সাহু সিজদার নিয়ম- নামাযের শেষ বৈঠকে ‘আত্তাহিয়্যাতুর’ পর ডান দিকে সালাম ফিরাতে হবে। তারপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সিজদায় যেতে হবে। নামাযের অন্যান্য সিজদার নিয়মে দু’সিজদা করে আত্তাহিয়্যাতু’, দরুদ প্রভৃতি পড়ে দু’দিকে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করতে হবে।
সাহু সিজদা কখন দিতে হয়
যেসব অবস্থায় সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় তা হলো-
১. ভুলে নামাযের কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে, যেমন সূরা ফাতিহা পড়া ভুলে যাওয়া অথবা সূরা ফাতিহার পর কোনো সূরা পড়তে ভুলে যাওয়া ।
২. কোনো ওয়াজিব আদায় করতে বিলম্ব হলে, ভুলে হোক কিংবা কিছু চিন্তা করতে গিয়ে হোক যেমন কোনো লোক সূরা ফাতিহা পড়ার পর চুপ করে থাকলো। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আবার কোনো সূরা পড়লো ।
৩. কোনো ফরয আদায় করতে বিলম্ব হলে অথবা ফরয আগে করা হলো। যেমন, কেরায়াত করার পর রুকূ’ করতে বিলম্ব হলো। অথবা রুকূ’র আগেই সিজদা করা।
8. কোনো ফরয বার বার আদায় করা। যেমন দু’ রুকূ’ পর পর করা হলো ।
৫. কোনো ওয়াজিবের রূপ পরিবর্তন করা হলো। যেমন সিররী নামাযে জোরে কেরায়াত করা অথবা জাহেরী নামাযে আস্তে কেরায়াত করা।
সাহু সিজদার মাসয়ালা
● নামাযের ফরযের কোনোটি যদি স্বেচ্ছায় ছুটে যায় অথবা ভুলে যায়, তাহলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। এভাবে কোনো ওয়াজিব ইচ্ছা করে ছেড়ে দিলে নামায নষ্ট হবে। সিজদা সাহু করলেও নামায সহীহ হবে না। নামায পুনরায় পড়তে হবে। |
● এক বা একাধিক ওয়াজিব ছুটে গেলে একই বার দু’ সিজদা করলেই যথেষ্ট হবে। এমন কি নামাযের সকল ওয়াজিব ছুটে গেলেও দু’ সিজদা যথেষ্ট, দু’য়ের বেশী সাহু সিজদা করা ঠিক নয় । |
● যদি কেউ ভুলে দাঁড়ানো অবস্থায় সূরা ফাতিহার আগে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। কারণ ফাতিহার আগে আল্লাহর হামদ ও সানা পড়া হয় এবং আত্তাহিয়্যাতুর মধ্যেও হামদ ও সানা আছে । তবে যদি কেরায়াতের পর অথবা দ্বিতীয় রাকায়াতে কেরায়াতের আগে বা পরে আত্তাহিয়্যাতু পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে । |
● ভুলে কোনো ‘কওমা’ বাদ পড়লে অথবা দু’ সিজদার মাঝখানে জলসা না হলে সাহু সিজদা করা জরুরী হয়। |
● যদি কেউ কা’দায়ে উলা করতে ভুলে যায় এবং বসার পরিবর্তে একেবারে উঠে দাঁড়ায়, তারপর মনে পড়লে যেন বসে না পড়ে। বরঞ্চ নামায পুরা করে নিয়ম মুতাবেক সাহু সিজদা করবে। আর যদি পুরাপুরি না দাঁড়ায়, সিজদার নিকটে থাকে তাহলে বসে পড়বে। তখন সাহু সিজদার দরকার হবে না । |
● যদি কেউ দু’ বা চার রাকায়াত বিশিষ্ট ফরয নামাযে কাদায়ে আখীরা ভুলে গেল এবং বসার পরিবর্তে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। এখন যদি সিজদা করার আগে তার মনে হয় তাহলে বসেই নামায পুরা করে সাহু সিজদা করবে। তাতেই ফরয নামায দুরস্ত হবে। যদি সিজদা করার পর মনে হয় যে, কাদায়ে আখীরা করেনি, তাহলে আর বসবে না বরঞ্চ এক রাকায়াত মিলিয়ে চার রাকায়াত বা দু’রাকায়াত পুরা করবে। এ অবস্থায় সিজদা সাহুর দরকার নেই। এ রাকায়াতগুলো নফল হয়ে যাবে। ফরয নামায পুনরায় আদায় করতে হবে। মাগরিবের ফরযে যদি ভুল হয়ে যায় তাহলে পুনরায় পঞ্চম রাকায়াত পড়বে না। চতুর্থ রাকায়াতে বসে নামায পুরা করবে। কারণ নফল নামায বেজোড় হয় না। নবী (সাঃ) বলেন- নফল নামাযের রাকায়াত দুই দুই করে। (ইলমুল ফেকাহ)। |
● সূরা ফাতিহা পড়া ভুলে গেলে অথবা দোয়া কুনূত ভুলে গেলে অথবা আত্তাহিয়্যাতু পড়া ভুলে গেলে অথবা ঈদুল ফিত্র ঈদুল আযহার অতিরিক্ত তাকবীর ভুলে গেলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। |
● মাগরিব, এশা বা ফজরের জাহেরী নামাযগুলোতে ইমাম যদি ভুলে কেরায়াত আস্তে পড়ে তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। |
● ইমামের যদি কোনো ওয়াজিব ছুটে যায় এবং সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় তাহলে মুক্তাদীকেও সাহু সিজদা করতে হবে। আর মুক্তাদীর যদি কোনো ওয়াজিব ছুটে যায় তাহলে না মুক্তাদীর সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে আর না ইমামের । |
● সূরা ফাতিহার পর যদি কেউ সূরা মিলাতে ভুলে যায় অথবা সূরা প্রথমে পড়লো পরে সূরা ফাতিহা, তাহলে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা পড়বে এবং শেষ কা’দার পর অবশ্যই সাহু সিজদা করবে। |
● যদি ফরয নামাযের প্রথম দু’রাকায়াতে অথবা এক রাকায়াতে কেউ সূরা মিলাতে ভুলে যায়, তাহলে পরের রাকায়াতগুলোতে সূরা মিলিয়ে সাহু সিজদা করে নামায পুরা করবে। |
● সুন্নাত অথবা নফল নামাযের মধ্যে সূরা মিলাতে কেউ যদি ভুলে যায় তাহলে সিজদা সাহু অনিবার্য হবে। |
● যদি চার রাকায়াত ফরয নামাযে কেউ শেষ রাকায়াতে এত সময় পর্যন্ত বসলো যতোক্ষণে ‘আত্তাহিয়্যাতু’ পড়া যায়। তারপর তার সন্দেহ হলো যে, এটা তার কাদায়ে উলা (প্রথম বৈঠক) এবং সালাম ফেরানোর পরিবর্তে পঞ্চম রাকায়াতের জন্য উঠে দাঁড়ালো। এখন যদি সিজদা করার আগে তার মনে হয়, তাহলে বসে নামায পুরা করবে এবং নিয়ম মাফিক সাহু সিজদা করবে এবং সালাম ফিরাবে। আর যদি পঞ্চম রাকায়াতের সিজদা করে ফেলে তাহলে ষষ্ঠ রাকায়াত মিলিয়ে নেবে এবং সাহু সিজদা করে নামায পুরা করবে। এ অবস্থায় তার ফরয নামায সহীহ হবে আর অতিরিক্ত দু’রাকায়াত নফল হিসেবে গণ্য হবে। |
● চার রাকায়াত ফরয নামাযের শেষ দু’রাকায়াতে কোনো একাকী লোক বা ইমাম যদি সূরা ফাতিহা পড়া ভুলে যায়, তাহলে সিজদা সাহু ওয়াজিব হবে না। তবে যদি সুন্নাত ও নফল নামাযে ভুলে যায় তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। এজন্য যে, ফরয নামাযের শেষের রাকায়াতগুলোতে ফাতিহা পড়া ওয়াজিব নয়। সুন্নাত নফলের প্রত্যেক রাকায়াতে সূরা ফাতেহা ওয়াজিব । |
● যদি কেউ ভুলে এক রাকায়াতে দু’ রুকূ’ অথবা এক রাকায়াতে তিন সিজদা করে অথবা সূরা ফাতেহা পড়ে তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। কারণ সূরা ফাতেহা একবার পড়া ওয়াজিব । |
● যদি ‘কাদায়ে উলাতে’ আত্তাহিয়্যাতুর পরে কেউ দরুদ পড়া শুরু করে এবং ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ’ এর পরিমাণ পড়ে ফেলে অথবা এতটা সময় চুপচাপ বসে থাকে, তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। |
● যদি কোনো মাসবুক তার অবশিষ্ট নামায পুরা করতে গিয়ে কোনো ভুল করে তাহলে শেষ বৈঠকে তার সাহু সিজদা করা ওয়াজিব হবে। |
● কেউ যোহর অথবা আসরের ফরয নামাযের দু’রাকায়াত পড়লো কিন্তু মনে করলো যে, চার রাকায়াত পড়েছে এবং তারপর সালাম ফিরালো। তারপর মনে হলো যে, দু’রাকায়াত পড়েছে। তাহলে বাকী দু’রাকায়াত পড়ে নামায পুরা করবে এবং সাহু সিজদা করবে। |
● কারো নামাযে সন্দেহ হলো যে, তিন রাকায়াত পড়লো, না চার রাকায়াত তাহলে এ ধরনের সন্দেহ তার যদি এই প্রথম বার ঘটনাক্রমে হয়ে থাকে এবং সাধারণত এ ধরনের সন্দেহ তার হয় না, তাহলে তার প্রবল ধারণা যেদিকে হবে সেদিকে আমল করবে। আর কোনো দিকেই যদি ধারণা প্রবল না হয় তাহলে কম রাকায়াতই ধরবে। যেমন কেউ যোহর নামাযে সন্দেহ হলো যে, তিন রাকায়াত পড়লো না চার রাকায়াত এবং কোনো দিকেই তার ধারণা সুস্পষ্ট হচ্ছে না, তাহলে এমন অবস্থায় তিন রাকায়াতই মনে করে বাকী এক রাকায়াত পুরা করবে এবং সাহু সিজদা দিবে। |
● নামাযের সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব ছুটে গেলে সাহু সিজদা দরকার হয় না। যেমন নামাযের শুরুতে সানা পড়তে ভুলে গেলে, অথবা রুকূ’ এবং সিজদার তাসবিহ পড়তে ভুলে গেলে, অথবা রুকূ’তে যেতে এবং উঠতে দোয়া ভুলে গেল অথবা দরুদ শরীফ এবং তার পরের দোয়া ভুলে গেলে, তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না । |
● নামাযে যদি এমন ভুল হয় যার জন্য সাহু সিজদা ওয়াজিব কিন্তু সাহু সিজদা না করেই নামায শেষ করা হলো। তারপর মনে হলো যে, ভুলে সাহু সিজদা দেয়া হয়নি। যদি মুখ কেবলার দিকে থাকে এবং কারো সাথে কথা বলা না হয় তাহলে সংগে সংগেই সাহু সিজদা করে আত্তাহিয়্যাতু ও দরুদের পর সালাম ফিরাবে । |
● কেউ এক রাকায়াতে ভুলে এক সিজদা করলো। এখন যদি কা’দায়ে আখীরায় আত্তাহিয়্যাতু পড়ার আগে প্রথম রাকায়াতে অথবা দ্বিতীয় রাকায়াতে অথবা যখনই মনে হবে সিজদা করতে হবে এবং নিয়ম মাফিক সাহু সিজদা দিতে হবে । যদি ‘আত্তাহিয়্যাতু’ পড়ার পর সিজদার কথা মনে হয় তাহলে সিজদা আদায় করে পুনর্বার ‘আত্তাহিয়্যাতু’ পড়তে হবে এবং সাহু সিজদা করে কা’দা অনুযায়ী নামায পুরা করতে হবে । |
● সফরের মধ্যে কসর করা ওয়াজিব হবে। কিন্তু কেউ যদি ভুলে কসর না করে পুরা চার রাকায়াত পড়লো, তাহলে এ অবস্থায় শেষ রাকায়াতে নিয়ম মুতাবিক সাহু সিজদা করা ওয়াজিব হবে। এ অবস্থায় এ নামায এভাবে সহীহ হবে যে, প্রথম দু’রাকায়াত ফরয এবং শেষ দু’রাকায়াত নফল হবে। |
আরো পড়ুন :
ট্যাগ সমূহ : সাহু সিজদার নিয়ম,সাহু সিজদা কখন দিতে হয়,সাহু সিজদার নিয়ম কি,সাহু সিজদা দিতে ভুলে গেলে,সাহু সিজদা,সাহু সিজদা কি,সাহু সিজদা করার নিয়ম,সাহু সিজদার সঠিক পদ্ধতি,সাহু সিজদা দেওয়ার নিয়ম,কি কি ভুলের কারণে সাহু সিজদা দিতে হয়,সাহু সিজদার নিয়ম,সাহু সিজদার নিয়ম,সাহু সিজদা কেন দিতে হয়,কি কি কারনে সাহু সিজদা দিতে হয়,সাহু সিজদার নিয়ম কয়টি,সাহু সিজদা pdf,সাহু সিজদা কয়টা দিতে হয়,সাহু সিজদা কাকে বলে,নামাজে সাহু সিজদার নিয়ম,সুন্নত নামাজে সাহু সিজদা,সাহু সিজদা কিভাবে দিতে হয়,সাহু সিজদার নিয়ম,সাহু সিজদা কখন করব কিভাবে করব,সাহু সিজদা কখন ওয়াজিব হয়,সাহু সিজদার হাদিস,সাহু সিজদার বিধান কি,নামাজে সাহু সিজদা দিতে হয় কেন,সাহু সিজদার নিয়ম,সাহু সিজদার নিয়ম,কখন সাহু সিজদা দিতে হয়,কি কি কারণে সাহু সিজদা দিতে হয়,কি কি কারণে সাহু সিজদা দিতে হয়,সাহু সিজদা কয়টি,সাহু সিজদার সহিহ নিয়ম,সাহু সিজদা,সাহু সিজদাহ,সাহু সিজদা অর্থ কি,নামাজে কি কি ভুল হলে সাহু সিজদা দিতে হয়,সাহু সিজদা করার সঠিক নিয়ম,সাহু সিজদার মাসআলা,নামাজে ভুল হলে সাহু সিজদা,ফরজ নামাজে সাহু সিজদা,সাহু সিজদার নিয়ম,সাহু সিজদার নিয়ম, |