সায়ী কি ও সায়ী করার নিয়ম

সায়ী করার নিয়ম,সায়ী কাকে বলে,সাফা মারওয়া সায়ী করার হুকুম কি,সাফা মারওয়া সায়ী করা কি,সায়ীর দোয়া,সায়ী করার নিয়ম,সায়ী কি,সাফা মারওয়া সায়ী,সায়ীর মাসআলা,সায়ীর হাকীকত ও হিকমত,সায়ী করার পদ্ধতি,সায়ী করার দোয়া,

সায়ী করার নিয়ম

সায়ী কি ও সায়ী কাকে বলে
সায়ী শব্দের অর্থ হচ্ছে- যত্ন সহকারে চলা, দৌড়ানো চেষ্টা করা ইত্যাদি।
পারিভাষিক অর্থে সায়ী বলতে হজ্জের সেই ওয়াজিব আমল বুঝায় যাতে হেরেম যিয়ারতকারী সাফা ও মারওয়া নামক দু’টি পাহাড়ের মাঝে দৌড়ায়। সাফা বায়তুল্লাহর দক্ষিণে এবং মারওয়া উত্তর দিকে অবস্থিত।

আজকাল এ দু’টি পাহাড়ের নামমাত্র চিহ্ন অবশিষ্ট আছে এবং তাদের মধ্যবর্তী স্থানে দুটি পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। একটি সাফা থেকে মারওয়া পর্যন্ত দৌড়ের জন্যে এবং অপরটি মারওয়া থেকে সাফা আসার জন্যে । অর্থাৎ দু’টি পাশাপাশি আপ-ডাউন সড়ক। এ সড়ক দু’টির ওপর বিরাট ছাদ তৈরী করে সড়ক দু’টিকে ঢেকে দেয়া হয়েছে যাতে করে সায়ীকারীগণ রৌদ্রে কষ্ট না পায়।

সায়ী করার নিয়ম ও দোয়া
তাওয়াফে কুদুম অথবা তাওয়াফে যিয়ারত যার পরেই সায়ী করা হোক, তাওয়াফ শেষ করে সাফা পাহাড়ে ওঠতে হবে। তারপর এ আয়াত পড়তে হয় – ان الصفا والمروة من شعائر الله (সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত)। সাফার এতোটা উচ্চতায় চড়তে হবে যেন বায়তুল্লাহ চোখে পড়ে। তারপর বায়তুল্লাহর দিক মুখ করে তিনবার আল্লাহু আকবার বলে নিম্নের দোয়া পড়তে হয় :

لاإله إلا الله وحده لاشريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيئ قدير ـ لا اله الا الله وحده ونجز وعده ونصر عبده وهزم الاحزاب وحد
অর্থ: “আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক এবং তার কোনো শরীক নেই। শাসন কর্তৃত্ব তাঁরই এবং সমস্ত প্রশংসাও তাঁর। তিনি প্রত্যেক বিষয়ের ওপর পরিপূর্ণ শক্তিশালী। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং তিনি একক। তিনি তার ওয়াদা পূর্ণ করে দেখিয়েছেন, তার বান্দাহকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই সমস্ত কাফের দলকে পরাজিত করেছেন।”-(মুসলিম)

তারপর দরূদ শরীফ পড়ে যে দোয়া করার ইচ্ছা তা করা উচিত। নিজের জন্যে, আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনের জন্যে দোয়া করা উচিত। এ হচ্ছে দোয়া কবুলের স্থান। সে জন্যে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্যে প্রাণভরে দোয়া করা উচিত। তারপর আবার নিম্নের দোয়া পড়তে হয়,
اللهم انك قلت أدعوني أستجب لكم وانك لاتخلف الميعاد واني اسئلك كما هديتني للإسلام أن لاتنزعه منى حتى توفاني وانا مسلم (موطا)

আরবির উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা কুলতা উদ্উ’নী আস্তাযিব্ লাকুম ওয়া ইন্নাকা লা তুখলিফুল মীআ’দা ওয়া ইন্নী আস্আলুকা কামা হাদায়তানী লিল্ ইসলামি আললা তুনযিআ’হু মিন্নী হাত্তা তাতাওয়াফ্ফানী ওয়া আনা মুসলিম।

অর্থ: “আয় আল্লাহ ! তুমি বলেছ আমার কাছে চাও আমি দিব। আর তুমি কখনো ওয়াদা ফে করো না। তোমার কাছে আমার চাওয়া এই যে, তুমি যেমন আমাকে ইসলাম গ্রহণের তাওফিক দান করেছ, তেমনি এ সম্পদ থেকে তুমি কখনো আমাকে বঞ্চিত করো না। এভাবে আমার যেন মৃত্যু হয় এবং আমি যেন মুসলমান হয়ে মরতে পারি।”-(মুয়াত্তা)

অতপর সাফা থেকে নেমে মারওয়ার দিকে চলতে হবে। এবং চলার সময় এ দোয়া পড়তে হবে—
رب اغفر وارحـم انـك أنت أعز الأكرم
অর্থ: “হে রব! আমাকে মাফ কর এবং রহম কর। তুমি পরম পরাক্রান্তশালী ও মহান।”

সাফা থেকে মারওয়ার দিকে যাবার পথে বাম দিকে দু’টি সবুজ চিহ্ন পাওয়া যায়। এ দু’টি চিহ্নের মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়ানো সুন্নাত। এটা শুধু পুরুষদের জন্যে। মেয়েরা স্বাভাবিক গতিতে চলবে। তারা দৌড়ালে পর্দার ব্যাঘাত ঘটবে।

তারপর মারওয়া পাহাড়ে ওঠার পর ঐসব দোয়া পড়তে হয় যা সাফার ওপরে পড়া হয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে যিকির ও তসবিহতে মশগুল থাকা উচিত। কারণ এটা হচ্ছে দোয়া কবুলের স্থান।

তারপর মারওয়া থেকে নেমে পুনরায় সাফার দিকে যেতে হবে এবং ঐসব দোয়া পড়তে হবে যা আসবার সময় পড়া হয়েছে। আর এভাবে দু’ সবুজ চিহ্নের মধ্যবর্তী স্থানে দৌঁড়াতে হবে। এভাবে সাতবার সাফা-মারওয়া দৌড়াদৌড়ি করতে হবে।

সায়ীর মাসআলা মাসায়েল
১. কাবার তাওয়াফের পর ‘সায়ী’ করা ওয়াজিব। তাওয়াফের পূর্বে ‘সায়ী’ জায়েয নয়।
২. ‘সায়ী’ সাফা থেকে শুরু করা ওয়াজিব।
৩. ‘সায়ী’ পায় হেঁটে করা ওয়াজিব। বিশেষ কারণে সওয়ারীতে করা যায়।
৪. গোটা হজ্জে এক বারই সায়ী করা উচিত। তা তাওয়াফে কুদুমের পরে অথবা তাওয়াফে যিয়ারতের পরে হোক। তাওয়াফে যিয়ারতের পর করা ভালো।

৫. সায়ি করার সময় হাদাসে আসগার ও আকবার থেকে পাক হওয়া ওয়াজিব নয় বটে, কিন্তু মাসনুন।
৬. ‘সায়ী’তেও সাতবার দৌড় দিতে হয়। এ সাতবারই ওয়াজিব।
৭. তাওয়াফ শেষ করার সাথে সাথেই ‘সায়ী’ শুরু করা মসনূন, তবে ওয়াজিব নয়।
৮. সাফা-মারওয়ার ওপরে ওঠা বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে দু’ হাত দোয়ার জন্যে ওঠানো এবং দোয়া করা মসনূন।
৮. সায়ী করার সময় কেনাবেচা মাকরূহ। প্রয়োজন হলে কথা বলা যায়।

সায়ীর হাকীকত ও হিকমত
কুরআন পাক বলে- إنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ সাফা ও মারওয়া নিশ্চিতরূপে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশাবলীর মধ্যে গণ্য। شعيره শব্দের বহুবচন। কোনো আধ্যাত্মিক মর্ম এবং কোনো ধর্মীয় স্মৃতি অনভব ও স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্যে যে জিনিস নিদর্শন স্বরূপ নির্ধারিত করা হয় তাকে شعيره বলে।

প্রকৃতপক্ষে এসব স্থান (সাফা মারওয়া) আল্লাহ পুরস্তি এবং ইসলামের বাস্তব বহিঃপ্রকাশের স্মরণীয় স্থান। মারওয়া হচ্ছে সেই স্থান যেখানে আল্লাহর খলীল হযরত ইবরাহীম (আ) তাঁর একমাত্র পুত্র সন্তান হযরত ইসমাঈল (আ)-কে উপুড় করে শুইয়ে তাঁর গলায় ছুরি চালাতে উদ্যত হয়েছিলেন, যাতে করে তাঁর দেখা স্বপ্ন কার্যে পরিণত করতে পারেন। সেই সাথে তাঁর জীবনের প্রিয়তম বস্তুকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে কুরবানী করে তাঁর স্বীয় উক্তির أسلمت لرب (আমি পুরোপুরি নিজেকে রাব্বুল আলামীনের অধীন করে দিয়েছি) বাস্তব সাক্ষ্যদান করেন।

ইসলাম বা আত্মসমর্পণ করার এ অভিনব দৃশ্য দেখার সাথে সাথে আল্লাহ তাঁকে ডেকে বলেন, ইবরাহীম! তুমি তোমার স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিয়েছ। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এ ছিল এক বিরাট পরীক্ষা।
وناديناه أن يا إبراهيم قد صدقت الرؤيا انا كذالك نجزى المحسنين إن هذا لهو البلاغ المبين
অর্থ: আর আমরা তাকে এই বলে ডাকলাম, হে ইবরাহীম, তুমি তোমার স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছ। নিশ্চয় আমরা নেক লোকদের এভাবেই প্রতিদান দিয়ে থাকি। এটা সত্য যে এ হচ্ছে একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা।”

সাফা ও মারওয়ার ওপর দৃষ্টি পড়তেই স্বাভাবিকভাবেই মুমিনের মনে কুরবানীর এ গোটা ইতিহাস ভেসে ওঠে। আর সেই সাথে ইবরাহীম ও ইস- মাঈল আলাইহিস সালামের চিত্রও ভেসে ওঠে।এ সত্যটিকে মনে বদ্ধমূল করার জন্যে এবং এ প্রেরণাদায়ক ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্যে সায়ীকে আল্লাহ তায়ালা হজ্জের মানাসেকের মধ্যে শামিল করে দিয়েছেন । আল্লাহ বলেন,
فَمَنْ حَجَّ البَيْتَ أوِ عَتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أن يطوف ـ بهـمـا ومن تطوعخَيْرًا ، فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ (البقرة : (١٥٤)

অর্থ: “ আর যে ব্যক্তি হজ্জেও ওমরা করে, তার এ দুয়ের মধ্যে সায়ী করতে কোনো দোষ নেই। আর যে আগ্রহ সহকারে কোনো ভালো কাজ করে, মহান আল্লাহ তা ভালোভাবে জানেন এবং তার মূল্য দান করেন।”

জাহেলিয়াতের যুগে মক্কার মুশরিকগণ এ দুটি পাহাড়ের ওপর তাদের প্রতিমা নির্মাণ করে রেখেছিল। সাফার ওপরে ‘আসাফের’ এবং মারওয়ার ওপরে ‘নায়েলার’ প্রতিমা (মূর্তী) ছিল। তাদের চারধারে তাওয়াফ করা হতো। এজন্যে মুসলমানদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল যে, এ দু’ পাহাড়ের মাঝে তারা ‘সায়ী’ করবে কিনা।

তখন আল্লাহ বলেন এ ‘সায়ী’ করতে কোনো দোষ নেই। এজন্যে যে, ‘সায়ী’ বলতে হজ্জের মানাসেকের (করণীয় অনুষ্ঠানাদি) মধ্যে গণ্য। হযরত ইবরাহীম (আ)-কে হজ্জের যেসব মানাসেক শিক্ষা দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে ‘সায়ী’ করার নির্দেশও ছিল। এজন্যে কোনো প্রকার ঘৃণা অনীহা ব্যতিরেকেই মুসলমানগণ যেন মনের আগ্রহ সহকারে সাফা-মারওয়ার সায়ী করে। আল্লাহ মনের অবস্থা ভালোভাবে জানেন এবং মানুষের সৎ আবেগ অনুভূতি ও সৎকাজ সম্মানের চোখে দেখেন।

আরো পড়ুন :

হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী

হজ্জের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি

হজ্জ সহীহ হওয়ার শর্ত কয়টি

হজ্জের মিকাত কয়টি ও কি কি

ইহরাম কি ও ইহরাম বাধার নিয়ম

বাংলাদেশের মীকাত কি

হজ্জের ফরজ কয়টি ও কি কি

হজ্জ কি প্রত্যেক বছর পালন করতে হবে

হজ্জ কত হিজরীতে ফরজ হয়েছে ?

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত

হজ্জে মাবরুর কাকে বলে

তাওয়াফ কি/ তাওয়াফ কত প্রকার/ তাওয়াফ করার নিয়ম

ট্যাগ সমূহ : সায়ী করার নিয়ম,সায়ী কাকে বলে,সাফা মারওয়া সায়ী করার হুকুম কি,সাফা মারওয়া সায়ী করা কি,সায়ীর দোয়া,সায়ী করার নিয়ম,সায়ী কি,সাফা মারওয়া সায়ী,সায়ীর মাসআলা,সায়ীর হাকীকত ও হিকমত,সায়ী করার পদ্ধতি,সায়ী করার দোয়া,সায়ী করার নিয়ম,সায়ী কাকে বলে,সাফা মারওয়া সায়ী করার হুকুম কি,সাফা মারওয়া সায়ী করা কি,সায়ীর দোয়া,সায়ী করার নিয়ম,সায়ী কি,সাফা মারওয়া সায়ী,সায়ীর মাসআলা,সায়ীর হাকীকত ও হিকমত,সায়ী করার পদ্ধতি,সায়ী করার দোয়া,সায়ী করার নিয়ম,সায়ী কাকে বলে,সাফা মারওয়া সায়ী করার হুকুম কি,সাফা মারওয়া সায়ী করা কি,সায়ীর দোয়া,সায়ী করার নিয়ম,সায়ী কি,সাফা মারওয়া সায়ী,সায়ীর মাসআলা,সায়ীর হাকীকত ও হিকমত,সায়ী করার পদ্ধতি,সায়ী করার দোয়া,সায়ী অর্থ কি,সায়ী শব্দের অর্থ কি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top